ভিন্ন ভিন্ন সুর

ভিন্ন ভিন্ন সুর

রাতের ঠিক ১১টা ভেজে ৪০ মিনিট, শহরের জন্য ঠিক এই সময়টা রাতের শুরুর দিক মাত্র। আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। আমার বাসা টা ৬তলায় এবং লাইনের শেষ মাথায় পশ্চিম দিকে মুখ করা। লাইন টা মূল সড়ক থেকে পূর্ব দিকে মুখ করা। যার সুবাদে আমি খুব ভাগ্যবান ব্যক্তি, আমি আমার সম্পূর্ণ লাইনের উপর নজর রাখতে পারি এবং খুব সহজে দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা অঘটনা দেখতি পারি, কিন্তু তা হয় না দিনের ব্যস্ততার কারণে। রাতের বেলায় এই শহর উপভোগ করার মাঝে অন্যরকম এক আনন্দ আর এই আনন্দ আমি প্রায় উপভোগ করি। তো আজকে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখলাম ঐ ৯নম্বর বাসায় ছেলেটা এখনো টেবিল লাইট জ্বালিয়ে পড়ছে সামনে ওর বার্ষিক পরীক্ষা। পড়তে পড়তে যখন বিরক্ত আসে তখন ব্যালকনিতে এসে ঘুরে যায়?

ঠিক তার পাশের বিল্ডিং ৩তলায় তুমুল ঝগড়া চলছে মনে হয়।রায়হান ভাই আর রিয়া ভাবির বিয়ে হয়েছে তো আজকে অনেক বছর সুখের সংসার ২টা বাচ্চাও আছে আজকে হঠাৎ এতো ঝগড়া কেন? ঠিক লাইনের প্রথম বাসায় আজকে বিয়ে, রীতি আপুর। কি সুন্দর করে বাসাটা সাজানো হয়েছে রঙিন বাতির আলোয় পুরো লাইনটা কেমন যেন আলোকিত হয়ে আছে। আর দূর থেকে মনে হচ্ছে পুরো এক দল নক্ষত্র ঐ দূর আকাশ থেকে নেমে এসেছে।

ঐ যে আকাশী রঙের দালান টা ওটা হচ্ছে রহিম চাচার ।শিক্ষিত লোক। ১০নম্বর বাসা এবং এই দশ তালা বিশিষ্ট দালান টার মালিক। ওনাকে আমার খুব ভালো লাগে, কেননা এই বয়সে উনি এতো খানি বাস্তবিক যে পুরো লাইনে এইরকম আর কোন ব্যক্তি নেই তার মত। প্রতি টা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কত অঘটন ঘটে তাই না। যেখান অন্য লোক গুলো ঐ অঘটনা কে একটা ইস্যু বানিয়ে আলোচনা করে বিকৃত করে,কিন্তু তিনি তা এড়িয়ে চলেন। বরং সকলের শান্তি কামনা করেন? প্রতিদিন উনি নিয়ম করে উনার ব্যালকনিতে বসে বই পড়েন আবার কিছু সময় আমার মত এই শহর টা উপভোগ করেন? আর বাকি সব গুলো বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। হয়তো গবির ঘুমে আচ্ছন্ন সবাই। ঘুমিয়ে তো পড়তে হবে সারাদিনের কঠোর পরিশ্রম শেষে যদি একটু শান্তিতে ঘুমাতে না পারে তা হলে হবে?

ঠিক যখন আমি ব্যালকনি থেকে চলে আসবো এমন সময় আমার পাশের বাসার ব্যালকনিতে কে যেন এসেছে। তাই আবার অপক্ষে করা। আমার পাশের বাসায় ৫তলায় হায়দার ভাই থাকেন সরকারি কর্মকর্তা। এসেই একটা সিগারেট ধরিয়ে ইজি চেয়ার টাই বসে পড়লেন। উনি ব্যালকনিতে কখনো আসেন না আমি দেখি নাই কখনো উনাকে এই সময় ব্যালকনিতে আসতে।

উনার চোখের কোণে পানি জ্বলজ্বল করছে। গত ১৫দিন আগে উনার অর্ধাঙ্গী না ফেরার দেশে পারি জমিয়েছেন। হয়তো একা একা ঘুমাতে পারছেন না। হয়তো সুখের সময় গুলো স্বপ্ন হয়ে বসছে চোখের সামনে। হাসি খুশি এই জীবন টা কেমন করে দিলো বিধাতা? তবুও তো দিন চলে যাচ্ছে। ৩টা ছেলে মেয়ে সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক। বড় মেয়েটার গত কয়েক মাস আগে বিয়ে দিছেন কত ধুম ধাম করে। সুস্থ মানুষ হঠাৎ চলে যাওয়া হয়তো মেনে নিতে পারছেন না। উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার চোখের কোণে পানি চলে আসছে।

এই শহরের প্রতিটা দালানের প্রতিটা প্ল্যাটে প্রতিটা ব্যালকনিতে হরেক রকমের ঘটনা ঘটেছে। তবুও আমরা জীবন নামের এক যুদ্ধে লিপ্ত,জয় পরাজয় আমাদের দৈনিক এক ফল যা আমাদের উপভোগ করতে হবে আমার বাধ্য।
এই ধরণীর সম্পূর্ণ আকাশে যেমন একসঙ্গে রংধনু সবাই দেখে না। সবাই দেখে না রাতের চাঁদনী তাঁরাদের মেলা।
সবাই চাইলে বৃষ্টিতে ভিজতে পারে না। চাইলে বৃষ্টির সুরের সাথে তাল মিলিয়ে শব্দ করে কান্না করতে।
প্রতিটা লাইন প্রতিটা অলিগলি প্রতিটা বাসা ভিন্ন ভিন্ন সুরের গান গায়, ভিন্ন সুরের দুঃখ সহ্য করে, ভিন্ন ভিন্ন সুরে কথা বলে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত