সেদিন পতিতালয় গিয়ে নিলাকে দেখে অনেকটা অবাকই হয়েছিলাম! যে মেয়েকে এতো ধুমধাম করে ওতো বড়লোক শিক্ষিত ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলো আর আজকে সেই মেয়ে পতিতালয়ে কিছু অমানুষকে সুখ দিতে ব্যাস্ত! হ্যাঁ আমি নিজেকে অমানুষই মনে করি কারন আমিও নিজের সুখের আশায় পতিতালয়ে আসা যাওয়া করি! পতিতালয়ে কোনো ভালো মানুষ যায় না! যারা যায় তারা হিংস্র পশুর মতো নিজের ভীতরের খিদা মিটাতে যায়।
সেদিন নিলাকে দেখে ওর দুটি নয়নের দিকে একনজরে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমার মুখ থেকে সেদিন কোনো শব্দ বের হয়নি। অবাক দৃষ্টিতে নিলাকে দেখছিলাম। মনের মধ্যে বার বার একটা প্রশ্নয় নাড়া দিচ্ছিলো কি এমন হয়েছিলো তার পরিপ্রেক্ষিতে নিলা আজ পতিতালয়ে। এখানে তো কোনো শিক্ষিত ভদ্র ফ্যামেলির বউ আসতে পারে না। আমার ডুবে থাকার চিন্তায় নিলার কথায় একটু নড়েচড়ে উঠলাম।
— কি ভাবছেন বাবু? কিছু টাকা বাড়িয়ে দিয়েন বেশি করে সুখ দিবো!
নিলার এমন কথাতে অবাক হলাম না, এখানে যারাই কাজ করে তারা বেশি টাকার আসায় বাবুদের কে এভাবেই সুখের লোভ দেখায়। আমি এগুলো শুনে অভ্যাস্ত। কারন এখানে আমার প্রতি নিয়তই আসা যাওয়া হয়। সেদিন নিলার সাথে কিছু না করেই বাসায় ফিরে আসছিলাম। সেখানে নাকি নিলাকে সবাই সুন্দরী বানু বলে চিনে। অনেক বাবুদের সুখের মনি নিলা! গত তিন বছর যাবত নিলা পতিতালয়ে কাজ করছে, এই পতিতালয়ে মাত্র দুই দিন যাবত কাজ শুরু করছে। গত এক সপ্তাহ যাবত আমি এখানে আসি না যার কারনে হয়তো নিলাকে দেখি নাই। নতুবা এই পতিতালয়ে কোনো নতুন মেয়ে আসলেই আগে আমি আমার সুখ মিটিয়ে নিই।
ছোট বেলায় যখন কিছুটা বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই দেখতাম আব্বা রাতে ঢুলতে ঢুলতে বাসায় আসতো আর অনেক নোংরা ভাষায় মাকে গালীগালাজ করতো। প্রতিদিনই দেখতাম আব্বু নিজের প্যান্টের বেল্টটা খুলে আম্মুকে মারতো। আম্মু যন্ত্রণায় চিৎকার করতো আমি কিছু বলতে পারতাম না ভয়ে আলমারির এক কোণাতে লুকিয়ে থাকতাম। একদিন রাত্রে আমি সুয়ে আছি, আব্বু আবার গালিগালাজ করতে করতে রুমে আসলো, আব্বুর কথার আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেলো তবুও আমি ঘুমের ভান ধরে কাথাটা শক্ত করে শরীরের সাথে পেঁচিয়ে সুয়ে ছিলাম। হঠাৎই আম্মুর ওমা বলে চিৎকারে লাফ দিয়ে বসে পরলাম। নিচে তাকিয়ে দেখি পুরো মেঝে রক্তে রাঙানো। আম্মু চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে। আব্বুর দিকে তাকিয়ে দেখি আব্বুর হাতে ভাঙা কাঁচের বোতল।
সেদিন আমি ভয়ে কিছুই বলতে পারছিলাম না। শুধু দেখলাম আব্বু তাড়াতাড়ি দৌড় দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো! তখনো বুঝতাম না মৃত্যু কাকে বলে। সকালে সবাই এসে আম্মার পড়ে থাকা দেহটা নিয়ে চলে গেলো। সবাই আমার কাছে রাতের ঘটনা জিজ্ঞেস করলো কিন্তু সেদিন আমি কাউকেই কিছু বলতে পারি নি। ছোট চাচার বাসায় কিছুদিন আমাকে থাকতে দিলো। কিন্তু প্রতিদিনই দেখতাম ছোট চাচি আমাকে নিয়ে চাচার সাথে ঝগড়া করছে। আমার সব চাচাতো ভাইরা স্কুলে পড়তে যেতো আমিও একদিন চাচিকে গিয়ে বললাম,,
— চাচি আমিও রাকিব ভাইয়ার সাথে স্কুলে যাবো! আমার অনেক শখ স্কুলে যাওয়ার!
— তোর স্কুলে যাওয়ার শখ হয় মরার শখ হয় না? তোর মার সাথে মরে গেলোও তো পারতিস, তাইলে তো আমার এতো তাপজ্বালা সইতে হতো না! আমার কথার বিপরীতে চাচি এই কথা গুলো বললো!
সেদিন চাচির মুখে ওই কথা শুনার পরে কখনো আর চাচা চাচির সামনে স্কুলে যাওয়ার কথা মুখি আনি নি। শুধু প্রতিদিন দূর থেকে তাকিয়ে স্কুলে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের দেখতাম। অনেক ইচ্ছে করতো তাদের সাথে হাতে হাত রেখে স্কুলের জামা পরে খেলাধুলা করি। দিন শেষে ঘাম মাখা জামা এনে মাকে বলি আম্মা আমার জামাটা ধুয়ে দাও। আমাকে নিয়ে চাচা চাচির মাঝে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। একদিন এমনি আমাকে নিয়ে চাচা চাচির মধ্যেকার কথা কানে আসলো,,
— তুমি ওই ছেলে কে আজই বাসায় থেকে বের করে দাও। আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না তুমি আজই বাসায় থেকে বের করে দাও তোমার খুনি ভাইয়ের ছেলেকে।
— আমি কিভাবে বের করে দিবো বলো, যতই হোক আমারই তো বড় ভাইয়ের ছেলে। নতুবা কবে বের করে দিতাম।
কথাটি চাচা চাচিকে কমল সুরে বললো।
— তোমার বড় ভাই। লজ্জা করে না একজন খুনিকে বড় ভাই বলতে? মদ গিলে এসে একটা জন্ম দিছিলো এখন দায়ভার পড়ছে আমার ঘাড়ে। তুমি যদি আজকে ওই ছেলেকে না বের করে দাও তাহলে আমি কিন্তু ওই ছেলেকে খুন করবো বলে দিলাম। কথাটি বলেই চাচি মেঝেতে পরে থাকা বোটিটা হাতে নিলো।
চাচির হাতে বোটি এবং খুনের কথা শুনে সেই রাতের দৃশ্য মনে পড়ে গেলো। ভয়ে বাসা থেকে এক দৌড়ে বের হয়ে আসলাম। সেই যে বের হলাম আর কখনো চাচা চাচির বাসায় ফিরি নাই। সেই রাতটা একলা রাস্তায় কাটিয়ে দিলাম। ছোট ছিলাম বলে তেমন ভূতের ভয় পেতাম না। ভূত কি বুঝতাম না তাই রাস্তায় রাত কাটিয়ে দিতাম। ধিরে ধিরে বুঝতে শিখলাম। খুদা লাগলে কখনো কারো পোকেট থেকে ম্যানিব্যাগ বা মোবাইল চুরি করে বিক্রি করে কইদিনের খুদা মিটাতাম। এমন কেউ ছিলো না যে এসে বলবে তার বাসায় একদিন খেতে। চোখের সামনে অনেক মেয়েকে ধর্ষণ হতে দেখেছি। তখন থেকেই মেয়েদের প্রতি অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতো। বুঝতে চাইতাম কি এমন আছে মেয়েদের কাছে যা দিয়ে এতো সুখ পাওয়া যায়। তখন থেকেই পতিতালয়ে যাওয়া আসা করতাম।
একদিন এক ভদ্রলোকের পকেট মারতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলাম। লোকটির সাথে একটা মেয়েও ছিলো। মেয়েটির জন্যই ধরা পড়ে গেছিলাম। পরে অবাক হলাম ভদ্রলোকটি আমাকে কিছুই করলো না। শুধু বললো বাবা শরীর স্বাস্থ্য ভালো আছে সৎ পথে রোজগার কর। মেয়েটিও কিছু জ্ঞান দিয়ে চলে গেলো। অবাক হলাম এর আগেও অনেকবার চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছি অনেকের হাতে মারো খেয়েছি কিন্তু এরা কিছু না বলে জ্ঞান দিয়েই চলে গেলো। সত্যি কথা বলতে মেয়েটিকে দেখেই ভালো লেগে গেছিলো। ভালোবাসা কি তখন বুঝতাম না। কখনো কারো সাথে ওই ভাবে মেশা হয়নি। তবে মেয়েটিকে দেখার পরে ভালোলাগা টা বুঝতে শিখলাম।
এরপর থেকে মেয়েটিকে ফলো করতে শুরু করলাম। কখনো সামনে গিয়ে কথা বলতে না পারলেও দূর থেকে দেখতাম। তখন আমার দুইটা কাজ ছিলো মেয়েটিকে ফলো করা আর ধান্দা করে টাকা রোজগার করা। পরে মেয়েটির বিষয়ে সবকিছু জানতে পারলাম মেয়েটি কোথায় থাকে কি কিরে এবং মেয়েটির নাম কি। মেয়েটির নাম ছিলো নিলা। এভাবে দুই মাস চলে গেলো। নিলাকে দেখার পর থেকে আমার মধ্যে একটা পরিবির্তন লক্ষ্য করলাম। নিলাকে দেখে আমার আর অন্য মেয়েদের ভালো লাগতো না।
সব সময় নিলাকে অনুভব করতাম। এই দুই মাসে একদিনো আমি পতিতালয়ে যায়নি। ছোট বেলা থেকে রাস্তাঘাটে থাকার কারণে মনের মধ্যে ভয়টা কাজ করতো না। কাউকে ভয় পেতাম না। নিজের মন মতো চলতাম। একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম নিলাকে মনের কথাটি বলে দিবো। সেই ভেবে সন্ধ্যায় নিলাদের বাসার দিকে গেলাম। কিন্তু সেদিন আরো একটি দুঃখ পেলাম। সেদিন নিলার বিয়ে ছিলো। আমি যখন নিলাদের বাসায় গেলাম নিলার তখন অন্য একটা ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে। বধুসেজে নিলা ছেলেটির পাশে বসে আছে। পরে অন্য কারো থেকে জানতে পারলাম ছেলে অনেক বড়লোক এবং অনেক শিক্ষিত পরিবার।