জনাব মোঃআব্দুল আলী সাহেবের এক মাত্র কন্যা মোছাঃফয়জুন্নাহার মলির সাথে ৮লক্ষ ১টাকা ধার্য করিয়া আপনার সহিত বিবাহ সম্পন্ন করা হইবে, বলেন বাবা কবুল।
-কি হলো? বলো বাবা কবুল?
-কিরে আবির বল কবুল!
-বকুল,বকুল, বকুল।
সে কি বাবা তুমি বকুল বলো কেন? বকুল কে? হঠাৎ পাত্রের মুখ থেকে কবুলের পরিবর্তে বকুল কথাটা শুনে সকলেই অবাক হয়ে গেল। মেয়ে পক্ষ তো বলাই শুরু করে দিলো।নিশ্চয়ই ছেলের বকুল নামের কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে।তা না হলে কবুল না বলে বকুল বলছে কেনো? চারিদিকে হৈচৈ বেঁধে গেলো।একজন আর একজনের কাছে কানা গোসা করতে শুরু করলো, ছেলের বকুল নামের মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে।প্রেম করে বকুলের সাথে আর বিয়ে করতে এলো অন্য মেয়েকে।আরো নানান কথা বলতে লাগলো।
তখনই মেয়ে বাবা ভরা মজলিশে বলে দিলো এই বিয়ে হবে না।জেনে শুনে তো আর আমি আমার মেয়েকে আশান্তিতে ফেলতে পারি না। আপনারা আপনাদের ছেলে নিয়ে চলে যান। এ বিয়ে কিছুতেই হবে না। অবশেষে এই নিয়ে ২য় বারের মতো কবুল বিড়ম্বনা জন্য আবিরের আবারও বিয়ে ভাঙ্গলো।কত আশা নিয়ে বরযাত্রী গেলো শেষে কিনা আবারও বউ ছাড়াই বাড়ি ফিরতে হলো।আবিরের বাবা তো সব আশা ছেড়েই দিলো।একমাত্র ছেলের বিয়ে দিবে নাতী নাতনী নিয়ে খেলা করবে। কত স্বপ্নই না দেখেছিলো।এক কবুল বকুল হয়ে তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলো। বরযাত্রীর গাড়িড় শব্দ শুনে আবিরের মা সহ সকলে বউ বরন করে ঘরে তোলার জন্য গাড়ির কাছে এলো।ছেলেকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে বললো,
-আগে বৌমা কে নামা। বৌমা কে বরন করার পর তুই নামবি।
-মা আমার বিয়ে হয়নি।আমি আবারও কবুলের জায়গায় বকুল বলে ফেলেছি। আবিরের কথা শুনে আবিরের মা একদম নিঃশ্চুপ হয়ে গেলো। বিয়ে বাড়ির হৈ চৈ যেন ক্ষনিকের মধ্যে চুপচাপ হয়ে গেলো।
-দেখ আবির তোকে কত বার জিঙ্গাসাবাদ করা হয়েছে,তোর যদি বকুল নামের কোন মেয়ে কে পছন্দ হয়ে থাকে,তাহলে তুই সেটা আমাদের বল।আমরা ঐ মেয়েটার সাথেই তোর বিয়ে দিবো।বার বার এই ভাবে বিয়ে ভেঙ্গে চলে আসার কি মানে বলতো?
-মা,আমি আর কতো বার বলবো আমি বকুল নামের কাউকে চিনি না।বিশ্বাস করো মা কবুল বলার সময় যে আমার কি হয় আমি জনি না। তখন আমি কিছুতেই কবুল বলতে পারি না।
আবির সিদ্ধান্ত নিলো সে আর বিয়ে করবে না।বিয়ের কথা শুনলেই এখন আবিরের রাগ হয়।হয়তো আবারও কবুল না বলে বকুল বলার কারনে তার বিয়েটা ভেঙে যাবে, আর না হয় ভরা মজলিশে আবারও অপমানিত হতে হবে।।এভাবেই চলছিলো আবিরের দিন। কিন্তু আবিরের মা বাবা তো আর এইসব মেনে নিতে পারছেনা।তাদেরও তো ইচ্ছে করে ছেলের বউ দেখতে।নাতী নাতনী নিয়ে খেলা করতে।তাই তারা এইবার আবারও ছেলের জন্য পাত্রী দেখা শুরু করলো।ঘটকের দেখানো ছবি থেকে একটা মেয়েকে তাদের পছন্দও হলো।ছেলেকে না জানিয়ে তারা মেয়ে দেখে একেবারে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে নিলো।এইবার আর কোন জাকজমক করে নয় একেবারে চুপেচাপে ছেলেকে বিয়ে করানো হবে।বিয়ের পর বড় করে অনুষ্টান করা হবে।
আবির বিয়ের কথা শুনে প্রথমে রাজি না হলেও মা বাবার কথা রাখতে গিয়ে বিয়েতে মত দিলো। আবারও আবির বিয়ের সাজে বসে আছে। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। জনাব বশীর সাহেবের কন্যা মোছাঃবকুলের সাথে ১০লক্ষ ১ টাকা ধার্য করিয়া আপনার সহিত বিবাহ সম্পন্ন করা হইবে।বলেন বাবা কবুল। আবির তো মেয়ের নাম শুনে অবাক।যে বকুলের জন্য বার বার কবুল বলতে গিয়েও বকুল বলে ফেলেছে।সেই বকুল নামের মেয়ের সাথেই বিয়ে।এইবার কবুল বলতেই হবে।
-বকুল আবির আবারও কবুল বিড়ম্বনায় পরে গেলো। তবে এইবার আর কবুলের পরিবর্তে বকুল শুনে কেউ কোন মন্তব্য করেনি।বরং সকলে খুশিই হয়েছে।আবিরের শালীরা তো বলতেই শুরু করে দিলো।
-কি দুলাভাই বিয়ের আগেই আপার নাম জপতে শুরু করে দিলেন।বাহ বাহ কি দারুণ ভালোবাসা। পাশ থেকে কাজি সাহেব বললেন, বাবা বকুল নয় বলেন কবুল।আপনি যাকে বিয়ে করছেন তার নাম বকুল।বিসমিল্লাহ বলে বলেন বাবা কবুল। এইবার আবির চোখে বন্ধ করে বিসমিল্লাহ বলে এক দমে কবুল, কবুল, কবুল, কবুল, কবুল, কবুল, কবুল, বলতেই লাগলো তখনই কাজি সাহেব বললতে শুরু করলেন,
-বাবা এইবার থামেন। তিনবার কবুল বললেই হবে এতো বার বলতে হবে না।
সকলেই আলহামদুলিল্লাহ বলেন ছেলে কবুল বলেছে। অবশেষে আবির ঠিকঠাক মতো কবুল বলে বিয়ে তো নয় যেন বিশ্ব জয় করে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরলো। আবীরের মা বরন ডালা নিয়ে প্রাণ ভরে ছেলের বউকে বরন করে ঘরে তুলে নিলো। আবিরের বাবার ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন গুলোও জোড়া লেগে গেলো।এইবার বুঝি নাতী নাতনী দেখার স্বাদ পূর্ণ হবে। ধুমধাম করে বিরাট আয়োজ করা হয়েছে আবিরের বিয়ের অনুষ্ঠানে। তাই বিয়ে খেতে যাচ্ছি। চাইলে আপনারাও আসতে পারেন।