উক্তি

উক্তি

“উক্তি চৌধুরী “এই মেয়েটাকে প্রায়শই দেখি একসাথে অনেকগুলো ছবি আপলোড করতে।একটা মানুষ এত ছবি কিভাব তুলে আর কিভাবে ফেসবুকে ছাড়ে সত্যি আমি বুঝিনা।এই মেয়েটা রোজই এই কাজটা করে।তবে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, কোনো ছবিতেই মেয়েটার মাথায় চুল নেই। এমন বিব্রতকর অবস্থায় কিভাবে একটা মানুষ গাছে ছড়ে, পানিতে অর্ধেক ভিজে,মাটি থেকে আকাশে জাম্প করে, ভেঙচি দিয়ে নানান পোজে ছবি ছাড়ে, আল্লাহ্ জানে!

মেয়েটার ছবিতে হাহাহা রিয়েক্টের বন্যা রোজই বসে।শুধু কি হাহাহা রিয়েক্ট! নিত্যনতুন টিজ করা কমেন্ট! অথচ এগুলো কিছুরই তোয়াক্কা না করে সে তার ছবি ছাড়ার পরিমাণ ক্রমশ বাড়িয়ে দিয়েছে। নিউজফিডে ঢুকলেই মেয়েটার ছবি ! মেজাজটাই খারাপ করে দেয় আমার।কি ভাবে মেয়েটা নিজেকে? মেয়েদের সৌন্দর্য তার চুলে অধিক বিদ্যমান।সেখানে এই মেয়েটা চুল ছাড়া এমন ফালতু ছবি ছাড়ে কোন রুচিতে কে জানে!

আমি প্রথমে ভাবতাম মেয়েটা হয়তো অসুস্থ।তাই মাথায় চুল থাকেনা।কিন্তু পুরো আইডি ঘাটাঘাটি করেও তেমন কোনো তথ্য পাইনি।আসলে আমরা মানুষরা যাদের প্রচুর ভালবাসি এবং যাদের উপর প্রচুর পরিমাণে বিরক্ত তাদের জানার এক অদম্য কৌতুহল আমাদের অজান্তেই রোজ আমাদের তাড়া করে বেড়ায়। এই কৌতুহল থেকেই একদিন হুট করেই মেয়েটাকে নক করে বসলাম তার ইনবক্সে।

–আপু, আপনি কি অসুস্থ ?

–নাতো।আমি বিন্দাস আছি ভাই। আমার বার্তাটা যেতে না যেতেই সিন করে ফটাফট উত্তর দিয়ে দিলো মেয়েটা।

–তাহলে এমন রুচি কেন আপনার? এভাবে চুল ছাড়া ছবি তুলেন কিভাবে ?

–মনের শান্তি বড় শান্তি।চুল দিয়ে তো আর মন শান্তি হয়না ।চুল ছাড়া আমি দেখতে কিউট না ? মেয়েটা এই টাইপের একটা বার্তা দিয়ে সাথে হ্যাপি ইমুজি একটা এড করে দেয়।

–কিছু মনে করবেন না, আপু।আমি আপনাকে ব্লক করে দিচ্ছি। ভালো থাকুন। আল্লাহ্ হাফেজ।

–জ্বি, আপনিও ভালো থাকুন।

অতঃপর এমন কুরুচিপূর্ণ একটা মানুষকে ব্লক করে দিয়ে প্রশান্তি চলে আসলো পুরো শরীর জুড়ে। ফালতু একটা পার্সন। কিছুদিন পর আমার একটা বন্ধু তাফসি, তার সাথে ব্যক্তিগত একটা বিষয় নিয়ে মত বিনিময় করছিলাম।সেই সময় তাফসি আমাদের অন্য একটা ফ্রেন্ডে শিশিরের সাথে ওর কথোপকথন এর স্ক্রিনশট আমার ইনবক্সে পাঠায়।তখন আমি খেয়াল করলাম স্ক্রিনশটে শিশিরের আইডির পাশে ঐ চুলছাড়া মেয়েটার আইডি অর্থাৎ “উক্তি চৌধুরী” এর আইডি ভেসে আছে ছোট বৃত্তাকারে। আমি বেশ অবাক হয়ে তাফসিকে জিজ্ঞেস করলাম যে,

–তুই “উক্তি চৌধুরী” নামের মেয়েটাকে চিনিস?

–হ্যাঁ, বেশ ভালো করেই চিনি ঐ আপুটাকে।উনি আমাদের একটা সংস্থার সাথে যুক্ত আছে।

–এই মেয়ে তোদের আবার কি সংস্থার সাথে যুক্ত আছে?

–আপুটা উনার চুল আমাদের এখানে ক্যান্সার রোগীদের জন্য দান করে।জানিস যখন ক্যান্সারে রোগীদের চুল পড়ে যায় তখন পরচুলা বা Wig পেলে ওদের চোখেমুখে খুশি লেপ্টে থাকে।একজীবনে আপু এই ভালবাসাগুলো বুক পকেটে একটু একটু করেই জমিয়ে রাখে। ভীষণ ভালো মনের একজন মানুষ এই আপুটা।কিন্তু উনি কখনো এই বিষয়গুলো নিয়ে শো-অফ করেনা।বরং তার এই উদারতা তিনি জানিনা কেন সবসময় আড়াল করে রাখে! আমি তাফসির কথাগুলো শুনে থমকে গেলাম।মানুষ এভাবেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে! অথচ এই মেয়েটার সাথে কি বাজে ব্যবহারটাই না করেছি ঐ দিন।যেভাবেই হোক স্যরি বলতে হবে উনাকে। আমি মেয়েটাকে আনব্লক করে ছোট্ট করে একটা বার্তা পাঠালাম।

–স্যরি।

–কেন?

–এভাবে নিজেকে আড়াল করার কোনো মানে হয়? এত ছবি তোলেন অথচ সব মুখোশ পরা।হাজারো চুলছাড়া ছবির আড়ালে আপাদমস্তক জুড়ে একটা সুন্দর হৃদয়! নিজের হৃদয়ের ব্যাপারে কিছু তো তুলে ধরতে পারেন, তাইনা?

–হৃদয়ের কোনো ছবি হয় না। এই কথার সাথে আকাশে জাম্প করা একটা ছবি এড করে আমার ইনবক্সে পাঠিয়ে দিয়েছে উক্তি নামের মেয়েটা। আমি তার বিপরীতে কিছুই লেখিনি বরং অবাক হয়ে দেখছি এই মেয়েটাকে।এতটা অবাক হয়ে আমি আমাকেও কখনো দেখিনি। অসীম ভালোবাসা ছবিটা জুড়েই রয়ে গেলো আমার ইনবক্সে। আসলেই হৃদয়ের কোনো ছবি হয় না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত