ব্যাগ নিয়ে লাবনী তার বাবার বাড়ি হাজির। মা দেখে বলল
~ আবার সবুজের সাথে ঝগড়া করেছিস?
> আমি না। ও নিজেই করেছে।
~ তুই কি একটু সংসারী হবি না?
> ওর মাথায় যতদিন বুদ্ধি হবে না ততদিন সম্ভব না।
লাবনী ভিতরে ঢুকে গেল। বিকালে সবুজ তার শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ লাবনীর বাবার বাড়ি এলো। জামাইকে দেখে শ্বাশুড়ী বলল
~ রাগ করো না বাবা। ও ছোট তো তাই বুঝে না।
– না মামী আমি কিছু মনে করি না। লাবনী কোথায়?
~ পুকুরপাড়ে বসে আছে। সবুজ পুকুরপাড়ে এসে লাবনীকে বলল
– চল বাসায়।
লাবনী চুপচাপ হাটা দিল। তারপর ব্যাগ গুছিয়ে সবুজের হাতে ধরিয়ে দিয়ে “মা আসি” বলে হাটা দিল। এটাই হল সবুজ ও লাবনীর বৈবাহিক জীবন। সবুজের সাথে কিছু থেকে কিছু হলেই লাবনী তার বাবার বাড়ি চলে আসে। বাবার বাড়ি বেশি দূরে নয়। হেটে আসতেই ১০ মিনিটের মত লাগে। সবুজ বিকালে যেয়ে নিয়ে আসে। ভাল ব্যাপার হল সবুজ নিতে আসলেই লাবনী চলে যায়। তাদের ঝগড়া অত্যন্ত ক্ষুদ্র ব্যাপার নিয়ে হয়। যেমনঃ তরকারিতে লবণ কম বেশি নিয়ে, সামান্য কথা কাটাকাটি নিয়ে, বিছানা গুছানো নিয়ে ইত্যাদি।
লাবনী ও সবুজ হল মামাতো ফুফাতো ভাইবোন। লাবনী মামাতো বোন আর সবুজ ফুফাতো ভাই। জন্মের পরপরই তাদের বাবা মা বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল। সবুজ চাকরি পাওয়ার পরপরই বিয়ে করিয়ে দেয়। লাবনীর এখনো সংসার জীবন বুঝতে শিখেনি। আর সবুজ তো মাত্র বাস্তব জগতে হাটা শুরু করলো। বিয়ের সময় সবুজের বাবা বলেছিল লাবনীকে কষ্ট না দিতে। তাই সবুজ সবসময়ই লাবনীর রাগের সামনে হার মেনে নেয়। এক সকালে,
– লাবনী আমাকে অফিসে যেতে হবে। উঠ।
> তো যা। ধরে রেখেছি? (কাঁথা গায়ে দিয়ে বলল)
– নাস্তা?
> আমি এখন পারব না। আমার ঘুম পাচ্ছে।
– তোর সাথে বিয়ে দিয়ে বাবা আমার জীবনটা তামা তামা করে দিয়েছে।
ব্যস শুরু হল ঝগড়া। কে বলেছিল বিয়ে করতে, নিষেধ করলি না কেন এই নিয়ে আরও অনেক কথা। সবুজও পাল্টা জবাব দিল। অতঃপর রাগ করে লাবনী আবার বাবার বাড়ি চলে এলো। লাবনীর মায়ের সেই দীর্ঘনিঃশ্বাস। কবে যে মেয়েটা সংসারী হবে এই নিয়ে তার ভাবনা। নিত্যদিনের মত বিকালে সবুজ এসে লাবনীকে নিয়ে গেল। কিছুদিন পর লাবনীর বাবা মা তাদের বাসায় বেড়াতে এলো। মূলত এত ঝগড়াঝাঁটি কারণটা কি তা জানার জন্যই লাবনীর মা এসেছে। সকালে নাস্তা খেতে বসলো। নাস্তায় লবণ কম হয়েছে।
– দেখলে মামী লবণটাও ঠিকমতো দিতে জানে না।
> তুই যখন জানিস তুই-ই রান্না করতি।
– তাহলে বিয়ে করে তোকে এনেছি কেন?
> তার মানে আমাকে বুয়া মনে করিস?
~ এই থাম তো তোরা।
> ওকে থামতে বলো।
– আমি তো সবসময়ই চুপ থাকি। লাবনী লবণের বাটি এনে সব লবণ সবুজের নাস্তা ঢেলে দিয়ে বলল
> খা এবার।
লাবনী মা মনে মনে ভয়ে পেয়ে গেল এই বুঝি সবুজ মারবে। কিন্তু না, সবুজ কিছুই বলেনি। লাবনী ভেতরে চলে গেল।
– দেখলে মামী তোমার মেয়ের কত জিদ।
~ ও এখনো বুঝতে শিখেনি তো তাই। তুই রাগ করিস না। লাবনীর মা সবুজকে নতুন করে নাস্তা দিল। সবুজ নাস্তা খেয়ে অফিসে চলে গেল। লাবনীর মা লাবনীর কাছে এলো।
~ জামাইয়ের সাথে কেউ এমন করে?
> দেখলে না ও কেমন খোঁচা মেরে কথা বলল।
~ দেখ এত জিদ ভাল না। ঘর সংসারে মেয়েদেরকে একটু ধৈর্য্যসহকারে কাজ করতে হয়। নয়তো স্বামী সন্তান নিয়ে থাকবি কিভাবে?
> হুহ! হইছে।
~ আল্লাহ জানে তুই কবে বুঝতে শিখবি!
কিছুদিন পর লাবনীর বাবা মা চলে গেল। তাদের সংসার নিত্যনতুন ঝগড়ার মাধ্যমে চলতে লাগলো। লাবনীর একটা ড্রেস পছন্দ হয়েছে। কিন্তু দাম বেশি। টাকার কথা সবুজকে বলতে বিব্রতবোধ করছে। তবে লাবনীর অবস্থা দেখে বুঝলো যে লাবনীর কিছু একটা হয়েছে। বারবার সবুজের সামনে এসে ঘুরঘুর করছে।
– কি হইছে তোর?
> কই কিছু নাতো।
– তাহলে ক্ষুধার্ত মুরগির মত ঘুরঘুর করছিস কেন?
> কি বললি তুই? আমি ক্ষুধার্ত মুরগি?
অতঃপর ঝগড়া শুরু। শেষ পর্যায়ে বাবার বাড়ি। অতঃপর বিকালে সবুজ যেয়ে নিয়ে এলো। তখন জানতে পারলো যে লাবনী ড্রেস কেনার জন্য তার বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। বাসায় এসে সবুজ বলল
– তোর যদি কিছু লাগে তবে আমাকে বলবি। আমি তো তোর স্বামী। তোর দেখাশোনা করার দায়িত্ব আমার।
> এএএএএএহহহহহ স্বামী! লাবনী ভেংচি মেরে চলে গেল। লাবনীর এক আত্মীয় বিয়ে। তাই লাবনী ব্যাগ গুছাচ্ছে।
– কোথাও যাবি?
> হুম। জুঁই আপুর বিয়েতে যাব।
– স্যরি রে। আমি যেতে পারব না।
> ওহ!
– তুই যাবি! (বিস্ময়)
> হুম।
– কিন্তু আমি তো যাচ্ছি না।
> তাতে আমার কি?
– তোকে একা যেতে দেই কি করে?
> এখন কি ঘর থেকে বের হতেও তোকে সাথে নিয়ে যেতে হবে?
সবুজ মনে বলল, “কি করে যে বুঝাই। এখন তো তুই আমার দায়িত্ব। তোর কিছু হওয়া মানে আমার হওয়া। কবে যে তুই আমাকে বুঝবি, কবে যে সংসার গুছাবি আল্লাহই জানেন।
> দেখ যাওয়ার আগে ঝগড়া করতে চাই না।
– না না। আচ্ছা তুই যা। সাবধানে যাইস।
লাবনী বেরিয়ে পরলো। পরিবারের অনেকেই যাচ্ছে। লাবনীও তাদের সাথে যাত্রা শুরু করলো। সবাই একই বাসে উঠলো। লাবনী তার দূর সম্পর্কের বোনের পাশের সিটে বসলো। সবুজ বারবার ফোন করে খবরাখবর রাখতে লাগলো। ঘন্টায় প্রায় ২/৩ বার কল করছে। লাবনী বিরক্তবোধ করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আবার সবুজ কল করলো,
– কতদূর গিয়েছ?
> দেখ বারবার কল করে বিরক্ত করিস না। রাখ। লাবনীই রেখে দিল।
= সবুজ বুঝি? (সুমি)
> হুম।
= তো এভাবে কথা বললে কেন?
> দেখলেই তো এইটুকু সময়ের মধ্যে কতবার কল দিয়ে বিরক্ত করেছে।
= তুমি তো ভাগ্যবতী যে তোমার স্বামী তোমার চিন্তা করে।
> হুহ! মাথা মোটাওয়ালা স্বামী। বাদ দাও এসব। তুমি কেমন আছ?
অতঃপর নিজেরা আলাপ আলোচনা করতে লাগল। হঠাৎ বাস ঝাকুনি দিল। সুমির মুখ থেকে ওড়না সরে গেল। লাবনী স্পষ্ট দেখল সুমির মুখে কিছু একটা দাগ আছে।
> এ মা! ওটা কিসের দাগ? সুমি আবার ওড়না দিয়ে ঢেকে বলল
= ও কিছু না।
লাবনী একটু জোরাজুরি করলো কিন্তু সুমি এড়িয়ে গেল। ঘন্টাখানেক পর সবাই গন্তব্যে পৌছালো। অনুষ্ঠানে শেষে রাতে লাবনী বাড়ির বাগানে বসে রেস্ট নিচ্ছে। তখন সুমিকে দেখলো। মনের মধ্যে সেই দাগ নিয়ে কৌতুহল জেগে আছে। তাই লাবনী সুমির কাছে এসে জোরাজুরি করতে লাগলো
> দেখ আপু মনের মধ্যে কষ্ট থাকলে সেটা শেয়ার করতে হয়। এতে কষ্ট কমে। সলিউশনও পাওয়া যেতে পারে।
= কখনোই কাউকে এই দাগের কথা বলিনি। তবে আজ তোকে বলছি।
অতঃপর সুমি বলতে শুরু করল। বছরখানেক আগে তার বিয়ে হয়েছিল। শুরুতে সবকিছু ভালই ছিল। ধীরে ধীরে স্বামী অত্যাচার করতে লাগলো। গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়িয়ে দিত, ব্যভিচার করত। একটা সময় তো অত্যাচারের মাত্রা এতই বাড়লো যে সহ্যের বাইরে চলে গেল। না পেরে সুমি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়। তারপর বাবা মা জেনে যাওয়ায় শেষমেষে তালাক। সুমির পিঠেও বেশ কিছু দাগ রয়েছে। সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে এবং দাগগুলো দেখে লাবনী ভয়ে আতকে উঠে।
= তাই তখন তোমাকে বলেছিলাম তুমি ভাগ্যবতী। তোমার স্বামী তোমার চিন্তা করে। লাবনীর মোবাইল বেজে উঠলো। হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠায় লাবনী কিছুটা ভয় পেল। কাপা হাতে রিসিভ করলো।
> হ্যা…হ্যালো।
– কেমন আছ? ডিনার করেছ?
> হ্যা …হ্যা।
– কিছু হইছে? তুমি ভয়ে ভয়ে কথা বলছ কেন?
> তে তেমন কিছু না। রাখি পরে ক কথা বলব। কেটে দিল। পরেরদিন সকালে,
= লাবনী উঠ। তোর বর এসেছে।
লাবনী ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বসলো। সবুজ এখানে! কিন্তু কেন? লাবনী হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলো। হ্যাঁ সত্যিই তো সবুজ এসেছে।
> তুই হঠাৎ? বিয়ে তো গতকাল রাতেই শেষ।
– এমনিই আসলাম।
জনৈকাঃ আমরা বুঝি তো। বউয়ের জন্য পরাণ লাফালাফি করে তাই ছুটে চলে এসেছে। আশেপাশের সবাই হেসে উঠলো। লাবনী বেশ লজ্জা পেয়ে চলে গেল। লাবনীর মা এসে সবুজকে নিয়ে গেল। নাস্তা পানি দিল। বিকালে আবার সবাই নিজ নিজ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হল। লাবনী ও সবুজ একই সিটে বসেছে। দুজনই চুপচাপ। কেন যেন সবুজকে পাশে পেয়ে লাবনীর ভাল লাগছে। লাবনীর মধ্যে কিছু একটা অনুভূতি কাজ করছে। হয়তো একেই ভাল লাগা বা ভালবাসা শুরু হওয়ার অনুভূতি বলে।
ঘন্টাখানেক পর তারা বাসায় চলে এলো। রাতে ঘুমানোর সময় লাবনী ভাবতে লাগলো সুমির জামাই কতটা পাষাণ সেই তুলনায় সবুজ অনেক ভাল। আজ পর্যন্ত তাদের মধ্যে যত ঝগড়া হয়েছে সবকিছুর জন্য সে নিজেই দায়ী ছিল। অহেতুক ছোট ব্যাপার ও নিজের ভুলকে স্বীকার না করায় ঝগড়া গুলাও হয়েছিল। নির্দোষ হয়েও সবুজ বারবার হার মেনে তাকে তার বাবার বাড়ি থেকে আনতে যেত। সবুজ তাকে খুব ভালবাসে তাইতো বারবার হার মানে। এমন ভালবাসা সবার কপালে জুটে না। এই ভালবাসার অবহেলা করা উচিত হবে না। এসব ভাবতে ভাবতে লাবনী ঘুমিয়ে পরলো। পরেরদিন এক নতুন ভোরের সাথে লাবনী নতুন ভাবে জীবন শুরু করলো। সে খুব ভোরে উঠে নাস্তা পানি বানিয়ে সবুজকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো।
> এই উঠ। অফিসে যাবি না?
সবুজ চোখ খুলে লাবনীকে দেখে ভুত দেখার মত ভয় পেয়ে উঠলো। কারণ বিয়ে হবার এই প্রথমই লাবনী সবুজকে ডেকে তুললো। তাছাড়া অন্যান্য সময় সবুজই ডেকে তুলতো।
– তুই!!!
> কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলি নাকি? সবুজ তো আকাশ থেকে পরলো। লাবনী হঠাৎ এই কথা বলল কেন! আমতা আমতা করে সবুজ বলল
– কি যে বলিস! আসলে আগে তো কখনো
> কথা কম। যা উঠে ফ্রেশ হয়ে নে। নাস্তা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
– তুই নাস্তা বানিয়েছিস!!!
> হুম।
সবুজ মনে মনে বলল আজ লাবনীর কি হইছে? শুধু অবাক করিয়ে দিচ্ছে। সবুজ ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে এসে দেখলো নাস্তা সার্ভ করাই আছে। সবুজ আবার অবাক হল। লাবনী একটা শাড়ী পরেছে। ভেজা চুল ও শাড়িতে অপরূপ লাগছে লাবনীকে। সবুজ তাকিয়েই রয়েছে। চোখ দুটো মূর্তির মত লাবনীর দিকে তাকিয়েই আছে, নড়ছে না। লাবনী বলল,
> আমি ঘরেই আছি। সবসময়ই দেখতে পারবি। আগে নাস্তা করে নে। সবুজ তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল
– ধুর তোর মত পেত্নীর দিকে তাকায় কে? আমি শাড়ির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। শাড়িটা খুব সুন্দর। কথাটা বলেই সবুজ জিহ্বা কাটলো। আয় হায়! দিলাম তো রোমান্টিক মুড নষ্ট করে। এখন তো লাবনী ঝগড়া শুরু করবে। কিন্তু লাবনী কিছু বলল না। উল্টো সবুজের পাশে এসে বসে বলল
> নাস্তা খেয়ে দেখ কেমন হয়েছে। সবুজ নাস্তা খেয়ে বলল
– আহা এত মজাদার নাস্তা আগে কখনো খাইনি। মামী দিয়ে গেছে বুঝি?
> আম্মু কেন দিবে? আমি নিজে বানিয়েছি।
– বিশ্বাসই হয় না।
> দেখ ঝগড়া করতে চাই না।
– যা সত্য তাই বললাম।
লাবনী উঠে চলে গেল। চেহারা দেখে বুঝেছে যে লাবনী রাগ করেছে। কিন্তু এই ভেবে অবাক হল যে লাবনী ঝগড়া করেনি। সবুজ খাওয়ায় মন দিল। অনেকদিন পর তৃপ্তি সহকারে নাস্তা খাচ্ছে। আজ নাস্তায় ভালবাসাও মিশে আছে। কিছুক্ষণ পর লাবনী সবুজের অফিসের জামা কাপড় নিয়ে এলো।
– আচ্ছা আজ তোর কি হইছে? শুধু অবাক করাচ্ছিস কেন?
> আশ্চর্য! এতে অবাক হবার কি আছে?
– না মানে আজ নিজেই ঘুম থেকে উঠলি, নাস্তা বানালি, এত সুন্দর করে সেজে এলি, এখন আবার জামা কাপড়ও নিয়ে এলি। ব্যাপারটা কি বলত?
> কিছুই তো না।
কথাটা বলে লাবনী জামা কাপড় সোফায় রেখে ভেতর রুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর সবুজ রেডি হল। তারপর লাবনীকে ডাক দিল। লাবনী চলে এলো। অন্যান্য সময় কয়েকটি ডাক দেয়ার পরেও লাবনীর সাড়া পাওয়া যেত না বা লাবনী বলত, “আমি টিভি দেখছি। তুই যা।” কিন্তু আজ এক ডাকেই লাবনী চলে এসেছে যেন তার ডাকেরই অপেক্ষায় ছিল। লাবনী এসে ছোট করে বলল,
> হুম।
– আচ্ছা যাই।
> যাই না বল আসি।
– আসি।
সবুজ হাসিমুখে বেরিয়ে পরলো। বিয়ের পর আজই সবুজের প্রথম দিন কোনো প্রকার ঝগড়াঝাঁটি ছাড়া হাসিমুখে ঘর থেকে বের হল। দিনটা আরও ভাল হয়ে উঠলো অফিসে যখন প্রমোশন লেটারটা হাতে পেল। বিকালে সবুজ আগে তার মামার বাসায় এলো। এসে সকালের সব ঘটনা বলে লাবনীর প্রসংশার উপর প্রসংশা করতে লাগলো। স্বভাবতই মেয়ের প্রসংশায় বাবা মা বেশ খুশি হলেন। সন্ধ্যার পরে সবুজ ঘরে এলো। অন্যান্য সময় সন্ধ্যার আগেই চলে আসতো
> এত দেরি কেন?
সবুজ লাবনীর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মনেই হচ্ছে না এই মেয়েটা কিছুদিন আগেও তুমুল ঝগড়া করতো, আর আজ মনে হচ্ছে এই মেয়ে ঝগড়া কি সেটাই জানে না।
> আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি। উত্তর দাও। সবুজ লাবনীর হাতে খাম দিয়ে ভেতরে চলে গেল।
> এটা কি?
– খুলে দেখ।
লাবনী খামটা খুলে দেখল তাতে সবুজের প্রমোশন লেটার আছে। লাবনী কিছু বলতে যাবে তখনই লাবনী ফোনে কল এলো। তার মা কল দিয়েছে। অতঃপর মায়ের কাছ থেকে জানল যে সবুজ তাদের বাসায় গিয়েছে আর তার অনেক প্রসংশা করেছে।
> আমাদের বাসায় গিয়েছিস তা বললেই তো পারতি।
– একটু ঘুরালাম আর কি!
> যা ফ্রেশ হয়ে নে। আমি ডিনার দিচ্ছি। সবুজ ফ্রেশ হয়ে এলো। তারপর দুজনে ডিনার করতে বসলো।
> কেমন হয়েছে?
– চমৎকার।
লাবনী হালকা একটা হাসি দিয়ে ডিনার করতে লাগলো। ডিনার শেষে সবুজ কিছুক্ষণ টিভি দেখলো তারার ঘুমিয়ে পরলো। আজ সবুজের অফিস বন্ধ। লান্সের জন্য লাবনী সবুজের পছন্দের খাবার রান্না করতে লাগলো। সবুজ লাবনী দেখার জন্য বারবার নানান বাহানা করে পাকঘরে যেতে লাগলো। ব্যাপারটা লাবনী বুঝে ফেললো। সবুজ আবার পাকঘরে এলো।
> এবার কি?
– ঠান্ডা পানি। লাবনী হাসি দিয়ে বলল
> এত বাহানা কই পাস?
– ইয়ে মানে কিসের বাহানা?
> কিছু না এই নে ঠান্ডা পানি। যা এবার।
সবুজ পানি নিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার আরেক বাহানা করে এলো। রান্না শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই নানান বাহানা করে সবুজ পাকঘরে আসা যাওয়া করলো। রান্না শেষে দুজনে লান্স করে নিলো। এভাবে চলতে লাগল। স্ত্রী হিসেবে লাবনী সবুজের সবকিছুর খেয়াল রাখে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে এখনো সু-সম্পর্ক হয়ে উঠেনি। এদিকে সবুজের ভার্সিটিতে গেট টুগেদার আয়োজন করা হয়েছে। তার পুরানো সব বন্ধুরাই ফ্যামিলি (স্ত্রী-সন্তান) সহ আসবে।
– আমার ভার্সিটিতে গেট টুগেদার হচ্ছে। সব বন্ধুরা তাদের পরিবারকে নিয়ে আসবে।
> কবে?
– আগামীকাল।
> আচ্ছা। পরেরদিন, লাবনী খুব সুন্দর করে সেজেছে। সবুজ হা করে তাকিয়ে আছে।
> মশা ঢুকবে। সবুজ মুখ বন্ধ করে ফেলল এবং বলল
– চল চল।
রওনা দিলো। ঘন্টাখানেক পর তারা ভার্সিটিতে চলে এলো। বন্ধুরা সবুজকে দেখে এগিয়ে এলো। সবুজ সবার সাথে কোলাকুলি করলো। তারপর লাবনীকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। সবুজ তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। লাবনী ডাক দিল।
> এইযে শুনছো? সবুজ চোখ বড় বড় করে লাবনীর দিকে তাকিয়ে আছে।
> এদিকে এসো। সবুজ এলো।
– তুই আমাকে
> দেখ এখানে তোর বন্ধুরা আছে। তুই তুকরি করলে সবাই কি ভাববে বল?
সবুজ মাথা দুলাল। পুরো অনুষ্ঠানে লাবনী সবুজকে তুমি করেই বলেছে। অনুষ্ঠান শেষে তারা বাসায় ফিরলো। অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে কিন্তু তাদের তুমি ডাকটা শেষ হয়নি। সেই থেকেই তারা একে অপরকে তুমি করেই ডাকে। এভাবেই তারা ধীরে ধীরে বিবাহের প্রকৃত বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবন করতে লাগল।