প্রসংশা

প্রসংশা

বড় ভাবি নতুন বোরকা কিনে আমাকে দেখিয়ে বললো

-দেখতো মিনহাজ বোরকটা কেমন হয়েছে ? আমি ফোন থেকে মুখ তুলে বললাম

-ভালো । তারপর আবার ফোনে মনোযোগ দিলাম । বড় ভাবি হুংকার দিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলল
-তুই সেইদিন লুকিয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছিলি , এই কথা কি তোর বউকে বলে দেব ?
আমি আঁচমকা চেয়ার থেকে পড়তে যেয়েও নিজেকে সামলে নিলাম । বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললাম
-আমি তো সেই দিন এক বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম । এখানে লুকানোর কি আছে ?
ভাবি বললো

-আমি তোর বউকে বলবো , তুই অন‍্য মেয়েদের সাথে ফোনে কথা বলিস । এবং দেখাও করিস ।
-এটাতো একদম মিথ্যা কথা । এমন ভয়ংকর মিথ্যা বলে আমার সাধের সংসারে আগুন লাগালে আমি সত্যিই নারিকেল তৈল খেয়ে আত্মহত্যা করবো । ভাবি বলল

-তোর যা ইচ্ছা কর । আমি বলবো এই বলে দিলাম ।

আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম । কোনোক্রমে ভাবি যদি এই কথা বউয়ের কানে দেয় আমার নারিকেল তৈল খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না । সত্যি আমি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলিনি । কিন্তু মেয়ে মানুষ একটু বেশিই সন্দেহ বাতিক হয় । আর বউয়েরা স্বামীর ব‍্যপারে ভয়াবহ সন্দেহ করে । স্বামীকে একটুও বিশ্বাস করতে চায় না । ভাবতে লাগলাম ভাবি হঠাৎ এমন হুংকার দিয়ে কেন কথা বলছে । এমন অদ্ভুত আচরণের কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না । হঠাৎ মনে হলো , আরে ভাবি তো তার বোরকা দেখাইছে , আমি প্রসংশা করিনি তাই হয়তো রেগে গেছে । আমি ফোন ফেলে রেখে বললাম

-আরে ভাবি , আপনি এই বোরকা কিনেছেন? আমি তো ভালো করে খেয়ালই করিনি । এত সুন্দর বোরকা কে পছন্দ করলো ? আপনার জন্য একদম পারফেক্ট হয়েছে । সত্যি বলতেই হয় আপনার পছন্দ আছে । ভাবি খুশি হয়ে বললো

-আমার সাথে মানাবে ?
-মানাবে মানে ! একশো বার মানাবে । আমি একটু ভাবুক দৃষ্টিতে বললাম

-আমার মনে হচ্ছে যে , এই বোরকাটা আপনার জন‍্যই খুব যত্ন সহকারে বানানো হয়েছে । বোরকাটা একদম ঠিক ঠাক লোকের কাছে পৌঁছেছে ভেবেই আমার খুশি লাগছে । ভাবি লাজুক ভঙ্গিতে বললো

-যা তুই একটু বেশি বলছিস । এমন আবার হয় নাকি ?
-হয় মানে , একশোবার হয় । এই বোরকা পড়লে ভাইয়া কয়শো বার যে আপনার প্রেমে পড়বে আমি গুনে বলতে পারছি না । ভাবি খুব খুশি হয়ে বললো
-যা ঘরে যা , তোর আর নারিকেল তৈল খেয়ে মরতে হবে না । ভাত টাত কিছু থাকলে খেয়ে বিশ্রাম কর ।

আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভীতিটা কমালাম । মেয়ে মানুষ কি ভয়ংকর রে বাবা ।এরপর থেকে আমার শিক্ষা হয়ে গেছে । পরিবারের যে যায় বলুক আমি প্রসংশা করতে ত্রুটি রাখি না । প্রসংশা করতে করতে আমার অবস্থান সবার শীর্ষে । কেউ কিছু কিনলেই আমাকে দেখায় । ভালো রান্না করে আমাকে খাওয়াই । শুধু একটু সাধুবাদ শোনার জন্য । সেদিন ভাবি তার ছোট ছেলের জন্য একটা প‍্যান্ট কিনে আমাকে দেখিয়ে বললো

-দেখতো মিনহাজ কেমন হয়েছে ? আমি নেড়েচেড় দেখার সময় প‍্যান্টে একটা ছিদ্র আমার চোখে পড়লো । আমি ছিদ্র সম্পর্কে কিছুই বললাম না । এক ড্রাম প্রসংশা দিয়ে ভাবিকে খুশি করে দিলাম । তিনি নিজ হাতে প‍্যান্ট কিনেছেন । এখন যদি আমি তাতে ত্রুটি ধরিয়ে দিই , আমার অবস্থা নারিকেল তৈল পর্যন্ত গড়াবে । আমি নারিকেল তৈল খেতে চাই না । তাই প্রসংশা করে বিদায় দিলাম । সেই দিন বউ খুব যত্ন করে আমাকে খাওয়াচ্ছে । আমি ভাবলাম , হয়তো বউ রান্না করেছে এবং এত যত্ন করছে তার একটু প্রসংশা করায় যায় । আমি খাবার মুখে দিয়ে বললাম

-উফ , কি স্বাদ । এত সুন্দর খাবার মনে হচ্ছে আমি জীবনে খাইনি । শোনো আজকের খাবার আমি সব খাবো , তোমরা পারলে আবার রেঁধে খাও । যে এই রান্না করেছে , আমার ইচ্ছা হচ্ছে তার হাত একটু চেটে খাই । বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে রাগে ফুলছে । রাগান্বিত হয়ে বলল

– হ‍্যাঁ , আমি এই পাঁচ বছর ধরে রান্না করে খাওয়াচ্ছি সেই খাবার তোমার ভালো লাগে না । কই কোনো দিন তো বলোওনি খাবার ভালো হয়েছে । আর আজ আমার শরীর খারাপ তাই বুয়াকে দিয়ে রান্না করিয়েছি আর এটাই তোমার ভালো লাগলো ! আমার হাত চেটে খেতে ইচ্ছা হচ্ছে ? তোর আজ রুমে ঢুকা বন্ধ , সারারাত বাইরে থাকবি । আর বুয়ার হাত চেটে চেটে খাবি । নিজের বোকামি দেখে নিজেই স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম । আমার চোখ দুটো আশেপাশে নারিকেল তৈলের বোতল খুঁজছে ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত