০২. নীলা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে
নীলা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে চিৎকার করে বলল, “দেখেছ বাবা?”
ইশতিয়াক সাহেব পাশে বসে ছিলেন, তিনিও উঠে দাঁড়ালেন, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, “কী মা?”
“একটা–একটা মেয়ে–”
“কী হয়েছে মেয়েটার?”
“পানিতে ডাইভ দিল। কী সুন্দর মেয়েটা বাবা, যেন কেউ গ্রানাইট কেটে তৈরি করেছে। গাছের উপর দাঁড়িয়েছিল।”
“কোথায়? কোন্ গাছে?”
“ঐ যে বাবা ঐ বড় গাছটায় ছিল। এক্ষুনি পানিতে ডাইভ দিল।”
“সত্যি?”
“সত্যি!”
নীলার দুর্বল শরীর উত্তেজনা বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারল না, রেলিং ধরে আবার বসে পড়ে বলল, “কী সুন্দর ডাইভ দিয়েছে তুমি বিশ্বাস করবে না বাবা। ঠিক যেন অলিম্পিকের ডাইভ। একেবারে ডলফিনের মতো”
“তাই নাকি?”
“হ্যাঁ বাবা, এখনও ডুবে আছে মেয়েটা, ভেসে উঠছে না কেন? কিছু হয়নি তো মেয়েটার?”
“কী হবে, গ্রামের মেয়ে তো–এরা একেবারে মাছের মতো সাঁতার কাটে।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ, মা, সত্যি।”
নীলা একদৃষ্টে নদীর তীরের বিশাল হিজল গাছটার দিকে তাকিয়ে রইল। তাদের লঞ্চটি পানিতে ঢেউ তুলে নিচু শব্দ করতে করতে সরে যাচ্ছে। সেখানে পাথর কুঁদে তৈরি করা অপূর্ব মেয়েটি বিশাল একটা গাছ থেকে ডলফিনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে গভীর কালো পানিতে। কী সাহস মেয়েটির! চোখে-চোখে তাকিয়েছিল সে মেয়েটির দিকে, চোখের মাঝে কী জ্বলজ্বলে একধরনের ভাব, দেখে মনে হয় যেন একটা চিতাবাঘ! সমস্ত শরীরটা যেন ইস্পাতের তৈরি ধনুকের ছিলা, টানটান হয়ে আছে! কী সুন্দর! কী চমৎকার! আহা, সেও যদি হত ঐ মেয়েটার মতো–পাথরে কুঁদে তৈরি করা একটা শরীর হত তার? ধনুকের ছিলার মতো টানটান হয়ে থাকত তার শক্ত একটা শরীর, আর একেবারে আকাশের কাছাকাছি থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারত নদীর কালো পানিতে! মাছের মতো সাঁতার কাটত ঐ সুন্দর মেয়েটার মত।
নীলা একটা নিঃশ্বাস ফেলল। সে জানে কখনোই ঐ মেয়েটার মতো সে হতে পারবে না। তার দুর্বল শরীরের ভিতরে বাসা বেঁধেছে এক ভয়ংকর অসুখ, তিল তিল করে নিঃশেষ করে দিচ্ছে তাকে। এই আকাশ, বাতাস, নদী আর চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যাবে কিছুদিন পর। কতদিন পর? এক বছর? ছয় মাস নাকি আরও কম?
নীলা আবার একটা নিঃশ্বাস ফেলল। বাবা তার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললেন, “কী হয়েছে মা? শরীর খারাপ লাগছে?”
“হ্যাঁ বাবা।”
বাবা উঠে দাঁড়িয়ে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলেন নীলাকে, বারো বছরের মেয়ে অথচ পাখির পালকের মতো হালকা শরীর। বুকে চেপে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে ইশতিয়াক সাহেব সারেংকে ডেকে বললেন, “লঞ্চটা ঘুরিয়ে নেন সারেং সাহেব।”
“ঘুরিয়ে নেব? বড় নদীর মোহনায় যাব না?”
“না। মেয়েটার শরীর ভালো লাগছে না।”
“ও আচ্ছা। ঠিক আছে স্যার।”
ইশতিয়াক সাহেব নীলাকে বুকে চেপে নিচে নামিয়ে এনে বিছানায় শুইয়ে দেন। মেয়েটি ক্লান্তমুখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ইশতিয়াক সাহেব মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম গলায় বললেন, “খুব খারাপ লাগছে মা?”
নীলা চোখ খুলে তাকিয়ে ম্লানমুখে হাসার চেষ্টা করে বলল, “না বাবা, খুব টায়ার্ড লাগছে।”
“একটু ঘুমাও। ঘুম থেকে উঠলেই ভালো লাগবে।”
“ঠিক আছে বাবা।”
নীলা চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল। ইশতিয়াক সাহেব একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। পাটাতনে ডেক-চেয়ার সাজানো রয়েছে, রেলিঙে পা তুলে তিনি সেখানে শরীর এলিয়ে দিলেন। রাজহাঁসের মতো সাদা লঞ্চটি তরতর করে পানি কেটে এগিয়ে যাচ্ছে। অপরাহ্নের রোদ এসে পড়েছে তার চোখে। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে শুয়ে রইলেন তিনি। মালা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সর্বময় কর্তা ইশতিয়াক হোসেনকে হঠাৎ কেমন যেন পরাজিত মানুষের মতো দেখাতে থাকে।
.
দুই বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে আসছিলেন তিনি। ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিয়েছেন আগে, নিজে ড্রাইভ করছিলেন গাড়ি। নতুন এসেছে তার শেভি ইম্পালা। ভি এইট ইঞ্জিন, সান রুক, অটোম্যাটিক ট্রান্সমিশান–পাশে বসেছে তার স্ত্রী শাহনাজ, পিছনে নীলা। ঢাকা-চট্টগ্রামের নতুন মসৃণ রাস্তায় গাড়িটা প্রায় ভেসে ভেসে যাচ্ছে। গাড়ির সি.ভি. চেঞ্জারে কণিকার একটা রবীন্দ্রসংগীত বাজছে, ইশতিয়াক সাহেব স্টিয়ারিং হুইলে আলতোভাবে হাত রেখেছেন, পাওয়ার স্টিয়ারিঙে আঙুলের স্পর্শে গাড়িটাকে ঘুরিয়ে নেওয়া যায়।
ছোট একটা নদীর উপরে হাতির পিঠের মতো একটা ব্রিজ। উপরে উঠে মসৃণ গতিতে নিচে নেমে আসছিলেন, হঠাৎ রাস্তার ঠিক মাঝখানে ছুটে এল সাত আট বছরের একটা ছেলে। রাস্তায় একপাশে ইশতিয়াক সাহেবের বিশাল শেভি ইম্পালা, অন্য পাশ থেকে ছুটে আসছে দৈত্যের মতো একটা ট্রাক। ছেলেটা হঠাৎ থমকে দাঁড়াল রাস্তার মাঝখানে, তারপর কী মনে করে ছুটে গেল উলটোদিকে।
প্রথমে চিলের মত চিৎকার করে উঠল নীলা, তারপর শাহনাজ। যন্ত্রের মতো ব্রেকে চাপ দিলেন ইশতিয়াক সাহেব, দুলে উঠল গাড়িটা, তারপর আধপাক ঘুরে গেল তার বিশাল শেভি ইস্পালা। অনুমানিক ক্ষিপ্রতায় স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়িটা ঘুরিয়ে নিলেন, রাস্তা থেকে বের হয়ে যেতে যেতে গাড়িটা কোনভাবে নিজেকে সামলে নিল আর হঠাৎ করে কোন একটা কিছুর সাথে প্রচণ্ড ধাক্কা খেল। গাড়িটা, বিস্ফোরণের মতো একটা শব্দ হল, গাড়ির কাঁচ ভেঙে ছুটে এল তাঁর দিকে। কিছু বোঝার আগে গাড়িটা ওলটপালট খেতে খেতে রাস্তার পাশে দিয়ে গড়িয়ে গেল নিচে ক্ষেতের দিকে। সংবিৎ ফিরে পেয়ে আবিষ্কার করলেন ইশতিয়াক সাহেব বেকায়দাভাবে আটকা পড়েছেন সিটের নিচে, ডান পাটা আটকা পড়েছে কোথাও, ভেঙে গেছে নিশ্চয়ই। রক্তে ভেসে যাচ্ছে তাঁর শরীর, পিছনে ফিরে তাকালেন ইশতিয়াক সাহেব, গাড়িতে উলটো হয়ে ঝুলছে নীলা। চিলের মতো চিৎকার করছে সে। বেঁচে আছে নীলা চিন্তাটা মাথার মাঝে বিদ্যুঝলকের মতো খেলে গেল। মাথা ঘুরিয়ে তাকালেন স্ত্রী শাহনাজের দিকে পাশের সিটে মাথা কাত করে শুয়ে আছে, শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। বুক থেকে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস বের করে জ্ঞান হারালেন ইশতিয়াক সাহেব।
হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে পাবার পর তৃতীয় দিনে তিনি জানতে পারলেন শাহনাজ মারা গেছে। তাঁর আঠারো বছরের স্ত্রী এবং তাঁর একমাত্র মেয়ের মা শরীরে আঘাতের বিন্দুমাত্র চিহ্ন না নিয়েও তাঁর প্রিয় শেভি ইম্পালার ধ্বংসস্তূপের মাঝে মারা গেছে একেবারে নিঃশব্দে।
ইশতিয়াক সাহেবের শরীরের প্রায় প্রত্যেকটি হাড় ভেঙে গিয়েছিল, তবু তিনি একরকম জোর করে বেঁচে উঠেছিলেন শুধুমাত্র নীলার জন্যে। বিশাল এই পৃথিবীতে এই মেয়েটির জন্যে নাহলে যে কেউই থাকবে না!
.
পরের দুই বছরের ইতিহাস খুব দুঃখের ইতিহাস। ইশতিয়াক সাহেব অবাক হয়ে আবিষ্কার করলেন দশ বছরের নীলা একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছে, একটিবারও জানতে চাইল না তার মা কোথায়। একটিবারও পৃথিবীর এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল না, আকুল হয়ে কাঁদল না তার বাবাকে জড়িয়ে। চারতলা বাসার ছোট জানালার কাছে মুখ লাগিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।
ইশতিয়াক সাহেব তার মেয়েকে ডিজনিল্যান্ড নিয়ে গেলেন, নীলনদের তীরে পিরামিড দেখাতে নিলেন, স্যুভ মিউজিয়ামে মোনালিসা দেখালেন, কনকর্ডে করে শব্দের চেয়ে দ্রুতগামী প্লেনে প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্কে উড়িয়ে নিলেন, কিন্তু নীলার চোখেমুখে বিষণ্ণতার যে পাকাঁপাকি ছাপ পড়েছে তার মাঝে একটু আঁচড়ও দিতে পারলেন না। এক বছর পর নিউইয়র্কের শ্লোন ইনস্টিটিউটের একজন ডাক্তার প্রথম ইশতিয়াক সাহেবকে দুঃসংবাদটি দিল। নীলা খুব ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে। এটি সত্যিকার অর্থে কোনো অসুখ নয়, কিন্তু অসুখ থেকে এটি আরও ভয়ংকর কারণ এর কোনো চিকিৎসা নেই। এটি একধরনের মানসিক ব্যাধি, যেখানে মস্তিষ্ক আর বেঁচে থাকবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজেই শরীর পুরোপুরি নীরোগ থেকেও ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রথম যেদিন জানতে পারলেন ইশতিয়াক সাহেব কঠিনমুখে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন? কেন এটি আমার মেয়ের হল?”
ডাক্তার মাথা নিচু করে বলল, “আমি খুব দুঃখিত মিস্টার ইশতিয়াক। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার অর্থ কেউ জানে না। কেউ জানে না।”
“এর কোন চিকিৎসা নেই?”
“প্রচলিত মেডিক্যাল সায়েন্সে এর কোন চিকিৎসা নেই।”
“কেউ বাঁচে না এই রোগ হলে?” ডাক্তার কোন কথা না বলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। ইশতিয়াক সাহেব প্রায় আর্তনাদ করে উঠে জিজ্ঞেস করলেন, “কেউ বাঁচে?”
“মেডিক্যাল জার্নালে এক-দুইটি কেস পাওয়া গেছে যখন রোগীর ইমিউন সিস্টেম নিজে নিজে রিকভার করেছে। কিন্তু সেগুলি নেহাতই কাকতালীয় ব্যাপার। মেডিক্যাল জার্নালে তো র্যাবিজ থেকে আরোগ্য হয়েছে এরকম একটা কেসও ডকুমেন্টেড আছে।”
“আমাদের কিছুই করার নেই? কিছুই করার নেই?”
ডাক্তার কোনো উত্তর না দিয়ে হঠাৎ খুব মনোযোগ দিয়ে হাতের নখগুলো দেখতে শুরু করল।
“কিছুই কি আমাদের করার নেই? কিছুই?”
ডাক্তার পূর্ণদৃষ্টিতে ইশতিয়াক সাহেবের দিকে তাকিয়ে থেকে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আপনি যদি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন তা হলে তার কাছে প্রার্থনা করতে পারেন। আর কিছুই যদি না হয় অন্ততপক্ষে আপনি হয়তো এটা গ্রহণ করার শক্তি পাবেন।”
ইশতিয়াক সাহেব আর কিছু না বলে ডাক্তারের কাছে থেকে উঠে এসেছিলেন। তারপর আরও এক বছর কেটে গেছে। খুব ধীরে ধীরে নীলার শরীর আরও দুর্বল হয়েছে। তার ফ্যাকাশে রক্তশূন্য মুখ, বড় বড় কালো চোখ, রেশমের মতো কালো চুল দেখলে তাকে মোমের পুতুলের মতো মনে হয়। নীলা এমনিতে শান্ত মেয়ে, মা মারা যাবার পর আরও শান্ত হয়ে গিয়েছিল–ইদানীং একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে জ্বরে থাকে। যে-পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে সেই পৃথিবীর জন্যে হঠাৎ হঠাৎ তার বুকের ভিতরে এক বিচিত্র ধরনের মমতার জন্ম হয়।
.
ইশতিয়াক সাহেব নীলাকে নিয়ে তার বাসায় ফিরে এলেন সন্ধ্যে সাতটায়। নীলাকে নিয়ে তার বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সাথে সাথে ডাক্তার আজমলকে ফোন করলেন। আজমল শুধু পারিবারিক ডাক্তার নন, ইশতিয়াক সাহেবের ছেলেবেলার বন্ধু, একে অন্যের সাথে তুই-তুই করে কথা বলেন।
আজমল তার ক্লিনিকে খুব ব্যস্ত ছিলেন বলে আসতে আসতে রাত দশটা বেজে গেল। নীলা তখন তার বিছানায় শান্ত হয়ে ঘুমুচ্ছে, ইশতিয়াক সাহেব বারান্দায় অন্ধকারে চুপচাপ বসে আছেন। ডক্টর আজমলকে দেখে ইশতিয়াক সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “ছাড়া পেলি শেষ পর্যন্ত?”
“পাইনি কিন্তু চলে এসেছি। আজকাল চিকিৎসাটা প্রয়োজন নয়, ফ্যাশান। নীলার কী খবর?”
ইশতিয়াক সাহেব একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “নতুন কিছু নয়, ঐরকমই আছে। লঞ্চে হঠাৎ শরীর খারাপ করল, ভাবলাম তোকে দেখাই।”
“এখন কী ঘুমুচ্ছে?”
“হ্যাঁ।”
“তা হলে আর তুলে কাজ নেই। আমি এমনি দেখে যাই, ভোরবেলা এসে ভালো করে দেখব। আরেকটা থরো চেকআপের সময় হয়ে গেছে।”
ইশতিয়াক সাহেব একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন, “আর চেকআপ! মেয়েটাকে শুধু শুধু কষ্ট দেওয়া।” ইশতিয়াক সাহেব হঠাৎ করে সুর পালটে বললেন, “আচ্ছা আজমল, তুই বল দেখি আমি কি অন্যায় করেছি যে খোদা আমাকে এমন একটা শাস্তি দিলেন? কী করেছি?”
ডক্টর আজমল এগিয়ে এসে ইশতিয়াক সাহেবের কাঁধ স্পর্শ করে বললেন, “খোদা কাউকে শাস্তি দেয় না রে ইশতিয়াক! জীবনটাই এরকম।”
“কী করি আমি বল দেখি?”
“তুই এখন ভেঙে পড়িস না ইশতিয়াক। নীলার কথা ভেবে তুই এখন শক্ত
“কী করব আমি?”
ডক্টর আজমল দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “মানুষের ক্লিনিক্যাল একটা ব্যাপার থাকে, আবার সাইকোলজিক্যাল একটা ব্যাপার থাকে। নীলার সমস্যাটা কী জানিস? মেডিক্যাল সমস্যাটা দেখা দেবার অনেক আগেই সে বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছে।”
ইশতিয়াক সাহেব মাথা নাড়লেন, নিচু গলায় বললেন, “একটা মানুষ যে তার মাকে কত ভালবাসতে পারে সেটা নীলাকে আর শাহনাজকে দিয়ে বুঝেছিলাম। বুঝলি আজমল, দুজনকে দেখে মনে হত একজন মানুষ!”
ডক্টর আজমল মাথা নাড়লেন, বললেন, “আমি জানি।”
“মা মারা যাবার শক থেকে আর কখনো রিকভার করেনি।”
“হ্যাঁ। যদি কোনভাবে নীলাকে আবার বেঁচে থাকার জন্যে একটা স্টিমুলেশান দেওয়া যেত!”
ইশতিয়াক সাহেব একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “তুই তো জানিস–আমি সব চেষ্টা করেছি। সব। পৃথিবীর কোন কিছু ছেড়ে দিইনি। নীলা কিছু চায় না। একেবারে কিছু না।”
দুইজন দীর্ঘ সময় অন্ধকারে চুপ করে বসে রইলেন। একসময় ইশতিয়াক সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “চল যাই নীলার ঘরে। তোর নিশ্চয়ই দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
ড. আজমল নীলাকে না জাগিয়েই তাকে দেখলেন। ঘুমের মাঝে নীলা ছটফট করে কী-একটা বলল। ডক্টর আজমল মাথা ঝুঁকিয়ে শুনতে চেষ্টা করলেন, ঠিক বুঝতে পারলেন না, মনে হল সে একজনকে বলছে তাকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিতে। কিছু-একটা নিয়ে স্বপ্ন দেখছে নীলা, এতকিছু থাকতে পানিতে ঝাঁপ দেওয়া নিয়ে স্বপ্ন কেন দেখছে ডক্টর আজমল ঠিক বুঝতে পারলেন না।
আগের পর্ব :
০১. ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল এভাবে
পরের পর্ব :
০৩. বকুনি খেয়ে বকুলের মন-খারাপ
০৪. নীলা বিছানায় হেলান দিয়ে
০৫. বকুল আর নীলা পাশাপাশি
০৬. প্রিয় বকুল, তুমি কেমন আছ
০৭. বকুল হিজল গাছটার মাঝামাঝি
০৮. প্রথম দিন বকুল
০৯. ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে টুশকি
১০. শেষ খবর অনুযায়ী