থিম কালেক্টেড

থিম কালেক্টেড

বাবা কথায় কথায় মাকে কেরোসিন তেল বলে ক্ষেপায়। মা মাঝেমধ্যে বাবার এমন দুষ্টুমি গুলো বুঝলেও আবার কিছু সময়ে বাবার সাথে রেগে যেতেন। আমি বাবার কাছে কেরোসিন তেলের রহস্য জানতে চাইলে মা চুপ করে থাকতেন আর বাবা শুধু বলতেন,একদিন সময় করে তোকে বলবো।

আমার বাবা মায়ের মধ্যে মনের খুব একটা সুন্দর মিল আছে।বলা যায় আমি এমন দম্পতি খুব কম দেখেছি।
আমার বাবা খুব রসিক মানুষ কাঁদানো মানুষকে হাসাতে পারেন। চারদিন পর আমার জন্মদিন।মায়ের ইচ্ছা জন্মদিন উপলক্ষে এবার একটা বাসন্তী কালারের শাড়ি নিবে। কিন্তু বাবা চায়, মা সবসময় নীল শাড়ি পরুক।মা বাবাকে সমসময় নীল রং এ দেখতে চায়। ছোট বেলায় বাবা যখন মাকে প্রথম দেখেন,তখন মায়ের পরনে নীল রং এর ড্রেস ছিল। মা বলে,সবসময় কি আর নীল শাড়ি পরতে ইচ্ছে করে।মাঝেমধ্যে তো অন্য কালার ও পরতে ইচ্ছা করে। বাবা সেটা মানতে রাজি না।

মা বাবাকে না জানিয়ে চুরি করে বাসন্তী কালারের একটা শাড়ি নিয়ে আসেন। মা আমাকে চোখ টিপে বলেন তোর বাবাকে বলিস না। যদিও আমি বাবার সাপোর্টার তবু বাবাকে বলিনি জন্মদিন বলে কথা। নয়ত ঠিকে বাবার কানে ফিসফিস করে বলে দিতাম। বাবা অফিস থেকে বাসায় ঢুকার সাথে সাথে শুরু করে দিল স্লোগান “মানিনী মানব না নীল শারী পরতে হবে” আমি তো অবাক। বাবা জানলো কিভাবে ? যাক !অন্তত মা শুনেনি বাবার স্লোগান। মা কিচেনে রান্না নিয়ে ব্যস্ত আছেন নয়ত রাগ করতেন।

কিছুক্ষণ পর দেখি মা কিচেন থেকে স্লোগান শুরু করলো” আমার শারী আমি নেব যেমন খুশি তেমন নেবো” আমি বাবা মায়ের স্লোগান শুনে ড্রয়িংরুমে বসে মুখ টিপেটিপে হাসছি। যাক! বাবা টেলিভিশন এর সাউন্ড এর জন্য শুনতে পায়নি বোধহয় মায়ের কথা। অন্তত মায়ের কথাটা বাবা শুনলে আবার বাবাও শুরু করতেন। কিছুক্ষণ পর বাবা এবার জোর গলায় বলতে লাগলো “হুসিয়ার সাবধান আমার হুকুম মানতে হবে” এভাবে মাঝেমধ্যে মায়ের শাড়ির কালার নিয়ে হালকা পাতলা অভিমান হয় দুজনের মধ্যে। পুরো ঘরের ডেকোরেশন শেষ। কেক রেড়ি।

একটু পর কেক কাটা শুরু হবে। বাবা আমার থেকে জানতে চাইলেন,জন্মদিন উপলক্ষে আমি কি চায়? আমি বাবাকে বললাম,বাবা তোমার কেরোসিন তেলের গল্পটা শুনতে চাই। বাবা মায়ের দিকে আঁড় চোখে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠেন। মা লজ্জায় মাথা নিচের দিকে করে রাখেন। আমার মা বাবাকে কখনো ঝগড়া করতে দেখিনি।মাঝেমধ্যে কথা কাটাকাটি অবশ্যই হয়,তবে সেটা বেশিদূর গড়ায় না। বাবা শুরু করলেন কেরোসিন তেলের গল্প তোর মাকে আমি যেদিন প্রথম দেখি, একটা মুদীর দোকানে।আমি যাই কেরোসিন তেল কিনতে।কিছুক্ষণ পর তোর মাও ওই দোকানে আসে কেরোসিন নিতে।

সেদিন তোর মায়ের সাথে এভাবে আমার দেখা হয়। পরের দিন আমি আবার ওই দোকানে যাই তোর মাকে দেখার জন্য।এভাবে তোর মায়ের সাথে আমার প্রায় দেখা হত। তোর মাকে আমার ভালো লেগে যায়। একটা চিঠি লিখে তোর মা’কে আমার মনের কথা জানালাম। তোর মাও জবাব দিলেন,আমাকে নাকি তার ভালো লাগে। মা লজ্জায় টেবিল থেকে উঠে চলে যেতেই বাবা মাকে হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলেন।

তারপর…..

তোর মায়ের বিয়ে তোর নানু অন্যদিকে ঠিক করে ফেলে।।তোর মা তোর নানুকে আমার কথা অনেক বার বলেছিল কিন্তু তোর নানু খুব একরোখা স্বভাবের কিছুতে মানতে রাজি না। আমাকে হারানোর ভয়ে তোর মা আর সহ্য করতে না পেরে এক বোতল কেরোসিন তেল খেয়ে ফেলে। তারপর তোর মাকে মেডিকেলে ভর্তি করে আমাকে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে বলেন তোর নানু।

মা হেসে নিচের দিকে হয়ে বলেন,তোমার চেয়ে আমি বেশি ভালোবাসি তাই এমনটা করেছি। বাবা বলে না! তোমার চেয়ে আমি তোমাকে বেশি ভালোবাসি। মা বলে না! আমি বেশি ভালোবাসি। বাবা বলে তাহলে এখন আরেকটু কেরোসিন খেয়ে দেখাও তো আমি দুজনের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত