ইতিহাস

ইতিহাস

প্রতিটা মায়ের মত আমার আম্মুও আমাকে উদ্দেশ্য করে বিখ্যাত বাণী দিলেন, বাবা ফাহিম ফাজলামি ছেড়ে পড়াশোনা কর এভাবে চললে তোর ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমিও বলে দিছি আমি তো ভালা না, তোমার মেয়ে ভালারে লইয়া থাকো। এমনিতেই আম্মুর মুড অফ কারণ ফোনে আব্বুর সাথে পাকিস্থান ইন্ডিয়ার মত যুদ্ধ হইছে যুদ্ধে যদিও তিনি জয়লাভ করেছেন তাতে কি শত্রু পক্ষ পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করেনি। তারপর আমার এই উত্তর শুনে চোখ গুলারে গোল আলুর মত বানিয়ে বললেন,

-তোরে পিডাই পিডাই ভালা বানিয়ে ফেললে কেমন হয়?
-যুদ্ধ করে করে তোমার মাঝে দেখি পুলিশ পুলিশ ভাব চলে এসেছে শুধু পিডাইতে মন চায় দুনিয়ায় কি পিডানি ছাড়া আর কাজ নেই। আমারে এক্ষুনি ৫০০ টাকা দাও দেখো আমি পিডানি ছাড়াও কত ভালো কাজের সাজেশন দেই।

-আমি বুঝিনা তোর প্রতিটা বিষয়ে টাকা কেমনে চলে আসে? তরকারিতে লবণ কম হইছে সেটা দেখে বলিস এক্ষুনি ৫০০টাকা দাও কিভাবে রাঁধতে হয় শিখিয়ে দিচ্ছি? কারেন্ট চলে গেছে গরম লাগছে সেটা দেখে বলিস এক্ষুনি ২০০টাকা দাও বলছি কিভাবে ঠান্ডা থাকা যায়। সেইদিন দেখলাম আঁখিরে বলছিস এক্ষুনি ১০০টাকা দে তাহলে আম্মুর কাছ থেকে প্রতিদিন কিভাবে ডাবল টিফিনের টাকা আদায় করা যায় টিপস শিখিয়ে দিব।

-কি করব বেকার মানুষ তাই বিভিন্ন কৌশল শিখিয়ে টাকা আয় করি এটা ধরতে পারো একধরনের পার্ট টাইম জব। তবে তোমার জন্য ভালো খবর রয়েছে কিছুক্ষণ আগে আব্বুর সাথে কথা হল তিনি তোমার ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ৪০০টাকা দাও বাকিটা বলছি।

-থাপ্পর চিনস টাকা কি গাছে ধরে? তোর বাপ কি বলছে বল নইলে আজ আর ভাত রাঁধব না, না খেয়ে থাকবি।
-শুনলে তুমি দারুন খুশি হবে কিন্তু বলব না কারণ আমার হাত একদম খালি বর্তমানে এই নিউজ টাই আমার সম্বল।
-আচ্ছা যা ২০০টাকা দিব এখন বল নইলে এই ২০০ ও পাবি না।
-আব্বু বলেছেন, “তোর মায়ের সাথে এভাবে কথা বলা ঠিক হয় নি তাকে ফোন দিয়ে সরি বলব ভাবছি।”
-আমার তো বিশ্বাস হয় না।
-বিশ্বাস না করলে কিছু করার নাই ২০০টাকা দাও বিদেয় হই।

২০০টাকা নিয়ে আমি বেরিয়ে পরলাম অনেক দিন হল রূপার সাথে দেখা নাই। রূপার অভিমান দিন দিন চুইংগামের মত হয়ে যাচ্ছে শুধু লম্বা হয়, সে অভিমান করলে আমার প্রতিটা কথায় না না করবে। সে আইস্ক্রিম খাওয়া থেকেও “না” বলায় বেশি আনন্দ পায়। রূপাকে ফোন দিলাম দীর্ঘক্ষণ রিং হওয়ার পর ভারী কণ্ঠে ভেসে আসল,

-তোমাকে না বলেছি ফোন দিবা না, মেসেজ দিবা না।
-তাহলে কি ই-মেল, ফ্যাক্স এগুলা দিব।
-কিচ্ছু দিবা না কোন যোগাযোগ রাখার মানে হয় না।
-আমাদের কি ব্রেকআপ হয়ে গেছে, তোমার লাইফে কি জাস্ট ফ্রেন্ডের আগমণ ঘটেছে।
-জাস্ট ফ্রেন্ড চিজ টা কি?
-সে তোমার লাইফে চিপাচাপা দিয়ে ঢুকে বড় গর্ত হয়ে বের হবে।
-ওইসব কেউ ঢুকে নাই, এখন ফোন রাখো।
-চল দেখা করি আজ একটা স্পেশাল দিন।

-না দেখা করব না।
-স্পেশাল দিন বলে কথা দেখা করতেই হয়।
-কিসের স্পেশাল দিন?
-এই যে তোমার সাথে আমার দেখা হওয়ার সাথে সাথেই দিন টা স্পেশাল হয়ে যাবে।
-বাহ! কথা ভালই শিখেছো তবে আমি দেখা করছি না।
-নীল শাড়ী, নীল চুড়ি, কানে নীল দোল, কপালে নীল একটা টিপ পড়ে চলে আসো।
-জনাব, আমাকে বিরক্ত করবেন না এক জীবন আপনি আমাকে যথেষ্ট বিরক্ত করেছেন।
-তাহলে আর কি নাই বা আসলে কিছুদিন দেখা না হলে এমনিতেই বাসায় চলে আসবা। রূপা রেগে ফোন কেটে দেয়ার পর আম্মুর ফোন থেকে কল আসল ধরা মাত্রই ছোট বোন বলে উঠল,

-ভাই তুই কোথায়?
-সেটা জানতে হলে টাকা লাগবে টাকা দিতে রাজি হলেই বলে ফেলব আমি এখন কোথায় আছি।
-আমার জানতে হবে না কোথায় আছিস? তবে কয়েকদিন বাসা থেকে দূরে থাক এতে তোর ভাল হবে।
এটা শুনে ভিতরে গোলমাল শুরু হয়ে গেছে নির্ঘাত আমার কপালে বাঁশ রয়েছে। যথাসম্ভব গলায় গাম্ভীর্য এনে বললাম,

-কেন আমি বাসা থেকে দূরে থাকব?
-তুই আম্মুকে নাকি বলেছিস আব্বু তোরে ফোন দিয়ে বলেছেন আম্মুকে সরি বলবেন। তাই আম্মু নিজ থেকেই আব্বুকে ফোন দিয়ে বললেন যে, “সরি বলো।” এটা শুনে আব্বু ধমক দিয়ে বলেছেন, “কিসের সরি তুমি আমাকে ফোন দিয়েছ কোন সাহসে তোমাকে সরি বলার প্রশ্নই আসে না, তুমি হচ্ছো আমার ঘরের লেডি হিটলার.”

-এ দেখি তিল থেকে তাল হয়ে গেল রে মেয়েদের ধৈর্য শক্তি আল্লাহ এত কম কেন দিয়েছেন?
-তারপর তুই নাকি ২০০টাকাও নিয়েছিস।
-আম্মুরে ঠান্ডা কর লক্ষী বোন আমার তোরে আগামীতে যে কাজ গুলা করে দিব সেখানে ২৫% ডিসকাউন্ট থাকবে।
-৩০০টাকা দিতে পারলে আম্মুরে ঠান্ডা করব নইলে তোর কপালে সত্যি ভীষণ দুঃখ আছে রাখি। আমি চিপায় পরলাম এইরকম দিন আসবে জীবণেও ভাবি নাই কোন রকম সন্ধ্যা পর্যন্ত বাহিরে কাটিয়ে রাতে বহু কষ্টে বাসায় ঢুকলাম। যেই আম্মুর রুম পাশ কাটিয়ে আমার রুমে ঢুকব তখনি শুনলাম ছোট বোন বলছে,

-উচিত শিক্ষার প্রয়োজন তোমাকে হুদাই আব্বুর কাছে ছোট করেছে পিডানি দিতে হবে সাথে মুরগির মাংস ১ সপ্তাহ রান্না বন্ধ। এই কথা শুনে শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে এই মেয়েটা আমার ছোট বোন কেমনে হয় কানের ২ইঞ্চি নিচে ঠাস করে একটা দিতে পারলে মনে বড়ই আনন্দ পেতাম। তার কথা শুনে আম্মু বলছেন,

-আসুক হারামজাদা তারে আজ আমি ঘরের সব কাজ করাব কত্তবড় মীরজাফর আমার ২০০টাকা নিয়েও এইরকম করতে পারল। পকেটে ফোন বেজে উঠল দেখি আব্বুর নাম্বার রিসিভ করতেই আব্বু বলে উঠলেন,
-কি রে ফাহিম কেমন দিলাম?
-নিজের বাপ এইরকম করতে পারে ভাবা যায় পৃথিবী কি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পথে।
-তুই কি কম করছস যাও আব্বুজি ঠ্যেলা সামলাও।

ফোন শেষ করে দেখি আম্মু সামনে হাতে ডাল ঘুটনি বাকিটা নিশ্চই আপনাদের বলে দিতে হবে না যে ইতিহাস রচনা হয়েছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত