মনভোলা

মনভোলা

আমি বুকপকেট, প্যান্টের পকেট কোথাও আমার মানিব্যাগ টা খুঁজে পাচ্ছি না। রিকশাভাড়া ৪০ টাকা। কিন্তু আমি বাসা থেকে মানিব্যাগ টাই আনতে ভুলে গেছি।

-কি হলো ভাই? ভাড়া টা দেন। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম
-ভাই বাসায় মানিব্যাগ টা রেখে এসেছি।

রিকশাওয়ালা আবার উল্টো দিকে রিকশার প্যাডেল মারলো। আমি যেখান থেকে রিকশায় উঠেছি সেখানে এসে রিকশা থামলো। আমার বাসার নিচে। গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রিকশাওয়ালা বলল

-যান ভাই, ভাড়া নিয়া আসেন। আমি কিছুক্ষণ হা হয়ে রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে রইলাম। রিন্তি আমাকে দেখে বলল

-আজকে এত জলদি অফিস থেকে চলে আসলে? কোনো বিশেষ কিছু মনে পড়লো নাকি?? এই মহিলার কথা শুনে মাথায় আগুন ধরে গেলো। আমি নাহয় একটু ভুলোমনা তাই বলে তুমি তো একটু খেয়াল রাখতে পারো। কিন্তু তা না। আমার স্ত্রী আমার চাইতেও এক কাঠি উপরে। আমার যে অফিস আছে, আমিও যে জব করি আমার মনে হয় ওর সেটাও মনে থাকে না।

-কি হলো কথা বলছো না কেন? আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম
-মানিব্যাগ নিতে ভুলে গেছি।
-ও আচ্ছা।

উনি ও আচ্ছা বলে আবার হাতে নেইল পলিশ লাগাতে লাগলো। সকালে উঠেই যে কেউ নেইলপলিশ লাগাতে বসে আমার জানা ছিলো না। আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর খেয়াল হলো মানিব্যাগ টা কালকে প্যান্টের পকেট থেকে বের ই করিনি।

-রিন্তি মানিব্যাগ টা কোথায়?
-ওটা তো চুলার নিচে।
-চুলার নিচে! কেন? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
-কালকে ভুল করে মানিব্যাগ টা সহ প্যান্ট ধুয়ে ফেলেছিলাম। এজন্য সেটা চুলার নিচে দিয়েছি।
-তুমি এতক্ষণ আমাকে সেটা বলো নি কেন?
-তুমি তো আমাকে জিজ্ঞেস করোনি। আর আমি ভুলেও গেছিলাম।

এই মহিলা আমার লাইফের বারোটা বাজিয়ে দিলো। বিয়ের সময় আমার আম্মু আমাকে এই বলে রাজি করিয়েছিলো ‘তুই তো আমার মনভোলা ছেলে। একটা বউ আসলে দেখবি তোর সব কিছু সে গুছিয়ে দিবে। সবকিছু মনে রাখবে। অফিস যাওয়ার আগে তোর ওয়ালেট, ফাইল সব চোখের সামনে রেডি রাখবে।’ আমিও মায়ের কথায় কল্পনা করছিলাম আমার একটা বউ হবে। অফিস যাওয়ার আগে আমার সব কিছু গুছিয়ে দিবে। আমি চশমা, মানিব্যাগ, গোসলের সময় টাওয়াল নিতে ভুলে যাবো। আর সে এসে সব এগিয়ে দিবে। কিন্তু আমার কপালে এমন একজন পড়েছে যে সে আমার ভুলোমনাকেও হার মানাবে। আমি দৌড়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি টাকা গুলি ভিজে তেনা তেনা হয়ে রয়েছে। টাকাতে ১০০ ফুলের সুভাস ছড়াচ্ছে।

আমি রিন্তির কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে রওনা দিলাম। যদিও এই টাকা চক্রবৃদ্ধি হার সুদে আমাকে সেটা পরিশোধ করতে হবে। রিকশাওয়ালা তখনো বাড়ির নিচেই ছিলো।গিয়ে রিকশায় উঠলাম। এই তিনবার যাওয়া আসার জন্য আজকে ১ ঘন্টা দেরি করে ফেললাম। অফিসে গিয়ে নিজের ডেস্কে বসলাম। ১ ঘন্টা দেরি করার জন্য সাথেসাথে স্যারের কাছে ডাক পড়লো। স্যার যতই গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করুক না স্যারের চেহারা আমার কাছে সবসময় ফানি মনে হয়। গুরু গম্ভীর গলায় স্যার জিজ্ঞেস করলেন

-আপনি আজ পুরো এক ঘন্টা লেট করেছেন। আমি কি এর কারণ জানতে চাইতে পারি? আমি বিনীত গলায় বললাম

-অবশ্যই স্যার।
-কি কারণ বলুন?
-আসলে স্যার আমার স্ত্রী মানিব্যাগ সহ আমার প্যান্ট টা ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে দিয়েছিলো।
-হোয়াট! তার সাথে দেরি করে আসার কি সম্পর্ক?

-তার সাথেই তো সম্পর্ক স্যার। আজকে মানিব্যাগ ছাড়াই রওনা দিয়ে ফেলেছি। রিকশা নিয়ে অফিস পর্যন্ত এসে দেখলাম মানিব্যাগ টা বাসায় ফেলে এসেছি। শয়তান রিকশাওয়ালা আবার আমাকে বাসায় নিয়ে গেলো, বাসা থেকে মানিব্যাগ টা নিলাম তারপর আবার অফিস। এই তিনবার আসা যাওয়ার জন্য আমার লেট হয়েছে স্যার। স্যার রেগে গিয়ে বলল

-শাট আপ। গো টু হেল।
-স্যার আজকের জন্য মাফ করে দেন। এরপর থেকে

আমার জামাকাপড় আমি নিজে ধুয়ে নিবো। স্যার পেপার ওয়েট শক্ত করে ধরে রইলেন। আমি ভয়ে আর কিছু না বলে চলে আসছিলাম। তখন আবার স্যারের ডাক।

-মি: আলোক
-ইয়েস স্যার
-আপনি স্যান্ডেল পড়ে অফিসে কেন এসেছেন?

এরপর তড়িৎ গতিতে আমি পায়ের দিকে তাকালাম। আমি ভুল করে বাথরুমের জুতা পড়েই আজ অফিস চলে এসেছি। ছি: ছি:। এজন্যই স্যারের ক্যাবিনে আসার সময় সবাই আমাকে দেখে আসছিলো। নিজের ইজ্জতের বারোটা বাজিয়ে নিজের জায়গায় আসছি। সবাই আগের মতই আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে আসছে। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম

-এত হাসার কি আছে? আপনারা জীবনে স্যান্ডেল পড়েন নাই নাকি। আজমল ভাই তখন বিটকেলে হাসি হেসে বলল

-পড়বো না কেন মশাই? পড়েছি। তবে স্যুট টাই আর প্যান্টের সাথে স্যান্ডেল জীবনে পড়ি নাই। এটা কি নিউ ফ্যাশন নাকি! সবাই আরেক দফা হেসে নিলো। টেবিলের উপরে রাখা মোবাইলে মেসেজের রিংটোন বেজে উঠলো। রিন্তি মেসেজ করেছে। ‘তুমি বোধহয় বাথরুমের জুতা পড়ে অফিসে চলে গেছো। তোমার অফিসের জুতা দরজার বাইরে পড়ে আছে। আর হ্যা ল্যাপটপের বদলে ব্রিফকেস কেন নিয়ে গেলে অফিসে?’

আমি সামনে তাকিয়ে দেখি কালো রঙের ল্যাপটপের বদলে সেখানে কালো রঙের ব্রিফকেব টা পড়ে আছে। আমি রিন্তি কে রিপ্লাই দিলাম ‘অনেক উপকার করলি বইন’ এরপর থেকে রিন্তি কলের পর কল দিয়ে যাচ্ছে। আমি চোখে অন্ধকার দেখছি। চোখে ঠিকঠাক দেখতে পারলে কল রিসিভ করবো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত