টাইটানিক দা জাহাজ

টাইটানিক দা জাহাজ

সিনেমার শুরুতেই দেখা যায় রোজ আর জ্যাকের ছোটবেলা। ছোটবেলায় রোজ আর জ্যাক বন্ধু ছিলো। রোজ জমিদারের মেয়ে আর জ্যাক গরিব বিধবা মায়ের ছেলে। রীতিমতোই তাদের বন্ধুত্ব রোজের জমিদার বাবা মেনে নিতে পারে নি। এই জন্য রোজকে শহরে পাঠিয়ে দেয় পড়ালেখা করানোর জন্য। যাওয়ার আগে রোজ জ্যাকের সাথে লুকিয়ে দেখা করে।

– আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না রোজ (জ্যাক কেদে কেদে)
– আমিও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না (রোজ কেদে কেদে)
– আমাকে ছেড়ে তুমি যেও না রোজ
– আমার কিছুই করার নাই। এই নাও এই পুতুলটা রাখো। যখনই আমার কথা মনে পড়বে এই পুতুলটার সাথে কথা বলো।

– হুম, এই নাও তুমিও এই পুতুলটা রাখো। আমাকেও তোমার মনে পড়লে এটার সাথে কথা বলো। রোজ এটা বলে চলে যাবে,, এমন সময় জ্যাকের কান্না দেখে রোজ গান গাওয়া শুরু করে দেয়,, “বিদায় দাও বিদায় দাও বন্ধু গো। ও বন্ধু বিদায় দাও তুমি মোরে গো ও আমার বন্ধু বন্ধু গো” গান শেষ হতে হতেই নায়ক নায়িকা বড় হয়ে যায়। জ্যাক গ্রামেই থেকে যায় আর রোজ কই আছে জানা যায় নি।

গ্রামে একটা কুস্তি খেলার আয়োজন করা হয়। এখানে যে জিতবে তাকে টাইটানিকে করে ঢাকা শহরে নিয়ে যাওয়া হবে। টাইটানিক নামে একটা বড় জাহাজ বানিয়েছে বাংলাদেশ। এটায় যে চরবে তার জীবন সার্থক হবে। একজন পালোয়ান সেই কুস্তি খেলায় সবাইকে হারিয়ে দেয়। সে জিতবে সবাই প্রায় নিশ্চিত। এমন সময় আমাদের নায়ক উড়ে আসে। সেখানেই প্রথম নায়কের আবির্ভাব ঘটে। নায়ক সেই পালোয়ানকে হারিয়ে দেয়। টাইটানিকের টিকিট সে জিতে নেয়। টিকিট পেয়ে সে মা মা বলে চিৎকার করে এবং দৌড়াতে থাকে। মায়ের কাছে পৌছে,,

– জ্যাক বাবা কি হইছে তোর?? (জ্যাকের মা)
– দেখো মা দেখো,, তোমার ছেলে আজ কি জিতেছে। আমি ঢাকা যাওয়ার টিকিট পাইছি মা,, আর আমাদের কোন দুঃখ থাকবে না মা। (জ্যাক কেদে কেদে)
– আজ যদি তোর বাবা বেচে থাকতো,,,,,, (মা কেদে কেদে)
– না মা,, এই খুশির দিনে তুমি কেদো না মা।

– এদিকে আয়। জ্যাককে নিয়ে তার মা একটা ছবির সামনে গেল,,
– ওগো দেখো তোমার ছেলে আজ কতবড় হইছে। টাইটানিকের টিকিট জিতেছে সে। (মা)
– বাবা, তুমি আমাকে দোয়া কর। আমি জেনো বড় হতে পারি (জ্যাক। ছবির লোকটির পা ছুয়ে।) পরেরদিন জ্যাক তৈরি হয় টাইটানিকে যাওয়ার জন্য। তার মা তাকে সব গুছিয়ে দেয়।
– আমি তাহলে এবার আসি মা (জ্যাক,, তার মায়ের পা ছুয়ে সালাম করে)
– সাবধানে যাস বাবা। এটা রাখ,, এটা তোকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। (জ্যাকের মা জ্যাকের হাতে একটা লকেট দিলো)

টাইটানিক ছেড়ে দিবে এমন সময় জ্যাক টাইটানিকে কাছে পৌছায়। দৌড় দেয় সে টাইটানিক ধরার জন্য। কোন রকমে সে টাইটানিকে উঠতে পারে। এতোবড় জাহাজ দেখে সে অবাক হয়ে যায়। উপরের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে সে পড়ে যায় মেয়েটার উপর। মেয়েটা আর জ্যাকের মধ্যে একটা পড়েনা চোখের পলক মুহুর্ত হয়। এ সময় গান বেজে উঠো,, “তোরে দেখলেই বমি হয়, হাজার বছরেও কি ব্রাস করিস নাই” গান শেষ হওয়া মাত্রই মেয়েটি রেগে উঠে,,

– এই ছোটলোকের বাচ্চা,, আমার উপর থেকে উঠ। (মেয়েটা)
– ছোটলোক বলবেন না মেমসাহেব। আজ আমাদের মতো গরিবেরা বেচে আছে বলেই আপনাদের মতো বড়লোকেরা দু মুঠো খেতে পারেন। (জ্যাক) মেয়ের বাবা এই সময় ওইখানে আসে,,

– তোর সাহস কি করে হয় আমার মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলার। এই কে আছিস ওকে ২০০ ঘা চাবুক মারো। (মেয়ের বাবা)

– চৌধুরি সাহেব,, আর কত গরিবের উপর অত্যাচার করবেন। গরিবেরা এখন প্রতিবাদ করতে জানে। (জ্যাক)
জ্যাককে দুশো ঘা চাবুক মারা হয়। জ্যাক শুধু দাঁড়িয়ে থাকে। একটুও শব্দ করে না। এদিকে জ্যাকের মায়ের হাত থেকে খাবারের থালা পড়ে যায়। তিনি বুঝে যান তার ছেলের কোন অঘটন ঘটে গেছে। নামাযে বসে পড়েন তিনি,, আল্লাহ আমার ছেলের যেনো কিছু না হয়। জ্যাক চাবুক খাওয়ার পর জাহাজের এক কোনে বসে কাদতে থাকে। তার হাতে রোজের দেওয়া সে পুতুলটা। একা একা সে পুতুলের সাথে কথা বলে,, দেখো রোজ দেখো,, আমি গরিব বলে ওই মেমসাহেব আমাকে দুশো চাবুকের মার খাওয়ালো। এসব বলতে থাকে আর কাদতে থাকে।

– জ্যাক

পিছন থেকে কে একজন ডাকে। জ্যাক পিছন ঘুরে দেখে সেই মেমসাহেব দাঁড়িয়ে আছে। সে দৌড়ে এসে জ্যাককে জড়িয়ে ধরে,,

– আমাকে তুমি মাফ করে দাও জ্যাক। আমি তোমাকে চিনতে পারি নি। (মেমসাহেব)
– কি বলছেন মেমসাহেব,, কে আপনি? (জ্যাক)
– আমিই তোমার রোজ,, এই দেখো তোমার দেয়া পুতুলটা। অনেক যত্নে রেখে দিছি।
– তুমিই রোজ,,
– হ্যা আমিই তোমার রোজ। জ্যাক রোজকে জড়িয়ে ধরে,,
– আমার রোজ। (জ্যাক)
– আমার জ্যাক। (রোজ)
– রোজ
– জ্যাক

নায়ক নায়িকা কল্পনায় কক্সবাজার চলে যায়,, শুরু হয়ে যায় গান আর নায়ক নায়িকা নাচতে থাকে,, “চোখ মিললেই দেখি তোমাকে, চোখ বুঝলেই আর দেখি না। কি শ্যাম্পু দাও তোমার চুলে,, ঘ্রানতো আর যায় না। ভালবাসি,, বড় ভালবাসি ও আমার প্রানপাখি কাউয়া।“ এরপর পুরো টাইটানিক জুড়ে তারা প্রেম করতে থাকে। দুজনে একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে আসে। এমনই একদিন টাইটানিকের ছাদে প্রেম করতেছে তারা।

– আচ্ছা জ্যাক,, তুমি আমাকে কতটা ভালবাসো? (রোজ)
– দেখবে কতটা ভালবাসি? (জ্যাক)
– হুম এটা শুনে জ্যাক তার শার্ট খুলে দেখায়। তার বুকে রোজ লেখা। কেটে লিখছে,,
– তুমি আমাকে এতো ভালবাসো? (রোজ)
– হ্যা রোজ। (জ্যাক)

দুজন দুজনের দিকে এক পলকে তাকিয়ে থাকে। এমন সময় গান শুরু হয়। কল্পনায় ফ্যান্টাসি কিংডমে চলে যায়,,
“পড়ে না চোখের পলক,, কি তোমার ময়দার ঝলক। দোহাই লাগে,, ময়দাগুলো একটু ধুয়ে আসো।“ গান শেষ হয়ে যায়,, এখনো নায়ক নায়িকাকে জড়িয়ে ধরে আছে। পিছন থেকে নায়িকার বাবা,, সেই জমিদার সাহেব চিৎকার করে উঠে

– রোজজজজজ জ্যাক রোজের হুস ফিরে আসে। ছেড়ে দেয় একে অপরকে। জমিদার সাহেব রোজকে টেনে নিয়ে ওনার লোকদের দেয় আর ওকে বন্ধি করে রাখতে বলে৷ এমন সময় রোজ চিৎকার করে,, জ্যাক,, জ্যাক,, জ্যাক,, জমিদার জ্যাকের কলার ধরে বলে,,

– তোর এতো বড় সাহস তুই আমার মেয়ের সাথে ফস্টিনস্টি করিস জ্যাক কলার ছাড়িয়ে নিয়ে,,

– হ্যা হ্যা হ্যা করি। আমি রোজকে খুব ভালবাসি। চৌধুরি সাহেব,, ছোটবেলায় আপনি আমার থেকে রোজকে কেড়ে নিয়েছিলেন। এবার আর তা হলে দিবো না। এ জীবনে আর আপনি আমার থেকে রোজকে আলাদা করতে পারবেন না।

– তোদের মতো গরিবকে আমি ভাল করে চিনি৷ বল কত টাকা হলে তুই আমার মেয়েকে ভুলে যাবি? পাচ লাখ,, দশ লাগ,, বিশ লাখ

– চৌধুরি সাহেব,, টাকা দিয়ে আপনি আমার ভালবাসা কিনতে পারবেন না। রোজ এই জ্যাকেরই হবে।
এটা বলে জ্যাক চলে গেলো। এদিকে জমিদার সাহেব এই টাইটানিকেই রোজের বিয়ে দিবে বলে ঠিক করে। যার সাথে বিয়ে ঠিক করে সে অনেক বড়লোকের ছেলে আর আমাদের এই সিনেমার ভিলেন। অনেক পছন্দ করে রোজকে। সেদিনই রোজের সাথে ভিলেনের বিয়ে ঠিক হয়। এটা শুনে জ্যাক বিরহের গান গাওয়া শুরু করে,,
“বুকের জমানো ব্যথা,, গ্যাস্টিকের তাড়না ঝড় ভাঙে আমার এই বুকে। রোজ তুমি ভয় পেও না আমি আসবো গ্যাস্টিক ছেড়ে গেলে। ও রোজ ও রোজ তুই কোনটে? রোজ বউ বেশে বসে আছে। ভিলেনের সাথে তার বিয়ে হবে। এমন সময় ভিলেনের বাবা বলে উঠে

– এ বিয়ে কিছুতেই হবে না। চৌধুরি,, তোর সব সম্পত্তি আমার ছেলের নামে লিখে দে তারপর এই বিয়ে শুরু হবে।
– না না না,, আমার বাপ দাদার এই সম্পত্তি কিছুতেই আমি অন্য কাউকে দিতে পারবো না।
– আজ যদি না দিস,, তাহলে তোর মেয়ে মরবে। এমন সময় ভিলেন রোজের মাথায় বন্ধুক ধরে। জমিদার কোন উপায় না পেয়ে সব সম্পত্তি লিখে দেয়।
– হু হা হা হা,,, সবাই চলো আমরা আমাদের সম্পত্তি পেয়ে গেছি। (ভিলেনের বাবা)
– বাবা,, আমার রোজকে কাছে পাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিলো। ওকে নিয়ে যাই সাথে?? (ভিলেন)
– নাহ,, তোকে আমি আধা ঘন্টা দিচ্ছি। এর মধ্যে ওর সাথে যা করার করে নে। এরপর ভিলেন রোজের দিকে এগিয়ে যায়। আর রোজ পিছনে যেতে থাকে।
– শয়তান তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু মন পাবি না (রোজ)
– আমি তো তোমার দেহই চাই সুন্দরি,, হু হা হা হা (ভিলেন) এমন সময় রোজ জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে,,
– জ্যাককককককক

জ্যাক উড়ে এসে ভিলেন কি পিটাতে শুরু করে। ভিলেনের সাঙ্গুপাঙ্গুরা জ্যাকের দিকে গুলি করে,, কিন্তু একটা গুলিও লাগে না। সবাইকে জ্যাক মারে। ওই ঢিসুম,, ওই ঢিসুম। এমন সময় ভিলনের বাবার একটা গুলি এসে লাগে জ্যাকের বুকে। জ্যাক আ আ করে উঠে। ভিলেন আর ভিলেনের বাবা ৩২ পাটি খুলে হাসি দেয়। জ্যাক উঠে বলে,,

– তুই আমার কিছুই করতে পারবি না শয়তান। কারন আমার বুকে আছে মায়ের দোয়া। আবার মারামারি শুরু হয়। ভিলেনকে মেরে ফেলবে এমন সময় পুলিশ আসে,, ফাকা গুলি করে বলে,, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। জাহাজের মধ্যে কোথা থেকে পুলিস আসলো আল্লাহ মালুম। ভিলেনকে পুলিশ ধরে ফেলেছে। ভিলেন বললো,,

– তোদের আমি দেখে নিবো,, রোজ আমার না তো,, আমি কারো হতে দিবো না। এ কথা বলে পুলিশের গুলি কেড়ে নিয়ে,, নিচের দিকে গুলি চালাতে শুরু করলো,, টাইটানিক জাহাজে পানি ঢুকতে শুরু করলো। ভিলেন হু হা হা করে হেসে উঠলো। এদিকে জ্যাকের মায়ের কাছে কেউ একজন খবর দিলো টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাচ্ছে।

– নাহহহহহহহহহহহহহহহহ (জ্যাকের মা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো)
এদিকে টাইটানিক ডুবে যাচ্ছে। নায়ক অনেক কষ্টে সবাইকে বাচিয়ে নিয়ে আসলো। ডাঙায় আসার পর তারা সবাই দেখলো জাহাজ ডুবে যাচ্ছে। পুরো টাইটানিক বুড়িগঙ্গায় ডুবে গেলো। জমিদার সাহেব জ্যাকের কাছে এসে বললো,,

– বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও,, আজ যদি তুমি না থাকতে নায়ক একটু ছোট করে হাসি দিলো। জমিদার সাহের রোজের হাত এনে জ্যাকের হাতে তুলে দিলো।

– আজ থেকে রোজ তোমার। জ্যাক রোজকে জড়িয়ে ধরলো,, রোজও জ্যাককে জড়িয়ে ধরলো।
– আমার রোজ (জ্যাক)
– আমার জ্যাক (রোজ)
– রোজ
– জ্যাক

এরপর শুরু হলো রোমান্টিক গান,, “তুমি আমার আলু,, আমি তোমার পটল,, আমাদের ভালবাসা,, রবে চিরকার অটল। তুমি আমার রোজ,, আমি তোমার জ্যাক,, কখনো তুমি মোরে,, দিও না ছ্যাক।“

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত