দ্যা ফ্ল্যাপ স্টোরি

দ্যা ফ্ল্যাপ স্টোরি

গল্প লেখার সুবাদে তার সাথে পরিচয়! পরিচয়টাও নিছক না,সে আর কেউ নয় আমাদের বাসার কাজের মেয়ে রিজুয়ানা! বাসার প্রত্যকটা কারুকার্য রিজুয়ানার হাতে,বেশ সৌখিনতা দিয়ে বাসাটা সাজিয়ছে।

যাইহোক গল্পে আসি! সেদিন ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল মা,বড় ভাই,ভাবী কেউই বাড়িতে ছিল না! ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে কাঁক ভেজা কাপড় তুলছিল,রিজুয়ানাও অনেকটা কাঁক ভেজার মতো হয়ে গেছে! আমি সিলভা বংশগত ভাবে খ্রিস্টান,রিজুয়ানা ব্যতিক্রম ধর্মের ধর্মালম্বী! রিজুয়ানা অনেক বছর হল আমাদের বাসায় কাজ করে সব কাজ একাই করে।বাইরে প্রচুর বৃষ্টি শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। হঠাৎ ফোনের রিং বেঁজে উঠলো-ভাবী বলল আজ আসতে পারবে না। রাতে খাবার টেবিলে দুজনের খাবার সাজানো হয়েছে,আচমকা রিজুয়ানার আগমন রিজুয়ানা অনেকটা সাজুগুজু করেছে। এর আগে তো হয়নি এমন।

ছোট্ট থেকেই আমি ছিলাম সবার থেকে আলাদা,আলাদা ছিল আমার চিন্তা ভাবনা! কোনও ধর্মকে বিশ্বাস করতাম না,দেয়ার ইস নো গড-মাঝে মাঝে আমার মাঝে উদ্ভব হতো। পড়াশুনার সুবাদে আমার মা আমাকে সুইজারল্যান্ড পাঠায়! নতুন সব কিছু গুছিয়ে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিলাম,হুট করে পরিচয় মিললো ডিসুসার সাথে,ডিসুসা মডার্ন সোস্যাইটির একজন চালচলনে বেশ আধুনিকতা।বন্ধুত্ব থেকে শারীরিক বন্ধনে বেশির ভাগ সময়ে আমরা থাকতাম।পড়াশুনা শেষ করে বাংলাদেশে পা রাখবো এমন চিন্তা ভাবনা করতেই ডিসুসার আগমন! তুমি বাংলাদেশে চলে যাচ্ছো আমাদের সন্তানের কি হবে?

সেদিন চুপ ছিলাম! আমি ছোট থেকেই একটা ধ্যানেই ছিলাম আমি কখনো বিয়েই করবো না কিন্তু বিয়ের নামে বাচ্চা নেবো আমার বেবি হবে। স্বপ্নের সিড়ির পথ বেঁয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে বাংলাদেশে আসলাম। আচমকা ঘরটা ঘোর অন্ধকারে ভরে গেল! রিজুয়ানা,রিজুয়ানা? হ্যাঁ ভাইয়া! মোমবাতি জ্বালাও অন্ধকার আমি একদম সহ্য করতে পারি না! ওহ হ্যাঁ আমার পরিচয়টা ই’তো বলা হলো না,আমি আরিয়ানা সিলভা,পিএইচডি ফ্রম সুইজারল্যান্ড। রিজুয়ানা সহসা আমার সামনে দাঁড়ালো ধুম করে,ভয় পেলাম। হটস দ্যা হেল ওমান,এটা কোন ধরনের ভদ্রতা? সরি ভাইয়া!

ইটস ওকে। রিজুয়ানা সিলভার সামনে বসে খাচ্ছে,খাওয়া দাওয়া শেষ,সব ধুয়ে ব্রেসিং এ হাত ধুচ্ছে এমন সময় পিছন থেকে সিলভা জড়িয়ে ধরলো! অনেক বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হল রিজুয়ানা। সকালের মিটিমিটি আলো রিজুয়ানার চোখে পড়তেই জ্বলজ্বল চোখ বেঁয়ে কান্নার ছোপ। বাইরে গাড়ির হর্ন,দরজা খুলতেই ডিসুসার মা। কাকীমা বলে জড়িয়ে ধরলো রিজুয়ানা আর সব খুলে বলল। রিজুয়ানার রুমে গেল যেতেই অবাগ সব এলোমেলো,রাতে বেয়ার,হুইসকি,বিস্কি যৌনতা ভর্তির ওষুধ খেয়ে পৈশ্চাচিক নির্যাতন করেছে রিজুয়ানাকে।

ওঠ হারামজাদা(মা)! কি হয়েছে মা? কি হয়েছে মানে রিজুয়ানার সাথে কি করছিস এসব। কাম অন মা,সিম্পল একটা ব্যপার নিয়ে এমন করছো কেনো? এটা সিম্পল না,হে ঈশ্বর আমি তোমার কাছে কি পাপ করেছিলাম। রিজুয়ানা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদো কাঁদো চোখে নিজের রুমে চলে গেল। মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি থেকে মোটা অংকের একটা অফার হাতে পেতেই সিলভা মায়ের রুমে চলে গেল! মা আমি ভাল একটা জব পেয়েছি। বাহ্ ভাল,একটা কথা বাবা শোন। কি বলো? রিজুয়ানাকে তুই বিয়ে কর। কাম অন মা,সুইজারল্যান্ডে থাকা কালীন এরকম অনেকে এসব করেছে। সিলভা এটা বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ড না বাবা।

দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে রিজুয়ানা পিছনে ফিরতেই রিজুয়ানা,চোখটা মলিন।আগের মতো হাস্য উজ্জল মুখটা নেই। যাইহোক আমার কাজে মনোনোবিশ হওয়া দরকার। অনেকে গল্প পড়ে ভাববেন যিনি লিখছেন সে কি পাগল,উন্মাদ একেক জায়গায় একেক কথা! সিলভাকে বিভিন্ন ভাবে নিজের মনে করা আবার সিলভাকে সিলভার জায়গায় বসানো। ফ্ল্যাপ স্টোরিগুলা এমনই হয়! অনেক দিন পর লিখতে বসেছি,অহেতুক লাইক কমেন্ট করবেন না! কিছু পাঠক আছেন না পড়েই ব্ল্যা ব্ল্যা করেন,ভুল ধরলে আমার ভাল লাগে।ব্যাই দ্যা ওয়ে…গল্পে আসি..!

সাদা রং আমাদের ধর্মের প্রিয় যখনই কেউ সাদা পোশাক পরিধান করে তাকে আমার দারুন লাগে,সাদা আকাশ,সাদা মানুষ,সাদা ধবধবে ফুল আমার প্রিয় ফুল ডেইজি,ডেইজি ফুলের সমাধিও আমার ভাল লাগে। পার্কিং লট থেকে গাড়িটা বের করতেই সাদা ধবধবে টিফিন বক্স হাতে ধরে দিলো রিজুয়ানা! আজ কেনও জানি রিজুয়ানাকে অন্যরকম লাগছে,সেদিকে কর্ণপাত না করে অফিসে গেলাম। রাতে বাসায় এসে দেখি বধূর বেসে রিজুয়ানা আমার বিছানায় বসে আছে। কি ব্যপার তুমি আমার বিছানায় কেনও? আমি আপনার বউ তো,বউকে কেউ এমন বলে! বউ মানে,আমাদের বিয়ে হল কখন? কেনও বিয়ে ছাড়া বউ হয়না? নো নেভার। তাহলে সেদিন কাকী মা’কে কেনও বলেছিলেন কখনো বিয়ে করবেন না এমনই থাকবেন।

মা মা! কি হইছে ষাড়ের মতো চিল্লাছিস কেনও? রিজুয়ানা এখানে কেনও? তোর বউ তোর ঘরে। আমাদের বিয়ে হল কখন? তুই তো বলেছিস বিয়ে করবি না সারাজীবন এমনই থাকবি। সিলভা চুপ হয়ে গেল! সময়ের পালাক্রম এমনই চলতে থাকলো। রোজ রাতে গল্প লিখতাম,ছোট থেকেই গল্প লিখতাম আর রিজুয়ানা পাশে এসে কফি দিয়ে যেত। আমার মা গ্রাম থেকে মুসলিম পরিবারের রিজুয়ানাকে কাজের জন্য নিয়ে আসে গল্প লেখার সুবাদে রিজুয়ানার সাথে পরিচয়। একদিন সকালে রিজুয়ানার চিৎকার হসপিটালে নিয়ে গেলাম রিজুয়ানার ছেলে হয়েছে। জীবনের প্রথম রিজুয়ানার পাশে দাঁড়ালাম মেয়েটার প্রতি ভালবাসা উপচে পড়লো!

তোমার হাত দুটো দিবা সিলভা! হাত দিতেই,জাপটে ধরে। তোমার ভালবাসা তো পেলাম না,আমাদের ছেলে রিজুয়ানা সিলভাকে বাবার আদর থেকে কিঞ্চিৎ পরিমান অবহেলা করো না। মেয়েটি চলে গেল সত্যি আমার পছন্দের রং এ সাদা কাফনো মোড়ানো লাশে। ঈশ্বর যেন রিজুয়ানাকে মৃত্যুর পর সুখের সাম্রাজ্যে রাখে! এরপর অনেক বছর কেটে গেল গ্রামের মাটিতে ছেলের হাত ধরে আনমনে হাঁটছি ঝোপের আড়াল থেকে কিছু লোক হাসছে ঐই দ্যাখ রিজুয়ানার জারজ ছেলে! বাবা জারজ কি? কিছু না বাবা চলো!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত