তানিশা

তানিশা

আশিক আড়াই বৎসরের সম্পর্কে প্রথমবারের মতোন আশ্চর্য হলো, যখন শুনলো তানিশা বাথরুমে গিয়েছে। সে ফোন কানে চেপে চিৎকার করলো, ‘অসম্ভব, এ হতে পারেনা। আমি বিশ্বাস করিনা’। তানিশা বাথরুম থেকে ফিরে এসে ফোন কানে চেপে বললো, ‘কি হইছে, কি বিশ্বাস করোনা?’ ‘তুমি বাথরুমে গিয়েছ?’ ‘হ্যাঁ’ ‘কেন?’

তানিশা আশ্চর্য হলো। রাগ উঠলো ওর। জিজ্ঞেস করলো, ‘কেন মানে? মানুষ বাথরুমে কেন যায়?’ আশিক একহাতে কপাল টিপে ধরে হতাশ স্বরে বললো, ‘তারমানে তুমিও… ওহ গড! আমি বিশ্বাস করিনা’। তানিশা বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিলো। এইদিকে আশিকের অবস্থা খারাপ। সে ঘরের ভেতর ভাঙচুর করলো। লাথি মেরে টিভি ভেঙে ফেললো। বেসিনের পাইপটা ছিঁড়ে এনে বাড়ি দিয়ে জানালার কাঁচ ভেঙে ফেললো। আর মুহুর্মুহু চিৎকার করলো। আমি বিশ্বাস করিনা। আমি বিশ্বাস করিনা।

আশিককে আমি দেখতে গেলাম হসপিটাল। তাকে বেঁধে রাখা যাচ্ছেনা। দুইবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ঘটনা কি কেউ বুঝতে পারছেনা। আমায় দেখে আশিক গলা ছেড়ে কাঁদলো। বললো, ‘আয় দোস্ত, বস। ধোঁকা খেয়েছি আমি। এতবড় ধোঁকা খাবো জীবনে ভাবিনি’। আমি বুঝলাম তানিশার সাথে গন্ডগোল হয়েছে। বললাম, ‘তানিশা কি করছে?’ আশিক হসপিটালের কামরা থেকে সবাইকে বের হয়ে যেতে বললো। সবাই বের হতেই আমার একহাত চেপে ধরে হতাশ স্বরে বললো, ‘তানিশা বাথরুমে যায়’। আমি থতমত খেয়ে বললাম,

‘তো?’
‘তুই বুঝতে পারছিস না? তানিশাও মলত্যাগ করে। ইয়াক’। আমি হাউমাউ করে কাঁদবো কিনা ভাবছি। আশিকের ভাবনা চিন্তা অন্য লেভেলের জানতাম। লেভেলটা যে পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশে পৌঁছে গেছে আজ জানলাম। আমি ধমক দিয়ে বললাম,

‘তুই হাগু করিস না?’
‘করি’
‘তো তানিশা মানুষ না?’
‘তুই কি বলিস এইসব? তানিশার সাথে হাগু যায়? ইয়াক। এমন অশ্লীল নোংরা একটা কর্ম সে করে, আমি ভাবতে পারছিনা দোস্ত। গা ঘিন ঘিন করছে। এতবড় ধোঁকা দিলো সে আমায়? পরীর মতোন সুন্দর একটা মেয়ে। আর হাগু! ওহ গড… বালতি দে, বমি আসছে আমার’।

আমি অসু্স্থবোধ করলাম। এই হারামজাদার সাথে থাকলে আরেকটা কামরা নিতে হবে হসপিটালে আমারও। তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলাম। আশিকের সুস্থ হতে এক সপ্তাহের মতোন লাগলো। তানিশা টের পেলনা কিছু।
আশিক অনেক কষ্টে নিজেকে বুঝালো যে তানিশাও মানুষ। যথেষ্ট সুন্দরী, পরীর মতোন একটা মেয়ে, পরিপাটি, গা ভর্তি স্বর্গীয় আভা- কিন্তু তারও বাথরুমে যেতে হয়। খোদা সবাইরে এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। এটা স্বাভাবিক। ভীষণ স্বাভাবিক।

এক সপ্তাহ পর আশিককে আবার হসপিটালে ভর্তি হতে হলো। আবার ঘরের ভেতর ভাঙচুর করেছে সে। একবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে। লাইট ভেঙেছে দুইটা, নতুন টিভিটা বারান্দা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। আমি ভয়ে ভয়ে দেখতে গেলাম ওকে। ওর মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। স্যালাইন লাগানো। হা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আমায় দেখে কাতর স্বরে বললো, ‘আয় দোস্ত বস, তানিশা ধোঁকা দিলো রে সইতে পারছিনা’।

আমি ইশারা করতেই কামরার সবাই বাইরে গেল। আমি মুখ কঠিন করে বললাম, ‘শুন, সব মানুষেরই খাদ্য খেতে হয় বেঁচে থাকার জন্য। পেটের ভেতর ওটার ভিন্ন কার্যপ্রক্রিয়া আছে। আর নির্গমনেরও। তুই তোর প্রেমিকাকে প্রচণ্ড ভালোবেসে যা কিছু ভাবতে পারিস ভাব, কিন্তু মানুষের কাতারে রেখে ভাবিস। সেও আর দশটা মানুষের মতোন। তোরে চোখ বন্ধ করে সাজেক নিয়ে যাবে কল্পনায়, ছেঁড়া দ্বীপে ঘুরবে তোকে নিয়ে, বালু মাখাবে দু্হাতে, পায়ে। রাগ করবে, ঝগড়া করবে, ভুল করবে, ক্ষমা করবে, আদর করবে, স্বপ্ন দেখাবে একলক্ষ একটা। ভালোবাসবে। কিন্তু দিনশেষে সেও একটা মানুষ। তোর মতোন একটা সাধারণ মানুষ। বুঝলি?’ আশিক মন দিয়ে শুনলো আমার কথা। তারপর হতাশ মুখে বললো, ‘ওর ঠাণ্ডা লাগছে’।

‘তো কি হইছে?’ ‘তুই বুঝতে পারছিস না। এত সুন্দর একটা মেয়ে, রুপবতী গুণবতী। একটু রোদে গেলেই মুখ লালচে হয়ে আসে, গোলাপী আভা ঠিকরে বের হয়.. কপালে লেগে থাকে হীরের টুকরোর মতোন ঘাম। ভাব এখন.. এই চমৎকার মেয়েটির গলার স্বর পাল্টে গেছে, নাকে সর্দি জমে আছে.. ইয়াক। আমি কল্পনাও করতে পারছিনা। বালতিটা দে, বমি করবো আমি হসপিটাল ছেড়ে এলাম। ছাগলটার নাম্বার ডিলিট করলাম। আর ওর সামনে আসা যাবেনা। সঙ্গদোষে লোহা ভাসে। দেখা যাবে আর দুইদিন ওর সাথে থাকলে আমিও আমার পাখিটারে জিজ্ঞেস করে বসবো,

‘বাবু, তুমি নাক ঝাড়ো? আগে তো কখনো বলোনি। এতবড় ধোঁকা! ইয়াক আশিকের আর কোনো খবর আমি রাখিনি। বেচারি তানিশার জন্য মন খারাপ হতো মাঝে মাঝে। প্রচণ্ডরকম ভালোবাসা একটা ব্যাধি। এটি মানুষকে ছাগল বানিয়ে ফেলে। আশিক হারামজাদা আমায় ভুলেনি। ঠিক এক সপ্তাহ পর আননোন একটা নাম্বার থেকে ফোন এলো। আমি ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলাম, ওপাশ থেকে একটা হতাশ কন্ঠস্বর ভেসে এলো, ‘দোস্ত এতবড় ধোঁকা বেঁচে থাকতে আর খাইনি। তানিশা ছ্যাপ ফেলে…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত