আবির ভাইয়ের একটা লাইব্রেরি আছে। আমি প্রায় উনার লাইব্রেরি তে বসে থাকি। আমার খালাতো ভাই হয়। একদিন বসে বসে পেস গেইম খেলতে ছিলাম। একটা মেয়ে গেল। ” আমাকে একটা কলম দেন? ” এই কথা বলে আমার দিকে তাকিয়ে তাকল। আমি কলাম দিলাম। মেয়েটা ৫ টাকা দিল। আমি চুপ করে বসে বসে আবার গেইম খেলতে লাগলাম। মেয়েটা এবার বলল ” খাতা দেন। ”
আমি খাতাও দিলাম। এবার বিশ টাকা দিল। আমি আবার গেইম খেলতে লাগলাম। মেয়েটা দাঁড়িয়ে থাকল। আমাকে বলে ” এক কাজ করেন। আমাকে একটা চিপস দেন। ” রাগের মাথায় বললাম ” এক বারে সব বলতে পারেন না? ”
মেয়েটা ব্রু চোখে তাকিয়ে বলে ” টাকা দেই না। টেবিলের মধ্যে থাপ্পড় দিয়ে বললাম ” যান আপনাকে চিপস দিব না। এই কথা বলতেই আবির ভাই কে দেখলাম সামনের দিক থেকে লাইব্রেরির ভিতরে ঢুকলেন। মেয়েটা কে বললেন ” অতিথি কি হয়েছে? মেয়েটা আমার দিকে ভেংচি দিয়ে বলল ” কি আজেবাজে লোক এখানে বসিয়ে রাখেন। মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও জানে না। ”
আবির ভাই আমার দিকে মায়ার মুখ নিয়ে জোরে জোরে বললেন ” এসবের জন্য এখানে তোরে বসিয়ে রাখি বুঝি? ”
আমি মেয়েটার চেহারার দিকে তাকালে রাগ উঠে যাবে তাই বললাম ” ভাই একটু বাহির থেকে আসি। এ কথা বলে চলে আসলাম। বাসা থেকে বের হতে যাব এমন সময় দেখলাম তিন টা ছেলে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলে ” মেয়েটা কে রে? নতুন এসেছে বুঝি। অন্য একজন বলল ” দূর গাধা। এটা করিম চাচার মেয়ে অতিথি। দেখতে কিন্তু খুব। আমি বসলাম। মোবাইল টিপাইতে লাগলাম। বুঝতে দেই নি আমি এদের কথা শুনতাছি। মেয়ে টা এদের কাছ দিয়ে যেতে লাগল। একটা ছেলে বলল ” সীট কি ফাঁকা আছে। তাকলে বলেন। আমরা তো আছি। ” মেয়েটা এদের দিকে তাকিয়ে বলে ” ছিঃ।
তোদের কে লজ্জাশরম বলতে কিছু নাই। ” এই কথা বলে মেয়ে টা চলে যেতে লাগল। আমি মেয়েটা কে চিনতে পারছি। মেয়েটার নাম অতিথি। লাইব্রেরির মেয়েটা। আমি তো মেসে থাকি তাই মেয়েটা কে ভালো করে চিনি না।একজন ভিক্ষুক একজন দামী মানুষের কাছে সাহায্য চাইলেন। দামী মানুষ টা অহংকার করে চলে গেল। কোনো সাহায্য করেন নি। অথছ তিনি সাহায্য করতে পারতেন। ভিক্ষুক কান্না করতে থাকলেন। আমি উনার কাছে গিয়ে বললাম আপনি কার কাছে সাহায্য চান এসব মানুষ নামক অমানুষের কাছে। এরা সাহায্য দিবে না। এদের অন্তরে মায়া নাই। আপনি এক কাজ করেন রাতে কান্না করে আল্লাহ্ কাছে সাহায্য চান দেখবেন আল্লাহ্ আপনাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিবেন না। আপনাকে আল্লাহ্ সাহায্য করবেন। ভিক্ষুক কান্না করতে করতে চলে গেল।
আমি নামাজ পড়তে চলে গেলাম। যত নামাজ পড়ব তত আমলনামা বৃদ্ধি পাবে। তাতেই আমার লাভ। মা বললেন ” তামিম তোর ছোট আন্টির বাসায় যা। তোর আন্টির ছোট মেয়েটা আসার জন্য কান্না করতাছে। ” আমি বললাম ” বিকালবেলা যাব। এখন একটু ঘুমাই। বিকালবেলা উঠে আন্টির বাসায় গেলাম। আন্টির মেয়েটার নাম তানিশা। আমাকে দেখেই বলে ” ভাইয়া এসেছেন। এখন আমি শ্বশুর বাসায় চলে যাব। তানিশার বয়স ২ বছর হবে। তানিশার হাতে একটা লজেন্স দিলাম। তানিশা কে বললাম ” আচ্ছা আমি তোমার কি হই? ” তানিশা হাত দিয়ে মুখ টা লুকিয়ে লুকিয়ে বলে ” জামাই। ” লজ্জা পাইছে। আমি মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললাম ” এসব তোমাকে কে শিখায়? ”
একদিন মা বলছেন ” তুমি নাকি আমার জামাই। সেদিনের পর থেকে তুমি আমার জামাই। ” ও বুঝতে পারছি। আমার সাথে বেশি খেলা করে তো তাই হয়তো আন্টি এসব বলেন। বাসায় বসে বসে হিসাববিজ্ঞান অংক করতে ছিলাম। তানিশা এসে বলে ” ভাইয়া তিন টা ছেলে একজন আপু কে বিরক্ত করতাছে। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি অতিথি। আমি দৌঁড় দিলাম। ছেলেদের কাছে গিয়ে বললাম ” তোরা মেয়েটা কে কোনো দিন বিরক্ত করলে কান ধরিয়ে দশবার উঠবস করাব। বেয়াদবি করস। একদম বলে দিচ্ছে এই এলাকায় কোনো বেয়াদবি করতে পারবি না। মেয়েটা ভদ্রতার জন্য মুচকি হাসি দিল। মেয়েটা বলল ” ধন্যবাদ। ”
আমিও ধন্যবাদ পেয়ে চলে আসলাম। তানিশা কে বাসায় দেওয়ার জন্য তানিশাদের বাসায় আসলাম। বাবা কল দিয়ে বললেন ” হারামজাদা তাড়াতাড়ি বাসায় আয়। ” এই কথা বলে কল টা কেটে দিলেন। আমি বাসায় চলে আসলাম। বাসায় আসতেই মা বললেন ” তোর বান্ধবী কি আছে? ” মা এবার চিল্লাচিল্লি শুরু করলেন। বাবা এসে বললেন ” তোর মাকে আমি না দেখে বিয়ে করেছি। আমাদের পরিবারের মানসম্মান আছে। আমি এবার জোরে বললাম ” কি হয়েছে বাবা? সব খুলে বলো। আমি কিছু জানি না। ”
মা ঝালবাড়ি নিতে নিতে বললেন ” মারতে মারতে পা ভেঙ্গে দিব। তোর বাবা এখনও আমাকে লজ্জা পান। আর তুই মেয়েদের বান্ধবী বানিয়ে বাসায় নিয়ে আসিস। দাঁড়া তোর খবর আছে। ” আমি মা বাবা কথা সহ্য করতে পারি নি তাই রুমে চলে আসলাম। ভাবতে লাগলাম কে আসতে পারে। সবাই কে কল দিলাম কেউ আসে নি। চিন্তায় পড়ে গেলাম কে আসতে পারে কে আসতে পারে। বাইক নিয়ে বের হতে যাব অতিথি ডাক দিয়ে বলে ” আপনি কোথায় তাকেন খুঁজে পাওয়া যায় না। সেদিন আপনাদের বাসায় গিয়েছিলাম। আপনার মা বাবার সাথে কথা বললাম। আপনার মা বাবা খুব ভালো। ” আমি এবার বুঝতে পারছি। অতিথি গিয়ে ছিল। আমি বাইকের আয়না ঠিক করতে করতে বললাম ” আমি আপনার বন্ধু হই বুঝি? ”
অতিথি আবেগহীন চোখে তাকিয়ে বলে ” বিপদে পড়ে বলেছিলাম। সরি। ” মেয়েটা হয়তো লজ্জা পেয়েছে। তাই বললাম ” ঠিক আছে। ” অতিথি সব দিকে তাকিয়ে বলে ” আমাকে কলেজে দিয়ে আসবেন। গেটের সামনে নেমে যাব। কোনো রিক্সা পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হয় পাওয়াও যাবে না। ” আমি ভাবতে লাগলাম কি করা যায়। একটু ভেবে চিন্তে বললাম ” আচ্ছা উঠেন। কিন্তু রাস্তায় নামিয়ে দিব। ” অনেক খিদা লাগছে একটা রেস্টুরেন্ট ঢুকলাম। খেতে খেতে ৫ মিনিট হয়ে গেল। অতিথি পিছনের দিক থেকে এসে বলে ” আপনি? কি করেন? খাচ্ছেন বুঝি? ” আমি নান রুটি খেতে খেতে বললাম ” না দেখতাছি। খাব কেন? ”
মেয়েটা বসে বলে ” আপনি খুব ফানি। আমিও খেতে আসছি। আমার বন্ধুদের সাথে। আমার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। এক কাজ করেন আমার নাম্বার টা নেন। আপনার নাম্বার টা দেন। ” আমি ঠোঁট বাঁকা করে বললাম ” নাম্বার দিয়ে কি হবে শুনি? আমার তো ফ্রেক্সির দোকান নাই। তবে আমার মামার ফ্রেক্সি দোকান আছে। ” মেয়েটা টেবিলের মধ্যে থাপ্পড় দিয়ে বলে ” ইশ! আপনি একটু বেশি বুঝেন। আমি কি বলেছি। ফ্রেক্সি লাগবে। আপনার নাম্বার দেন আর আমি এখান থেকে উঠে একটু মুক্তি হই। ” আমি বললাম ” নাম্বার দিতে পারব না তবে ফেইসবুক আইডি নেন। ” আইডি দিয়ে চলে আসলাম।
মামার দোকানে বসে আছি ” হঠাৎ খবরের কাগজে দেখতে পেলাম । ফাহিম চাচার মেয়ে জামাইয়ের ঘর থেকে আরেকজন ছেলের সাথে ভেগে গেছে। খুব অবাক হলাম। ইশ! মেয়েটার কপাল টা একদম খারাপ হয়ে গেল। জামাই টা কালো ছিল। তাই বলে আরেকজনের সাথে ভেগে যাবে। একটু চোখের আপসোস সহ্য করতে পারল না। মেয়েটার ভবিষ্যৎ খারাপ কিছু হবে। আমাদের এলাকায় একটা মেয়ে তার শ্বশুর কে সহ্য করতে পারত না। উনার রোগ হলে তাকে সেবা যত্ন করত না। উনি যে গ্লাস দিয়ে পানি খেতেন সে গ্লাস দিয়ে মেয়েটা পানি খাইত না। উনি মারা যান। এক বছর পর মেয়েটার কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। অনেক কষ্ট পাইছে মেয়েটা। পরে মেয়েটাও মারা যায়।
একটা আইডি থেকে মেসেজ আসল। আমি চেক করলাম। বুঝতে পারছি অতিথি। আমাকে মেয়েটা প্রশ্ন করল ” এখন কি করেন? ” আমি বললাম ” বসে আছি। ” মেয়েটা বলল ” তাতো বুঝলাম। কিন্তু কোথায়? ” একজন কে বিস্কুট দিতে দিতে বললাম” মামার দোকানে। আপনি কোথায়? ” মেয়েটা বলল ” আমি একজন গর্ভবতী মা কে রক্ত দিতে আসলাম। উনার রক্তের প্রয়োজন। রক্ত দেওয়া ভালো কাজ। অন্যের উপকার করতে হয়। ” মামা এসে বললেন ” তুই বাসায় চলে যা। ”
আমি মেয়েটা কে বললাম ” বাসায় যাব। বাসায় গিয়ে আপনাকে টেক্সট দিব। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে টেক্সট করা ভালো না। যদি এক্সিডেন্ট হয়ে যাই। ” মেয়ে টা বাই বলে বিদায় দিল। রাস্তায় আসতেই একজন চাচা আমাকে ডাক দিয়ে বলেন ” বাবা দাঁড়াও। আমাকে চিনতে পারছ? ” আমি কিছু সময় উনার দিকে তাকিয়ে তাকলাম কিন্তু চিনতে পারি নি। আমি বললাম ” কে চাচা আপনি? ” উনি আমার মাথা টা হাতিয়ে বললেন ” আমি সেই ভিক্ষুক। আমাকে আল্লাহ্ সাহায্য করেছেন। আমি আজ অনেক টাকার মালিক। এখন আমি আর ভিক্ষা করি না। ” মানুষ টার মুখে কত আনন্দ। আমাকে ভালো থেকো বলে চলে গেলেন।
ঘুমিয়ে আছি মা মুখের মধ্যে পানি দিয়ে বললেন ” এই দুপুরে এতো ঘুম কেন? যা একটু খেলাধুলা করে আয়। শরীর টা সুস্থ থাকবে। ” দাঁত ব্রাশ করে। এক লিটার পানি খেয়ে ঘুরতে গেলাম। পানি খেলে সমস্ত শরীর ভালো থাকে। রিক্সা করে ঘুরতে গেলাম। অতিথি ডাক দিয়ে বলে ” আমাকে নেন। আমিও রিক্সা করে ঘুরতে যাব। ” লজ্জা করে করে বসে তাকলাম। অনেক লজ্জা করতাছে। অতিথি বলল ” পড়ে যাবেন। শক্ত করে বসে থাকেন। ” বাবা দেখি আমাদের সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বললেন ” আজ বাসায় যাও। তোমার খবর আছে। ” অতিথি বলল ” চাচা একটু ঘুরে আসি। ”
অতিথি আমাকে নিয়ে ঘুরতে চলে গেল। একটা নির্জন জায়গায় বসলাম। অতিথি একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার হাসি দিচ্ছে আমি কিছু বলছি না চুপ করে বসে আছি। অতিথি বলল ” কি করে যে আপনাকে একটা কথা বলি? আপনি কিছু মনে করবেন নাতো? আসলে আমি আপনাকে পছন্দ করি। এখন আপনি ভেবে চিন্তে বলেন। ”
আমি তো অবাক। আমাকে এই মেয়ে পছন্দ করে। না বলতে পারলাম না। আমিও বলে দিলাম ভালবাসি আমি আপনাকে। এ কথা বলে চলে আসলাম।
গেটের সামনে আসতেই বাবা বললেন ” বাসা থেকে বের হউ। এ বাসায় তোমার জায়গা নাই। ” মা এসে বললেন ” ছোট বেলায় অ আ ই ঈ শিখাতে কত কষ্ট হয়েছে। এখন নিজে প্রেম করো আমাদের কে বলো না। বাসায় তোমার জায়গা নাই। ” আমি কেঁদে কেঁদে বললাম ” মা মেয়েটা অনেক ভালো। ” ” কিন্তু সেদিন তুই মিথ্যা বললি কেন? ” বাবা আমার কাছে এসে আমার কান ধরলেন। আমি মিনমিন করে বললাম ” ভয়ে। ” মা আমার হাত ধরে বললেন ” এবার বাসার ভিতর চলো। তোমার খবর আছে”