লাভ ডিটেকটিভ

লাভ ডিটেকটিভ

রুমে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ পাশের রুম থেকে খানিক উত্তেজিত ভাবে নিলিমা এসে আওয়াজ নামিয়ে বলল, “বন্ধু!! নতুন ক্লায়েন্ট আসছে। হ্যান্ডসাম ছেলে। অফিস রুমে বসে আছে। জলদি রেডি হ।” আমি জলদি জলদি জামা চেঞ্জ করে টপ আর জিন্স পরে নিলাম। ব্যাপারটা হচ্ছে আমাদের একটা সংস্থা আছে। আমাদের বলতে আমি আর আমার দুইজন বান্ধবী নিলিমা আর সাদিয়া। তিনজন বাসা ভাড়া করে থাকি। একরুমে অফিস বানিয়েছি অন্য রুম গুলোতে আমরা থাকি।

সংস্থার কাজটাও ভিন্নধর্মি। ব্যাপারটা একটু খুলে বলা যাক। ধরুন আপনি কাউকে ভালোবাসেন, অথচ আপনি কিছুতেই তাকে বলতে পারছেন না। এখন আপনি আমাদের কাছে এলে আমরা গোয়েন্দাগিরি করে তার পছন্দ অপছন্দ বের করবো। তা আচরণ এনালাইসিস করে আপনার করণীয় জানাবো। তার আবেগের জায়গা গুলো খুঁতিয়ে বের করবো। তাছাড়া প্রেম সংক্রান্ত যে কোন সাহায্য পাবেন। শুধু প্রেম না। অন্য যেকোনো মানুষকে ইমপ্রেস করতেও আমরা সাহায্য করি। কিভাবে করি পুরোটা পড়লে বুঝতে পারবেন। আমাদের সাফল্য এখন পর্যন্ত ১০০ ভাগ। ২, ৩ টা সাফল্যের পরই কিছুটা পরিচিতি পেয়েছি। এখন মূল গল্পে আসা যাক। অফিস রুমে ছেলেটা বসে আছে।

আমি রুমে একটু শব্দ করেই আসলাম ছেলেটাকে প্রস্তত হওয়ার সময় দিতে। সে কী! ছেলেটা দেখি বেল্ট ঠিক করছে! আমাকে আসতে দেখেও সে নির্লিপ্ত ভাবে তার কাজ করে যাচ্ছে। আমি চেয়ারে গিয়ে বসলাম। এ সময় কী কথা বলার নিয়ম আছে? নিশ্চিৎ না হওয়ায় শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। সূক্ষ অপমান হলো, আমার অফিস! কোথায় আমি ভাবে থাকবো তা না ছেলেটা ভাবে আছে। শেষ করার পর আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?’ ছেলেটা একটু এদিক ওদিক তাকালো তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল একটু সন্দেহের কন্ঠে বলল ‘এটাই কী হার্ট ডিটেক্টিভ অর্গানাইজেশন? আর আপনিই কী এখানের হেড?’ আমি বললাম ‘জ্বী!’

ছেলেটা বলল ‘আমি তো ভেবেছিলাম কোন ছেলের হবে অফিসটা।’ আমি হেসে বললাম ‘ডিটেকটিভদের লিঙ্গ নেই, বুঝলেন স্যার! ছেলেটাও হাসলো! আমি বললাম চা খাবেন না কফি? ছেলেটা বলল লেমন জুস। ভাগ্য ক্রমে বাসায় লেবু ছিল। আমি ডাক দিলাম। “সাদিয়া!” সাদিয়া ছেলেটার পেছনে গেটের দিকে এসে দাড়ালো। আমি বললাম “একটা লেবুর শরবত দিয়ে যাও।” অর্ডার করাতে সাদিয়া রেগে ওড়না কোমরে গুঁজতে গুঁজতে চলে গেল! বেচারী নিশ্চই এখন বটির সামনে বসে লেবু কাটছে!

আমিও বুঝলাম পরিবেশটা অফিসের জন্য খুবই বেমানান। রান্নাঘরে নিলিমা তেলাপিয়া মাছ ভাজছে। সেই গন্ধে খারাপ লাগাটা আরো বেড়ে গেল। ছেলেটা জানালো তার নাম কনক। সে একটা মেয়েকে ভালোবাসে। মেয়েটাকে পটাতে সাহায্য করতে হবে। আমি বললাম বেশ তো! ফেসবুক আইডি দিন, নম্বর দিন থাকলে। নাহলে আমরাই বের করতে পারবো। ঠিকানা জানা থাকলে ভালো। নাহলেও সমস্যা নেই। আরো ডিটেলস কিছু বলার থাকলে বলুন।

ছেলেটা বলল, ‘সমস্যা হচ্ছে ও একটা ছেলেকে ভালোবাসে দাঁড়ান! আমি ছেলেটাকে থামিয়ে দিলাম। বললাম আপনি আমাদের নিয়ম পড়েন নি? কারো সম্পর্ক ভেঙে আমরা সম্পর্ক করতে সাহায্য করি না। মেয়েটাকে অবশ্যই সিঙ্গেল হতে হবে। ছেলেটা এবার কাঁদো কাঁদো গলায় বলল ‘আপু প্লিজ একটি দেখেন প্লিজ প্লিজ! ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আর মেয়েটা তো সিঙ্গেলই! ছেলেটা ওর ক্রাশ। ওকে পাত্তা দেয় না!” ছেলেটার অনুনয় বিনয়ে আমার হৃদয় গলিল নাহ। আমিও হার্ট ডিটেক্টিভ! বললাম ছেলেটা তো অন্য মেয়েকে ভালোবাসে। আমার কিছুই করার নেই! ছেলেটা চলে গেল।লেবুর শরবতটা আমি খেয়ে নিলাম! ভাবলাম যাক বিদায় হলো। কিন্তু আপদ সবে শুরু! রাতে ফেসবুকে ঢুকে দেখি আমাদের পেজে ছেলেটা মেসেজ দিয়েছে “আপু!”

আমি সিন করে রেখে দিলাম। কইছুক্ষন পর কনক ছেলেটা দুটো ছবি পাঠালো। একটাতে সুন্দর মদের গ্লাসে এক গ্লাস হারপিক, পাশে হারপিকের বোতল। আর একটা সুইসাইড নোট। “আমার মৃত্যুর জন্য লাভ ডিটেক্টিভ অর্গানাইজেশন দায়ী।” দেখে তো পুরো আকাশ থেকে পড়লাম। তাড়াতাড়ি ছেলেটার নাম্বার খুঁজে ফোন দিলাম। ফোন অফ! পুরো ১০ মিনিট ধরে ফোন দেই ফোন অফ! ফেসবুকে ঢুকে মেসেজ দিতে যাবো তখনি ছেলেটা কল করলো। ধরার পর শুনি ছেলেটা হাসছে! “কি ম্যাম!

এখন করবেন তো কাজটা” আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাবার পরও শান্ত হয়ে বললাম করে দেব। ৩ দিন লাগবে ইনফর্মেশন কালেক্ট করতে। পেমেন্টেও রাজী হয়ে গেল ছেলেটা। আমারো কেমন একটা লাগছিলো, ছেলেটাতো মেয়েটাকে ভালোবাসে, মেয়েটা আবার অন্য ছেলেকে। যেহেতু ওদের মধ্যে রিলেশন নেই, তাই চেষ্টাটুকু করিই!। সাদিয়া আর নিলিমার সাথেও কথা বললাম। ওরাও রাজি। নিলিমা আর সাদিয়ার কথা একটু বলি। নিলিমা এর বিশেষত্ব হলো সে ২৩ টা প্রেম করেছে, আর ২৮ টা ছ্যাকা দিয়েছে। তাই এই দিক গুলাতে ও বেশ এক্সপার্ট। অন্যদিকে সাদিয়া সাইকোলজিতে পড়ে। মনোস্তাত্বিক ব্যাপার  গুলোতে ও বেশ কাজে আসে।

সকাল থেকে কাজ শুরু করে দিলাম। তিনজন মিলে ক্লায়েন্টের টার্গেটেড মেয়েটার আইডির ডাটা এনালাইসিস করা শুরু করে দিলাম। মেয়েটার নাম আনিকা মাহফুজ। বাসা ভাঙাব্রিজ মিরপুর। কনকের বাসাও আসেপাশে। আরো জানা গেল মেয়েটার গানবাজনার শখ! কবিতা ভালোবাসে। আননোন ছেলেদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে না। তার উপর দেশের প্রতি খুব আবেগী! ৪,৫ টা দেশের গান কভার করেছে। মেয়েটা ৮ বছর তার গ্রামে যায় না। এছাড়া আর বিশেষ কিছু জানা গেল না।

ফেসবুক থেকে জানতে পারলাম মেয়েটা বন্ধুদের সাথে শুক্রবার পার্কে গান করে। আজকেও শুক্রবার। সাদিয়াকে নিয়ে চলে গেলাম পার্কে। আনিকা ওর বান্ধবীদের সাথে গান করছে। আমরা গিয়ে বললাম। আপু আমরা একটু বসি আপনাদের সাথে? খুব আন্তরিকতার সাথেই নিয়ে নিল আমাদের। আমিও ওদের সাথে গান করলাম। আমি কিছুক্ষন গিটার বাজালাম। কিন্তু পুরোটা সময়ই সাদিয়া আর আমি ব্যস্ত থাকলাম আনিকার সাথে খাতির করতে। বেশ ভালো সম্পর্ক হলো। আমাদের নম্বর নিয়ে গেল। সেখানে নতুন করে জানা গেল ও একটু ডিপ্রেশনে আছে। মনেহয় যে ছেলেটাকে ওর ভলোলাগে সে পাত্তা দিচ্ছে না! এটা একটা ভালো ক্লু। আমার ক্লায়েন্ট আর আনিকা ফেসবুক ফ্রেন্ড। আর শুধু ফেসবুকেই কানেক্টেড। এই ক্রাশ ছেলেটাকে দূরে সরাতে না পারলে একটু সমস্যা। এই কাজ গুলো করতে ইচ্ছা না করলেও কাজের স্বার্থে করতে হচ্ছে।

আইটি স্পেশালিস্ট নিলিমা, আনিকার ক্রাশ ছেলেটার আইডি হ্যাক করার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। কদিনের মধ্যে নাকি পুরো শিখে যাবে। রেগে টেগে ক্রাশ ছেলেটার আইডি ডিসেবল করে দিলো। ছেলেটার নামে একটা ফেইক আইডি খোলা হলো। আনিকা যথারীতি মেয়েটাকে খুঁজে রিকুয়েস্ট পাঠালো আবার হাইও বলল। ফেইক আইডি থেকে রিপ্লাই দেওয়া হলো “আরে তোমাকে রেগে ব্লক করলাম আবার ২য় আইডিতেও রিকুয়েস্ট পাঠাইছো?আজাইরা যতসব” তারপর আবার ব্লক করা হলো। পথের কাঁটা সাফ! আনিকা তো পুরো ভেঙে পড়লো। এবারের কাজ খুব সহজ কনককে এবার বলা হলো “আপনার কি মন খারাপ” বলে মেসেজ দিতে। বলা হলো বেশি চ্যাটিং করবেন না একবারে।

পরদিন কনককে লাল পাঞ্জাবী পরে প্রোফাইল পিক দিতে বলা হলো। আনিকা লাল পাঞ্জাবী পরা ছেলে পছন্দ করে জানা গেছে। আনিকার পছন্দ অপছন্দের কথা জানানো হলো কনককে। সেই সূত্র অনুসরণ করে দুদিনের মধ্য তাদের সম্পর্ক বেশ ভালো হয়ে গেল। কনক একটা দেশাত্ববোধক গানও শিখলো। গানটা নাকি ও আনিকাকে ফোন দিয়ে শুনিয়েছে। কয়েকটা কবিতা লেখে দিলাম কনককে সেগুলোও সে আনিককে পাঠায়। কনকও দু চারটা লেখার চেষ্টা করে আমাকে দেখালো। আমার ধারণা কনকের গুলো বেশি সুন্দর হয়। কারণ সে তার অনুভুতিটা থেকে লেখে। এই কেসটা খুব একটা কঠিন ছিল না।

বাকীটা কনকই সামলে নিল। কনক মাঝে মাঝে আমাকে খবরাখবর বলত। প্রচন্ড খুশি হয়েছে সে। একদিন বিকেলে সাদিয়া আর নিলিমাকে বললাম রেডি হ। এক জায়গায় যাবো। কোথায় যাবো বললাম না। একটা রাস্তার এক কোনায় তিনজন দাঁড়িয়ে আছি। একটু দূরে আনিকা এসে দাঁড়ালো। আমাদের দেখেনি। ৭ মিনিটের মাথায় কনকও আসলো। ওরা দুজনে লাজুক ভঙ্গিমায় মিনিট দু এক কথা বলে রিক্সায় করে কোথাও একটা চলে গেল। আমরা তিনজন দাঁড়িয়ে দেখলাম। সাদিয়া বলল ” দোস্ত আমাদের কাজটা কিন্তু খুব একটা খারাপ না!” আমি আর নিলিমা একসাথে বলে উঠলাম “হ্যাঁ।”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত