ঠকবাজ

ঠকবাজ

সবুজের সমারোহ গ্রামটি জুড়ে। চারিদিকে ধানক্ষেতভ এই ক্ষেতের উপর যখন বাতাস বয়ে যায় তখন মনে হয় সবুজের ঢেউ হচ্ছে চারিদিকে। এই ধানক্ষেতের উপর নির্ভর করে গ্রামের একদল কৃষকদের জীবিকা চলে। ক্ষেত যখন সবুজে ভরপুর থাকে তখন কৃষকদের মুখে এক সুখের হাসি ফুটে থাকে। সারা মাসের কষ্ট সবুজের ঢেউ দেখে দূর হয়ে যায়। গ্রামজুড়ে দুটা বড় বাজার আছে। আমতলী বাজার ও রূপনগর বাজার। সপ্তাহে দুদিন করে বাজার বসে। দূর দূর থেকে বেপারী ও ক্রেতারা আসে বেচাকেনা করতে। লোকজনের সরগমে বেশ জমজমাট হয়ে উঠে বাজার। একদম শহরের বন্ধের দিনের মতো। বাকি দিন গুলোতে শুধুমাত্র মুদি-চায়ের দোকানপাট খোলা থাকে। আমতলী অপেক্ষায় রূপনগর বাজারের আয়ত্ন বৃহৎ। তাই এটা জমেও উঠে। তাছাড়া এই বাজারের পূর্ব দিকে রূপনগর প্রাইমারী স্কুল ও দক্ষিণ দিকে রূপনগর হাই স্কুল রয়েছে।

তবে কোনো কলেজ নেই। হাইস্কুলের দুয়ার শেষে পড়ালেখা করার জন্য ছেলেমেয়েদেরকে দূর কোথাও যেতে হয়। ফলে খরচটা আরও বেড়ে যায়। যা গ্রামের সব বাবা মায়ের পক্ষে টানা সম্ভব নয়। তাই অনেকেই পড়ালেখার ইতি টানে। রূপনগর হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে পিতৃহারা এক মেয়ে আয়েশা। শহরে চাকরি করে তার মা অরুণা। মেয়ের ভরণপোষণ তিনিই চালান। মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের সুখ ও ভবিষ্যতের কথা ভুলে গেছেন। তার জীবনে এখন একটাই লক্ষ্য, মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করা। যাতে লোকের সামনে মেয়েকে মাথা নিচু করে চলতে না হয়। তিনি নিজে যে কষ্ট ও দুঃখ সহ্য করেছেন তা যেন মেয়েকে করতে না হয়। লেখাপড়ার অভাবে যে মাঝেমাঝে কিছু স্থান এড়িয়ে চলতে হয়েছে তা যেন মেয়েকে করতে না হয়।

ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠলো। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা হইহুল্লোড় শুরু করলো। ব্যাগপত্র গুছিয়ে সবাই বেরিয়ে যেতে লাগল। তাদের সাথে আয়েশাও বের হলো। বাড়ির উদ্দেশ্যে পা দিতে লাগল। রূপনগর বাজার পেরিয়ে পশ্চিম দিকে এক সুবিস্তৃত মেঠোপথ আছে। সেই পথ ধরে মিনিট পনেরো হাঁটলেই আয়েশাদের বাড়ি। বন্ধুবান্ধবদের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে বাড়ি চলে এসে তা বুঝাই যায় না। নিত্যদিনের মতো বাজারের মধ্য দিয়ে হাঁটছে আয়েশা ও তার সহপাঠীরা। একটু সামনে যেতেই এক দোকানের সামনে উপচে পড়া ভীড় দেখে আয়েশারা দাঁড়ালো। গতি ঘুরিয়ে সেখানে এলো। লটারি বিক্রি করা হচ্ছে। আগে এই দোকানটা বন্ধ ছিল। প্রতি কুপন লটারি পঞ্চাশ টাকা।

পুরষ্কারে গাড়ি থেকে শুরু করে টিভি ফ্রিজ সবই আছে। অনেকেই লটারি কিনতে লাগল। আয়েশাও কিনলো। ভাগ্য যদি লেগে যায় তবে মন্দ কিসের! লটারি কিনে তা খুব যত্ন সহকারে বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখলো। তার দাদী দেখলে খুব রাগ করবেন। কেননা পুরষ্কার পাওয়া অবধি এটা এক প্রকার অহেতুক ব্যয়। আর তার দাদী এসব একদম অপছন্দ করেন। ঘরে এসে আয়েশা খুব সাবধানতার সাথে লটারির টিকিট মায়ের বানিয়ে দেওয়া পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে রাখলো। যার চাবি শুধুমাত্র তার কাছেই থাকে। প্রথমদিনে লটারি বিক্রির পর টাকার হিসাব করছে ইদ্রিসআলী ও তার লোকজন।

– আজ কত টাকা হলো?
– এই তো স্যার হাজার পাঁচেকের মতো।

ইদ্রিসআলী বেশ উচ্ছ্বাসিত হয়ে হাসলেন। তারপর বললেন, “আগামীকাল একটা রিকশা ও মাইক নিয়ে আশেপাশের গ্রামে মাইকিং করে লটারির প্রচারণা চালাও। প্রচারেই প্রসার।” মোবাইল বের করে নাম্বার টিপে কানের কাছে ধরলো ইদ্রিস। অপরপাশ থেকে হ্যালো শব্দ ভেসে আসতেই ইদ্রিস বলে উঠলো, “সবকিছু প্রস্তুত হয়েছে তো? কাটুন কিন্তু একদম নতুন হতে হবে। হুবহু ওটার মতোই। হ্যাঁ হ্যাঁ এখানে সবকিছু জমজমাট। প্রথম দিনেই হাজার পাঁচেকের টাকা বিক্রি হয়েছে। আচ্ছা সবকিছু ঠিকমতো পাঠিয়ে দাও। রাখছি এখন।” ফোন রেখে ইদ্রিস টিকিটের দিকে এগোতেই সমীর মোল্লা এসে হাজির হলো। মুখে মুচকি হাসি এনে ইদ্রিসকে বলল, “কি স্যার, ব্যবসা ভালো চলছে তো?” ইদ্রিসের হাসিমুখটা মুহূর্তেই গোমরামুখো হয়ে গেল।

“না ভাই। আশানুরূপ হয়নি।” সমীরের প্রশ্নের উত্তর দিলো ইদ্রিস। সমীর হেসে বলল, “সবুর করেন ভাই। খেলা তো শেষ দিকে হবে।” হাসি দিয়ে চলে গেল সবুর। পরেরদিন সকালে ভ্যানগাড়ি করে মাইকিং করা হলো। ভ্যানগাড়িতে টিভি, ফ্রিজ ও বাইকের প্রদর্শন ছিল। তাও ভালো ভালো কম্পানির। স্যামসাংয়ের টিভি, ফ্রিজ ও ইয়ামাহার বাইক। গ্রামজুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হলো। স্কুল ছুটি শেষে নিত্যদিনের মতো বেরিয়ে এলো আয়েশা। প্রতিদিনের মতো হেঁটে যেতে লাগল। ঠিক সেই দোকানের সামনে এসে ভীড় দেখে আয়েশা মনে মনে খুশি হলো। সবাই টিকিট কিনছে। ভাগ্য যদি ভালো হয় তবে এবার কিছু পাবে এমন আশা তার মনের মধ্যে ঘুরতে লাগল।

সময় ফুরিয়ে এলো। আজ লটারি কেনার শেষ দিন এমন ঘোষণা সকাল হতে গ্রামজুড়ে প্রচার করছে লটারি কম্পানি। দুদিন পর লটারির ড্র হবে। চোখের পলকেই দিন কেটে গেল। আগামীকাল সকালে লটারি ড্র হবে। মনের মধ্যে জমে থাকা চাপা উত্তেজনা আয়েশা দমিয়ে রাখতে পারলো না। তাই শেষমেষ দাদীকে বলেই দিলো। দাদী রাগ করলেও বকাঝকা করলো না। যা হওয়ার তো হয়েই গেছে।

এবার সকালের অপেক্ষা শুধু। রাত পেরিয়ে গেল। ঘোষণা এলো বিকালে রূপনগর হাইস্কুলের প্রাঙ্গণে লটারির ড্র ঘোষণা করা হবে। আয়েশা বারবার টিকিটের দিকে তাকাতে লাগল। তাকাতে তাকাতে টিকিট নাম্বারটাও মুখস্ত হয়ে গেল। যেদিকে তাকায় সেদিকেই টিকিটের নাম্বার দেখতে পায়। অবশেষে কাঙ্খিত মুহূর্ত এলো। যারা টিকিট কিনেছে তারা বাদেও বিকালে অর্ধ গ্রামবাসী উপস্থিত হলো। এত বিপুল মানুষ হলো যে মাঠের বাইরেও শত শত লোক দাঁড়িয়ে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছে। লটারির ড্র শুরু হলো। ইদ্রিস একে একে লটারির নাম্বার বলতে লাগল। অনেকেই পুরষ্কার পেতে লাগল। প্রতিটি নাম্বার ঘোষণার পর উপস্থিত জনতার করতালিতে প্রাঙ্গণ গর্জে উঠে। প্রতিটি ঘোষণার সময় আয়েশ চোখ বন্ধ করে কান খোলা রেখে নাম্বার শুনতে থাকে। সবই মিলে যায় কিন্তু শেষ কয়েকটা নাম্বার মিলে না। আয়েশার বুক ধুরুধুরু করতে থাকে। এক পর্যায়ে তার ধুকপুক উল্লাসে পরিণত হলো।

যখন টিকিট নাম্বার হুবহু তার সাথে মিলে গেল। মঞ্চে থাকা লোকটা যখন নাম্বার বলে আয়েশার নাম উচ্চারণ করলো তখন আয়েশা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। বসা থেকে উঠে দৌড়ে এযে মঞ্চে উপস্থিত হয়। সেখান থেকে তাকে একটা টোকেন দেওয়া হয়। বলা হয় অনুষ্ঠান শেষে এটা নিয়ে সেই দোকানে যোগাযোগ করতে। লটারি ঘোষণার পর ইদ্রিস বলল, “দুদিনের মধ্যে যদি বিজয়ীরা তাদের পুরষ্কার না নেয়। তবে পরবর্তীতে আর পাবে না। এই ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।” নাচতে নাচতে আয়েশা বাড়ি এলো। সে লটারিতে তিরিশ হাজার টাকার স্যামসাংয়ের এলইডি টিভি পেয়েছে। খবরটা এসেই দাদীকে বলল।

– দাদী গো আমি তো পুরষ্কার পেয়েছি।
– কই তোর পুরষ্কার?
– ছাড়িয়ে আনতে হবে।
– ছাড়িয়ে আনতে হবে মানে?
– তিরিশ হাজার টাকার টিভি। আনতে হলে ছয় হাজার টাকা দিতে হবে। সময় মাত্র দুদিন। এই দুদিনেত মধ্যে না আনলে আর পাবো না।
– কিন্তু হঠাৎ এত টাকা কোথায় পাবো?

আয়েশা তার মাকে ফোন করে সব বলল। তিনি জানালেন তার কাছে দুই হাজার আছে। আয়েশা বেশ চিন্তায় পড়লো। তার কাছে মায়ের দেওয়া শতখানেক টাকা আছে। কিন্তু প্রয়োজনটা অনেক বেশি। তাও আবার কম সময়ে। অনেক চিন্তা ভাবনা পর আয়েশা তার মেঝ কাকা জহির কবীরকে ফোন করলো। জহির ফকির শহরে থাকেন। ব্যবসা করেন। গ্রামজুড়ে তাঁর বেশ সুনাম রয়েছে। তিনি যখন গ্রামে ইট পাথরের বাড়ি করেন তখন আশেপাশের গ্রামজুড়েও হাতেগোনা কয়েকটা এমন বাড়ি ছিল না।

ইদ্রিস ও তার লোকজন টাকা গুনছে। বান্ডিল ভর্তি করে টাকা ব্যাগে ঢুকাচ্ছে। ঠিক এমন সময় সমীর এসে হাজির হলো। মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “আসতে পারি?” মুখে অনুমতি চাইলেও প্রকৃতপক্ষে তা ছিল শুধুমাত্র দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যম। কেননা কোনো জবাবের অপেক্ষা না করেই সমীর রুমে ঢুকে পড়লো। এতে ইদ্রিস কিছুটা বিরক্ত হলো। তবুও মুখে মলিন হাসি রেখে বলল, “এসেছেন বেশ ভালোই হলো। এই নিন আপনার অংশ।” এক বান্ডিল টাকা সমীরের দিকে এগিয়ে দিলো ইদ্রিস। হাতে নিয়ে সমীর হাসি দিয়ে বলল, “পাওনা কিন্তু আরও ছিল। আমার জন্যই পরিকল্পনা সফল হয়েছে।” বেশ বিরক্ত নিয়ে ইদ্রিস বলল, “মোল্লা সাহেব, যা দিয়েছি তাতে সন্তুষ্ট থাকুন। এতে আপনার, আমার উভয়েরই লাভ হবে।” সমীর মুচকি হাসি দুয়ে টাকাগুলো গুনতে লাগল। তারপর কোমড়ের তলদেশে তা ঢুকিয়ে দিয়ে ইদ্রিসকে সালাম দিয়ে প্রস্থান করলো। ইদ্রিস তার লোকজন নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সবকিছু গুছিয়ে গ্রাম ত্যাগ করলো।

ইদ্রিসআলী এক ঠকবাজ লোক। শহরের নষ্ট ও সেকেন্ড হ্যান্ড টিভি, ফ্রিজ কিনে তা মেরামত ও নতুন করে গ্রামে গ্রামে লটারির নামে তা দেওয়াই তার কাজ। এই কাজ সে শুধুমাত্র তার লোকজন দিয়ে করায় না। যে গ্রামে যায় সে গ্রামের কোনো একজনকেও সাথে নেয়। তবে সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইদ্রিস খুব সচেতনতার সাথে বাছবিচার করে। অন্যথায় ধরা পড়ে গেল সব শেষ। রূপনগরে সমীর মোল্লা তার সঙ্গী হয়েছিল। এই চক্রের প্রথমে ইদ্রিস প্রচারণা করে লটারি বিক্রি শুরু করে। তারপর সেই গ্রামেরই অংশীদারের মাধ্যনে নিজের লোক দিয়েই লটারি কেনায়। যাতে গ্রামের লোকজনও আকৃষ্ট হয়। তারপর পুরষ্কার দেওয়ার সময় আরও কিছু বাড়তি টাকা নেয়। প্রথমে নিজেত লোক দিয়েই সেই বাড়তি টাকা দিয়ে পুরষ্কার নেওয়ায়। যাতে গ্রামবাসী কোনো সংকোচ না করে।

আয়েশা টাকার জন্য তার মেঝ চাচাকে বিস্তারিত সব বলল। বিবরণী শুনার পর তার মেঝ কাকা বললেন, “আমি একটু পরে তোকে ফোন দিচ্ছি।” ফোন রেখে তিনি অন্যান্যদের সাথে অর্থাৎ গ্রামের মধ্যে আরও যারা লটারিতে পুরষ্কার জিতেছে তাদের সাথে আলোচনা করলেন। তিনি বেশ ভাবতে লাগলেন। এমন কোনো লটারির কথা তিনি আগে শুনেননি যেখানে পুরষ্কার দেওয়ার জন্য বিজয়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। সবশেষে তিনি ব্যাপারটাকে নিজের মনের মতো করে সাজালেন।

এরা মূলত একদল চক্র। যারা শহর থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড টিভি, ফ্রিজ ও বাইক গুলো কিনে সেগুলো মেরামত করে নতুন কাটুন ও রং করে গ্রামে লটারির নামে গ্রামবাসীকে ধোকা দিচ্ছে। নয়তো পুরষ্কার নেওয়ার জন্য টাকা লাগবে কেন? যদি টাকাই লাগে তবে আর লটারি কিসের? কিছু সময় পর জহির তার মাকে ফোন করে চক্রের কথা বুঝিয়ে বললেন। তার মাও ব্যাপারটা বুঝলেন। কিন্তু আয়েশা বুঝতে নারাজ। সে ভাবছে চাচা টাকা দিবে না তাই এই কাহিনী বানাচ্ছে। আয়েশা তার মায়ের কাছে আকুতি মিনতি করে টাকা জোগাড় করলো। কিন্তু জহির কবীরের নিষেধাজ্ঞা থাকায় টাকা জোগাড় করেও কিনতে পারলো না। কেননা পরিবারে তার হুকুমই চলে। আর তিনি সবসময়ই পরিবারের ভালো চান। এতে আয়েশা মনে মনে বেশ রাগ করলো।

নদীরের স্রোত মাঝেমাঝে শান্ত হয়ে থেমে থাকলেও সময় কখনোই থামে না। পৃথিবীর মতো সময়ও চলমান। দেখতে দেখতে দুই মাস পেরিয়ে গেল। আয়েশার জেএসসি পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এলো। তাই পড়ার চাপ আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের মেঠোপথ ধরে আয়েশা তার স্কুল শেষে সহপাঠীদের সাথে বাসায় ফিরছে। পাশে একটা ভ্যানগাড়ি করে তার বান্ধবী শিলা ও তার বাবা যাচ্ছে। সাথে যে পুরষ্কারপ্রাপ্ত সেই টিভিটা। শিলার বাবার চেহারায় কেমন যেন রাগী রাগী ভাব প্রকাশ পাচ্ছে। আয়েশা মাঝেমাঝে তাদের ঘরে গিয়ে টিভিতে মিনা মিঠু দেখে। আয়েশা জিজ্ঞেস করলো টিভি নিয়ে কোথায় গিয়েছিল? শিলা জানালো ওরা বড় ঠকবাজ। পুরানো টিভি লটারিতে দিয়েছে। তাও আবার টাকা নিয়েছে। সকাল থেকে টিভি কাজ করছিল না। তাই টিভি ঠিক করাতে স্যামসাং শোরুমে নিয়ে গেলে ওরা বলে এটা পুরানো টিভি। কোনো ওয়ারেন্টি নাই।

সব জানার পর আয়েশা বুঝলো কেন শিলার বাবার চেহারার এই দশা। ঘরে এসে আয়েশা এই ব্যাপারটা তার দাদী জানালো। তার দাদী বললেন, “দেখলি তো, জহিরের কথা শুনায় টাকাগুলো বেঁচে গেছে।” আয়েশা মাথা দুলালো। সত্য কখনো চাপা থাকে না। গ্রামজুড়ে লটারির আসল সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সমীর মোল্লার দিকে আঙুল উঠলো। কেননা গ্রামবাসী প্রায়ই সমীরকে সেই লটারির কার্যালয়ে আসা যাওয়া করতে দেখেছে। তবে কোনো প্রমাণ না থাকায় তা প্রমাণিত হলো না। কিন্তু গ্রামবাসীর সাথে সমীর মোল্লার একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। এখন আর গ্রামবসী সমীরকে আগেরমতো দেখতে পারে না। বাচ্চারা আড়ালে ঠকবাজ বলে। সমীরও বুঝলো যে সামান্য কিছু অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে নিজেরই গ্রামের লোকজনের সাথে প্রতারণা করে আজ সে তার সম্মান হারিয়েছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত