হাতে গুনে পাক্কা তিনদিন যাবত গোসল করিনা। আসলে এটা যে শীতের কারণে তা না। গোসল করতে আলসেমি লাগে। টিউবওয়েল চেপে পানি বের করে মগে করে মাথায় ঢালা একদম বিরক্তিকর। নাক ডেকে বেঘোরে ঘুমোচ্ছি। আম্মা কম্বল টান দিয়েই বলল….
-তোর সমস্যা কি? আমি ঘুমের ঘোরেই বললাম….
-বিরিয়ানি খাব, যাও বিরিয়ানি আনো।
–মাথা ঠিক আছে?
-আচ্ছা তাহলে পায়েস আনো। সাথে লাচ্চি আর ফুঁচকা।
অমনি আম্মা বালিশ দিয়ে দিলো বারি৷ বারি খেয়েধরফর করে উঠলাম। চোখ কচলিয়ে বললাম….
–ভুমিকম্প থেমেছে আম্মা?
-ফাজলামো না করে এখনি ওঠ ঘুম থেকে।
–উঠে কিত্তাম?
-তোর মাথায় বারি মাত্তাম হারামি, ওঠ এখনি।
–আম্মা কুল, এত আগাআগি করেন কেন?
-আগাআগি কি?
–রাগারাগি বলতে আলসেমি লাগে তাই আগাআগি বললাম।
-সারারাত কি শয়তানের সাথে ফুটবল খেলস নাকি?
–কিউ?
-সকাল সকাল এমন শয়তানি করছিস কেন।
–আলসেমির কারণে।
-থাপ্পড় খাবি, ওঠ এখনি।
–উঠতাম না কি করবা?
–ঝাড়ু দিয়ে পিটাবো।
-দৌঁড়ামু আমি।
–পরে দৌঁড়াস, যা আগে গোসল করে আয়।
-ধুর আম্মা মনের গোসলই বড় গোসল। দিন চারমাস না করলেও সমস্যা নাই।
আম্মা কোমড়ে হাত দিয়ে চোখ গরম করে তাকালেন। আমি মুচকি হাসি দিলাম। আম্মা ভ্রুঁ-কুচকে আশেপাশে লাঠি খোজা শুরু করলো। আমি আস্তে করে কেটে পরলাম। ব্রাশ করে আম্মার আড়াল হয়ে আবার ঘুমিয়ে পরলাম। চোখ লেগে আসতেই ছোট বোন রোদেলা হাজির। কম্বল টান দিয়ে দুপ করে বিছানায় উঠে পরলো। পেটের উপর বসে বলল….
–ভাইয়া পড়মু, আমায় পড়াও!
-তাই বলে পেটের উপর উঠবি?
–তোমার পেটে বসলে তুলতুলা লাগে।
-তো?
–আরাম পাই, এখন পড়াও।
উরিইইইই চিটার। বলে কি পেটে বসলে নাকি তুলতুলে লাগে। বোনের এমন কাণ্ড দেখে হারপিক খেয়ে মাতাল হতে ইচ্ছে করছে। অবশেষে এও দেখি খাচ্চোর হচ্ছে। কাহিনী কি? আমি বললাম…..
–যা খেলতে যা পড়া লাগবেনা।
-আম্মা বকবে না পড়লে।
–মনে মনে পড়িয়ে দিলাম এবার যা৷ আম্মা বললে বলবি মনের পড়াই বড় পড়া। এবার ওঠ পেটের উপর থেকে।
-না আরাম লাগে।
–ওঠ বলছি….
রোদেলা হাতে থাকা কলম দিয়ে পেটে গুতা মেরে দৌঁড়ে চলে গেলো৷ মাগোওও কি জল্লাদি মাইয়া। পিচ্চি হলেও শেয়ানা আছে৷ কি চিজ মাইরি। আমি কম্বল টেনে আবার ঘুমালাম। সিঙ্গেল মানেই ঘুম আর ঘুম।আর নিয়ম করে খাওয়া। পেটে টান পরতেই খেতে গেলাম। আম্মাকে ডাক দিয়ে বললাম….
–খেতে দাও।
-তাঁর আগে বল রোদেলাকে কি বলেছিস?
–কই কি বললাম?
-ওকে পড়ালি না কেন?
–আরে মনের পড়াই বড় পড়া, আর এত পিচ্চি মেয়ে এত পড়ে লাভ কি। মাথায় সমস্যা হবে আবার!
-তোর কি আক্কেল হবেনা?
–আক্কেল দাঁত গজাইনি আম্মা। আচ্ছা ভালো কথা নানার কি আক্কেল দাঁত আছে?
-আবার ফাজলামো করছিস?
–নু, বলো।
আম্মা রাগ করে চলে গেলো। আমি আবার ডাকলাম। আম্মা হাতে করে বিরিয়ানির প্লেট নিয়ে আসলো। এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে খুশিতে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেললাম। বললাম….
–আবা বাহ বাবাববাহ….
-কি বলছিস এসব?
–কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছি বিরিয়ানি দেখে।
-তাই আমার কি?
–বিরিয়ানি দেও?
-আহালে, মনেমনে দিছি খেয়ে নে।
–মানে?
-মনের খাওয়াই বড় খাওয়া।
–দেখো ইয়ার্কি মেরোনা, খেতে দাও।
-আজবতো, মনে মনে দিয়েছি তুই মনে মনে খা।
–আম্মা দেও ইট্টু বিরিয়ানি এমন করোনা।
-ধুররর পাগল ছেলেটা৷ তোকেতো রান্নার আগেই মনে মনে বিরিয়ানি দিয়েছি। আর খেয়েই বা কি হবে মনের খাওয়াই বড় খাওয়া। আমার আর বুঝতে বাকি রইলনা আম্মা প্রতিশোধ নিচ্ছে। বিরিয়ানির লোভ দেখিয়ে এমন প্রতিশোধ নেওয়ার কোন মানে হয়? এ কেমন অবিচার। পাশের রুম থেকে রোদেলা এসে বলল ‘ভাইয়া বিরয়ানি টেশ খাও।’ বলেইচলে গেলো। আম্মা প্লেট হাতে করে নিয়ে রুমে গেলো। আমি ডাক দিতেই বলল….
–কি হয়েছে?
-একটু দেও এমন করো কেন?
–টেবিলে রেখেছি, খেয়ে নে।
-কই টেবিল তো খালি।
–ধুর পাগল ছেলে, মনের চোখ দিয়ে দেখ ঠিক পেয়ে যাবি।
-সরি আম্মা আর ভুল করবনা এবার বিরিয়ানির দাও।
–আচ্ছা পুরো এক গামলা দিলাম, খেয়ে নে বাবা।
বলেই আম্মা চলে গেলো। এ কেমন বিচার? কিছু অইলো এইডা? নিজেকে এতিম মনে হচ্ছে। আই অ্যাম ফিলিংস পিউর এতিম৷ খোদাহ তুমি এর বিচার করো। এই বাসায় ঠাডা ফালাও আমার রুম বাদে। যাতে সবাই অজ্ঞান হয় আর সেই সুযোগে বিরিয়ানি খেতে পারি। নিজের মনকে স্বান্তনা দিলাম। কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমালাম, জ্বর জ্বর ভাব লাগছে। মনে মনে নাপা আর প্যারাসিটামল খেয়ে নিলাম। ইনশাআল্লাহ জ্বর সেরে যাবে।