বিয়ে

বিয়ে

টিভিতে খেলা দেখছি। আম্মু এসে বললো

– বাসার এতো কাজ আর একা পারি না। একটা লোক হলে খুব ভাল হতো। (আম্মু)
আমি ভাবলাম এই তো সুযোগ। এই সুযোগে আমার বিয়ের কথাটা বলেই ফেলি। আমার তো অনেক বয়স হলো। এখন বিয়ে করার সময় হইছে। কিন্তু আব্বু আম্মু কথাটা কানে তুলে না। আমিও লজ্জায় বেশিকিছু বলতে পারি না,,

– তো একজনকে আনলেই তো পারো। এতো কাজ কি একা করা যায় নাকি। (আমি)
– আমিও সেটাই ভাবছি। দেখি তোর আব্বুর সাথে কথা বলে। (আম্মু হেসে বলল)

আম্মুর কথা শুনে খুশি লাগলো। অবশেষে তাহলে আমার বিয়ে দিচ্ছে। রাতের বেলা আব্বু আম্মু গল্প করছে। আমি লুকিয়ে শুনতেছি। একটু লেট করে ফেলেছি মনে হয়। মাঝখান থেকে শোনা শুরু করছি।

– কাল তাহলে যাচ্ছো। (আম্মু)
– হ্যা,, তুমিও গেলে ভাল হতো। নিজের চোখে দেখতে। (আব্বু)
– নাহ,, তুমি দেখলেই হবে। দেখো যেনো পর্দাশীল হয়।
– আচ্ছা।
– আচার ব্যবহার ভাল করে লক্ষ্য করবে। দরকার পড়লে আশেপাশের মানুষজনকে জিজ্ঞাস করবে কেমন মেয়ে।
– গ্রামের মেয়ে ভালই হবে মনে হচ্ছে।
– আমারও তাই মনে হয়। তারপরও আমাদের পরিবারে থাকবে,, মানানসই তো হতে হবে।

এইটুকু শুনেই আমি আমার রুমে এসে নাচতে শুরু করলাম। লুঙিটা পড়ে লুঙি ড্যান্স দিচ্ছি। বিয়ে করবো,, কত্ত মজা। পরেরদিন রাতে আবার লুকিয়ে আব্বু আম্মুর কথা শুনছি

– কি গো মেয়ে কেমন দেখলে? (আম্মু)
– অনেক ভাল। দেখতে শুনতে অনেক ভাল। আমার তো বেশ পছন্দ হয়েছে। (আব্বু)
– তাহলে কি একেই ফাইনাল নাকি আরও দু এক জায়গায় দেখবে।
– আমার কাছে তো একেই অনেক ভাল লাগছে। তুমি দেখলে তোমারও পছন্দ হবে।
– তাহলে ওর পরিবারের সাথে পাকা কথা বলে ফেলো। এসব কাজে দেরি করতে নেই।
– হ্যা আমিও তাই ভাবছি। ভাল মেয়ে হাতছাড়া করা যাবে।

কালকের মতো আজও ঘরে ঢুকে লুঙি ড্যান্স দিলাম। এতো খুশি লাগছিলো। পরেরদিন আমি ঘরে বসে গান শুনছি। “হলদি বাটো মেহেদি বাটো আজকে আমার বিয়ে রে” আম্মু রুমে আসলো

– শোন তোকে একটা মেয়ে দেখে আসতে হবে। (আম্মু) লজ্জায় পড়ে গেলাম। আসলে আমি আব্বু আম্মুর পছন্দেই বিয়ে করতে চাইছিলাম। আমার বউ হলেই হলো। লজ্জা পেয়ে আম্মুকে বললাম,,

– আম্মু তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ।

আম্মু কিছু না বলে চলে গেল। সেদিন আম্মুও ওই মেয়েকে দেখতে গেছিলো। আম্মুরও পছন্দ হয়ে গেছে। দুই তিনদিন নাচতে নাচতে কাটিয়ে দিলাম। জীবনের প্রথম বিয়ে,, অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে। এক সপ্তাহ পর রুমের ভিতর ফ্লোরে আমি শুয়ে আছি। খুব গরম লাগছে তাই বিছানায় শুতে ইচ্ছা করে নি।

– ভাইজান উঠেন,, ঘর মুছুম,, ও ভাইজান উঠেন কে একজন ডাক দিলো। আমি উঠলাম।
– এই মেয়ে তুমি কে? (আমি)
– আপনাগোর নতুন কাজের মাইয়া (মেয়েটি)
– কাজের মাইয়া মানে? আপনারে কে রাখছে।
– খালাজান খালুজান দুজইন্নে মিইল্লা রাখছে। আমাকে না বলে আম্মু কাজের লোক রাখলো। চিৎকার করে আম্মুকে ডাকলাম
– কি হল,, এভাবে ভ্যাবাচ্ছিস কেন? (আম্মু)
– তুমি কাজের লোক রাখছ আমাকে বলো নি কেন? তোমাকে বলেছি না আমার পছন্দ ছাড়া কাজের লোক রাখবে না। (আমি)

আসলে আমার সহজে কাজের লোক পছন্দ হয় না। তাই আগেই আব্বু আম্মুকে বলছি এবার কাজের লোক রাখার সময় যেনো আমাকে বলে রাখে।

– তোকে তো বলেছিলাম। তুই তো বললি আমাদের পছন্দই তোর পছন্দ। (আম্মু)
– কিইই,, আমি তো ভেবেছিলাম আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যেতে বলেছিলে। (আমি)
– তোর বিয়ের মেয়ে মানে কি? পাগল হইছিস?
– তুমি আব্বুর সাথে কয়দিন ধরে আমার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছো না?
– কি আবল তাবল বকছিস। তোকে বিয়ে দিয়ে কি একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করবো নাকি? আগে কিছু কর তারপর বিয়ে।

এবার বুঝতে পারলাম। আব্বু আম্মু কাজের মেয়ের কথা বলছিলো,, আমার বিয়ের না। কাজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি সে হাসছে। ঝাড়ি দিয়ে তাকে বের করে দিলাম। মনের দুঃখে গান ছেড়ে দিলাম,, “বাবা আমার কি বিয়ে হবে না বাবা আমার কি বিয়ে হবে না”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত