মানিকগঞ্জ থেকে সাভার আসবো। এমনি রাত হয়ে গেছে তার ওপর এমন সময় একটা অঘটন ঘটে গেলো। বাস স্ট্যান্ডে পৌছানোর আগেই আমার জুতো ছিড়ে যায়। কি আর করার আম্মুকে নিয়ে চলে গেলাম মার্কেটে। একটা জুতার শো-রুমে ঢুকতেই চোখ পড়ে গেলো এক জোড়া সুন্দর পেন্সিল হিলের দিকে।
-আম্মু আমি ওই জুতোটা কিনবো।
-কিহ….ওই জুতা????(রেগে আগুন আম্মু)
-হ্যা ওই জুতা কিনবো।
-অসম্ভব এখন তোমাকে ওই জুতা কিনে দেওয়া যাবে না। নরমাল জুতা নাও আর এত্তো উচু জুতা তো তোমাকে পড়তেই দেওয়া যাবে না এখন।
-দেখো আম্মু। যদি এই জুতা না কিনে দাও আমি এখান থেকে যাবো না বলে দিলাম।
-দেখো মিতু এমনিতেই রাত হয়ে গেছে। যদি দিনের বেলা হতো ভেবে দেখতাম। এই রাতের বেলা তুমি কার পায়ের অর্ধেক আয়ু শেষ করবে আল্লাহ্ জানে।
-এমন কিছু হবে না আম্মু সাবধানে থাকবো আমি।
-না কিছুতেই দেওয়া যাবে না।
-ঠিক আছে আমি এখান থেকে এক পা সরে দাড়াচ্ছি না বলে দিলাম।
অনেক জোরাজোরি করার পর ও আম্মু সফল হলো না। অবশেষে আমার কথা শুনতে হলো। ৮৫০ টাকা দিয়ে জুতা কিনে মনের আনন্দে পরে হাটছি। বাস স্ট্যান্ডে এ এসে দাড়ালাম। রাত ৮ টা বাজতে চললো একটা গাড়ির ও খবর নেই। পা আমার ব্যথা হয়ে গেলো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে। জুতা কেনা ভুল হয়ে গেছে। কে জানতো এভাবে ১ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। নিজের উপর নিজেরই রাগ উঠলো। এমন সময় একটা বাস আসলো। নবীনগর অবদি যাওয়া যাবে। সাভারের দিকে যাবে না।
তবুও ৩৫ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে আসতে হলো। বাসে উঠে দেখি পুরো বাস ভর্তি একদম পিছনে ২ টা সিট আছে। সামনে একটা ছেলের দিকে চোখ পরতেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো। হাত পা এদিক সেদিক দিয়ে রাজপুত্রের মতো বসে আছে।আর ফোন টিপছে। ফোনের ভিতর এতোই মগ্ন যে আমরা যাবো সে খেয়াল নেই। এই সময় মনে চাচ্ছিলো আমার পেন্সিল হিল দিয়ে একটা পারা দিয়ে দেই বুঝুক হাত পা এদিক সেদিক দিয়ে বাসে বসে ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকার কি মজা। পিছন থেকে এক মেয়ে বলে উঠলো।
-এই ভাইয়া। পা সাইড কর আপুটা ভিতরে আসবে তো।
রাজপুত্রের ধ্যান ভাঙলো। বুঝলাম তার বোন। মনে হয় ফ্যামিলি সহ আছে বাসে। আমরা পিছনে চলে গেলাম। জানালার সাথের সিটে বসে আছি। রাতের আকাশ টা কি সুন্দর। শীতল হাওয়া চোখে মুখে লাগতেই অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করে। বাইরের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখছি। হঠাৎ আম্মু বলে উঠলো।
এসে গেছি সামনে আসো। নামতে হবে। কি আর করার যখন একটু বাসে ভালো লাগে কিভাবে যেনো সময় চলে যায় বুঝিনা। বাস এখনো থামেনি কন্ডাক্টর তবুও বলছে সামনে এগিয়ে আসতে এখনই নাকি থেমে যাবে বাস । সামনে এসে দাড়ালাম। এখনো দেখি সেই রাজপুত্র ফোন নিয়ে ব্যস্ত। মনে হয় প্রেমিকার সাথে কথা বলায় মগ্ন সে। নামতে যাবো এমন সময় বাসের ড্রাইভার এমন ভাবে টান দিলো আবার। অনেকটা ঝাকিতে পিছনে চলে আসি। আর তখনই এক ছেলের বিকট আওয়াজে পিছনে ফিরে তাকাই।
পিছনে ফিরে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার অবস্থা শেষ। আমার পেন্সিল হিল পরা পা ওই ছেলের পায়ের উপর পরে আছে। আর এর জন্যই ছেলেটা এতো জোরে চিৎকার দিছে ছেলেটার বাবা মা সবাই এদিক চলে এসেছে। আমি ঘটনা বুঝতে পেরেই পা সরিয়ে নিয়ে আসি। ভয়ে ভয়ে সরি বলি জানি না ওই ছেলের কান অবদি পৌছালো কি না। আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি অগ্নিময় রুপ ধারন করেছে আম্মু। এমন সময় ছেলেটা বলে উঠলো…
প্লিজ আপনি একটু এখানে বসেন। বাস থামুক তখন চলে যাবেন। ছেলেটা উঠতেই বসে পরলাম আমি। ছেলেটার বোন হাসছে আর বলছে কিরে ভাইয়া কেমন লাগলো মেয়েটার পেন্সিল হিলের পারা খেতে’ লজ্জায় ইচ্ছে করছিলো এখনই বাস থেকে লাফ দেই। এই কন্ডাক্টর ও শয়তান। বাস থামার নাম নেই নামার জন্য তাড়াহুড়ো। তবে ভেবে হাসি পাচ্ছে যাওয়ার সময় মনে মনে যা বললাম তাই হলো। ছেলেটা আমার পেন্সিল হিলের পারা খেয়ে নিলো হাহাহা।
বাস থামতে দেরি আমার নামতে দেরি হয়নি। বাসায় আসা অবদি আম্মু আর কিছু বললো না। তবে ছেলেটার জন্য মায়া ও লাগছিলো আবার হাসি ও পাচ্ছে। যাক সবাই কে কলেজে গিয়ে এসব বলে মজা করা যাবে। বাসায় এসেই আম্মুর হুংকার। এর জন্যই বলছিলাম। পেন্সিল হিলের দরকার নেই। দিলা তো এক ছেলের পায়ের বারোটা বাজিয়ে। ছেলেটা কি ভাবলো আর তার ফ্যামিলি।
-আরে আম্মু আমার দোষ কই বাস ওই ভাবে চালাবে কে জানে। আমরা তো ভাবছি নামবো।
আম্মু রাগে কটমট করতে করতে চলে গেলো। আমি ও রুমে এসে ফ্রেস হয়ে একটা ঘুম দিলাম। কলেজে গিয়ে সবাই কে বিষয় টা বলায় হাসা হাসি তো হলোই শয়তান গুলো আমাকে নিয়ে মজা শুরু করে দিলো। বন্ধু নাতো এসব শত্রু সব গুলা। মনে মনে ভেবে নিলাম। বিয়ের পর বর কে জিজ্ঞেস করতে হবে কখনো মেয়েদের পেন্সিল হিলের পারা খেয়েছে নাকি। আমি তো এক ছেলেকে দিয়ে দিয়েছি আল্লাহ্ জানে তার বউ কে না এসব বলে আমাকে কতো কিছু বলবে। ৩ বছর পর বসে আছি আমি। হাজারো ফুলে ঘেরা একটা রুমে। হ্যা আজ আমার বাসর রাত আর আমি সেই রুমেই বসে আছি। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে চুপচাপ ভাবে বসে থাকলাম। বিরক্তিকর একটা অবস্থা। যদিও বিয়ের আগে ২ বার আমাদের দেখা হয়েছে তবুও কেমন এক পরিস্থিতি। আমার বর রুমে ঢুকলো। রুম লক করে এদিকে আসলো আর বললো…..
-আচ্ছা আমি কি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি?(নিহান আমার বর)
-জ্বী।
-আচ্ছা শুনো আমার অনেক দিনের ইচ্ছে বাসর রাতে বউ কে একটা ঘটনা বলবো।
-মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম আমি। যদিও এতোটা শান্ত স্বভাবের মেয়ে আমি নই। তবু ও আম্মু বলে দিয়েছে চুপচাপ থাকতে।
-একদিন বাসে করে আসার সময় এক মেয়ে নবীনগর নামতে গিয়ে তার পেন্সিল হিল দিয়ে আমার পায়ে এমন ভাবে পারা দিয়েছে আমি তো ব্যথায় এমন জোড়ে চিৎকার দিলাম। পরে কোনো মতে মেয়েটাকে আমার সিটে বসিয়ে কষ্ট করে দাড়ালাম। আর এদিক দিয়ে আব্বু আম্মু আর নিসা(বোন) তো হাসছে শুধু। ইচ্ছে করছিলো মেয়েটা কে দেই একটা থাপ্পড়। পায়ের অবস্থা শেষ হয়ে গেছিলো আমার।মেয়েটার মুখটা ভালো ভাবে দেখিনি আমি আর দেখলে ও মনে ছিলো না রাত ছিলো তার ওপর। আর তোমাকে এটা বলার কারন কি জানো???
-(মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ে বুকে ফু দিয়ে নিলাম। আল্লাহ্ কই পাঠালো আমাকে। এই ছেলেই সেই, আগে যদি জানতাম এই বিয়ে কখনো হতো না।সব ভাবনা বাদ দিয়ে উত্তর দিলাম) নাহ কেনো?
-তুমি কখনো পেন্সিল হিল পরতে পারবা না। জানি না আবার কোন দিন এমন অঘটন ঘটে যাবে আমার সাথে। নিসাকে ও পড়তে দেই না। নাহ কথাটা আর চেপে রাখতে পারছি না। যা হবার হবে বলে দেই। শুনেন সেই রাতের পেন্সিল হিল পরা মেয়েটা আমি ছিলাম।
-কিহহহহহহহহহহ!!!!!!!
এতোটুকু বলেই আমার বর অজ্ঞান হয়ে যায়। আমি শুধু ভাবছি হইলো টা কি?? আল্লাহ্ কি আর কাউকে পেয়েছিলো না আমার বর বানানোর জন্য। না জানি জ্ঞান আসার পর আবার কি হয়। তবে বেশি কিছু বলতে গেলে আবারও পেন্সিল হিল পরে দিবো এক পারা বুঝবে আবার আমাকে কিছু বলতে আসলে।