শুকনো পাতা

শুকনো পাতা

ভরা মজলিশের মাঝে বায়ুদূষণ করেছে মোখলেস। সবাই যেখানে নাক চেপে বসে আছে মোখলেস সেখানে মুড়ির ঠোঙ্গা নিয়ে মুড়ি খাচ্ছে। ব্যাপারটা দেখে সবাই অবাক হচ্ছে। আমি মজলিশের সভাপতির কানেকানে বললাম এই আকামডা মোখলেস করছে। সভাপতি রেগে-মেগে তাকালেন মোখলেসের দিকে৷ কিন্তু মোখলেসের কোন ভাবান্তর নেই। সে আপন মনে মুড়ি খাচ্ছে। সভাপতি ধমকের সুরে ডাকলো….

-এই মোখলেস, হারামজাদা দাঁড়া। মোখলেস ধমক শুনে মুড়ির ঠোঙ্গা রেখে উঠে দাঁড়ালো। বেচারা মুড়ি খাওয়ার সময় কোমড়ে লুঙ্গির বাধন খুলেছিল। দাঁড়ানোর সাথে সাথেই লুঙ্গী খসে নিচে পরলো। ভাগ্যিস নিচে প্যান্ট ছিলো। মোখলেস ঠিক করে লুঙ্গী পরতেই সভাপতি আবার ধমক দিলো। মোখলেস আন্সার বাহিনীর মতন সেলুট করে বলল….

–উপস্থিত স্যার কাকে অ্যারেস্ট করব?

-তুই বায়ুদূষণ করেছিস?
–বায়ুদূষণ কি স্যার?
-এই গন্ধ কে সৃষ্টি করেছে?
–স্যার আমি, গতকাল মুলা তরকারি দিয়ে ভাত খেয়েছি। হেব্বি টেস খাবেন? সভাপতি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালেন। মোখলেস ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পকেট থেকে আতর বের করে বলল….
–সরি স্যার এই নেন আতর। আর গন্ধ থাকবেনা।
-ফাজলামো করছিস?
–নো স্যার, আতর দিলে গন্ধ থাকবেনা।

সভাপতি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। মোখলেস ভয় পেয়ে ফাল দিয়ে লুঙ্গী ধরেই দৌঁড়। সভাপতিকে অবাক করে দিয়ে আমিও মোখলেসের সাথে দৌঁড়। ফোন করে আব্বার কাছে সভাপতি মোখলেসের নামে বিচার দিয়েছে। শাস্তি হিসেব মোখলেসকে আব্বা ১ কেজি কাচা মুলা খেতে বলেছে। না খেলে ওর ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা হবে। ভয়ে মোখলেস মুলা খেতে রাজি হয়েছে। পা মেলে বসে মোখলেস কচকচ করে মুলা খাচ্ছে। আব্বা পাশেই লাঠি হাতে বসে আছে, তেরিবেরি করলেই বারি। মোখলেস অসহায় দৃষ্টিতে আব্বাকে বলল….

–চাচা আর খামু না। পেট ফুলে গেছে….
-তাহলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
–আচ্ছা খাইতেছি।

বেচারা পরেছে মাইনকা চিপায়। অনিচ্ছায় স্বত্বেও মুলা খাচ্ছে। ছোট ভাই সাইফ এসব দেখে লাইভে গেলো। লাইভে গিয়ে ক্যামেরা অন করে বলা শুরু করলো ‘হাই প্রেন্ড, আই অ্যাম সাইপ বিডিও। আমি একন আমাদের বাসায়, এই দেখুন মোখলেস কচকচ করে মুলা খাচ্ছে। পাশেই আব্বা লাঠি নিয়ে বসে আছে।’ মোখলেসকে লাইভে দেখানো হচ্ছে। সে খুব খুশি, সেও সাইফের সাথে বলল ‘হেলো প্রেন্ডু, আই অ্যাম মুলা মোখলেস। এই দেকুন আমি মুলা খাচ্ছি, খুব টেশশশশ!’ ওদের কাহিনী দেখে আমি, আম্মা আর রোদেলা হাসতে হাসতে শেষ৷ কিএক্টাবস্থারে তালোই সবশেষে আব্বাও মুচকি হেসে মোখলেসকে মাফ করে দিলো। এককেজি মুলা খাওয়ার ফলে মোখলেসের পেট ট্যাপা মাছের মতন ফুলে টুমটুমা হয়েছে। বিছানায় শটাং হয়ে শুয়ে আছে মোখলেস। রোদেলা মোখলেসের পেটের উপর বসে ডুগডুগি বাঁজাচ্ছে। ড্যাবড্যাব শব্দের উৎপন্ন হচ্ছে। আমি অবাক হয়ে বললাম….

-এসব কি?
–ঢোল বাজাই।
-নাম পেট থেকে, ব্যথা পাবে।
–রুবেল ভাই থাক, ব্যথা পাবনা, ও বাচ্চা মানুষ। আমারো ভালো লাগছে..(মোখলেস) কিছু বলতে যাব তারই মধ্যে আব্বা হাজির। হাতে ৫০০ টাকা গুজে দিয়ে বলল….
–তোর বড় ফুফু আসবে আজকে, যা নিয়ে আয়। বলেই আব্বা চলে গেলেন। মোখলেস চোখ বড়বড় করে বলল….

-ভাই চলেন এখনি!
–শ্লা বাটপার তোমায় নিব কেন?
-ভাই এমনে কন কেন? ইজ্জতে লাগে।
–আচ্ছা, তয় ফাইজলামি করবিনা।

মোখলেসও রাজি। যথাসময়ে আমরা বাসস্ট্যান্ডে চলে আসলাম। ফুফুর বাসায় যেতে ২ ঘণ্টা লাগে বাসে করে গেলে। টিকিট কেটে বাসে বসলাম বাস ছাড়তে দেরি হবে। মোখলেস বলল…..

–ভাই একটু আসি ৫ মিনিট।
-আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসিস।

মোখলেস চলে গেলো। আমি ভাব মেরে বসে পরলাম। বাসে একদল মহিলা উঠলল। দেখেই বোঝা গেলো এরা কোন একটা সংগঠনের কর্মী। এদের সাথে একটা হাতিসাইজ মোটা মহিলাও উঠেছে৷ যাইহোক আমি আমার মতন বসে আছি। কিছুক্ষণ পর মোখলেস আসলো৷ ওর হাতে ব্যাগ বললাম….

–কিরে ব্যাগে কি?
-ভাই ফুটপাত থেকে কয়েকটা জাইঙ্গা কিনে আনছি, বাসে বসেবসে যাওয়ার চেয়ে বিক্রি করলে ভালো হবে।
–তোরে কইছিলাম কোন ফাজলামো করবিনা।

মোখলেস আমার কথার গুরুত্ব দিলো না। ব্যাগ থেকে জাইঙ্গা বের করে বলা শুরু করলো…’লন ভাই লন, দেইককা লন বাইচ্চা লন আমানত শাহ জাইঙ্গা। একদাম ২০ টাকা, একদম মুড়ির দামে দিছি।’ এসব বলেই মোখলেস সেই মোটা মহিলা কাছে গিয়ে বলল….

–আফা লন এক্কেবারে ডিসকাউন্ট, ভাইকে এটা দিয়েন মাত্র ২০ টাকা।
-এই রাবিশ যাবি!?
–রাগ করবেননা আফা, ফুরাই গেলে পাবেননা। একদম স্বস্তা লইয়া লন।

মোখলেসের পেঁচাল মনেহয় মহিলার সহ্য হলোনা। মোখলেসের কলার ধরে ধারার করে মারলো ঘুষি। সাথেসাথেই সব মহিলা চেচিয়ে উঠলো৷ একজন উড়ে এসে মোখলেসের মাথা বগলের নিচে ঠেসে ধরে শুরু করলো ঘুষি। মোখলেস নানাগো, খালাগো, মাগো বলে চিক্কুর৷ অবস্থা বেগতিক থেকে আমি বাসের জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে নেমেই দিলাম দৌঁড়৷ “সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত