-আজ এতো দেড়িতে ফোন দিলেন যে?
-ইচ্ছে করেই।
-ইচ্ছে করে!কেন?
-আমার দেড়িতে আপনি ফোন দেন কি না, এইটা দেখার জন্যে।
-তো,এখন কি বুঝলেন?
-কিছুই বুঝিনি।তবে এখন থেকে আর আপনাকে ফোন দেবো না।আমি যে ইচ্ছে, অনুভূতি, আগ্রহ নিয়ে আপনার সাথে কথা বলি আপনি সেভাবে বলেন না।নইলে আজ আমার দেড়িতে আপনি নিজেই ফোন দিতেন।
-কিন্তু আমি আপনার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম।
-আমিও ছিলাম।ফোনের অপেক্ষায়। আপনার।বাই।
কথাটি বলে আমি আর দেড়ি করলাম না।ফোনটা রাখতে রাখতে বেলকুনির দিকে এগিয়ে গেলাম।আজ চাদটা তার পুরো সৌন্দর্য নিয়েই এসেছে।কিন্তু চাদ দেখা আমার নেশা নয়।আমি চাদে কিছু দেখতে পাই না।এটা দেখলে কি হয় আমি সেটাও জানিনা।অনেকের নাকি চঁাদ পছন্দ।তারা এতে অনেক কিছুই দেখতে পায়,বুঝতে পারে কিন্তু আমি পারিনা।
চারুর সাথে আমার প্রথম পরিচয় বদন বইয়ে।চারুর আইডিটাতে ঢুকতেই ওর ফোন নাম্বারটা ভেসে ওঠে।এই ফেসবুকে ফোন নাম্বার পাবলিক করে রাখাটা মোটেই সুখকর নয়।তারউপর কোন মেয়ে হলে তো আরও নয়।এতে করে নাম্বার ছড়িয়ে পড়ার ভয় থাকে।আস্তে আস্তে বাজে ছেলেদের হাতে চলে যায়। তারাও খুব ভদ্রভাবে লাগাতার ফোন দিতে থাকে।কেওবা ফোন ধরার পর ভালভাবে কথা বলে কেওবা খারাপ।দিনশেষে নাম্বার চেঞ্জ করা ছাড়া উপায় থাকে না।তাই ফেসবুকের নাম্বার অনলি মি করে রাখাটাই সুখকর। আমি বেশ কয়েকবার ভেবে নাম্বারটা তে ফোন দেই।ভেবেছিলাম বন্ধ থাকবে,কিন্তু আমার ভাবনাটা ভুল করে ফোনটা বেশ দ্রুতই ঢুকে গেলো।বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে বেশ মিষ্টি কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। “হ্যালো কে? মেয়েটার এই প্রশ্নের আমি কোন উত্তর দিলাম না।স্বাভাবিক ভাবেই বললাম,
-আপনি কি চারু?
-জ্বী হ্যা।
-আপনার নাম্বারটা ফেসবুকে পাবলিক করে দেওয়া আছে।অনলি মি করে দেন।নইলে অনেকেই ফোন দিয়ে ঝামেলা করতে পারে।
-ও হ্যা।আসলে নাম্বার চেঞ্জ করেছিলাম আর সেটা অনলি মি করতে ভুলে গেছি।
-জ্বী,এখন করুন।
কথাটি বলে আমি আর দেড়ি করলাম না।রেখে দিলাম।এরকম ঘুম জড়ানো মিষ্টি কণ্ঠের প্রেমে আমি পড়তে চাই না।এটা মোটেই ভাল নয়।মোটেই না। নিষিদ্ধ জিনিসগুলার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি থাকে।আমিও তাদের ব্যাতিক্রম নই।চারুর নাম্বারে আবারও কল দেই।মেয়েটা এবার আর ফোন ধরেই বলে না, হ্যালো কে? নাম্বারটা যে চেনা।চারু ঘুম জড়ানো কন্ঠে আস্তে করে বলে,
-এখনও দেখা যাচ্ছে। আমি আস্তে করে বলি,
-না।
মেয়েটা চুপ থাকে।আমি ও চুপ।ইচ্ছে করছিল বলেই ফেলি,তুমি কি সবসময় ঘুমে থাকো।এমন ঘুম জড়ানো কন্ঠের যে আমি বারবার মায়ার পড়ে যায়।যে মায়া থেকে কাটিয়ে ওঠা বেশ মুশকিল।বেশ ঝামেলার। চারুর সাথে আমার শুরুটা এভাবেই।কেটে যায় বেশ কয়েকদিন।মেয়েটা আমাকে আপনি থেকে তুমিতে নামতে বললেও কেমন যেন আমি পারিনা।অস্বস্তি লাগে।আস্তে আস্তে চারুর কন্ঠের সাথে ওর নাক, কান, গলার প্রেমে পড়ে যাই।আমার যে এখন পুরো চারুকেই লাগবে,এমন ভাব।
আমি চাদের দিকে তাকিয়ে আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলি।আমি যেটা ভাবি চারু হয়তো সেটা ভাবেনা।আমার এসব ভাবনার মাঝেই ফোনটা বেজে ওঠে।আমি আবারও চাদের দিকে তাকাই।নাহ,এবারও কিছু বুঝতে পারি না।গ্রিল ছাড়তে ছাড়তে আমি রুমে আসি।ফোনটা বাজতে বাজতে চুপ হয়ে যায়।চুপ থেকে আবারও বেজে ওঠে।অস্থিরতা ভরা মন নিয়ে আমি ফোনটা হাতে নেই। চারুর ফোন। দুনিয়াটা বেশ অদ্ভুত। আপনি যখন যেটা চাবেন সেটা পাবেন না।আমার ক্ষেত্রে ও তেমন ই। আমি ফোনটা ধরে কিছু বলি না।চুপ থাকি।ওপাশ থেকে আবারও নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই।চারু আরও কিছুক্ষন চুপ থাকে।নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে।মেয়েটা আর অপেক্ষা করে না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-কি ভেবেছিলে, ফোন দেবো না? চারুর কথায় আমি কিছু বলি না।আমার ভাবনাটা অন্য কোথাও।মেয়েটা তুমিতে নেমে এসেছে।আমার চুপ থাকা দেখে চারু আবারও বলে,
-একটা ফোন কল না দেওয়াতেই এত রাগ।ভবিষ্যতে কি হবে এইটা ভেবেই এখন আমি হাসি পাচ্ছে। কথাটি বলেই চারু হাসতে থাকে।যে হাসির শব্দ আমার কানে এসে বারবার বাজতে থাকে।চারু আরও কিছুক্ষন পর হাসি থামিয়ে বলে,
-তুমি যে ইচ্ছে, আগ্রহ, অনুভূতি নিয়ে আমার সাথে কথা বলো,আমি তার দ্বিগুণ ভালবাসা দিয়ে তোমার সাথে কথা বলি।তুমি বুঝতে পারো না।বুঝতে হবেও না।আমি চাই আপনি থেকে তুমিতে আসতে।যেটা চলবে,সবসময়,সবজায়গায়,সারাজীবন। চারুর কথায় আমি আর চুপ থাকি না।আমার ঠোটের কোনে মুচকি হাসির রেখা ফুটে ওঠে।আমি আস্তে করে বলি, “তুমি চাইলে অবশ্যই চলবে।সবসময়।হুম সবসময়। আমার কথায় চারু হাসে।যে হাসিতে আমি আবারও হারিয়ে যাই।চারিদিকে অন্ধকার। বাসা খুজে পাই না।এ হাসি থেকে বের ও হতে পারি না।বের হতে চাই ও না।কোন ভাবেই না।কোন মতেই না।