আপুর প্রাংক

আপুর প্রাংক

‘রুবেল আমার সাথে দেখা করিসতো, তোকে আজ ট্রিট দিব।’ রোকসানা আপুর কথা শুনে বেশ শিহরিত হলাম। যে মেয়ে খাওয়ানোর ভয়ে আমার সাথে দেখা করেনা। ১০ হাত দূর থেকেই কথা বলে সে মেয়ে নাকি ট্রিট দিবে। হাই জোকস অফদা ডিজিটাল যুগ। আমি টিটকারি মার্কা হাসি দিয়ে বললাম….

–হপপ…ফাজলামো করস?
-১০ টা পাঁচটা না, তুই আমার একমাত্র পরানের ভাই তরে ট্রিট দিমুনা তো কারে দিমু ক?

আপুর মুখ থেকে এত সুন্দর কথা শুনে টাস্কি খেলাম। মনেমনে বললাম ওরে চিটার, ওরে বাটপার। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম….

–তোর মাথা ঠিক আছে?
-কুত্তা তর লগে আমি মস্কারা করমু?
–যেই খচ্চরের খচ্চর তুই তরে বিশ্বাস করুম কেমনে ক?
-বিশ্বাস না করলে জুতা পেটা করুম তরে হারামি।
–বাদ দে, এবার বল কাহিনী কি?
-কোন কাহিনী নেই।
–তাহলে ট্রিট দিবি কি উপলক্ষে?
-গাধা তুই আমার ভাই, আর ভাইকে আমি ট্রিট দিব।

আবেগে চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল বেরুলো৷ আহরে আজ আমার আপু আমায় ট্রিট দিবে। এই খুশী কই রাখি? আপুতো আবার দিবেনা ফাঁকি? নাহ আপু খচ্চর হলেও মেয়ে ভালো। আপুকে বললাম….

–তো কখন দেখা করবি?
-তুই এখনি রেডি হয়ে রেস্টুরেন্টে আয়।
–আচ্ছা।

আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। কতক্ষণ ঘুরে ঘুরে ঘুরান্টি ডান্স দিলাম। তারপর গোসল করে পারফিউম মেরে রেস্টুরেন্টে গেলাম। আপু আগে থেকেই রেস্টুরেন্টে বসে আছে। আমায় দেখে আপু তেইল্লাচুরা মার্কা হাসি দিলো। আমিও বিনিময় হাসি দিলাম৷ চেয়ারে বসে পরলাম আপু বলল….

–কেমন আছিসরে কলিজার ভাইয়ুটা?
-ফাম দিসনা ফাম দিসনা, এমনেই ফাম দিয়া মাঠে নামাইছস।
–কি বললি? আবার বলতো?
-আরে মজা করলাম। ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?
–আলহামদুলিল্লাহ।
-আচ্ছা আপু ট্রিট যে দিবি টাকা পাইলি কই?
–পাত্র পক্ষ দিয়েছে।

-কসকি? তারমানে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে? বিয়ের ট্রিট!
–আরে গাধা না। আমাকে দেখতে এসে পাত্র পক্ষ তিনহাজার টাকা দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে ট্রিট দিব।
-ওরে বাটপার…!
–এখানে বাটপারির কি হলো? ওরাতো টাকা ফেরত চায়নি, আর আমি কেন দিব? আমার পাওনা টাকা ওটা।
-দুলাভাই দেখতে কেমন?
–ধুর ছেলে পছন্দ হয়নি, না করে দিছি।
-আর তুই ওদের টাকা দিয়ে ট্রিট দিবি?
–তুই না খেলে চলে যা।
-না খামু, অর্ডার কর।

আপু অর্ডার করলো। আমি বিরিয়ানি দিতে বললাম। বিরিয়ানি দিলো। মনের খায়েশ মিটিয়ে বিরিয়ানি খাচ্ছি। আপুও আমার তালে তালে খাচ্ছে। এও দেখি বিরিয়ানি খোঁড়। বোন বলে কথা। আপুর খাওয়া শেষ হলে বলল…..

–তুই বোস, আমি একটু আসছি।
-কই যাবি?
–আসছি তুই বোস এখানে, আর যা যা লাগে খা। বিল আমি দিব।

বলেই আপু উঠে চলে গেলো। আমি বিরিয়ানি খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। আপু যাওয়ার পরে, পরপর ৫ প্লেট বিরিয়নি খেলাম। পেট মোটামুটি ভরেছে। আমি ভং ধরে বসে রইলাম। ওয়েটারকে ডেকে দই, মিষ্টি আনতে বললাম। ওয়েটার আনলো আমিও পেটপুরে খেলাম। বহুদিন পর খেয়ে শান্তি পেলাম। কিন্তু আপু আসছেনা। অনেকক্ষণ পার হলো ওয়েটার এর মাঝে দু’বার এসেছিল বিল দেওয়ার জন্য। ২৫০০ টাকা বিল হয়েছে। আমি আপুকে কল দিতেই দেখি ফোন বন্ধ। বুকটা ধুক করে উঠলো। তেশ মারছেরে! আপু কই গেলো? বিল কে দিবে। আমার কাছেতো একটা টাকাও নাই, এখন উপায়? আমি ক্যাশিয়ারের সামনে গিয়ে বললাম….

–ভাই এখানে যে একটা মেয়ে আমার সাথে বসেছিল উনি কোথায়?
-ওহ ঐ মেয়েটা। সেতো অনেক আগেই চলে গেছে।
–কোথায়?
-তাতো জানিনা, বলল তার নাকি জরুরি কাজ আছে। আর বিল আপনি দিবেন।

ম্যানেজারের কথা শুনে আমি মাথায় হাত দিলাম। এ কি হলোরে খালু? দুঃখে মুখটা হয়ে গেলো কালু। মনডায় চায় কচকচ করে খাই বালু। আমি বললাম…..

-কিন্তু বিলতো আপু দেওয়ার কথা, আপনাকে বিল দেওয়ার তো কথা ছিল।
–দেখুন ভাই উনি আপনাকে বিল দিতে বলেছে। আর এসব ভোংবাজি আমাকে দেখাবেন না। খুবতো খেলেন ইচ্ছেমত, এবার বিলটা দিয়ে চলে যান।

-কিন্তু আমার কাছেতো টাকা নাই।
–টাকা না দিলে আপনাকে বেঁধে রাখা হবে।

এক কথা দু’কথা ম্যানেজারের সাথে ঝগড়া লাগলো। বেশি কথা বলাতে দু’একটা উত্তম মধ্যমও দিলো। রোকসানা আপুর উপর মেজাজ খারাপ হলো। হারামজাদি তোকে সামনে পেয়ে নেই, কিলিয়ে পিঠ কুঁজো বানাবো। পকিং করে একটা মেসেজ আসলো মোবাইলে। রোকসানা আপু মেসেজ দিয়েছে। সুন্দর করে লেখা…’কলিজার ভাইয়ুগো এটা প্রাংক ছিল। সরিরে মাফ করিস, আর বিলটা দিস।’ ২৫০০ টাকা বিল না দেওয়াতে ম্যানেজার আমার মোবাইল ফোন রেখে দিলো। আহারে আমার নতুন ফোন, বললাম…..

–ভাই আমি বাসায় গিয়ে আপনার টাকা দিব, প্লিজ আমার নতুন মোবাইল নিয়েননা।
-এসব এখানে চলবেনা, ভালোই ভালোই টাকা দিবি, নইতো মোবাইল দেওয়া হবেনা।

ম্যানেজারের এককথা সে বিল না দিলে মোবাইল দিবেনা। আর এও বলে দিছে বেশি তেরি বেরি করলে পুলিশে দিবে। তাই ভয়ে চুপসে গেছি। কি এক মাইন চিপায় পরলাম বাল! এজন্য মেয়ে মানুষকে বিশ্বাস করতে নেই। অবশেষে ম্যানেজার একটা উপায়ে আমার বিল মাফ করার জন্য রাজি হলো আর তা হচ্ছে আমাকে রেস্টুরেন্টে পাঁচদিন ওয়েটারের কাজ করতে হবে। উপায়তো নাই, তাই করতে হবে। বাসায় আব্বাকে বললে কুপাবে। তাই কাজ করতে রাজি হলাম।

আজ আমার কাজের ৩ দিন হলো। আর দুইদিন করলে মোবাইল ফোন ফেরত দিবে। বিলও মাফ করে দিবে। খুব শিঘ্রই এই জেল থেকে ছাড়া পাব। এখন উদ্দেশ্য একটাই রোকসানা আপু, তোকে সামনে পেয়ে নেইরে হতচ্ছাড়ি…তারপর দেখমু। কতধানে কত চাল৷ পরে নিজেই ভাবলাম কি আর করমু? আপুইতো হয়, গায়েও তো হাত তুলতে পারবনা। এমন মাইনকা চিপায়তো জীবনেও পরিনি বাল।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত