চশমা বিভ্রাট

চশমা বিভ্রাট

–আদি সবেমাত্র অফিস থেকে বের হয়েছে । তার বউ একটু আগে কল দিয়েছে ! ঘরে রান্নাকরার মতো কিছু নেই। বাসায়আসার সময় যেনো বাজার নিয়ে আসে !

আদি বাজারে গিয়ে ভাবতে থাকে কি কিনবে ! কয়দিন আগেই তো সব কাঁচা বাজার করে দিয়েছে । অবশেষে আদি ঠিক করলো শুধু এক কেজি মাছ কিনবে। ঘরে মাছ ছাড়া অন্যসব কিছু আছে। মাছ বাজারে গিয়ে দেখে মাছ একে বারে কম তবুও সে এক কেজি ল্যইটা মাছ কিনে বাসার দিকে র‌ওনা দিলো। রাত্রে খাবার টেবিলে দেখে বউয়ের মুখটা একেবারে অন্ধকারের মতো কালো করে রেখেছে । ভাবলো একবার জিজ্ঞেস করি চাঁদের মতো চেহারাটা কালো করে রেখেছো কেনো ! পরে ভাবে না থাক কোনো ঝামেলা জড়াতে চাইনা, বউয়ের সাথে এই ব্যাপারে কিছু বললে আবার জগড়া লেগে যাবে ! বউ টা একটু জগড়াটে টাইপের।

খাবার টেবিলে বসে যখন আদিির ব‌উ খাবার বাড়ছে তখন, ্প্লেটে ভাত দিয়ে তরকারি দেওয়ার সময় নাকে কি যেনো কিছু একটার গন্ধ আসছে।আর তার বউ মিথিলার ভাতের প্লেটে দেখলো ডিমভাজি। নাকি ডিমের গন্ধ আসছে ? না ডিমের গন্ধতো এরকম না! পরে আবার ভাবলো, খাবার সময় এতো কিছু জিজ্ঞাসা করতে নেই।ভাত মেখে মুখে দেওয়ার সাথে সাথে বুঝতে পারলো গন্ধ টা কিসের। আদি বউকে জিজ্ঞেস করলো মিথিলা মাছ পঁচে গেছে নাকি ?মিথিলা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললো চোখের চশমার পাওয়ার কমে গেছে ? পঁচা মাছ আনার সময় দেখোনি ভালো মাছ নাকি পঁচা মাছ? বউয়ের কথা শুনে আদি একেবারে চুপসে গেলো। আদি মনে মনে বলে মাছ যেহেতু পঁচা আমাকে একটু ডিম ভাজি দিলে কি এমন ক্ষতি হতো!

—কি বললে??
—না মানে মাছ রান্নাটা খুব সুস্বাদু হয়েছে।
—তাই নাকি??বেশ এই নেও সবগুলো আস্তে আস্তে খেয়ে শেষ কর।
—আরে আরে কি করছো! সবগুলো মাছের তরকারি আমি একা কি করে খাব?
—এই তো বললে রান্না সুস্বাদু হয়েছে।
—না মানে, আমি!
— একা একা বিড়বিড় না করে চুপচাপ খেয়ে নাও। বেচারা নিরুপায় হয়ে পঁচা মাছের গন্ধে নাক টিপে টিপে ভাত খাওয়া শুরু করলো। ভাত খাওয়া শেষে মিথিলা বললো,

—কি রকম লেগেছে খাবার টা ?মনে মনে বলি তুমি যদি খেতে তারপর বুঝতে খাবার ভালো হয়েছে নাকি খারাপ।

—তবু ও মুখে হাসি নিয়ে বললাম ভালো হয়েছে !

—- এই তুমি এতো বোকা কেনো, পঁচা মাছ খেয়েছো তবুও বলছো ভালো হয়েছে। শুনো আদি আমার কাছে ঢং করবা না, আর নেকা সাজবে না। সব সময় সর্তক হয়ে বুঝে দেখে শুনে কাজ করবা ।

— আমি আবার কি ঢং আর নেকামি করলাম, তা ছাড়া আমি সব সময় সাবধানে বুঝে শুনে কাজ করি।

— ও তাই নেকামি করো নাই ঢং ও করো নাই তাহলে সকাল বেলা কি করেছিলে ? সকাল বেলার কথা মনে করে আমার কোমরে ব্যাথাটা আবার জেগে ওঠলো।সকাল বেলা কলে গোসল করার সময় মাথার উপরে কোথা থেকে কাক এসে পায়খানা করে দিলো।রাগে দুঃখে একটা লম্বা বাঁশ এনে কাক টাকে বাড়ি দেওয়ার সময় পা পিছলে কলপাড়ে পরে গেলাম।সেই ঘটনা আমার বউ আমাকে মনে করিয়ে দিয়ে আবার খোঁটা দিচ্ছে! কত্তো বড় হারামি রে।

পরের দিন অফিসে বসে বসে আটা, লবণ, হলুদ, মরিচের হিসাব মিলাচ্ছিলাম ! হঠাৎ আমার কলিগ এসে বললো কিরে আন্ধা তোর চোখের চশমার পাওয়ার কি কমে গেছে নাকি ?তোকে ফাইল রেডি করতে বলেছিলাম ? তাই তুই ফাইল টা কি ভুলবাল রেডি করলি ? ভাগ্য ভালো ফাইলটা আমি চেক করলাম নয়তো কি হয়ে যেতো আমি নিজে ও জানি না।

অনেকক্ষণ পরে আমি আবিষ্কার করলাম দোষ টা আমার না !মেইন দোষ হচ্ছে এই চশমাটার। এই চশমার কারণে কালকে পঁচা মাছ কিনলাম আর আজকে ভুল করলাম। চশমার ও দোষ নেই! কমদামি চশমা কিনেছি সাত থেকে আট মাস হবে ! এতোদিন ভালো ছিলো এখন যে পাওয়ার টুকু ছিলো তা নষ্ট হয়ে গেছে। ডাক্তার চোখ পরিক্ষা করে একটা ব্যবস্থাপত্র দিয়েছে। সেখানে চশমার পাওয়ার লেখা আছে। পাওয়ার অনুযায়ী চশমা নিতে বললো।আর আমি কিনা কম টাকার জন্য কম পাওয়ারী চশমা কিনলাম? না এই চশমার জন্য আমার অনেক লছ হয়েছে, অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর রাখবোোই না এই চশমা। ধুম করে আছার মেরে চশমাটা ভেঙ্গে ফেললাম। এই চশমাটা থাকলে না জানি আমার অনেক কিছু ক্ষতি হতো।

এই কি আমি চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না কেনো ! আমি কি একেবারে অন্ধ হয়ে গেলাম।আমার বউ ঠিকি বলে আমি বোকা গাদা এখন তার প্রমান পেলাম।অন্তত চশমাটা চোখে থাকলে কিছু দেখতে পেতাম। পরে না হয় চশমার দোকানে গিয়ে আরেকটা চশমা নিতে পারতাম।এখন চশমার দোকানে কি করে যাবো, কেমনে যাবো,কেউ যদি আমাকে আবার অন্ধ ভাবে, না আর পারতেছি না, যে করেই হোক আমি চশমার দোকানে যাবো। আমাকে যেতেই হবে। আমাকে চশমাটা দোকানে পোঁছাতে হবে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত