প্রেম না করে ছ্যাঁকা

প্রেম না করে ছ্যাঁকা

আহা কি নির্মল পরিবেশ, কতো ছেলে মেয়ে হাত ধরাধরি করে হেটে যাচ্ছে, কিন্তু আমি তাদের দিকে তাকাচ্ছিনা। কারণ আমি তো খাটি সিঙ্গেল। তাই, নীল আকাশের বুকে আমি তখন রোদ আর মেঘের খেলা দেখচ্ছিলাম পার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে। ঠিক তখনই কেউ একজন পাশ থেকে বলে উঠলো,

“”এভাবে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি দেখছেন? কথাটা শুনে, আমি তখন পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে আমার পাশে বসে আছে। খানিকটা অবাক হলাম, আজ এতো গুলো দিন এখানে এসে বসে আকাশ দেখি, কখনো তো কেউ এসে আমার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইনি। আমার অবাক হওয়া চাহনি দেখে, মেয়েটা আবার জিজ্ঞেস করল,

“” কি হলো কিছু বলছেন না যে। আমি তখন আবার আকাশের দিকে তাকালাম, তার পর বললাম,
“” আমি আকাশের বুকে রোদ আর মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখি। কথাটা বলে আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম, আমার কথাটা শুনে মেয়েটা যে কিছুটা অবাক হয়েছে সেটা আমি বুঝতে পারলাম। আমি তখন একটা হাসি দিয়ে বললাম,

“” আসলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার কথা শুনে মেয়েটা তখন বললো

“” আচ্ছা আপনি কি কবিতা লেখেন,
“” না তো,
“” ওহহ আচ্ছা, কিন্তু আপনার কথায় কবি কবি ভাব রয়েছে। আমার বিশ্বাস আপনি খুব সুন্দর কবিতা লিখতে পারবেন। আমি তখন প্রতিউত্তরে বললাম,
“” কবি হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই, কবিরা কল্পনাপ্রবণ হয়, বাস্তবতার থেকে কল্পনাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। আমি কল্পনার মাঝে নিজেকে জড়াতে চাই না। বাস্তবতার মাঝেই থাকতে চাই।

“” আমি কিন্তু সে কথা বলিনি, আমি বলেছি আপনি চাইলে খুব সুন্দর কবিতা লিখতে পারবেন।
“” আমি কবিতা লিখলে সে কবিতার মাঝে কোন প্রেম থাকবে না। একাকিত্বতা ফুটে উঠবে সে কবিতার মাঝে। আমি তা চাই না। মেয়েটা তখন কপালকুচকে বললো;
“” ভারি রহস্য করে কথা বলেন তো, ছ্যাঁকাট্যাকা খাইছিলেন না কি। অবশ্য আমি শুনেছি যারা ছ্যাঁকা খায় তারা এভাবে বসে বসে আকাশ দেখে। আমি তখন ভুরু কুঁচকে বললাম;

“” ছ্যাঁকা খাবো কেন, মেয়েটা তখন ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
“” স্যরি স্যরি একটু মজা করছিলাম, বাই দ্যা ওয়ে, আমি অরুণিমা পার্কের পাশেই আমার বাসা। আর আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
“” আমি রাজ এবার অনার্স কমপ্লিট করেছি। অরুণিমা তখন একটু হেসে হেসে বললো,
“” আপাকে দেখে মনেই হয় না যে আপনি অনার্স কমপ্লিট করেছেন। আমি তখন জিজ্ঞাসাসুলভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“” মানে?
“” মানে আপনাকে দেখে মনে হয় আপনি ক্লাস টেন পড়ুয়া একজন ছাত্র। মেয়েটার কথা শুনে আমি অনেকটা অবাক হলাম, বলে কি এই মেয়ে পঁচিশ বছরের একটা ছেলেকে না কি ক্লাস টেন পড়ুয়া ছাত্র মনে হয়, অদ্ভুত তো।

আমার এমন অবাক হওয়া চাহনি দেখে মেয়েটা তখন ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, আপনি কি বিষয়টাকে সিরিয়াস ভাবে নিলেন, আমি কিন্তু জাস্ট মজা করেছি, তবে সত্যি কথা বলতে আপনার চেহারার মাঝে খুব কিউটনেস আছে, দেখে মনেই হয় না আপনি অনার্স কমপ্লিট করেছেন। কথাটা বলেই অরুণিমা হাসতে থাকে, আমি তখন একভাবে অরুণিমার হাসি দেখতে থাকি, আহা কি মিষ্টি হাসি, চেহারাটাও মাশআল্লাহ। আমার মনের মাঝে মেয়েটাকে নিয়ে একটা ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। সিঙ্গেল মানুষ, সুন্দরী একটা মেয়ে যদি পাশে বসে থাকে। না চাইলেও ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করবে। আমিও তখন একটা হাসি দিয়ে বললাম,  আপনিও খুব কিউট, অরুণিমা তখন একটু মুচকি হেসে বলল,  তাই জানতাম না তো।

আমি তখন বললাম;  হুম আসলে আপনি শুধু কিউটই না আপনার চেহারার মাঝে অদ্ভুত এক মায়া আছে। যে মায়ার আবেশ কাটানো যে কোন ছেলের পক্ষেই কঠিন।  তা আপনিও কি সেই মায়ার আবেশে আটকে গেলেন না কি। অরুণিমার কথাটা শুনে আমি একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললাম;  আরে না আমি মায়ার আবেশে কেন আটকে যাবো। কি যে বলেন না আপনি। কথাটা বলে একটু গম্ভীর ভাব নিলাম। তবে সত্যি বলতে মেয়েটাকে আমার ভালো লেগে গেছে। আসলে কখন যে কি ভাবে কাউকে ভালো লেগে যায় তা বোঝা খুব মুশকিল।

“প্রথম দেখে ভালো লাগা এলোমেলো মন,
“সময় যেন যাচ্ছে থেমে ভেবে সারাক্ষণ।
“রোদের রঙে যাক মিশে ভালো লাগা সব,
“তোমায় পেলে আর কিছুই চায় না অনুভব এই যে মিস্টার কি ভাবছেন এভাবে,

অরুণিমার কথাটা শুনে আমার তখন ঘোরটা কাটে , আমি তখন একটু আমতা আমতা করে বললাম, কো কো কোই কিছু না তো, অরুণিমা আমার অমন অবস্থা দেখে আবার খিল খিল করে হাসতে থাকে। আমি তখন মাথা চুলকোতে চুলকোতে ভাবতে থাকি, এটাই কি তাহলে ভালো লাগা। আমি অরুণিমাকে যতোই দেখছিলাম ততই ওর প্রতি আমার মুগ্ধতা বারতে থাকে।

অরুণিমা তখন বলল; তাই, “ভালো” আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি,  হুম করেন। আপনার কি প্রেমিকা আছে, প্রেমিকা নেই তবে খুব তাড়াতাড়িই হবে কথাটা মনে মনে বলে মুচকি মুচকি হাসতে থাকলাম। আসলেই মেরা দিলপে লাড্ডু ফুটছে। আমি তখন প্রতিউত্তরে বললাম, আসলে আমার জীবনে এখনো প্রেম আসেনি। অরুণিমা তখন একটু অবাক হয়ে বললো, ওমা তাই বুঝি আপনার মতো এতো কিউট একটা ছেলের জীবনে এখনো প্রেম আসেনি বিষয়টা আমি মানতে পারলাম না। আমার তখন মনের মাঝে আনন্দের বন্যা বোইতে থাকে, অরুণিমা যেভাবে আমাকে কিউট বলছে তার মানে ওর মনেও নিশ্চয়ই লাড্ডু ফুটছে। এবার ঝোপ বুঝে কোপ মারতে হবে।

আমি তখন বললাম; মানতে না পারলেও এটাই সত্যি, তবে কেউ যদি তার হাতটা ধরতে দিতে চায়। তবে ভালোবাসার পরশে তার হাতটা আঁকড়ে ধরবো সারাটা জীবনের জন্য।  তাই বুঝি বাহ আপনি তো দেখি অনেক রোমান্টিক। আমি তখন মনে মনে বলতে থাকি হুম মেয়ে, আর আমি তো তোমার হাত দুটিই ধরতে চাই। আমি তখন অরুণিমাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আচ্ছা আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি। হুম। আমি তখন যেইনা বলতে যাবো আপনিও কি সিঙ্গেএএএএ ঠিক তখনই একটা ছেলে অরুণিমার সামনে এসে দাঁড়ি জিজ্ঞেস করলো, এই তুমি এখানে! আর তোমাকে সারাটা পার্ক খুঁজতে খুঁজতে আমি হয়রান।

অরুণিমা তখন প্রতিউত্তরে বলল, আসলে তখন এই ভাইয়াটাকে দেখছিলাম একা একা বসে আছে, তাই এসে একটু গল্প করছিলাম। আমি তখন ওদের কথাবার্তা শুনে অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। অরুণিমা তখন আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো, ও হলো আমার বর নেহাল, সাতদিন আগেই আমাদের বিয়ে হয়েছে। আর এখনি আমাকে চোখে হারাচ্ছে। খুব ভালোবাসে আমাকে। অরুণিমার মুখে এমন কথাটা শোনার পর আমার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়, তখন মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমার টাকে সজোরে একটা হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। আমি মানতে পারছিলাম না যে অরুণিমা বিবাহিতা। অরুণিমার জামাই মানে নেহাল তখন আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো; নাইস টু মিট ইউ ভাইয়া।

আমি তখন একটু হাসি দেওয়ার ভাব নিয়ে বললাম, সেম টু ইউ। আমার ভেতরটা তখন কষ্টে ফেটে যাচ্ছিল, দিলের মাঝে ফোটা লাড্ডুগুলো যেন মূহুর্তের মাঝেই হাওয়া হয়ে গেল। অরুণিমা তখন আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, আচ্ছা ভাইয়া আজ তাহলে উঠি, আপনার সাথে এতক্ষণ গল্প করে খুব ভালো লাগলো, আপনি খুব ভালো মনের একটা মানুষ। দোয়া করি যেন সুন্দরী একটা মেয়ে আপনার জীবনে আসে। এই বলে অরুণিমা ওর জামাই এর হাত ধরে চলে যেতে থাকলো।

আমি তখন অশ্রুসিক্ত নয়নে ওদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। যদিও চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে না। আমার বুকের মাঝে তখন একটা চাপা কষ্ট অনুভব হতে থাকে। বুকের ডান পাশে চিন চিন করে ব্যাথা করতে থাকে। কি ভাবলাম আর কি হলো। আমার তখন ইচ্ছে করছিল 7আপ খেয়ে আত্মহত্যা করি। আমার সাথেই কেন এমনটা ঘটলো প্রেম না করেই ছ্যাঁকা খেয়ে গেলাম। আমি তখন আকাশ এর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম।

এই ছিল আমার কপালে, ভাবলাম এবার হয়তো আমার সিঙ্গেল লাইফের ইতি ঘটবে, কিন্তু তা আর হলো না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এখন, এখন কি করা উচিত আমার। হ্যাঁ আমি এখন অনেক গুলো 7আপ খাবো দেন মাতাল হয়ে গান গাইবো, “” আমার মতো এতো দুঃখি, নয়তো কারো জীবন,,,

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত