ভূয়া ডাক্তার

ভূয়া ডাক্তার

-আপনার মেয়ে কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক করছে? (ডাঃ)
-আমার মেয়ের এখনো বিয়েও হয়নি। (মা)
-বাহ্! বিয়ের আগেই কাজ শেষ! (ডাঃ)
-আপনি ভালো করে রিপোর্ট গুলো দেখেন। (মা)
-আমাদের হাসপাতালের পাশের পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে রিপোর্ট গুলো আনছেন? (ডাঃ)
-হুম রিপোর্ট ঠিক আছে। (মা)

-তাহলে আপনি চাইলে মেয়ের এবরশন করতে পারেন আমাদের এখানে অনেক ভালো ডাঃ আছে। (ডাঃ)
-আচ্ছা পরে আসবো। রিপোর্ট গুলোো নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেলো কেয়ার মা। কেয়াও সাথে আছে। কেয়ার দু-চোখ দিয়ে পানি পরতেছে। কেয়া সব সময়ই নামাজ পড়ে আর যতটা পারে পর্দা করে চলে। কেয়া ভেবেই যাচ্ছে কে করলো এই কাজ নাকি বাড়ির কেউ তার ঘুমের ভিতর। নাহ্ সে ভাবছে আর হাটঁছে মায়ের পাশে। কেয়ার মাও চুপচাপ কিছু না বলে কেয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।

– আচ্ছা, বল কার সাথে এমন করছস?( মা)
– আল্লাহর কসম। আমি কিছু করিনি ( কেয়া)
– আমি তোকে ওই শিক্ষা দেইনি। এমন করবি তাহলে এটা কি করে হলো? ( মা)
– আমি জানি না ( কেয়া)
– আচ্ছা এটা নিয়ে কথা বলার দরকার নাই।

আমি দেখছি কি করা যায়। ( মা) কেয়া তার রুমে বসে কান্না করতেছে। কেউ যদি জানে তাহলে মুখ দেখাবে কি করে। দুপুর শেষ হয়ে বিকাল নেমে আসলো। কেয়া কান্না করতেছেই। আসরের আযান দিলে নামাজ পড়ে কান্না করতেছে আবার। রাত নেমে আসতেই।

– চল খেয়ে শুয়ে পর। সকালে নিয়ে যাবো হাসপাতাল এবরশন করাবো ( মা)
– আমার খেতে ইচ্ছে নাই।

( কেয়া) কেয়ার মা চলে গেলো। পরিবারের সবাই যার যার মতো করে রইলো। সবাই ঘুমিয়ে গেলো। ফজরের সময় কেয়ার মা এসে কেয়াকে ডাক দিলো। অনেক ডাকার পরও সে কেয়ার কোন শব্দ ফেলো না। রুমের জানালার ফাঁক দিয়ে দেখে কেয়ার শরীরটা ফ্যানের সাথে ঝুলতেছে। কেয়ার মায়ের কান্না শুনে সবাই ঘুম থেকে উঠে আসলো। থানায় পুলিশকে কল দিয়ে জানানো হলো। ইন্সপেক্টর রানা চলে আসলো তার টিম নিয়ে। ঘরের দরজা ভেঙে লাশ নামানো হলো।

– আত্মহত্যা করার কারণ কি? ( রানা)
– সবাই চুপ করে আছে।
– কারো জানা থাকলে বা কারো উপর সন্দেহ হলে বলেন। খুনী কে বের করবোই ( রানা)
– মেয়ে নাকি অন্তঃসত্তা। ( মা) সবাই যেনো আকাশ থেকে পরলো। কি বলে কেয়া এমন হয় কি করে।
– বুঝলাম না( রানা) কেয়ার মা ঘর থেকে রিপোর্ট গুলো এনে রানার হাতে দিলো।

– এই রিপোর্ট গুলো কেন করতে গেলেন? ( রানা)
– গতকাল সকালে কেয়ার প্রচুর পেট ব্যাথা তাই নিয়ে গেছিলাম তারপর এই গুলো। ( মা)
– আচ্ছা, কোন রহস্য আছে। তা না হলে আপনাদের কথা অনুসার মেয়ে এমন হওয়ার কথা নয়। ( রানা) ইন্সপেক্টর রানা কেয়ার লাশটা নিয়ে চলে আসলো থানায়। লাশটা পাঠিয়ে দিলো ময়নাতদন্তে। লাশের রিপোর্ট তৈরি করতে সময় দিলো রানা ১০ ঘন্টা। ডাঃ সিয়াম – এত তাড়াতাড়ি কেন?

– কারন আছে। আগে এটার রিপোর্ট দাও। পরে অন্য কাজ করো ( রানা)
– আচ্ছা ( সিয়াম) দুপুর ঘনিয়ে বিকাল আসতেই রিপোর্ট চলে আসলো। রানা ভালো করে রিপোর্ট গুলো দেখলো।
– আরে মেয়েটা যে গর্ভবতী তা উল্লেখ নাই যে? ( রানা)
– মেয়ে তো গর্ভবতী না। আমি নিজেই এর রিপোর্ট বানিয়েছি। ( ডাঃ সিয়াম)

– এই রিপোর্ট গুলো দেখো ( রানা) ডাঃ সিয়াম গতকাল কেয়ার করা রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে ভালো করে দেখলো। যেখানে আল্ট্রাগ্রাফির ছবি গুলো।

– এই রিপোর্ট গুলো ঠিক আছে ( ডাঃ সিয়াম)
– তাহলে এই যে মেয়েটার জরায়ুতে এটা কি? ( রানা)
– এটা দেখতে শুক্রাণুর মতো মনে হয়। এমন কি এটা মনে হবে এটা বাচ্চা হবে। কিন্তু এটা একটা জীবাণু ( ডাঃ সিয়াম)
– মানে কি?( রানা)
– এটা আমাদের রিপোর্টেও দিতে পারতাম।

এটা স্বাভাবিক রোগ। মেয়েদের পিরিয়ডের সময় এই জীবানু হয়। বা জরায়ুতে মাংশপেশী থেকেই হয়। কয়েকদিন আগে এটা নিয়ে গবেষনা করতেছে। আমিও ডাক্তারি পড়ার সময় এটার সম্পর্কে জানছিলাম। তখন সম্ভাবনা ছিলো একটা সময় হবে। আর এখন তা হচ্ছে। কয়েকদিনের ভিতর প্রতিকারও আসবে। এটা হলে তেমন কিছু হয় না। মাঝে মাঝে পেট ব্যাথা হয় আর কিছু না ( ডাঃ সিয়াম)

– আর এটা ভূল বুঝে বাচ্চা হবে ভেবে মেয়েটা আত্মহত্যা করছে ( রানা)
– কোন ডাঃ রিপোর্ট দেখে বলছে সে। জানে না হয়তো এটা সম্পর্কে। রানা কেয়ার লাশটা দিয়ে আসলো বাড়িতে আর বলে আসে কেয়া গর্ববতী ছিলো না। এটা একট রোগ ছিলো। রানা কেয়াদের বাড়ি থেকে সোজা চলে গেলো সেই হাসপাতালে যার কারনে কেয়ার প্রাণ গেলো। সেই ডাঃ আরিয়ান তার কেবিনে।

– এই রিপোর্ট আপনি দেখছেন গতকাল? ( রানা)
– জ্বি স্যার, কি হইছে? ( ডাঃ আরিয়ান)
– রিপোর্ট কি বলে?( রানা)
-মেয়েটা গর্ভবতী (ডাঃ আরিয়ান)
-আপনি যে ডাক্তার তার প্রমাণ দেখান (রানা)

ডাঃ আরিয়ান কিছু কাগজ দেখালো যা সব নকল। এমন কোন কাগজ নাই যা দিয়ে প্রমাণ হয় সে ডাক্তারি পড়ালেখা করছে।

-মানে আপনি ডাঃ না?(রানা)
-আমার অভিক্ষতা আছে (ডাঃ আরিয়ান)
-সব দেখলাম। চল এবার (রানা)

রানা ডাঃ আরিয়ানকে কলার ধরে নিয়ে গেলো। ভুয়া ডাক্তার আর কেয়ার খুনের আসামী বলে। আদালত ডাঃ আরিয়ানকে ১৪বছরের কারাবাস দিলো। ইন্সপেক্টর রানা এই খুনের থেকে শিক্ষা নেওয়া তার সকল কিছু। গ্রামের সকল বিদ্যালয়ে গিয়ে জ্ঞান দিতে থাকলো যাতে। কোন ভুয়া ডাক্তারের কথা না শুনে।।।। (বর্তমানে আমাদের দেশটায় এমন হাজারও নামধারী ডাক্তার আছে তাই সবাই সাবধান)

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত