রুপন্তীর আম্মু

রুপন্তীর আম্মু

প্রতিদিন সন্ধ্যার দিকে রুপন্তীর আম্মুকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়। জরিনা খালাও আমাদের সাথে যায়। জরিনা খালারে নিয়ে যাওয়ার মেইন কারন ছবি উঠানো! জরিনা খালা ভালো ছবি উঠাতে পারে। ইদানীং রুপন্তীকেও সাথে নিয়ে যাচ্ছি। এক্সাম শেষ তাই।

সেদিন সবাই একসাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছিলাম। হঠাৎ এক ছেলে এসে রুপন্তীর আম্মুকে বললো,
মিতু তুমি এখানে? তুমি না তোমার নানুর বাসায় গেছো? আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি রুপন্তীর আম্মুর দিকে। রুপন্তীর আম্মু এবার বললো, ও হ্যালো কোন মিতু? ও তাহলে এখন আমাকে চিনতে পারছো না। প্রতিদিন বিকাশে দু হাজার করে নিয়ে এখন আমাকে চিনতে পারছো না? কি সব বলছেন আপনি টাকা নিয়েছি মানে?তো! আর এগুলা কে? এবার আমি বললাম, ওই কখন থেকে দেখছি বলেই যাচ্ছো! আমি ওর হাসবেন্ড! আর ওর নাম মিতু না। সে আমার রুপন্তীর আম্মু!

ও আচ্ছা মিতু! তোমার হাসবেন্ডও আছে? আর মেয়েও আছে দেখছি। আমি বের হতে বললে কখনো বের হও না। আর এখন পুরো ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরছো। লজ্জা করেনা মানুষের কাছ থেকে এভাবে টাকা নিতে? এই বলে ছেলেটা চলে গেল। আমরা সবাই রুপন্তীর আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি। রুপন্তীর আম্মু হতভম্ব হয়ে বললো, আমি কিছু জানিনা। এদিকে আমি রাগ করে বাসায় চলে আসলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, রুপন্তীর আম্মু তাহলে আমার অবর্তমানে এগুলা করে! ছিঃ

রুপন্তীর আম্মু আসলো, কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, বিশ্বাস করেন রুপন্তীর পাপ্পা আমি ছেলেটা কে একদম চিনিনা। মায়া লেগে গেল তাই বললাম, আচ্ছা এরপর যেনো আর না হয়। একসপ্তাহ পর ছেলেটার সাথে আবার দেখা। শপিংমলে গিয়েছিলাম। ছেলেটা আবার রুপন্তীর আম্মুকে দেখে বললো, কি ব্যাপার মিতু! তুমিতো বললে তোমার জামাইকে ছেড়ে দিছো। এখন আসলো কোথা থেকে আবার? আমি রাগি রাগি ভাব নিয়ে রুপন্তীর আম্মুর দিকে তাকালাম।সে বললো, বিশ্বাস করেন রুপন্তীর পাপ্পা আমি ছেলেটাকে চিনি না। এবার আমি ছেলেটারে ধরলাম। ভালোভাবে। দেখি বল, তুই কোন মিতুর কথা বলতেছস আর তারে কোথায় পাইছস?

সে কাঁচুমাচু হয়ে বললো, ভাইজান দেখেন মিতুর ফেইসবুক আইডি। আসলেই তো সব রুপন্তীর আম্মুর ছবি। গতকালও একটা ছবি আপলোড দিছে।এবার বুঝতে পারলাম এটা রুপন্তীর আম্মুর ফেইক আইডি হতে পারে। ছেলেটাকে কোনরকম বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। তার কিছুদিন পর অফিস থেকে ফেরার সময় দেখি রুপন্তীর আম্মু একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। রেস্টুরেন্টের জানালা দিয়ে একটু স্পষ্ট ভাবে দেখার চেষ্টা করলাম। সত্যি তো এটা রুপন্তীর আম্মু ই, সাথে ওই ছেলেটা। তারা দুইজন খুব কাছাকাছি বসেছে। প্রেমিক প্রেমিকার মতো।

আমি ফোন লাগালাম কিন্তু ফোন সুইচ অফ। রুপন্তীর আম্মু আমাকে এভাবে ধোকা দিল। মন খারাপ করে তাহাসান ভাইয়ের মতো বেইলিরোডে গান গেয়ে গেয়ে হাঁটছি। রাত দশটা বেজে গেলে। রুপন্তীর আম্মুর ফোন আসছে। রুপন্তীর পাপ্পা কোথায় আপনি? এখনো বাসায় ফিরেন নি যে? বাসায় এসে কি লাভ, যার জন্য সংসার সে এখন অন্যের সুখে মরিয়া হয়ে আছে। কি বলছেন বুঝতেছি না। ঢং করিয়েন না তাড়াতাড়ি বাসায় আসেন। রাস্তায় মশার কামড় সহ্য করতে না পেরে অবশেষে বাসায় গেলাম। রুপন্তীর আম্মু কথা বলার চেষ্টা করতেছে কিন্তু আমি কথা বলছি না। জরিনা খালা বললো, ভাইজান মনে অয় ডিপ্রেশনে চলি গেছে। আমি কোন ডিপ্রেশনে চলে যাই নি জরিনা খালা , এই যে তোমাদের মহারানীকে জিগাও, আজকে বিকেল সাড়ে পাঁচটয় সে কোথায় ছিল? রুপন্তীর আম্মু বললো, রুপন্তীকে কোচিংয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম।

তো মোবাইল বন্ধ রাখছো কেন? চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আপনাকে অনেকবার বলেছি একটা মোবাইল কিনে দিতে। ও তাই। তাহলে ওই ছেলেটা, রেস্টুরেন্ট, জড়াজড়ি করে বসা এগুলো কি আমি ভুল দেখেছি।কি সব বলছেন? কোন ছেলে? আমি রাগ করে ঘুমিয়ে গেলাম। রুপন্তীর আম্মু অনেক চেষ্টা করছে উঠানোর আমি উঠি নাই একদম। সকালে দশটায় ঘুম ভাঙলো, সোফায় বসে ছিলাম। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ল। দরজা খুলে দেখি ওই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। সাথে রুপন্তীর আম্মুও। দুজনের গলায় ফুলের মালা। রুপন্তীর আম্মু বললো, আমরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি। এই নেন সন্ধ্যায় রিসেপশন ইচ্ছে হলে চলে আসবেন। গেলাম টাটা!

রুপন্তীর আম্মুর কথা শুনে আমি ৪৪০ ভোল্টের শক খাওয়া পাবলিকের মতো দাঁড়িয়ে আছি। রুপন্তীর আম্মু এটা কি করলো! সারাদিন কিছু খাইনি। ডিপলি ডিপ্রেশনে চলে গেছি। সন্ধ্যার দিকে জরিনা খালা বললো, ভাইাজান চলেন না আফার বিয়া খামু। কতো দিন বিরানী খাই না। রুপন্তীও বললো, পাপ্পা চলো না আম্মুর বিয়ে খাবো। আমি বললাম, তোরা কাল পর্যন্ত ওয়েট কর আমার চল্লিশা খেতে পারবি। পরে দুজনের গভীর রিকোয়েস্টে রুপন্তীর আম্মুর বিয়েতে গেলাম। রুপন্তীর আম্মু আর ছেলেটি স্টেইজে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। আমার সহ্য হচ্ছে না। এটা কি হয়ে গেল।

তারপর রুপন্তীর আম্মু মাইক হাতে নিয়ে বললো, লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান আমার আর সাদমানের এতোদিনের প্রেমের পর বিয়েটা করতে পারার পেছনে একটা মানুষের হাত রয়েছে। তারপর আমাকে ডাকা হল, আমি বোকার মতো সবার দিকে তাকিয়ে আছি। রুপন্তীর আম্মু মনে হয় এবার আমার মান সম্মানও খাবে। আমি এতোগুলো লোকজনের সামনে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না। একটু কাঁচুমাচু করে স্টেইজে গেলাম।

তারপর রুপন্তীর আম্মু বললো, ইনি আর কেউ নন দ্যা ওয়ান এন্ড অনলি আমার দুলাভাই! স্টেইজের পেছনের পর্দা সরিয়ে রুপন্তীর আম্মু বের হলো, সাথে জরিনা খালা আর রুপন্তীও। সবাই একসাথে বলে উঠলো, সারপ্রাইজ,,, তার মানে আমি যাকে রুপন্তীর আম্মু ভাবছি সে আমার শালী মানে রুপন্তীর আম্মুর জমজ বোন কানাডা থেকে ফিরে এসে এসব কান্ড করেছে। আর এরা সবাই মিলে আমাকে বোকা বানিয়েছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত