১৩. শেষ কথা
এলাকার মেয়েদের স্কুলগুলো ঠিক যেভাবে তৈরি হওয়ার কথা ছিল সেভাবে তৈরি হচ্ছে। আম্মা সারাদিন কাজ করেন আর রাতে নাকের উপর চশমা লাগিয়ে বসে বসে রিপোর্ট লিখেন। এই রিপোর্টগুলো অন্য এলাকায় ব্যবহার করা হবে। একাত্তরের জামাতি রাজাকারদের দিয়ে কী সমস্যা হতে পারে, তাদের কী কী জিনিস নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়, এইসবও নাকি রিপোর্টে লেখা হয়। তাদের ঠিকমতো শাস্তি কীভাবে দেওয়া যায়, জেল থেকে বের হবার পর তাদের নিয়ে কী করতে হবে এইসবও নাকি রিপোর্টে লেখা আছে। আম্মা যখন রিপোর্ট লেখেন তখন আব্বা টেবিলের অন্যপাশে গালে হাত দিয়ে বসে বসে আম্মার দিকে তাকিয়ে থাকেন। বুবুন কাছে এলে তাকে টেনে এনে কানের মাঝে ফিসফিস করে বলেন, “দেখ, দেখ তোর আম্মাকে দেখ!”
“কী দেখব?”
“তোর আম্মাকে কেমন বদমেজাকি মাস্টারনির মতো দেখায় না?”
বুবুন ফিসফিস করে বলে, “আম্মা তো আসলেই বদমেজাজি মাস্টারনি–তাকে আর কীরকম লাগবে?”
আম্মা চশমার ওপর দিয়ে তাকিয়ে বলেন, “কী বললি? কী বললি বুবুন? কান ছিঁড়ে একেবারে ভ্যান গ বানিয়ে দেব।”
পাড়ার ছেলেমেয়েরা বিকেলবেলা হৈ-হুঁল্লোড় করে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, সাতচাড়া, কিং কুইন খেলে। তার সাথে নতুন একটা খেলা যোগ হয়েছে, যেখানে খবিরউদ্দিনের আস্তানায় আব্বার সেই ঘটনাটি তারা নিজেরা অভিনয় করে দেখায়।
অভিনয় করে দেখানোর সময় টান দিয়ে যখন-তখন তারা শার্টের বোতাম ছিঁড়ে খালি বুক বের করে ফেলে।
ছেঁড়া শার্টের বোম সেলাই করে লাগাতে এই লাগাতে পাড়ার আম্মারা একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন!
আগের পর্ব :
০১. নতুন জায়গা
০২. খবিরউদ্দিন ও মোষের দই
০৩. শেয়ালের গর্ত
০৪. খবর
০৫. বাবা
০৬. শেয়াল দেখা
০৭. চমক
০৮. ভূত
০৯. কিডন্যাপ
১০. পরিকল্পনা
১১. অ্যাডভেঞ্চার
১২. পথ-কুক্কুর