ফ্রাইডে স্পেশাল

ফ্রাইডে স্পেশাল

– টি-শার্ট আর জিন্স পরে পাত্রী দেখতে আসা ছেলেদের আমার কাছে খুব একটা সুবিধার লাগে না। ছেলেটি অন্যদিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
– আমার কাছেও না। ভ্রু কুঁচকে ফেলে মেয়েটি।
– মানে?
– মানে আমি পাত্রী দেখতে আসিনি। বন্ধু খুঁজতে এসেছি।
– ঠিক বুঝলাম না।
– চলুন, ওদিকটায় গিয়ে বসি।

এখানে বেশ অন্ধকার। আপনাকে ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া এদিকে আপনার কাজিনগুলো বারবার উঁকিঝুঁকি মারছে। মেয়েটি ছেলেটির পিছু পিছু ছাদের বামপাশের কাঠের বেঞ্চিটায় গিয়ে বসে। ঠাণ্ডা বাতাসে মেয়েটির চুলগুলো বারবার তার মুখের উপর আছড়ে পড়ছে। ছেলেটি আড়চোখে একবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়। নীরবতা ভাঙে মেয়েটি,

– তো কি যেন বলছিলেন তখন?
– বন্ধুর কথা বলছিলাম। আমি চাই আমার লাইফ পার্টনারের সাথে অন্য সম্পর্কে জড়ানোর আগে বন্ধুত্বের সম্পর্কে জড়াতে। মেয়েটি নিশ্চুপ। ছেলেটি প্রশ্ন করে,

– আচ্ছা আমাদের ছাদে এসে কথা বলতে বলা হলো কেন? তাও আবার দু’জন বডিগার্ড সমেত! আপনাদের বাসায় অন্য কোনো রুম খালি ছিল না?

– নিরিবিলি যেন কথা বলতে পারি তাই। বাসায় বাচ্চা পার্টি বেশি আজ। আপনার সমস্যা হলে চলে যাই?
– না, না, সমস্যা হচ্ছে কে বললো! আমার তো ভালোই লাগছে। আধো আলো, ঠাণ্ডা বাতাস, বাতাসের মিষ্টি ঘ্রাণ। তবে আমি কনফিউজড, এটা আসলে বাতাসের ঘ্রাণ নাকি আপনার শ্যাম্পু করা চুলের ঘ্রাণ। মেয়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে ছেলেটির দিকে তাকায়।

– পাত্র হিসেবে আপনি নিজেকে কতটা যোগ্য মনে করেন?
– একটুও না। ইনফ্যাক্ট আমরা কেউই পাত্র-পাত্রী হিসেবে কোনো যোগ্যতা অর্জন করিনি এখনো। বিয়ের বয়স হলে আর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলেই যে আমরা বিয়ের মতো একটা সেন্সিটিভ রিলেশনে জড়ানোর মত যোগ্য হয়ে যাবো, ব্যাপারটা এমন না। আমার মনে হয়, আপনিও আমার সাথে একমত হবেন এই বিষয়ে।

– আপনি আমাকে বন্ধু ভাবছেন?
– ভাবতে শুরু করছি।
– তাহলে আমিও আপনাকে বন্ধু ভাবতে পারি?
– হুম পারেন। মেয়েটি এবার ছেলেটির দিকে ঘুরে বসে।
– বন্ধু হিসেবে একটা হেল্প করবেন?
– কি?
– সম্বন্ধটা ভেঙে দিন। ঘটনার আকস্মিকতায় ছেলেটি বেশ ভড়কে যায়।
– মানে?
– আসলে আমি একজনকে পছন্দ করি। তাকেই বিয়ে করতে চাই। ছেলেটি খানিকটা ধাতস্থ হয়ে মেয়েটির কাছে জানতে চায়,
– ফ্যামিলি থেকে মানছে না? মেয়েটি ধাম করে উঠে দাঁড়িয়ে মেলে রাখা আঁচলটা গুঁটিয়ে কাঁধের উপর ফেলে হাত নাড়িয়ে বলতে থাকে,

– আরে ফ্যামিলিকে তো এখনো জানাই-ই নি। আগে ছেলেটা তো জানুক।
– তা কবে জানাচ্ছেন তাকে?
– খুব তাড়াতাড়ি।
– নাম কি ওর?
– আদিল।
– কোথায় থাকে? কি করে?
– একই ভার্সিটিতে আছি আমরা, ডিপার্টমেন্টও সেইম। ও আমার দুই বছরের সিনিয়র।
– আচ্ছা আচ্ছা। ছেলেটি উঠে মেয়েটির মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ায়।
– আমি আপনার কথা রাখবো কিন্তু বিনিময়ে আপনাকেও একটা কথা দিতে হবে আমাকে।
– কি কথা?
– আদিল আপনাকে রিফিউজ করলে আপনাকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। আমি অপেক্ষা করবো।

মেয়েটি ঠোঁট কামড়ে মনে মনে ভাবে, আদিল ওকে রিফিউজ করার প্রশ্নই আসে না। বন্ধু মারফতে জানতে পেরেছে সে, আদিলও ওকে মনে মনে পছন্দ করে। সুতরাং নিশ্চিন্তে এই ভদ্রলোককে কথা দেয়া যায়।

– ঠিক আছে, কথা দিলাম। ছেলেটি মুচকি হেসে বলে,
– বেস্ট অফ লাক।

দু’বছর পর সাত মাসের পেট নিয়ে সাবধানী ভঙ্গীতে পা ফেলে ফেলে শোবার ঘর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বসার ঘরে আসে মেয়েটি। ছেলেটি সোফায় হেলান দিয়ে বসে মনোযোগ দিয়ে টিভিতে খেলা দেখছিলো। মেয়েটির কান্নার আওয়াজ শুনে হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়ায় সে।

– আরে কি হয়েছে? কাঁদছো কেন এভাবে? মেয়েটির কান্নার আওয়াজ আরো বেড়ে যায়। তা দেখে ছেলেটির অস্থিরতা বাড়ে।
– বলবে তো কি হয়েছে? উঁহু, বলো না। কান্না থামিয়ে মেয়েটি নাক টানতে টানতে বলে,

– শ্রাবণী আমাকে সব বলে দিয়েছে।
– কি বলে দিয়েছে?
– দু’বছর আগে তুমি আদিলকে ভয় দেখিয়ে ওকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলে।

তুমি ওকে বলেছিলে, আমার সাথে রিলেশনে আসলে ওর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। ওর ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিবে তুমি। আর এজন্যই আদিল আমার প্রপোজালে রাজি হয়নি সেদিন। এইটুকু বলে মেয়েটি আবার কাঁদতে শুরু করে। কিন্তু এবার আর ছেলেটি তার কান্না থামানোর চেষ্টা করে না।

– দেখো স্নেহা, আমি তোমাকে প্রথম দেখেই প্রচণ্ড রকমের ভালোবেসে ফেলেছিলাম। ছাদে কাটানো ওই সময়টুকু আমার কাছে চরম মুগ্ধতার কিছু মুহূর্ত ছিল। ভালোবাসলে স্বার্থপর হতে হয় কিনা জানি না, তবে আমি হয়েছি। আরেকটা ব্যাপার দেখো, আদিল যদি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসতো তাহলে আমার এই দুই টাকার হুমকিতে পিছিয়ে যেতো না। ঠিকই তোমাকে আপন করে নিতো। মেয়েটির কান্না কিছুতেই থামছে না দেখে ছেলেটি রেগে গিয়ে বলে,

– এখন তুমি কি চাও? ওর কাছে ফিরে যেতে? ঠিক আছে যাও, ফিরে যাও। ও তো এখনো আনম্যারিডই আছে। চিন্তা করো না, বাচ্চার দায়িত্ব আমি নিবো। সাথে সাথে মেয়েটি পাশ ফিরে নিজের দু’হাতের সবটুকু শক্তি দিয়ে ছেলেটির চুল টানতে টানতে বলতে থাকে,

– অসভ্য লোক একটা! এতদিন পর এরকম একটা খুশির সংবাদ শোনার পরও আমি তোর পছন্দের চিকেন বিরিয়ানি রান্না করতে পারছি না এই শরীর নিয়ে, এই দুঃখে কাঁদছি আমি। আর তুই কি কারণ দাঁড় করিয়েছিস! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। ছেলেটি কোনোমতে মেয়েটির হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে প্রশ্ন করে,

– কি বলছো এসব?
– ঠিকই তো বলছি।

আদিলকে না সরালে তোর মত বজ্জাতটাকে নিজের করে পেতাম আমি? আর তোকে না পেলে কে আমায় তোর মতো করে এভাবে আগলে রাখতো? ছেলেটি মুচকি হেসে পরম ভালোবাসায় মেয়েটিকে বুকে জড়িয়ে নেয়। এমন সময় মেয়েটির পেটে চাপ লাগলে মেয়েটি “উঁ” শব্দ করে আবার ছেলেটির চুল টানতে শুরু করে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত