ক্লাস থেকে বের হতেই দেখি মুখে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে একজন আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
-পাইছি আপনারে এতক্ষণ ক্লাসে ছিলেন বুঝি। তার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম আমার কেল্লা ফতে নিশ্চই কোন মেয়েরে চোখ মারছি বা প্রপোজ করছি তাই তার প্রেমিক অথবা বড় ভাই অথবা তার ক্রাশ আমারে খুঁজে বের করছে। কলেজে যদি পিডানিটা খাই তাহলে ইজ্জত শেষ তাই কোন কিছু না ভেবেই দিলাম দৌড় যতই দৌড়াই সেও দেখি আমার পিছনে দৌড়ে আসে।
-ফাহিম ভাই দাঁড়ান দৌড়ান কেন?
সত্যিই তো আমি দৌড়াচ্ছি কেন? আমি ভদ্র ছেলে কোন মেয়ের দিকে তো চোখ মারার প্রশ্নই আসে না তাছাড়া কলেজে আসি নাই গত ৫দিন ধরে, দৌড়ানি থামিয়ে বললাম,
-ইয়ে মানে তাড়া ছিল তাই দৌড়াচ্ছিলাম, কিছু বলবা?
-ভাই আমি তো আপনার লেখার বিরাট ফ্যান।
এইটা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না, আমার ফ্যান আছে ও মাই গড খুশির ঠ্যেলায় আমার বুক টানটান হয়ে গেছে আধ ইঞ্চি মনে হয় ফুলেও গেছে। যাই হউক ভিতরে দারুন উত্তেজনা রেখে মুখে নরমাল ভাব এনে বললাম,
-ও আচ্ছা, এ আর নতুন কি? অটোগ্রাফ লাগবে খাতা আছে থাকলে দাও দিয়ে দেই।
-ভাই এখন কি আর অটোগ্রাফের যুগ এখন হচ্ছে ফটোগ্রাফের যুগ আসেন সেলফি তুলি।
ইয়া মাবুদ আমার ফ্যান আমার সাথে সেলফি তুলতে চাচ্ছে, আমি জ্ঞান হারাবো মরে যাব বাঁচাতে পারবে না কেউ। আমার ফ্যান আছে সে আবার আমার সাথে ফটো তুলার জন্য রিকুয়েস্ট করছে আমার নিজেরে গর্ভবতী সরি গর্বিত মনে হচ্ছে।
-আচ্ছা একটু ওয়েট কর, আমি ওয়াশরুম থেকে আসি।
আসলে আমি লেইট করাতে চাচ্ছি কারণ ফ্রেন্ড গুলারে এখন চোখে পরতেছে না, হারামী গুলা সঠিক সময়ে আসে না। তারা আসে যখন আমি দাঁড়িয়ে হিসু করি তখন এসে পিক তুলে ফেবুতে আপলোড দিবে, ইশ! এখন আসলে দেখত যে ফাহিম কি জিনিস? তারা আমার মূল্য বুঝে নাই তাদের দোষ দিয়ে লাভ নাই আমি যে অমূল্য সেটা যদি তারা বুঝত তাহলে আজ তারা গর্ভবতী হয়ে পেটে বাচ্চা চলে আসত বিকয আমার মত ফ্রেন্ড তারা পাইছে এটা তাদের চৌদ্দ নারী পুরুষের ভাগ্য। অনেকক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেও দেখি কোন হারামজাদার দেখা নাই কাজের সময় একটারেও পাওয়া যায় না। যাই হউক তারে বললাম,
-তোমার নামটাই জানা হল না, তোমার নাম কি?
-আমার নাম নাদের, ভাই প্লিজ তুমি না করে তুই করে বলেন আপনি আমার বড়।
এত ইজ্জত আমার ছোট বোনও দেয় না, হারামীটা সুযোগ পাইলে আমার চুল ধরে আরো টানাটানি করে। তার কথা শুনে আবেগে কান্না চলে আসল কিন্তু কাঁদলে হবে না, মোটামুটি একটা ভাব এনে বললাম,
-ওকে নাদের পিক তুলো। যখনি পিক তুলতে যাবে তখনি আম্মুর ফোন রিসিভ করে বললাম,
-হ্যালো আম্মু কোন প্রয়োজন কি?
-প্রয়োজন মানে তুই কোথায়? এতক্ষণ লাগে তোর কলেজ শেষ হতে।
-আম্মু তুমি বুঝতে পারছো না আমার অনেক ফ্যান এদের সামলিয়ে আসতে হয় সো লেইট তো হবেই।
-তুই ফ্যান এর ব্যবসা কবে থেকে শুরু করলি?
-আম্মু এইটা ফ্যান না এইটা ফ্যান।
-আরে ফ্যানই তো বললাম শোন বাসায় সকাল থেকে কারেন্ট নাই আর তুই আস্তো একটা ফ্যান নিয়া আছিস এইটা কেমন কথা! গরমে আমরা মরতেছি তুই তাড়াতাড়ি ফ্যানটা নিয়ে আয় ব্যাটারিতে চলে নাকি চার্জে চলে।
-আম্মু এটা বাতাসের ফ্যান না এইটা হচ্ছে ফ্যান, তুমি শাহরুখ খানের ফ্যান মুভি দেখো নাই।
-শাহরুখ খান কে?
-শাহরুখ খান কে চিনো না? ওইটা আব্বুর ফ্রেন্ড আব্বুরে জিজ্ঞেস করিও বলে দিবে। ফোন কাটার পর নাদের আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-ভাই শাহরুখ খান আপনার আব্বার ফ্রেন্ড।
-হ, আব্বু সৌদিতে থাকতে শাহরুখ খান সৌদিতে গেছিল তখন ফ্রেন্ড হয়ে গেছেন। মনে মনে বলছি শাহরুখ খান কে আমার বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষের কেউ টিভির বাহিরে কখনো দেখি নাই।
-ওয়াও!
-আসো সিঙ্গারা খাই খেতে খেতে পিক তুলা যাবে।
সিঙ্গারা ৪টা এনে খাওয়া শুরু করলাম প্রতি পিস ১০টাকা করে, আমার ৪০টাকা যাবে সেটা মনে আসতেই বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া ধরেছে। সিঙ্গারা খাওয়ার মাঝে বললাম,
-তুমি আমার কয়টা গল্প পড়ছো?
-ভাই একটাও না।
-মানে একটাও পড় নাই তাহলে ফ্যান যে বললা!
-কে যেন আপনারে দেখিয়ে বলছিল সে বাল-ছাল লেখে।
এইটা শোনে সিঙ্গারা মুখে রেখেই আমার হার্ট এট্যাক হওয়ার অবস্থা। তার দিকে তাকিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললাম,
-আমি বাল-ছাল লিখি।
-আরে ভাই বাল-ছাল বাদ দেন লিখেন যে এটাই অনেক সেটা শুনেই আমি আপনার ফ্যান হয়ে গেছি আসেন পিক তুলি।
আমার সিঙ্গারা মুখে হা করে থাকা পিক তুলে নিয়ে সে চলে গেল। আমি দোকানেই বসে রইলাম, আমার ৪০টাকা তারপর আমি বাল-ছাল লিখি এতকিছুর পরও আপনারা কি ভাবছেন আমি বেঁচে আছি আরে ভাই আমি সেই কবে হার্ট এট্যাক করেছি। এখন বলবেন তাহলে এই লিখা আসল কিভাবে? মরার পর ভূত হয়ে লিখে পোস্ট দিছি।