সবাই সবকিছু পাই না

সবাই সবকিছু পাই না

-তোমাকে কতবার করে বলবো বলো? আমাকে তুমি ভুলে যাও,আমাকে মনে রেখে তোমার শুধু কষ্ট হবে।
– তুমি কি জানো কষ্টকে আমি আপন করে নিয়েছি।
– তুমি পাগলামি করো কেনো? আমাকে ভালোবেসে আমাকে মনে রেখে তুমি জীবনটাকে কেনো নষ্ট করবে বলো। আমার জীবনটা পুরোটাই অন্ধকার। তোমার ভাইয়ার দেখা সেই ছেলেটাকে তুমি বিয়ে করে সাংসারিক হয়ে যাও। এবার নিজের জীবনটা নিয়ে একটু ভাবো।

– আমি তো আমার জীবনটাকে তোমার নামে সপে দিয়েছি নিলয়। আর আমি ভাইয়াকে যে ছেলের কথা বলবো সেই ছেলের সাথেই ভাইয়া আমার বিয়ে দিবে। আমার কথা ভাইয়া কখনো না করবে না।

– দেখো মিতু আমি ছেলেটা খারাপ, আমার নিজের আব্বু আম্মু আমাকে দেখতে পারেনা, এলাকার লোকজন আমাকে খারাপ বলে। তুমি জেনেশুনে এমন ছেলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারোনা। এমন ভুল তুমি করতে পারো না।

-নিলয় আমি জানি আমি তোমার কাছে থাকলে তুমি আমাকে কখনো কষ্ট দিবেনা সবসময় আগলে রাখবে আমাকে। আর আমি এটাও জানি তোমার কাছে না থাকলে আমি জীবনে কখনো সুখি হতে পারবো না।

– তুমি আমাকে ভুলে গেলেই তুমি সুখি হতে পারবে।
– আমি জানি আমি পারবো না, তুমি কেনো আমাকে মিথ্যে বলছো নিলয়। আমি তোমার মুখ থেকে মিথ্যে কথা শুনতে চাই না। তুমি জানো আমি মিথ্যে কথাটা পছন্দ করিনা। আমার শুধু তোমাকে চাই আমি আর এতোকিছু শুনতে পারবো না ব্যাস।

নিলয় আজও মিতুকে বুঝাতে ব্যার্থ হয়। মিতু মেয়েটা তাকে খুব ভালোবাসে সেটা নিলয় ভালো করে জানে, কিন্তু নিলয় বাস্তবতার বেড়া জালে আটকা পড়ে আছে। এই অনিশ্চিত জীবনে সে কিভাবে মিতুকে জড়াবে। বাস্তব বড় কঠিন কিন্তু মিতুকে সেটা সে কয়েকদিন ধরে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়ে গেছে। নিলয় এর সাথে পরিচয় মিতুর ফেসবুকে, গল্প লিখার শুরুতেই পরিচয় তাঁদের। তবে নিলয় থাকে এক শহরে আর মিতু তো আরেক শহরে, দুজনে দুজনার থেকে অনেকটা দুরে। তবুও কেমন করে যেনো তাঁদের মধ্যে ভালোবাসাটা হয়ে গেছে,সম্পর্কটা আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে।

নিলয় জানে মেয়ে মানুষ যদি কখনো কাউকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলে তাহলে কখনো তারা সেই মানুষটিকে ভুলতে পারেনা। হাজারো কষ্টের মাঝেও সেই ভালোলাগার মানুষটিকে তারা মনের এক কোণে রেখে দিবে যত্ন করে। পরম মমতায় সেই নামটি তারা মুখে আনবে। কয়েকদিন যাবত নিলয় মিতুকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছে, মিতু ম্যাসেজ করলে নিলয় উত্তর দিচ্ছে কম। ফেসবুকেও একই অবস্থা ম্যাসেজ শুধু সিন করে যাচ্ছে । নিলয় চাচ্ছে সে মিতুকে আর কষ্ট দিতে চাই না। যে সম্পর্কের কোন ঠিকানা নেই কোন গন্তব্য নেই সে সম্পর্ক রাখার কোন দরকার নেই। নিলয় চাইনা মিতুর স্বপ্নগুলো নষ্ট হয়ে যাক। নিলয় চাই মিতুর স্বপ্নগুলো যেনো বাস্তবে রূপ নিতে পারে,তবে সেটা অন্য কোন ছেলের দ্বারা।।

নিলয় জানে মিতু তাকে কতটা ভালোবাসে, ভালোবাসা গুলো বোধহয় এমনি হয় যখন মেয়ে চাই তখন ছেলেটা আর চাই না আবার ছেলে চাইলে মেয়েটা চাই না। অব্যশ্য মিতু নিলয়কে বলে দিয়েছে সে যদি তাকে না পাই তাহলে সে আর এই জীবনে কাউকে জড়াবে না, প্রয়োজনে পুরোজীবন টা নিলয়ের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবে। তবে নিলয় একদিক থেকে অনেকটা চিন্তামুক্ত, প্রথমে মিতু বলতো তাকে না পেলে আত্তহত্তা করবে, এখন সেটা থেকে দুরে সরিয়ে এই একা জীবন পার করার বিষয়টা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে নিলয় ।

নিলয় জানে যে একসময় এটাও দুর হয়ে যাবে। যখন বিয়ে করবে তখন প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও পরে সেটা মানিয়ে নিবে। একসময় নিজের মন থেকে নিলয় নামক ব্যাক্তির নাম মুছে যাবে। এভাবেই ঠিক একদিন মিতু সব ভুলে গিয়ে সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করবে। নিলয়ের পকেটে থাকা ফোনটা বার বার বেঁজে উঠছে। বার বার যখন ফোন বাজে তখন এমনিতে বুঝা যায় প্রিয় মানুষটিই কল করছে। যতক্ষন কল না ধরবে ততক্ষন অপরপ্রান্তের মানুষটি ফোন করে যাবেই। নিলয় চাইলেই পারে ফোনটা সুইচ অফ করে দিতে, কিন্তু মিতুর জন্য পারছে না।

ফোনটা ধরছে না মানে সে মিতুকে পরে বলতে পারবে যে ব্যাস্ত ছিলাম বা মিতু এমনটি মনে করবে। কিন্তু না ধরে কেটে দিলেই বা সুইচ অফ করে দিলেই খুব করে কাঁদবে মিতু। একদম ছোটবাচ্চাদের মতন করে কাঁদে মেয়েটা৷ যখন ছোট বাচ্চাদের হাতে থেকে কিছু কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে তারা যেমন করে কাঁদে ঠিক তেমন করেই কাঁদবে। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলবে। নিলয় এই ব্যাপারটা মনে করেই শুধু হাঁসে,আর খুব করে হাঁসে । এই খারাপ ছেলেটার জন্যও যে কোন একজন কাঁদে, তাও আবার খুব করে কাঁদে। নিলয় কখনো ভাবেনি যে তার জন্য কেউ একজন কোনদিন কাঁদবে।

নিলয় ফোনটা আর ধরে না, শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে কি হবে। মিতু যদি জানতে পারে যে নিলয় আসলে এতিম, নিলয়ের কোন পরিবার নেই,ছোট থেকে এতিম খানাতে বড় হয়েছে, তাহলে সে হয়তো খুব কষ্ট পাবে, কিন্তু পরে ঠিকই মেনে নিবে। কারন সে যে তাকে ভালোবাসে। কিন্তু মিতুর পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্তীয়স্বজনরা কি বলবে। তারা কখনো নিলয়কে মেনে নিবে না। একটা চালচুলোহীন এতিম ছেলেকে কোনো পরিবারই মেনে নিবে না। তাহলে মিছে মিছে একজনকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখানোর কি দরকার।

আবেগের বসে মেয়েরা অনেক কিছু করে বসে, কিন্তু বাস্তব কখনো আবেগ দিয়ে চলেনা৷ নিলয় আসলে নিতুকে পরিবার সম্পর্কে মিথ্যে বলেছিলো, আসলে নিলয়ের কেউ নেই, নিলয় এতিম ছেলে। যার কেউ নেই আবার সবাই আছে। নিলয় পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ৭২ টা মিসকল উঠে আছে, সবগুলো কল অবশ্য মিতুর দেওয়া। আবারো কয়েকটা ম্যাসেজও পাঠিয়েছে। নিলয় ম্যাসেজগুলো ওপেন করে। প্রথম ম্যাসেজ নিলয় ফোন ধরছো না কেনো? তোমার কন্ঠটা শোনার জন্য মনটা আমার ছটফট করছে প্লিজ ফোনটা ধরো।

দ্বিতীয় ম্যাসেজ নিলয় জানো আজকে তোমার জন্য একটা নীল শার্ট কিনেছি। আমার শার্টটা অনেক পছন্দ হয়েছে,জানো তোমাকে শার্টটিতে দারুন মানাবে। জানো এই শার্ট পড়ে তুমি একটা ছবি উঠাবে আর সেটা ফ্রেমবন্দি করে আমি আমার রুমের টেবিলের উপর রাখবো। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ছবিটার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবো আর মাঝে মাঝে বকে দিবো। ছবিটার উপর কালো টিপ দিবো রাখবো যেনো কারো নজর না লাগে।

নিলয় আর বাকি ম্যাসেজগুলো পড়তে পারেনা, চোখের কোণে জল চলে আসে। নিলয় আর কাঁদতে পারেনা। ছোট থাকতে কত কেঁদেছে সে, এখন আর কান্না আসেনা তার। ম্যাসেজগুলো না পড়ে নিলয় ডিলেট করে দেয়। আর পড়তে চাইনা সে এমন ম্যাসেজগুলো। যেগুলো কখনো পূরন হবার নয় সেগুলো পড়েই বা কি লাভ। সামনের একটা দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে নিলয় সিগারেটে একটি করে টান দেয় আর ভাবে মিতু কি দেখে তার প্রেমে পড়েছিলো। গল্প লেখতো বলে সেই গল্প থেকে নাকি তার আবেগের বসে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত