সকাল হল। মোবাইলটা আমাকে জ্বালিয়ে উঠালো। অবশ্য জ্বালানোর ব্যবস্থাটা আমিই করে রেখেছিলাম। এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম যাতে সময়মতো উঠতে পারি। রাতে ঘুমানোর সময় আমি মোবাইল চার্জ দিয়ে ঘুমাই। যাতে সকাল কোনো সমস্যা না হয়। সকালে এলার্মের শব্দে ঘুমটা ভেংগে গেল। ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম আমি ফ্রেশ হই তারপর পাকঘরে যেয়ে রান্না বসাই। তারপর মোবাইলে হাত দেই।
– ম্যাডাম আমি ১০০% আছি। (মোবাইল)
> হুম। আমিই তো চার্জে দিয়ে রেখেছিলাম। (আমি)
– ম্যাডাম একটা আবদার ছিল।
> বল।
– চার্জারটা যদি বদলাতেন তাহলে ভাল হত।
> কেন কি হইছে?
– ওটার ভোল্টেজ কম।
> তাতে কি?
– আরে ম্যাডাম কম ভোল্টেজের কারণে আমার ভেতরের যন্ত্রপাতির ক্ষতি হয়।
> ওতো কিছু বুঝি না বাপু। আমার হাতে টাকা নেই।
– ঠিক আছে। যেদিন আমি নষ্ট হব সেদিন ঠিকই কাঁদবেন।
> বেশি কথা বললে এক্ষুণি একটা আছাড় দিব।
– না না ম্যাডাম এটা করবেন না। এতে আমার কষ্ট হয়।
> তাহলে চুপ।
– ঠিক আছে। তো এখন কি করবেন?
> দাঁড়া আগে রান্না শেষ করি তারপর গেমস খেলব। আমি মোবাইলটা রেখে রান্নাঘরে গেলাম। রান্নাবান্না শেষ করে ঘন্টাখানেক পর এলাম। মোবাইলটা হাতে নিলাম।
> কিরে একটু আগে না ১০০% ছিলি? এখন ৯৮% হলি কিভাবে? ফাঁকিবাজি করিস?
– না না ম্যাডাম। আমি কখনোই ফাঁকিবাজি করি না।
> তাহলে কমলি কিভাবে?
– ঐ যে পাকঘরে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ টিপেছিলেন তাই ৯৮% হয়েছি।
> একটু টিপাতেই ২% খেয়ে ফেললি?
– ম্যাডাম আমি এনড্রয়েড। না টিপে রেখে দিলেও বিভিন্ন এ্যাপ্স ও ফাংশনকে চাঁদা দিতে হয়। না দিলে ওরা হরতাল করবে।
– উরি বাবা তোদের আবার চাঁদাও লাগে?
> জ্বি ম্যাডাম। সবাইকে খুশি রাখতে হয়। নয়তো হরতাল করবে। তখন আবার আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে চালাতে না পেরে আমাকে আছাড় মারবেন। তাই সবকিছুর দেখাশোনা করতে হয়।
আমার একটু দয়া হল। ইসসস বেচারা কত কষ্টই না করে। একা একা কত কিছু সামলায়। আমি আর কিছু বললাম না। ওকে একটু বিশ্রাম দেয়ার জন্য রেখে দিলাম। কিন্তু একা একা বসে থাকলে কি আর ভাল লাগে? টিভি দেখলে বিল বেশি আসে। সরকারের নতুন পদ্ধতির মিটারে বিল অত্যন্ত বেশি হয়। মিটারে ৫০০ টাকা রিচার্জ করলে সপ্তাহখানেক পর তা হাওয়া হয়ে যায়। যেখানে আগে পানির মটর + নিজেদের বাসা সব মিলিয়ে ২৫০০+/- টাকা আসতো আজ সেখানে মাসে ৩৫০০+/- টাকা বিল হচ্ছে। তাই টিভি দেখা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছি। যাইহোক একা একা বোরিং লাগছে তাই আবার মোবাইলটা হাতে নিলাম। ৯৭% চার্জ আছে।
– তো ম্যাডাম কি করবেন?
> ক্রিকেট গেমসটা খেলব কিছুক্ষণ।
– আচ্ছা। কিছুক্ষণ গেমস খেলার পর মোবাইল গরম হয়ে গেছে। এনড্রয়েড ফোনে এটা হয়েই থাকে।
– ও ম্যাডাম আর কতক্ষণ খেলবেন?
> কেন কি হইছে?
– ওদের সবার মাথা গরম হয়ে গেছে। সবাই চাপ দিচ্ছে বন্ধ করার জন্য।
> আরে খেলা তো মাত্রই জমে উঠেছে। ১০ ওভারে ৮০ রান লাগে। ক্রিজে সাইলেন্ট কিলার ও ম্যাশ। এই ম্যাচ জিততেই হবে। ডিস্টার্ব করিস নাতো।
আমি আবার খেলায় মনোযোগ দিলাম। কিন্তু অবশেষে ৭ রানে হেরে গেলাম। রাগে মোবাইলটা মেলা মারলাম। যেমনটা আমরা রাগ করলে টেবিল বা আশেপাশে অন্যকিছুতে ঘুষি মারি ঠিক তেমনই আমিও মোবাইলটা বিছানার উপর মারলাম।
– ঐ ম্যাডাম ঐ। নিজের দোষে হারছেন আবার আমাকে মারেন কেন? (উচ্চস্তরে বলল)
> সাহস বাড়ছে?
– না ম্যাডাম স্যরি। কিন্তু এভাবে মারবেন না।
> একটুর জন্য হেরে গেলাম। ধ্যাত্তেরিকা।
– কাছাকাছি আসার পর বিগ শট খেলতে গেলেন কেন?
> একদম চুপ। জ্ঞান দিবি না।
– আচ্ছা। এবার আমাকে একটু রেস্ট দেন।
> পরে। এখন সিওসি খেলব। ওয়ার অ্যাটাক বাকি আছে।
– হায় হায় বলেন কি? তাড়াতাড়ি চলেন। নয়তো শেষ হয়ে যেতে পারে। আপনাকে আমি আগেও নোটিফিকেশন দিয়েছিলাম।
আমি তাড়াতাড়ি সিওসিতে গেলাম। ওয়ারের আর কিছুক্ষণ বাকি আছে। শাড়ি (শাহরিয়ার তানভীর) রীতিমতো হুমকি দেয়া শুরু করছে। নিশি অ্যাটাক না দিলে ওর খবর আছে। আকবর সাপোর্ট দিয়ে বলেছে, না না ও দিবে। হয়তো ব্যস্ত আছে। শাড়ির আইডি Th 10 ম্যাক্স তো তাই নিজেকে একটা কিছু ভাবে হুহ! আমারও Th -11। আর কিছু বলব না। আইডি যে Rush সেটা কি সবাইকে বলা যায়? যাইহোক আমি অ্যাটাক দিয়ে ক্লানকে জয়ের মুখ দেখালাম। যদিও আমি th-9 হয়ে th-8 উড়াইছে। উপরের গুলো শাড়িই শেষ করছে with 3 স্টার। ধুর এসব স্টার আকাশে অনেক দেখা যায়। বলে রাখা ভাল আমার সিওসি আইডি দুটা। th-11 & th-9। th-11 খেলি না। কিছুক্ষণ খেলার পর দেখি চার্জ গণহারে শেষ হচ্ছে। ৮০% বাকি আছে।
> কিরে এভাবে চার্জ খাচ্ছিস কেন?
– আচ্ছা ম্যাডাম নাস্তা করলে কেএফসি-তে বেশি দাম হবে নাকি সাধারণ রেষ্টুরেন্টে?
> অবশ্যই কেএফসি।
– ঠিক এমনই। ভালো গেমস খেললে চাঁদাও বেশি দিতে হয়।
> তোরা তো দেখি মারাত্মক চাঁদাবাজ।
– ম্যাডাম আমি হাপিয়ে গেছি। এবার একটু রেস্ট দেন।
> দাঁড়া একটু ফেবু থেকে ঘুরে আসি। বন্ধুদের খোঁজখবর নিয়ে আসি।
– গেছি আমি।
> হিহিহি।
আমি ফেবুতে আসলাম। আমি সবসময়ই আগে নোটিফিকেশন চেক করি। ইনবক্সটা বিরক্তিকর লাগে। তবুও কিছু বন্ধুবান্ধবীদের জন্য ইনবক্সে চোখ বুলাতে হয়। নোটির কার্যক্রম শেষ করে কিছুক্ষণ নিউজফিডে ঘুরতে লাগলাম।
– আম্মা, ইনবক্সের কার্যক্রম শেষ করে আমাকে একটু মুক্তি দেন।
> চিল্লাইস না। ব্যস্ত আছি।
– ওরে আমার ব্যস্ত রে।
– ইয়ে মানে কিছু না। চালিয়ে যান।
ফেবু চালাতে চালাতে সিওসি থেকে নোটিফিকেশন আসলো, Chief, Your army is ready to take in battle.” আহা কত সম্মান দিয়ে আমাকে ডাকলো। আমিও তাদের ডাকে সাড়া দিলাম। কিছুক্ষণ সিওসি খেলে আবার ফেবুতে এলাম। নিউজফিডে একটা ক্রিকেট ট্রল দেখলাম। ব্যস মাথায় ভুত উঠলো যেভাবেই হোক ভারত তথা ইন্ডিয়াকে হারাতেই হবে। ক্রিকেট গেমসে ঢুকলাম। অতি সাবধানতার সাথে খেলতে খেলতে খেলা জমে উঠেছে। শেষ ৫ওভারে ৪০ রান প্রয়োজন। ক্রিজে প্রিয় মুশি ও ম্যাশ। গতবারের মত ভুল করি নাই। ঠান্ডা মাথায় খেলে জয় অর্জন করে লাফিয়ে উঠলাম। কিছুক্ষণ ব্রেক ড্যান্স দিলাম। তারপর সবার জন্য লান্স রেডি করে নামাজ পড়ে খেয়েদেয়ে সব গুছিয়ে একটু ঘুম দিলাম। উঠে দেখলাম মোবাইলে ৪৫% চার্জ আছে।
> কিরে চার্জ কই গেছে?
– ঘুমানোর আগে যে ক্রিকেট খেলছিলেন তা মনে আছে?
ওহ! আসলে জয় পেয়ে খুশিতে চার্জ চেক করতে ভুলে গেছিলাম। যাইহোক ডিনারের জন্য ভাত বসিয়ে দিলাম। তরকারি আমি একবারই রান্না করি। শুধু ভাত দুবেলা রান্না করি। ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে বিকালে কিছুক্ষণ পিচকুদের সাথে খেললাম। তারপর কিছুক্ষণ ফেবুতে আড্ডা দিলাম। অতঃপর সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে মোবাইলটা আবার হাতে নিলাম। কিছুক্ষণ সিওসি ও ফেবু চালালাম। তারপর ঘর দুয়ার গুছানো + এশারের নামাজ + ডিনার সহ অন্যান্য যাবতীয় সব কাজ শেষ করে মশারি টানিয়ে শুয়ে পড়লাম। মানে মোবাইল টিপাটিপি শুরু।
– ম্যাডাম আপনার কি হাত ব্যাথা করে না?
> কেন?
– সারাদিন এত কাজ করার পরেও মোবাইল টিপেন কিভাবে?
> সে কৈফিয়ত কি তোকে দিতে হবে?
– না না সেটা না। আচ্ছা যাইহোক আমাকে চার্জ দেন।
> আমি কি তোর কথামতো চলি?
– না। কিন্তু মাত্র ৩৭% চার্জ আছে।
> এতেই আজ রাত চলে যাবে।
– ৩০% রাখা অবস্থায় চার্জ দেয়া ভালো।
> একদম চুপ। ভালমন্দের জ্ঞান দিতে আসিস না।
– জীবনে কেউ মেয়েদেরকে বুঝিয়ে পারে নায়।
> তোর সাহস তো কম না। আমার সামনে মেয়েদের নিয়ে কটু কথা বলিস! নারীবিদ্ধেষী নাকি?
– স্যরি ম্যাডাম। আমি সেটা বুঝাই নাই।
> আজ সারারাত তোকে চালাব। প্রয়োজনে ঘুমানোর আগে ইউটিউবে ৩ ঘন্টার মুভি চালিয়ে ঘুমাব। তবুও আজ সারারাত তোকে কোনো রেস্ট দিব না।
– এত বড় শাস্তি দিয়েন না ম্যাডাম।
> এটাই তোর শাস্তি।
শুরু করলাম গেমস + ফেবুকিং। আজ আর মোবাইলের নিস্তার নাই। আমার টাকার বিদ্যুৎ দিয়ে চার্জ খেয়ে নারীবিদ্ধেষী কথাবার্তা? আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়ব। ঘন্টাখানেক পর
– আম্মা গো আর করব না। এবার মাফ করেন। আর মাত্র ৫% আছে।
> চুপ। আজ তোর রেহাই নাই। নারীবিদ্ধেষী তাই না?
– না গো ম্যাডাম না। কে শুনে কার কথা। আমি চালাতেই লাগলাম। কিছুক্ষণ পর
– আম্মা তো আর মাত্র ১% এবার তো রেহাই দেন।
> কোনো রেহাই নাই। মনে মনে বললাম, এবার চার্জ দেয়া দরকার। উঠে চার্জার খুজতে লাগলাম।
– আর পারলাম না। আমি গেলাম আম্মা। টাটা।
অফ হয়ে গেল। আমি চার্জে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। এলার্ম বাজেনি তাই সকালে সময়মতো উঠতে পারিনি। পিচকুদের স্কুল আছে। তাড়াতাড়ি করে রান্নাবান্না করতে যেয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলেছি। একটা প্রয়োজনীয় কাজ ছিল সেটাও মিস করছি। মোবাইল খুলার কিছুক্ষণ পর মামার মেসেজ দেখলাম। বকাবকিতে ভরপুর। বুঝলাম যে কল দিয়ে বন্ধ পেয়েছিল। আমি ভয়ে রিপ্লাই দিলাম না। ঘন্টাখানেক পর ফোন এলো আমি রাফিকে ধরিয়ে দিলাম। খা খা আমার বকা সব খেয়ে নে।
এমনিতেও একটা কারণে আমার সব বকা রাফিকেই খেতে হয়। যাকগে সে কথা। দেরিতে উঠার কারণে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম যেমনঃ কাপড়চোপড় ধোয়া হতে শুরু করে ঘর দুয়ার গুছানো সবই লেইট হল। কাজ করতে করতে বেহাল অবস্থা। সব কাজ শেষ করে একটু রেস্ট নিতেই দেখলাম আযান দিয়েছে। আবার দৌড়াদৌড়ি শুরু। নামাজ + সবার লান্স + গুছানো। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। বিকালে উঠে পিচকুদের সাথে খেলা + অন্যান্য কাজ শেষ করতে করতে রাত। আব্বু এলো তারপর ডিনার করে সব গুছিয়ে শুয়ে পরলাম। মোবাইল কি তা সারাদিনেও বুঝিনি। হাতে মোবাইলটা নিয়ে দেখলাম ৯৫% আছে।
– হা হা হা হা হা হা হা।
> তুই হাসতে থাক। আমি একটু ঘুমাই।
– আরে ঘুমাবেন কেন? ওয়ার অ্যাটাক দিবেন না? ফেবু চালাবেন না? ক্রিকেট খেলবেন না?
> আমার হয়ে তুই খেল আমি ঘুমাই। সকালে সময়মতো উঠতে না পারলে আবার প্যারা হবে। গুড নাইট। ঘুমিয়ে পরলাম। মোবাইল তুই অনেক ভাল রে। তোর কথা শুনলে এত প্যারা নিতে হত না।