আযানের ধ্বনি কানে বাঁজতেই বুকের বাম পাশে চিনচিন ব্যথা অনুভবে ঘুম ভেঙ্গে গেল,নিস্ফলা দেহ হুইল চেয়ারেই!
কখন যে ঘুমিয়ে গেছে জানেই নি। করিডরটা ফাকা কাশফুলের টবটার দিকে তাঁকাতেই আবির বিস্মিত হয়ে গেল। কাশফুলটা শুকিয়ে গেছে!অনেকে ভাবছেন হয়ত কাশফুলের আবার টব হয় নাকি? গল্পটা লিখা হয়নি আজও,গল্পের জন্য না হয় কাশফুলের টবটাই ব্যবহার করলাম।
হ্যারিকেনর মৃদু আলোয় খাবার খেতে বসেছে সবাই মাঝখানে আবির,পাশেই বাবা অপর পাশে বাড়ির কাজের লোক। গ্রামের চাঞ্চল্যকর পরিবেশ হ্যারিকেনের মৃদু আলোয় সর্বোচ্চ রেখা। আবির খেয়ে ঘুমাতে যাবে ঠিক এমনই সময় মা আসলো রুমে। কিরে বাবা ঘুমাস নি? না মা ঘুম আসছে না। মায়ের কোলে মাথা রাখলো আবির ঘুম পাড়ানি গান,ঘুম পাড়ানি মাসী পিসি মোদের বাড়ি এসো খাট নাই পালংক নাই পিঁড়ি পেরে বসো। আবির ঘুমিয়ে গেছে। সকালের মিষ্টি রৌদ বাবার ডাকে ঘুম ভাংলো! আবির রস খাবি আয়। আবিরদের ত্রিশটার মতো খেজুরের গাছ রয়েছে তাতে হাড়ি দিয়ে রস সংগ্রহ করে রোজ। আবির হুমড়ি খেয়ে দৌড়ে আসলো। আব্বা রস দ্যান। দাঁত ঘসছোস? না আব্বা ওমনি দ্যান সমস্যা নাই। আবির ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো। প্রভাতের রবিকরে ফুটিলো কাশফুল।
আবির বই নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে…!দূরে তাঁকাতেই দেখলো একটা মেয়ে এক গুচ্ছ কাশফুল তুলে চুলে বেঁধে নিয়েছে জড়োসরো করে,কি অদ্ভুদ তাই না। স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে বাড়িতে চলে আসলো। একটাই কারন গ্রামে আজ যাত্রা হবে,হবে নাচাগানা। মাইকে বারবার ঘোষনা করে দিচ্ছে হা ভাই আজ রাত আট ঘটিকায় যাত্রা যাত্রা..বেহুলা লক্ষীনদার। সন্ধ্যায় পুটি মাছ দিয়ে ভাত রান্না করছে আবিরের মা,মা আমি ভাত খামু না। ক্যান বাজান? মা আমি যাত্রা দেখতে যামু। পাশ থেকে আবিরের বাবা চিল্লাইয়া উঠলো না,না ওসব যাত্রা ফাত্রা দেহুন যাইবো না। না আব্বা আমি যামু। সেদিনের মতো আবিরের যাওয়া হল না,বাবার জিদের কাছে পরাস্থ হল। সকালে স্কুলে যাচ্ছে আবির,আবার সেই কাশফুল তোলা এক গুচ্ছ জড়োসরো করে মাথায় গুজানো। আবির কাছে গেল!
তুমি কে,নাম কি তোমার,বাড়ি কই? মেয়েটা কথা বলছে না। কি হল কথা বলতাছো না কেনও? মেয়েটা দৌড়ে চলে গেল। হাটখোলার কাছাকাছি আবির আসতেই সেই মেয়েটিকে দেখতে পেল। এবার মেয়েটি বিলের মধ্যে নেমে শাপলা তুলছে,মেয়টি সবসময় এটা ওটা তুলে করে টা কি। আবিরের মধ্যে কৌতুহলী সৃষ্টি হল! এই মেয়ে কই গিয়াছিলা? ন্যাইলটাই। ন্যাইলটা হচ্ছে সেই বিলটার নাম,কি অদ্ভুদ নাম তাই না। রোজ এভাবেই কাটতে কাটতে মাস পেরিয়ে বছর. তারপর বেশ কয়েকটা বছর কেটে গেল। আবির এখন ঢাকায় পড়াশুনা করে,রোজ ভার্সিটি যাওয়া আসা করে আর আনমনে সবার দৃশ্য অকোপটে উপলব্ধি করে।
বসন্তের শুরু চারদিকে পাতার মর্মর ধ্বনি,কৃঞ্চচূড়া গাছটাও ছেঁয়ে গেছে ফুলে। সবাই চুলে কৃঞ্চের ফুল মাথায় গুচ্ছে। সহসা গেইটে চোখ পড়লো আবিরের রিদম,পিয়াসের সাথে কাশফুলের এক গুচ্ছ খোপায় দিয়েকে যেন ঢুকছে। রিদম খুব হিসেবি লোক ওর কাছে ঠায় পাওয়া ব্যপক তুস্কর পিয়াস মেয়েলি স্বভাবের সবমসময় মেয়েদের পিছে। পিয়াস দাঁড়া[আবির]! হ্যাঁ কি বলবি বল? তোর সাথে যে মেয়েটা এলো কেরে? ওহ স্বচ্ছ নতুন ভর্তি হয়েছে। সবাই স্বচ্ছকে দেখে অট্রহাসি দিলো!হাসির মাঝেও লজিক থাকে।কাশফুল কেউ মাথায় গুজে।
উত্তরের ক্যান্টিনে লেট নাইট ডিনারে ব্যস্ত আবির। আচমকা আবিরের উপর একজন ঝেপে পড়লো। হট দ্যা হেল বিব্রত হয়ে। আরে স্বচ্ছ আপনি? আপনি আমার নাম জানলেন কি করে? জানি যেভাবেই হোক জানি। ব্যাই দ্যা ওয়ে এভাবে দৌড়ে হাপিয়ে কেনও? এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম কয়টা বাজে ছেলে পিছু লেগেছিল হঠাৎ আমার ধরে আর দৌড়ে পালিয়ে এসেছি। এ’কি আপনার হাত দিয়ে তো রক্ত বের হচ্ছে! আবির পকেট থেকে রুমাল বের করে হাতটা বেঁধে দিলো। চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি! আপনি কই থাকেন? আমি উত্তরাতে থাকি আপনি? আমিও উত্তরাতেও। তো এমন সময় এখানে লেট নাইট ডিনার স্ট্রেঞ্জ? স্ট্রেঞ্জ এর কিছুই নেই ক্ষুধা লাগলেই খাই।
খাদক একটা। কিছু বললেন? না,না,না। বাস এসেছে চলুন। বাসে করে দুজন যাচ্ছে,এয়ারপোর্ট আসতেই দুজনে নেম গেল। স্বচ্ছ বলে উঠলো আপনি চলে যান আমি এখন একাই যেতে পারবো। না,না তা কি করে হয় আপনাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসি। ওকে চলুন! দুঁজনে আনমনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কয়েকটা কুকুর সামনে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল। কলিং বেল টিপতেই একটা পিচ্চি এসে দরজা খুলে দিলো। আর জাপটে ধরলো …আপু! নিঝুম ছাড় অনেক ট্রায়ার্ড,আপু ঐই ভাইয়াটা কে?উনি আবির আমার ফ্রেন্ড। বাহ বাসাটা তো বেশ পরিপাটি করে সাজানো। আবির চারদিকে ঘুরে দেখতেছে আচমকা চোখে পড়লো নাইলট্যার বিলের একটা ফটো দেয়ালে ঝুলানো। স্বচ্ছ, হ্যাঁ বলুন।
এইটা ন্যাইলটা বিলের ছবি না? হ্যাঁ আপনি কি করে জানলেন? আমি ঐই এলাকার…আরে এতো সেই মেয়ে যে রোজ কাঁশফুল তুলতো আমি স্কুলে যাবার সময়। এটাও আমি[স্বচ্ছ]। ওহ ম্যাই গুড নেস,আমাকে চিনতে পারছেন? হ্যাঁ যেদিন প্রথম ভার্সিটিতে যায় সেদিনই আপনাকে চিনে ফেলেছি। আচমকা গুলির শব্দ। ঘর থেকে স্বচ্ছ নিঝুমকে ধরে দৌড়ে এয়ারপোর্টের উল্টো পাশে দিয়া বাড়ি দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে। আচমকা স্বচ্ছ থেমে গেল…! কি হল থামলেন কেনও? দেখছেন কত্ত কাশফুল ফুটেছে,জানেন আমার বড় ইচ্ছে আমার বাসার করিডরটা পুরো সাজাবো কাশফুলের টবে ফুল ফুটবে আর আমি খোঁপায় এক গুচ্ছ ফুল বেঁধে রাখবো।
জোছনার আলোয় সত্যি মায়াবিনীই লাগছে কাশফুলে স্বচ্ছকে। আচমকা আমার বুকে ঢলে পড়লো স্বচ্ছ মাথা দিয়ে ফিনকির মতো রক্ত বের হচ্ছে। চারদিকে লোক জড়োসরো হয়ে গেল একেক জনের হাতে একেকটা অস্ত্র! কি ব্যপার আপনারা কারা,এটা বলতেই আবিরের পায়ে দুটা গুলি করলো। এরে তুলে নিয়ে আয় স্বচ্ছ না কি যেন নাম একজন বললো। বাচ্চা মেয়ে নিঝুম ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে আছে আবির অজ্ঞান হয়ে গেল…। প্রভাত রবিকরে ফুটিলো ফুল নিথর দেহ পড়ে রইলো স্বচ্ছর দহনে পড়ে রইলো দু কূল।
স্বচ্ছকে গত রাতে যারা তাড়া করেছিল তারাই স্বচ্ছকে এভাবে ফেলে চলে গেছে। স্বচ্ছর দাফন কার্য শেষ।আবির কবরের পাশে হুইল চেয়ারে বসে,চোখটা টলমল করছে। ভাইয়া! কে? আমি নিঝুম। কেঁদো না ভাইয়া আমাকে আপু কুড়িয়ে পেয়েছিল সে আপুটাও চলে গেল এখন কই যে যাব। মেয়েটার বিবর্নর ধূসর মায়াবী চোখ টলমল করছে,আপু আয়! বাহুডোরে আকড়ে পড়লো নিঝুম। এরপর কেটে গেল বহু বছর নিঝুম বড় হয়ে গেছে।
স্বচ্ছর কথা মতো আবির সেরকমই ভাবে করিডরটা সাজালো। আযানের ধ্বনি কানে বাঁজতেই বুকের বাম পাশে চিনচিন ব্যথা অনুভবে ঘুম ভেঙ্গে গেল,নিস্ফলা দেহ হুইল চেয়ারেই! কখন যে ঘুমিয়ে গেছে জানেই নি। করিডরটা ফাকা কাশফুলের টবটার দিকে তাঁকাতেই আবির বিস্মিত হয়ে গেল। কাশফুলটা শুকিয়ে গেছে!