গতকাল কথায় কথায় রাফাতকে বলে ফেললাম যে, একবার দোকানে চিপস কিনতে গিয়ে দোকানদারের উপর ক্রাশ খেয়েছিলাম। এই কথা নিয়ে ও গতকাল থেকে মিরাক্কেল শুরু করেছে। আজ সকালে বলছিল-
– মিতু??
– কি?
– চিন্তা করছি একটা চিপসের দোকান দেবো।
বুঝতে একটুও দেরী হলো হলো না কি বলার ট্রাই করছে। ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই দেখলাম মুখে ভোঁতা হাসির রেখা। ভ্রুটা আরোও কুঁচকালাম এই ভেবে যে এবার হয়তো ফাইজলামি বন্ধ করবে। কিন্তু ভ্রু বেঁকানোর সাথে সাথে দেখি তার মুখের রেখাও গাঢ় হচ্ছে। রাগ করে কথা বলা ছেড়ে দিলাম। মেজাজটা এতোই খারাপ হলো যে, একজন আরেকজনের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। সন্ধ্যাবেলা অফিস থেকে এসে আবার কোথায় বেরিয়ে গেলো। এবার মনে হচ্ছে একটু বেশি বেশি করে ফেলেছি। কি করব বুঝতে পারছি না কিছুই। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর কলিংবেল বেজে উঠল।দরজাটা খুলতেই দেখি সে দাঁড়িয়ে আছে।
– রাগ কমেছে?
– রাগ উঠালে তুমি,নামানোর দায়িত্ব ও তো তোমার।
– এটা ধরো।
– কি এটা?
– প্যাকেটটা খুলে দেখো।
প্যাকেট খুলে দেখি রিং চিপস। গুনে দেখি ৯ টা। অবাক হয়ে রাফাতের দিকে তাকাতেই দেখি মুখে আবার সেই বদমায়েশি হাসি।
– তোমার ওই ক্রাশের দোকান থেকে এনেছি। ১০ টা কিনলে ১ টা ফ্রি। আমি যে তোমার হাসবেন্ড জানতে পেরে যোগের পরিবর্তে বিয়োগ করে দিয়েছে।দুঃখজনক- অতিব দুঃখজনক। মুখে সেই হাসি নিয়েই হেলে দুলে বেডরুমের দিকে চলে গেল সে। নাহ। এভাবে আর না। অনেক হয়েছে। মনে মনে মিতু ভাবতে থাকে এর কি বিহিত্ করা যায়…
– আপা কি করা যায় বলুন তো…
– হুমম। বুঝলাম। তোমার ওকে এই কথাটা বলা উচিত হয়নি। আমার ভাইকে আমি চিনি। ওর যন্ত্রণায় আমিই শান্তিমতে প্রেম করতে পারি নি। সব কথা আম্মাকে যেয়ে লাগাতো। যেকোনো কিছু হলেই বলতো- আম্মা- আপা না….
– আপা আপনি তো তার বড় বোন। আমি তো তার বউ।বিয়ের পর স্বামীর সাথে সব কথা শেয়ার করলে তো জানতাম সংসার সুখের হয়। এতো দেখি….
– দাঁড়াও দাঁড়াও। দেখি কি করা যায়।
– দেখেন আপা। আপনিই এখন ভরসা।
রাতে বাসায় এসেই মানে একেবারে দরজা খুলতেই রাহাত আমাকে জড়িয়ে ধরলো। কিছু বলার আগেই আমার মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো-
– আজ পূর্ণিমা। ছাদে যাবে? আমি এতটাই থতমত খেলাম যে হেঁচকি শুরু হয়ে গেলে।
– চলো চলো। তাড়াতাড়ি।
– আরে জামা কাপড়টা তো চেন্জ করো…
– না না। পারফেক্ট আছি।। ছাদে যাওয়ার আগে একটা মাদুর আর বালিশ নিয়ে যাই চলো। তুমি তো জানো না ছাদে শুয়ে পূর্নিমার চাঁদ দেখতে কি সুন্দর লাগে। রাফাতের পাশে শুয়ে আছি। হঠাৎ চেয়ে দেখি ওর চোখ বেয়ে পানি পরছে।
– কি সমস্যা?
– সরি।
-কেনো?
– আমার অনেক আগে আসার দরকার ছিল।
বুঝলাম মানুষটা বদলে গেছে। কিন্তু বড়আপা এত তাড়াতাড়ি মানুষটাকে এতোটা বদলে দেবে ভাবিনি। মানুষটার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে ওর হাতের উপর মাথা রাখলাম। নিজেকে আজ নিজের কাছে খুব হিংসার পাত্রী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে মানুষ এক জীবনে যা চায়, তা হয়তো পায়। সত্যিই পায়। ঘুম ভাঙলো রিংটোনের শব্দে।
– হ্যালো??
– হ্যালো আমি। শোনো মিতু। রাফাতকে আমি বুঝিয়েছি। ও বুঝেছে। আজ থেকে ও আর তোমাকে এসব কথা নিয়ে রাগাবে না।
– জানি আপা। আজ যদি আপনি না থাকতেন। নতুন মানুষটাকে দেখার সৌভাগ্য আমার হতো না। থ্যাংস-এ-লট।
– এখনি দেখলে কোথায়। মাত্রই তো বের হয়েছে বাসা থেকে।কাল রাতে তো ও আমার বাসাতেই ছিলো। আমি আর জামিল ওকে ভালো করে বুঝিয়েছি।ও মাত্রই বাসা থেকে বেরিয়েছে।
– কি–কি কিহ??
– বুজেছি। আনন্দ আর ধরছে না। আমি কিন্তু জাস্ট শুরুটা করে দিয়েছি। বাকিটা তোমার দায়িত্ব। এখন রাখি তাহলে। পরে কথা হবে। বাই।
– আপা শুনুন….আপা….
মিতু ১০ মিনিট একইভাবে বসে থাকে। আস্তে আস্তে আশেপাশে তাকায়।ও তো ছাদেই আছে।আর রাফাত তো কোথাও নেই। রাফাত যদি কাল না-ই আসে তাহলে রাতে কার সাথে ছাদে এসে পূর্নিমা যাপন করল মিতু! হঠাৎ মিতুর খেয়াল যায় ছাদের দরজার দিকে। কেউ যেনো দাঁড়িয়ে আছে। অসার হাত পা নিয়ে মিতু তাকিয়ে থাকে সেদিকে। কিছু খারাপ দেখার নিমিত্তে তার চোখ হয়ে থাকে স্থির!