প্যাঁচ

প্যাঁচ

কলের পর কল আসছে আমিও বিরতিহীন ভাবে কল কেটে যাচ্ছি শেষে না পেরে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রাফি রাগি রাগি গলায় বলে উঠল,

-ফাহিম আমি মরে যাচ্ছি বেঁচে থেকে আর লাভ নেই।
-মরে যাচ্ছিস ভালো কথা শুধু শুধু আমার ঘুম নষ্ট করে এটা বলার মানে হয় না, মরাটা যদি জরুরী হয় মরে যা।
-আমার জীবনেরর গুরুত্ব কারোর কাছে নেই, যাই হউক বিদায় বন্ধু।
-শোন মরে যাওয়ার আগে আমার টাকা গুলা ফিরত দিয়া যাইস আর মরতে যাচ্ছিস একটা ট্রিট তো দাবি করতেই পারি।

-সিরিয়াসলি ম্যান তুই এইরকম নিমকহারাম ভাবতেই পারি নাই, কাল মিতুর বিয়ে আমার মরা ছাড়া উপায় নাই।
-আচ্ছা দেখি বিয়া ভাঙ্গা যায় কি না?
-তাহলে কি আমি বিয়ে ভাঙ্গার আগ পর্যন্ত বেঁচে থাকব?
-তোর ইচ্ছা আপাতত আর ফোন দিয়া জ্বালাইস না।

যদিও আমি তাকে ফোন করতে নিষেধ করছিলাম কিন্তু সে অবিরাম ভাবে কিছুক্ষণ পর পর ফোন দিয়েই যাচ্ছে উপায় না দেখে বাসা থেকে বের হলাম। বেচারার দিকে তাকিয়ে দুঃখবোধ হচ্ছে তার হাব ভাবে মনে হয় এখনি সুযোগ পাইলে মরে যাবে। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে কিভাবে মরা যায় সেটা নিয়ে ভাবছে।

-তা তুই মরে যাবি ডিসিশন ফাইনাল।
-মানে তুই না বললি যে বিয়ে ভেঙ্গে দিবি।
-তুই শোনলে রাগ করবি কিন্তু তবুও বলছি তোর প্রেমিকা বিয়েতে ১০০% রাজী, তাছাড়া মেয়ের মধ্যে ঘাপলা আছে তুই শুনলে কষ্ট পাবি তবুও বলছি সে তোরে রেখে আরো ছেলেদের সাথে টাংকি মেরে যাচ্ছিল।

-তুই মিতু সম্পর্কে বাজে কথা বলবি না, আমার ৬ মাসের খাঁটি প্রেম।
-আরে ব্যাটা যেটা সত্য সেটা বলছি মিতু তোরে চাচ্ছে না, সে চুল নাই খালুকে চাচ্ছে।
-চুল নাই খালুটা কে?
-আরে যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তার মাথায় চুল নাই দেখতে খালু খালু লাগে, মিতুর সাথে দেড় মাসে আগে আমার একবার দেখা হইছিল কলেজের সাইট দিয়া যে চিপা গল্লি গেছে ওইখানে সাথে ছিল আমাদের বাবলু মিয়া।

-ওয়াট! বাবলু আমার প্রেমিকার সাথে ওইখানে কি করছে?
-আরে বাবলু কি জানে ওইটা যে তোর প্রেমিকা? তোর বিলিভ না হলে বাবলুরে ফোন দে, এরপর তোর প্রেমিকা মাঝে মধ্যে আমারেও চোখ টিপা মারত আমি বুঝেও না বুঝার ভাব ধরতাম কারণ তুই জানস আমি ভালো মানুষ।

-তুই কি বিয়ে ভাঙ্গবি নাকি এসব বলে তুই আমাকে রাগাচ্ছিস যাতে তোরে পিডানি টা দেই।
-বিয়ে অবশ্যই ভাঙ্গব তবে সত্যি কথা গুলা আগে বলে নেই পরে দেখা গেল বিয়ের পর তোরা ঝামেলা করছিস বিকয সত্য হচ্ছে পাদের মত যতই চিপা দিয়ে মারিস না ক্যান গন্ধ বের হবেই। এখন যদি তুই এগুলা বিলিভ করিস না তাহলে কিছু করার নাই, আমি বিয়ে ভেঙ্গে দিচ্ছি।

-আচ্ছা থাম আমি ভেবে নেই। বেচারা রাফি অনেক্ষণ ভেবে বলল,
-আচ্ছা বিয়ে করে ফেলুক ভাঙ্গতে হবে না।
-তাহলে তুই কি মরে যাবি?
-না আপাতত মরার চিন্তা বাদ। রাফির সাথে দেখা করার পর মিতুর সাথে দেখা করলাম, মিতু এসেই বলল,

-ভাইয়া পালিয়ে যাব নাকি আপনার বন্ধু কই?
-আরে পালাবা পরে কাহিনী শোন রাফি তো তোমারে বিয়ে করতে পারবে না।
-মানে, আমি এখনি ওরে ফোন দিচ্ছি।
-দিয়া দেখো। বেচারী ফোন দিয়া দেখল ফোন বন্ধ তারপর আমার দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বলল,
-এখন আমার কি হবে ভাই?
-মাত্র ক্লাস টেন পাশ করছো এর মধ্যে ৬মাসের ভালবাসায় এত আবেগ আসে কই থেকে চোখের পানি মুছে যা বলি শোন। মিতু চোখের পানি মুছে বলল,
-বলেন কি বলবেন?
-রাফি ছেলে হিসাবে ভালো তবে ওর একটা বিরাট সমস্যা হচ্ছে সে কিছু দিন পর পর গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে। এই ৬মাস তোমার সাথে রিলেশন করছে পরের ৬মাসের জন্য স্নেহারে ধরছে।

-রাফি এরকম করবে আমি বিলিভ করি না।
-রাফিরে ৬মাসে তুমি এত বিলিভ করছো আহা রে রাফির বাপ মায়ের জন্য আফসুস হচ্ছে।
-আফসুস হচ্ছে কেন?
-কারণ তারা ২১ বছরেও তোমার রাফিরে বিলিভ করতে পারল না।
-এখন আমি কি করব?
-রাফির আশা বাদ দাও এক নাম্বার লুইচ্ছা পোলা কাল তোমার বিয়ে সো হাসি খুশি থাকো।
-ওরে ছাড়া আমি কেমনে সুখে থাকব আমার ৬মাসের প্রেম।

-এমন ভাব করতেছো যেন ৬বছরের প্রেম, এখনি রাফিরে সব কিছুতে ব্লক দাও আর রাফির বিকাশ নাম্বার দিচ্ছি মাঝে মাঝে টাকা পয়সা দিও বেচারা নতুন প্রেমিকার জন্য গিফট কিনতে পারতেছে না।
-ওরে আমি জুতা পেটা করব তার থেকে আমার যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে হাজার গুণ ভালো ছেলে। অকে ভাইয়া যাই আমি বাসায় পরে সবাই টেনশন করবে।
-আচ্ছা যাও।

এরেই বলে বাঁশ ২দিকে ২জন রে পাঠিয়ে দিছি আবেগের ধাক্কায় এরা মরতে যাচ্ছিল এখন এরা দেবদাস হয়ে ঘুরবে। বিয়ের দিন সকাল সকাল আমি এক ভ্যান পুলিশ এবং নারী ও শিশু রক্ষা সমিতির কিছু কর্মী পাঠিয়ে দিছি। ২দিন পরের কাহিনী শুনেনে নাম্বারিং করে বলি,

১) বিয়ে হয় নাই কন্যার বয়স ১৬।
২)রাফি আমারে খুজতেছে,
৩)রাফির গার্লফ্রেন্ড আমারে খুজতেছে,
৪)গার্লফ্রেন্ডের বাপ শুনছি গুন্ডা নিয়া আমারে খুজতেছে,
৫)জেল থেকে নাকি কাজীও আমারে খুজতেছে।
অতঃপর তারা কেউ আমাকে পাচ্ছে না কারণ আমি নৌকা ভাড়া করে হাওর অঞ্চলে রওয়ানা দিছি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত