হবে

হবে

এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব। ভাইয়ের সম্মান নষ্ট করার জন্য এখানে সিরিয়াল ম্যান হয়ে এসেছিস? এ কথা বলে ছেলেটার দিকে রাগি মুখ নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম। আবির ভাইয়ের চেম্বারে এসেছি। ভাই রাজনীতিকরেন আবার ডাক্তারিও করেন । জেলার সভাপতি। আমাকে সব থেকে বেশি মায়া করেন। আবির ভাই চিল্লাচিল্লি শুনে ভিতর থেকে আসলেন। এসেই আমাকে দেখে বললেন ” তামিম তুই! কি জন্য এসেছিস। আমাকে কল দিলি না? কিন্তু এখানে চিল্লাচিল্লি কেন? ”

আবির ভাইয়ের হাত টা ধরে বললাম ” ভাই এই ছেলেটার পকেটে হাত দিয়ে দেখো অনেক ভাংতি টাকা আছে। ভাই আপনার অনেক সম্মান। ভালো মানুষ দেখেই আপনার অনেক সম্মান। আপনার কাছে সবাই আসে সেবা পাওয়ার জন্য। আপনার কাছে ধনী গরীব সব মানুষ আসে কিন্তু এই ছেলে টা ধনী মানুষ কিছু টাকা দিলে তাদের সিরিয়াল টা সামনে নিয়ে আসে। যারা দেয় না তাদের সিরিয়াল পিছনে নিয়ে যায়।

এই কথা বলতে না বলতেই ভাই সিরিয়াল ম্যান কে থাপ্পড় দিয়ে কলারে ধরে মুখের কাছে নিয়ে বললেন ” ভালো মানুষ হতে টাকা লাগে না। আমি কষ্ট করে মানুষের কাছে সম্মান অর্জন করেছি। তোর মতো টাকা খেয়ে সম্মান অর্জন করে নি। তুই যদি আর কোনো দিন এমন কাজ করেছিস তাইলে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করবি। যে আগে এসেছে তাকে আগে দিবি আর যে পড়ে এসেছে তাকে পড়ে দিবি। নইলে তোর সমস্যা আছে। আবির ভাই সবার উদ্দেশ্য করে বললেন ” আপনারা সবাই একে মাফ করে দিবেন। মাফ হলো মহৎ কাজ । ” আমি বললাম ” ভাই এখন আমি যাই রাতে আসব। ভাই মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন ” বাসায় যা। কিছু কাগজ টেবিলের উপর রেখেছি সেগুলা নিয়ে পার্টি অফিসে যা। ” আমি চলে আসলাম।

হাঁপাতে হাঁপাতে ক্লাসে ঢুকতে যাব তখন স্যার বললেন ” ক্লাস থেকে বের হয়ে যা। আমি দরজার বাহির থেকে বললাম ” সব দোষ এই মেয়ের বাবার। স্যার চেয়ারে বসে বললেন ” তুই ক্লাসে দেরী করে এসেছিস তাইলে এই মেয়ের বাবার দোষ হবে কেন? বললাম ” স্যার ক্লাসের ভিতর আগে আসতে দেন তারপর বলব। স্যার চোখ দিয়ে ইশারা দিয়ে বললেন ” ক্লাস আয়। আমি শার্ট টা দেখিয়ে দেখিয়ে বললাম ” স্যার দেখেন শার্ট টা ভিজে গেছে। স্যার শার্টের দিকে তাকিয়ে বললেন ” তাইতো। কিন্তু কিভাবে? কপাল হাতিয়ে হাতিয়ে বললাম ” স্যার ওর বাবা রাস্তার কাছে বালুর ব্যবসা করেন। সেখানে বালুর জন্য পানি নদীতে গিয়ে পড়তে পারে না। গাড়ি পানির উপর দিয়ে যায়। কিছু গাড়ি অনেক গতিতে যায় তখন ভিজিয়ে দিয়ে যায়। দুই বার ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। দুই বার এখন ড্রেস চেঞ্জ করে আসতে হয়েছে।

স্যার বললেন ” কি করব বল আমরা তো সাধারণ মানুষ। নেতারা এসব কাজ করতে হবে। এরপর স্যার সুদের হারের সূত্র লিখতে লাগলেন। মেয়েটা আমার দিকে কেমন করে হিংসা হিংসা চোখে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম ” তোমার বাবা কে গিয়ে বলো আর যেন ব্যবসা না করে। মানুষ তোমাদের চল্লিশ টা গালি দেয়। মেয়ে টা মুখ ভেংচি দিল। ক্লাস করে আবির ভাইদের বাসায় গেলাম। কলিংবেল দিতেই অতিথি দরজা টা খুলল। আমাকে দেখেই বলল ” শার্ট টা ভিজা কেন? আমি বললাম ” পড়ে গিয়েছিলাম তাই। তারপর কোনো কথা বলে নি। অতিথি আমাকে পছন্দ করে। আমি তো ভালো ছেলে তাই। অতিথি কোনো প্রশ্ন করলে লজ্জা পেতে পেতে উত্তর দেই।

অতিথি দেখতে চায়না মেয়েদের মতো। চায়না মেয়েরা অনেক কিউট হয়। আমিও এ রকম মেয়েদের কে খুব পছন্দ করি। অতিথি আমার কাছে এসে বলে ” পানি দেই। আমি কাগজটা হাতে নিতে নিতে বললাম ” আমি খাব না। সরবত করে দেই? ” এ কথা বলে আমার সামনের দিকে এসে দাঁড়িয়ে থাকল। আমি লজ্জা চোখ নিয়ে বললাম ” আমার খুব দরকারি কাজ আছে আমি যাই। আন্টি এসে বললেন ” তামিম তুমি কখন আসলে? বাসায় খেয়ে যাও। আমি না করতে পারলাম না। টেবিলে খেতে বসলাম। অতিথি তরকারী আনতে আনতে খুঁচাতে লাগল।

মিনমিন করে বলল ” আমি যদি বলি কিছু খাবে তাইলে মানুষের ভাবের শেষ নেই। মা বললে খেতে খেতে রাত হয়ে যাবে তবুও শেষ হবে না। আমি এসব শুনছি আর ভয় পাচ্ছি। যদি আবির ভাই এসে দেখেন আমি অতিথির কাছে বসে খাচ্ছি তখন রাগকরবেন। বিশ্বাস জিনিষ টা খুব মারাত্মক একবার ভেঙ্গে গেলে আর জোরা লাগানো যায় না। আমি খাওয়াদাওয়া শেষ করে মেসে চলে আসলাম।মা কল দিলেন। ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে মা কে সালাম দিলাম। মা বললেন ” বাবা তামিম বাসা টা একা একা লাগে। তুই দু’টা দিনের জন্য বাসায় এসে থেকে যা। আমি বললাম ” মা শুনো না।  কি? ”

আমি একটু একটু আদর করে বললাম ” আই লাভ ইউ মা। মা বুঝে গেলেন। আমার টাকা লাগবে। মা হাসি দিয়ে বললেন ” ঠিক আছে বাবা। তোর বিকাশ নাম্বারে আমি টাকা দিয়ে দিব। ” আমি কল টা কেটে দিলাম। আবির ভাই একটা মোটরসাইকেল উঠে বসে তাকলেন। আমাকে বললেন ” তামিম একটা কাজ করে দিবি। শিশির কে আমার কথা বলবি কি? আমি শিশির কে কত টা ভালবাসি। আমি ভাইয়ের দিকে ত্যাড়া চোখে তাকিয়ে বললাম ” ভাই চিন্তা কইর না আজ বলে দিব তোমার ভালোবাসার কথা। ভার্সিটি তে যেতেই শিশির আপু কে দেখতে পেলাম। শিশির আপুর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বললাম ” আপু দাঁড়াও।

আপু দাঁড়িয়ে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছেন। আমাকে হাত দিয়ে বললেন ” কি? আমি খুশি খুশি ভাব নিয়ে বললাম ” তোমাকে একজন ভালবাসে। শিশির আপু বড় বড় চোখ করে বললেন ” তার আগে আমার কথা শুনো। আমিও একজন কে ভালবাসি। আমি মুখ টা কালো করে বললাম ” কে? শিশির আপু মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে বললেন ” তোমার নেতা কে। আমি তো মনে মনে লাফাচ্ছি। বললাম ” আবির ভাইও তোমাকে অনেক ভালোবাসেন।  সত্যি। আমি দৌঁড় দিতে দিতে বললাম ” সত্যি। ”

আবির ভাই এখনও বসে আছেন। আমি গিয়ে বললাম ” ভাই শিশির আপুও আপনাকে ভালোবাসেন। আমি বলার আগেই বললেন আপনাকে ভালোবাসেন। ভাই মোটরসাইকেলে তুলে বললেন ” চল বাসায় চল। আজ আমার বাসায় লান্স করবি। বাসায় যেতেই অতিথি দরজা টা খুলে আমার দিকে ব্রু চোখে তাকিয়ে বলে ” আমাদের বাসায় এসেছ কেন? ” যাও বাসা থেকে বের হয়ে যাও। আমি বললাম ” আবির ভাই কে বলব কিন্তু ? অতিথি চোখে হাত দিয়ে বলে ” আমি গাধী ছাত্রী দেখে আমাকে কেউ ভালবাসে না। আমি তিনবার ssc পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু পাশ করতে পারি না। চোখ টা মুছতে লাগল। আমি বললাম ” আবির ভাই যদি জানেন আমি তোমার সাথে প্রেম করি তাইলে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিবেন। আমাকে বিশ্বাস করেন। অতিথি পনপন করে চলে গেল। আন্টি আমাকে দেখে দেখে বললেন ” তামিম আজ একটা উপকার করে দিবে বাবা? আমি আন্টির কাছে গিয়ে বললাম ” কি আন্টি?

আন্টি কান্না কান্না চোখ নিয়ে বললেন ” আমার বড় মেয়ে কে ছেলেটা ডিবোর্স দিয়ে দিয়েছে। ছেলেটা খুব খারাপ ছিল। নেশা করত। তুমি আবিরের সাথে গিয়ে আমার মেয়েটাকে নিয়ে আসো। আমার মেয়েটা সেখানে কান্না করে। ইশ! আপু কত ভালো ছিলেন। আমাকে দেখলেই বলতেন ” পড়াশোনায় মন দেও এসব রাজনীতি করে কি করবে? ” অনেক কিছু উপদেশ দিতেন। বিকালে আপু কে নিয়ে আসলাম। আন্টিকে ধরে অনেক সময় কান্না করলেন। আমি চলে আসতে লাগলাম। আন্টি ডাক দিয়ে বললেন ” তামিম নাস্তা করে যাও। আমি বললাম ” কাল আসব আন্টি। এসবের মাঝে কি নাস্তা করা যায়। হাঁটতে হাঁটতে মেসে চলে আসলাম।

আবির ভাই আর আমি কাশফুলের দোকানে বসে আছি। আবির ভাই খুব চিন্তায় আছেন। আমার দিকে একবার তাকাচ্ছেন আর আরেকবার সিগারেটের দিকে তাকাচ্ছেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ” তুই ছেলে টা অসাধারণ ভালো। তুই কি আমার কথা টা রাখবি? আমি অবাক হয়ে বললাম ” কি ভাই? আমার হাত টা ধরে বললেন ” আমার ছোট বোন টাকে তোর হাতে তুলে দিব। তুই কি আমার বোন কে আমানত হিসাবে রাখতে পারবি। আমার বোন টা যেন কোনো কষ্ট না পায়। যেন চোখের পানি পড়তে না দেখি। আমিও হাত টা ধরলাম। আমি রাজী হয়ে গেলাম। অতিথি কে খুশির খবর দেওয়ার জন্য বাসায় গেলাম। অতিথি আমাকে দেখে দেখে বলে ” তুমি আমাদের বাসায় প্রতিদিন আসো কেন? এটা কি তোমার বাপের বাসা? আমি মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ” বউয়ের বাসা। ”

মানে? এই মানে শব্দ শুনলে বুকের ভিতর অনেক ভয় হয়। মানে শব্দ টার উত্তর দিতে পারি না। আমি ভেংচি দিয়ে বললাম ” তোমাকে আমি ভালবাসি। চললাম আমার মেসে। ভালবাসি কথা টা বলতেই অতিথি আমার কাছে এসে বলল ” সত্যি তুমি আমাকে ভালবাসো? খুব রাগ হলো সত্য কথা বললাম ” এখন বিশ্বাস করে না। মন টায় কয় কানের মধ্যে দুই টা থাপ্পড় দেই। সে সাহস কি আছে আমার যদি থাকত তাইলে আগেই দিয়ে দিতাম। বললাম ” যা বলছি তা কি তোমার কাছে মিথ্যা মনে হয়? অতিথি বলল ” তোমার মুখ থেকে এমন কথা বের হবে বিশ্বাস করতে পারি নি। তাই বললাম। এখন এক কাজ করো মোবাইল টা হাত থেকে ফেলে দেও তো।

আমি চোখ মোটা করে বললাম ” এটা কেমন কথা? মোবাইল তো ভেঙ্গে যাবে।  তাতে কি হয়েছে? আমি নতুন একটা কিনে দিব। আমিও মনে মনে খুশি হলাম। নতুন একটা মোবাইল পাইমু। তাই ফেলে দিলাম কিন্তু অতিথি লাফ দিয়ে ধরে ফেলল। আমাকে রাগি মুখ নিয়ে বলল ” হাদারাম কোথাকার। আমার কথায় কি ছাদ থেকেও লাফ দিবে? মাথায় কি একটু বুদ্ধি নাই। আমি চলে আসতে লাগলাম। যেই বালুর কাছে আসলাম। একটা বাস এসে বালুর জন্য একটা ট্রাক কে ধাক্কা দিল। বাস টা পড়ে গেল। ইশ! কত মানুষ আঘাত পাইছে। মানুষ বকাবকি করতে শুরু করল। করিম চাচাও ছিলেন। উনার বালুর ব্যবসা ছিল। মাথা নিচু করে চলে গেলেন।

অতিথি কল দিয়ে বলল ” তুমি কি আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে। কোনো দিন কারো সাথে ঘুরাঘুরি করি না। চলো না একটু ঘুরাঘুরি করে আসি। আমি বললাম ” এতো শখ নাই আমার। আমি পারব না। অতিথি গালি দিল। রাগের মাথায় ফুঁসছ ফুঁসছ করতে থাকল। মেসে থেকে বের হলাম। মেসের সামনে দেখি অতিথি দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে চেয়ে নাকের ঢকার মধ্যে কয়েকবার হাত দিয়ে কষাকষি করল। তারমানে আমাকে ট্রেড দিচ্ছে। আমিও বললাম ” তোমার কি লজ্জাশরম বলতে কিছু নাই? ছেলেদের মেসের সামনে বসে কি করো। মানসম্মান কি সব শেষ করে দিতে চাও।

অতিথি অন্যদিকে অভিমানী কন্ঠ নিয়ে বলল ” তুমি আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে না কেন? ও বুঝি তো আমি তো গাধী ছাত্রী তাই আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে না। আমি মনে মনে বলতে লাগলাম। দূর পাগলী। ভালো ছেলেরা বুদ্ধি নিয়ে প্রেম করে। কারণ একটা সমান সমান সম্মান মর্যাদা ওয়ালা মেয়ের সাথে প্রেম করলে বিয়ের পর সে মেয়ে টা ছেলেটা কে সম্মান করে না। আমি তো চালাক তাই তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ” তোমার মাথায় গোবর ছাড়া কিছু আছে। তবে তোমাকে এবারও ssc এক্সাম দিতে হবে। আর পাশ করতে হবে। নইলে তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। ”

অতিথি মাথায় হাত দিয়ে বলে ” টাকা অযথা খরচ হবে। তবে আমি নিশ্চিত এবারও পাশ করতে পারব না।  কেন? ” অতিথি নিচের দিকে চেয়ে বলে ” সংসার করতে হবে না। সংসার করলে কি আর পড়াশোনা করা যায়। মাথায় কি ভিটামিন কমে গেছে? ” মনে মনে বলতে লাগলাম ” মাথায় আবার ভিটামিনও থাকে। ” অতিথির দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবতে লাগলাম মেয়েটা কত রকমের গাধী মেয়ে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত