পাশের বাসার আন্টির সাথে একসাথে বসে টিভি দেখছি আর টুকটাক কথা বলছি। এমন সময় মা এসে বললো বাবার প্রেসারের ঔষধ শেষ হয়ে গেছে আমি যেন এখন ফার্মেসিতে গিয়ে ঔষধটা এনে দেই। আমি যখন ঔষধ আনতে যাবো তখনি আমার ছোটবোন বললো,
-ভাইয়া, ফার্মেসি থেকে আসার সময় আমার জন্য একটা সেনোরা প্যাড নিয়ে আসিস তো।
আমার বোনের কথা শুনে পাশের বাসার আন্টি আঁচলে মুখটা ঢেকে বললো,
~ ছিঃ ছিঃ এত বড় মেয়ে হয়েছে তবুও একটু লজ্জা শরম নাই। নিজের ভাইকে বলে এইসব পঁচা জিনিস আনতে…
আমি আন্টিকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার বোন আন্টির সামনে বসে হাসতে হাসতে বললো,
– আচ্ছা আন্টি আপনার যখন সন্তান হয়েছিলো সেই কথাটা আপনি আপনার ভাইকে বলতে লজ্জা পেয়েছিলেন?
পাশের বাসার আন্টি অবাক হয়ে বললো,
~আমার সন্তান হয়েছে সেটা আমার ভাইকে বলতে লজ্জা পাবো কেন? সন্তান হওয়া তো আনন্দের ব্যাপার।
– আন্টি পিরিয়ড হওয়াটাও আনন্দের ব্যাপার। একজন মেয়েকে পরবর্তীতে সন্তান সম্ভাবনা হতে সাহায্য করে এই পিরিয়ড প্রক্রিয়া । কিন্তু আপনাদের মত কিছু মানুষ আল্লাহ তালার এই নিয়ম চক্রটাকে খারাপ চোখে দেখে ফার্মেসি থেকে যখন বাবার ঔষধ আর সেনোরা প্যাড কিনে বাসায় ফিরছি তখন খেয়াল করলাম একটা মেয়ে ফার্মেসি থেকে একটু দূরে চুপচাপ অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি মেয়েটার কাছে গিয়ে বললাম,
— বোন, তোমার কি কিছু দরকার? আমার মুখ থেকে বোন ডাকাটা শুনে মেয়েটা কিছুটা স্বাভাবিক ভাবে বললো,
~ ভাইয়া একটু ফার্মেসিতে যাওয়া দরকার ছিলো কিন্তু অনেক লোক তো তাই যেতে সংকোচ বোধ করছি। লোক গুলো কমলে যাবো। আমি মেয়েটার কথা শুনে ওর হাতে সেনোরার প্যাকেটটা দিয়ে বললাম,
— তোমার যেটা লাগবে সেটা এইখানে আছে। আমি আমার বোনের জন্যই এটা কিনে নিয়ে যাচ্ছিলাম। মেয়েটা আমতা আমতা করছিলো আমি তখন মেয়েটাকে বললাম,
— এতে সংকোচ বোধ করার কিছু নেই। নেক্সট টাইম যখন কিনবে তখন মনে কোন সংকোচ না রেখে সরাসরি কিনবে।আর কেউ যদি তোমার এটা নিয়ে হাসাহাসি করে তাহলে ধরে নিবে ও বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ। পিরিয়ড মেয়েদের জন্য লজ্জা না পিরিয়ড মেয়েদের জন্য অহংকার বাস দিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ত্রিশাল যাচ্ছি। একটু পর খেয়াল করলাম আমার একটু সামনে বসা একটা মেয়ের জামার ফাঁক দিয়ে ব্রার কালো ফিতাটা দেখা যাচ্ছে। আর আমার পাশে বসা ২টা ছেলে এটা দেখছে আর হাসাহাসি করছে। আমি মিষ্টি হেসে ছেলে দুইটাকে বললাম,
— কি ভাই, কি দেখে মনে এত আনন্দ পাচ্ছেন?? একটা ছেলে নিজে নিজের ঠোঁট কামড় দিয়ে বললো,
~ গুপ্তধন দেখে ফেলেছি ভাই। তাই মনে এত আনন্দ..আমি হেসে হেসে বললাম,
– ভাইয়ের তো দেখছি সেই রকম ফিলিংস। দেখেই সব মজা নিয়ে নেন। তা ভাইয়ের বাসা কোথায়, ভাই বোন কয়জন? ছেলেটা মেয়েটার ব্রার ফিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ বাসা ভাই ভালুকা। আর একজন বড় বোন আছে। আনন্দ মোহন কলেজে পড়ে।
— ভালুকা থেকে আপনার বোন কি বাস দিয়ে আনাগোনা করে?
~ জ্বি ভাই আমি তখন মুচকি হেসে বললাম,
— আপনার বোনের পিছনে সিটে বসেও মনে হয় কোন না কোন ছেলে আপনার মত আপনার বোনের গুপ্তধন দেখার চেষ্টা করে। আমার কথাটা শুনে ছেলেটা মাথাটা নিচু করে ফেললো। আর পাশে বসা ছেলেটাকে বললাম,
— কি ভাই, আপনার বোন কিসে চলাচল করে? ছেলেটা কিছু না বলে রাগান্বিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি আর কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসলাম। আর একটা চিরকুট মেয়েটার হাতে দিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লাম রিকশা করে যখন ছোট বোনকে নিয়ে বাসায় ফিরছি। তখন ছোট বোন বললো,
– ভাইয়া কয়েকটা প্যারাসিটামল নিয়ে নে…
রিকসা দাড় করিয়ে আমি যখন ফার্মেসি থেকে প্যারাসিটামল কিনতে যায় তখন ফার্মেসির ছেলেটা আমাকে প্যারাসিটামলের সাথে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। আমি প্যাকেটা খুলে ছেলেটাকে বললাম,
— আজকাল প্যারাসিটামলের সাথে কনডমের প্যাকেট ফ্রি দাও না কি? ছেলেটা মুচকি হেসে বললো,
~ একটু পর তো ভাই আপনাদের লাগবে। আমিও তখন মুচকি হেসে ছেলেটাকে বললাম,
— তুমি যখন তোমার বোনের সাথে কোথাও ঘুরতে বের হও তখন কি পকেটে কনডমের প্যাকেট রাখো?
ছেলেটা কিছু বললো না শুধু মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো আমরা পুরুষ আজকাল নিজেদেরকে ক্ষুধার্ত বাঘ মনে করি আর আমাদের চোখে নারীরা হলো একটা টগবগে হরিণের বাচ্চা…
রাস্তায় চলার সময় যখন কোন নারীর সাদা জামাতে রক্তের দাগ দেখতে পাই তখন পাশে থাকা বন্ধুটাকে সেই দাগটা দেখিয়ে মনে একটা পিশাচিক আনন্দ পাই। অথচ আমরা ভুলে যায় নারীর যদি পিরিয়ড না হতো তাহলে আমাদের জন্মই হতো না নারীর ওড়নার ফাঁক দিয়ে দেখা এক টুকরো নরম মাংস পিন্ড দেখে আমাদের পুরুষদন্ড দাঁড়িয়ে যায়। অথচ আমরা ভুলে যায় জন্মের পর আমরা নারীর এই নরম মাংসপিণ্ড থেকেই দুধ পান করেছি…
রিকশায় ছেলে মেয়েকে একসাথে দেখলেই আমাদের মনে একটা খারাপ চিন্তা এসে যায় অথচ আমরা ভুলে যায় ওরা তো ভাই বোন হতে পারে, বন্ধু হতে পারে, মামা ভাগ্নি হতে পারে আমরা সবসময় বলি নারীজাতি খারাপ অথচ আমরা এটা ভুলে যায় আমাদের জন্ম কোন না কোন নারীর গর্ভে আমাদের চোখে নারীজাতি যতই খারাপ হোক না কেন তাদের সম্মান করতে হবে কারণ সৃষ্টির শুরু থেকে ওরা সেই সম্মান পেয়ে এসেছে।সেই নারীই হলো আমাদের মা, আমাদের বোন, আমাদের অর্ধাঙ্গিনী