সারপ্রাইজ

সারপ্রাইজ

শায়লার বিয়ে হয়েছে আজ সাতাশ দিন।শায়লার চাচা আর ছেলের পেস্টিং এক জায়গায়।দুজন দুই ডিপার্টমেন্টে চাকরি করেন। চাচার পছন্দের ছেলে, দেখতে হ্যান্ডসাম আর দারুণ গান গায়।প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা। সবদিকেই ভালো।তাই শায়লা অমত করেনি।সেও সদ্য মাস্টার্স পরীক্ষার ভাইবা দিয়ে বাসায় এসেছে।প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেলো দুজন দুজনকে। তারপর দুই পরিবারের সম্মতির মাধ্যমে বিয়ে হয়ে গেলো।

বিয়ের পাঁচদিনের মাথায় শায়লা চলে আসে স্বামীর কর্মস্হলে।দুজনের সংসার শুরু হয়।হাওয়ায় ভাসছে দুজন।কতকথা দুজনের, যেন শেষ হয়না।এর মাঝেই শায়লার ছোট ভাই আসে বোনকে দেখতে।ভাই এসেই বলে, আপু তোমাকে নিতে আসছি।মা বলেছে তোমাকে নিয়ে যেতে।কিছুদিন থাকবে বাসায়।শায়লার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।তার যে যেতে মন চাইছেনা এটা সে বলতে পারছেনা।আবার স্বামী বেচারার অফিস আছে।সে অফিস রেখে যেতে পারবেনা। তারও মনটা খারাপ হয়ে গেলো।সে মনে মনে চাইছে, শায়লা যেন না যায়।সে জোর করছে না,পাছে শায়লা তাকে ভুল বুঝে, আবার যদি মনে করে শায়লাকে বাবার বাড়ী যেতে দিচ্ছেনা,এই কারনে। শায়লা চলে যাবে কাল,তার চোখে ঘুম নেই,পাশেই শাহেদ এপাশ ওপাশ করছে,ঘুমাচ্ছে না। সকালে ট্রেন তাই শাহেদ এলার্ম দিয়ে রেখেছে।ভুনা খিচুড়ি আর ডিম ভেজে স্ত্রী আর শ্যালক কে জাগালো। শায়লাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসলো।

আজ প্রায় একমাস পর শাহেদ অফিসার্স ক্লাবে গেলো।বিয়ে করেছে তাই এতদিন আসেনি, তাকেদেখে সবাই মজা করছে,শাহেদের মজা লাগছে না,সবার মজাগুলো বিষের মতো লাগছে।মনে হচ্ছে সবার গলা চেপে ধরতে। নিজেকে ভদ্রলোক ভাবেন তিনি তাই কিছু বলছেননা,শরীর খারাপের ভান করে বসে আছে কোনায়। এমন সময় শায়লার চাচা এসে ক্লাবে ঢুকলো।এতোদিন এই ভদ্রলোককে ভাই বলে ডাকতো শাহেদ এখন চাচা বলা রপ্ত করছে।চাচা খুব রসিক প্রাণবন্ত মানুষ।এসেই দেখে শাহেদ চুপচাপ বসে আছে,চাচা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,–কি ভাতিজা আমার ভাতিজির সাথে কি ঝগড়া করলেন?একলা একলা বসে আছেন যে।

শাহেদ বলল বাসায় কেউ নেই,শায়লাকে তার ভাই এসে নিয়ে গেছে।একা বাসায় ভালো লাগছেনা। চাচা বললেন যে তিনি এই সপ্তাহে বাড়ী যাবেন।শাহেদ যাবে কি না জিজ্ঞেস করলেন।শাহেদও বললো যে তার অফিসেও অনেক কাজ আছে তাই যেতে পারবেনা। এদিকে শায়লা বাবার বাড়ূ এসেও পরেছে মহা যন্ত্রনায়।তার কিছুই ভালো লাগেনা।নিজের ভাবিদের বিশেষ ইংগিত,পাড়ার ভাবিদের হাসি মস্কারাও যেন অসহ্য লাগে।যে বাবার বাড়ী শায়লার এতো আপন, সে যায়গা যেন এ কদিনেই কেমন অচেনা অচেনা লাগছে।ভালো লাগেনা তার! কিচ্ছু ভালো লাগেনা!

দুদিন পরই সন্ধ্যায় শায়লার চাচা চলে এলেন।সবার কোশল জিজ্ঞেস করলেন।শয়লার মা জিজ্ঞেস করলেন শাহেদ কেমন আছে।চাচা একটু ভেবে বললেন দেখলাম জ্বর উঠেছে।একা বাসায় ছেলেটা কষ্ট পাচ্ছে। শায়লা কিছু বলছে না।মা বললেন, জামাই কষ্ট করছে, শায়লারতো চলে যাওয়া উচিৎ।শায়লা যেন এই কথারই অপেক্ষায় ছিলো।তাড়াতারি কাপড় চোপড় গুছিয়ে পরদিন সকালেই চাচার সাথে রওয়ানা হয়ে গেলো। এদিকে শাহেদও অফিসের কাজ শেষ করে তিনদিনের ছুটি নিলো।সে শায়লাকে বলেনি যাওয়ার কথা ,ভাবছে সারপ্রাইজ দেবে।এদিকে শায়লাও বলেনি সে আসছে, সেও সারপ্রাইজ দেবে ভাবছে।শায়লা যখন সিলেটের বাসে করে আসছে,তখন ট্রেনের সিগনালে ওদের বাসটা দাড়ানো ছিলো,এই ট্রেনেই শাহেদ যাচ্ছে শশুড় বাড়ী।

শায়লাকে তার চাচা বাসার সামনে নামিয়ে অফিস চলে গেলেন।শায়লা এসে দেখে বাসা তালা দেয়া অফিসের পিয়নটা এসেছে কোথা হতে।এসেই শায়লাকে দেখে হাসছে।শায়লা মুড নিয়ে বলল তোমার স্যার কোথায়?সে বলল এইতো এখন মাত্র স্যারকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসলাম। মানে!!শায়লা অবাক!পিয়নটা বলল এইমাত্র স্যারের ট্রেনটা ছাড়লো।শায়লা বুঝলো তারা যে ট্রেনের সিগনালে ছিলো সে ট্রেন দিয়ে শাহেদ চলে গেছে। সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো।

এদিকে শাহেদের ও আর তর সইছে না।ট্রেন থেকে নেমেই শায়লার পছন্দের ফল, মিষ্টি আর শাশুড়ির পান সুপারি নিয়ে তাড়াতারি করে বাসায় এসে কলিংবেল টিপতে লাগলো।যেন তর সইছে না।দড়জা খুলল একমাত্র শালি।
শাহেদ খুঁজছে শায়লাকে। কিন্তু ভাবি আর শ্যালিকা মিলে হাসতে হাসতে গড়িয়ে একজনের গায়ে আরেকজন পরে। শাহেদের রাগ উঠে বলে শায়লা কই?শায়লাকে ডেকে নিয়ে আয়। হি হি হি চাচার সাথে চলে গেছে আজ সকালে।আপনার নাকি জ্বর?সেবা দরকার,বলেই হাসতে থাকে দুজনে।শাশুড়ি ও শাড়ীর আঁচলে মুখ লুকিয়ে হাসছে। দুজন দজনকে সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেরাই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত