ঘুম থেকে উঠেই শুনলাম পাত্রপক্ষ এসে পাত্রী পছন্দ করে চলে গেছে! ভাবি র মুখে এমন টা শুনে ভীষম খেলাম! পাত্রের মা এবং খালা এসেছিলো হঠাৎ করেই আমি ঘুমাচ্ছি শুনে আর জাগায় নি, ঘুমের মাঝেই নাকি তিনি দেখে গেছেন! ভাবি বলল খুব ভালো মনের খালা তুই ঘুমে শুনে বলে কাঁচা ঘুমে জাগাতে নেই ঘুমালে রুহ চতুর্থ আসমানে থাকে আর জাগালে হঠাৎ রুহ আসতে সময় লাগে, থাক না ঘুমাক আর আমি আগের মত হেঁটে দেখাও হেঁসে দেখাও এর পক্ষে নই। তারা তোর রুমে ঢুকে এক নজর দেখেই চলে গেছে আলহামদুলিল্লাহ বলে। আমার মেজাজ গরম হয়ে গেছে ভাবি কে বললাম কেউ আসবে ঘুমের মাঝে আমায় দেখবে আবার চলেও যাবে তোমরা বসে বসে ঘুম পাকাবে!
ছোট বেলা থেকেই আমি ঘুম কাতুরে, ঘুম ছাড়া কিছু বুঝি না দাদী বলতেন আমাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য মুখে সরিষার তেল দিয়ে জাগাতেন, তারপর একটু জাগলে খাওয়াতেন সবাই খুব ভয় পেতো এত ঘুমাই কেনো! আমাকে কেউ অবসরে কি করি জিজ্ঞেস করলে উত্তর ঘুমাই, হবি কি সেটাও ঘুম, প্রিয় কাজ সেটাও ঘুম, আর বেড়াতে গেলে সেখানে ও ঘুম ই আসবে। পথে বাস, লঞ্চ,ট্রেন যাই হোক বাইরের সিন আমার আর দেখা হয় না ঘুমের জন্য! ঘুম নিয়ে বাসায় না খালি স্কুলেও অনেক কথা শুনতে হয়েছে, টিফিন পিরিয়ডে সবাই খেলাধুলা করে আর আমি ঘুমাতাম, তো একদিন কোন স্যার এক্সিডেন্ট করছে আর স্কুল ছুটি হয়ে গেছে, সবাই বাসায় গেছে আমি ছাড়া। পুরা এলাকা খুঁজে মাইক নামানো হয়েছে, ছোট চাচা দারোয়ান কে নিয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে দেখে আমি ঘুমে! যা হোক আমাকে নিয়ে ছোট চাচা বাসায় গিয়ে আম্মুকে বলে আমাকে হুজুর দেখাতে ঘুম পরী এ আসর করছে।
বড়মামা ডাঃ দেখাতে বললেন, মোটামুটি হুজুরের দেওয়া একটা তাবিজ আর ডাঃ এর সাথে একটা সিটিং ও দিলাম। ডঃ বলছে সব ফাইন কোনো প্রবলেম নেই। তারপর ঘুম আর আমি বড় হতে লাগলাম যদিও হেডস্যার আমাকে কুম্ভকর্ণ র নাতনী বলে আর ক্লাসটিচার অবন্তী না বলে ঘুমন্তি বলে। হঠাৎ কল আসলো আম্মুর ফোনে পাত্র র মা কল দিয়েছে পাত্র আর আমার মিটিং টা সারতে কোনো রেস্টুরেন্টে, আম্মু বলেন ঠিক আছে কোথায় যেতে হবে বলেন অবন্তী কে পাঠিয়ে দিবো।পাত্র র মা বলেন আগামীকাল বিকালে… আমি শুনেই চিৎকার দিলাম অসম্ভব আমি বিকালে ঘুমাই কোথাও যাবো না দুপুরে ভার্সিটির সাম্নে আসতে বলেন।
আম্মু তাই বলল -দেখেন আফা রাস্তায় তো অনেক জ্যাম একবার ভার্সিটি থেকে বাসায় এসে আবার যাওয়া তারচেয়ে অপু কে ভার্সিটির সাম্নেই যেতে বলেন তারপর ওরা যা ভালো মনে করে। পরদিন ক্লাস শেষেই ভার্সিটির সাম্নেই কেউ যেনো আমাকে পিছন থেকে ডাকলো, ঘুরে তাকিয়ে দেখি মিস্টার অপু। যা হোক আমাকে ছবিতে দেখেছে কল না দিয়ে চিনবে ভাবিনি! তারপর বলল গাড়িতে উঠুন আমি বললাম দূরে কোথাও গিয়ে টাইম ওয়েস্ট করার কি দরকার সাম্নেই একটা কফিশপ আছে সেখানেই বসি। তিনিও বললে ওকে অনেক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে আমিও টায়ার্ড,আচ্ছা এটা কেমন টাইম না পাত্রী দেখার জন্য,ভর দুপুর। মনে হচ্ছে ঠিক দুপুরে পেত্নি ধরবে। আমি হেঁসে উঠলাম বললাম আপনার সেন্স অফ হিউমার ভালো, আপনার নামের সাথে যায় না অপু শুনতেই মেয়ে মেয়ে লাগে! আপ্নি আমাকে দেখেই চিনেছেন!
-আরে চিনবো না কেন আপনার ফেবু পিক আর আপনি সেইম আজকাল এমন হয়না ফেবু র পিক আর বাস্তবের পিক আলাদা হয়! কোনো মেকাপ ই নেই পুরা ন্যাচারাল!
— আসলে আমি মেকাপ করি না টাইম ওয়েস্ট লাগে ততক্ষণ একটু ঘুমালে শান্তি।
– আচ্ছা বিকালে আসলে কি হতো আমি শুনেছি গোধুলীর আলোয় পাত্রী দেখা সঠিক সময়। আমি আবারো হেঁসে বললাম বিকালে আমি ঘুমাই তাই।
– এই বার উনি ভিষম খেলেন কি বলেন একদিন না ঘুমালে কি হয়!
– আমি উহু অসম্ভব, আমার পক্ষে সম্ভব না।না ঘুমালে আমি মরে যাবো।
উনি আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেছেন, তারপর দিন রাতেই উনাদের বাসার সবাই এসে আর্ক্ত করে ফেলছেন! আমি কাজি সাহেব কে কবুল কোনো রকম ঘুম ঘুম চোখে বলেছি, সবাই আমাকে রেখে খাওয়া খেতে গেছে এই ফাঁকে আমি ঘুমাই গেছিলাম। সবাই খেয়ে এক নজর বউ দেখতে চেয়েছে কিন্তু বউ ঘুমে শুনে আমার শশুর মশাই বলেন তাহলে থাক মেয়েটা সারাদিনের খাটাখাটুনি তে টায়ার্ড হয়ে গেছে। এক ঘুমেই রাত কাভার আমার বর নাকি ভাবি কে অনেক বার কল দিছে ঘুম ভাঙ্গছে কিনা। আমি উঠার সাথেই আম্মু অগ্নিমূর্তি এসব কি শুরু করলি অবন্তি ওরা ভালো মানুষ দেখে কিছু বলে নি অন্তত অপুর সাথে একটু কথা বলতি! তখন ই ফোন হাতে নিয়ে নিয়ে দেখলাম ১২ মিসড কল! আবার বেজে উঠছে আর ধরলাম কানে দিতেই অপু সাহেব ঘুম ভেঙ্গেছে ঘুমপরীর?
-আমি হু
-গুড তাহলে চলে আসুন বসুন্ধরায় টাইম বেশি বাকি নেই মা শফিং শেষ করতে বলেছে তাড়াতাড়ি।
আমি -হু রেডি হয়ে নক দিবো।
ভাবি চা নিয়ে হাজির বলেন ব্যাস এইটুকু কথা! তোর কপাল পুড়বে হেতে আরেক হাংগা কইরবো কইলাম! বলেই হাসি। ভাবি মজা করে আঞ্চলিক ভাষায় কতা বলে। আমি করিলে করুক আমার কি! অবশেষে ভালোই ভালোই অনুষ্ঠান সমপন্ন হলো লাস্ট কয়দিন সংগীত মেহেদী হলুদ এক্কেবারে যাচ্ছে তাই এগুলা না হলে কি হয়। ঘুমে চোখ ভেঙ্গে যাচ্ছে তারা ঘর সাজিয়ে আমাকে দিয়ে চলে গেছে! বুঝা গেছে এ বাসার সবাই শান্তশিষ্ট শান্তিপ্রিয় আমার ভাল্লাগছে এরা আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করবেনা।
সাথে সাথে বাইরে হইচই হচ্ছে অপুর মামাতো ভাই বোন গুলা টাকা চাচ্ছে ভিতরে ঠুকতে দিচ্ছে না আমার এইদিকে ঘুম ঘুম ঘুম চোখে দেখছি অপু রুমে ঠুকছে আমাকে বলতেছে অবন্তী তুমি কি ঘুমিয়ে গেছো? আমি ঘুমের ঘোরে বলতেছি বিয়ে শেষ, লাইটিং শেষ, ফফটোসেশান শেষ আর কি ঘুউম্মম্ম……