রুবেল তার স্ত্রী মনিকাকে নিয়ে শপিং করতে যাবে। চাকরি জীবন থেকে ছুটি নিয়ে কয়েক দিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে আসে। কাল ভোর হলেই আবার চাকরিতে হাজিরা দিতে হবে। স্বামী চলে যাবে, মনিকার ইচ্ছে স্বামীকে নীল পাঞ্জাবী গিফট করবে। আগের রাতে রুবেলের সাথে এ নিয়ে মনিকার কথা কাটাকাটিও হয়েছে বেশ অনেকক্ষণ সময়। এতটাকা খরচ করে, শহরে কোলাহল পরিবেশে যাওয়ার দরকার নেই। মনিকা এ উছিলা নিয়েই রুবেলের সাথে ঝগড়া লাগায়। পাশের রুমে মা বাবা বসে বসে গল্প করছে। দু’জনের হৈচৈ শোনে মা গম্ভীর হয়ে বলল,
-তোরা দু’জন কি সারাক্ষণ এমন ঝগড়া করবি? বউমা, তুমিও কি অবুঝ? ছেলেটা কতদিন পরপর বাড়ি আসে, কোথায় তুমি ওর সাথে ভালো ভাবে কথা বলবে, তা না করে শুধু ঝগড়া লাগাও। মা শুনতে পায় মনিকা চুপচাপ রয়েছে। বাবা পাশে বসা। মাকে বলল,
-একটু আধটু দুষ্টুমি করবেই। ওগুলো ঝগড়া না। ওরা যুবক-যুবতী। এখনিতো খুনসুটি করার বয়স। আমাদের মতো বয়স্ক হলে এমন আহ্লাদ আর চাইলেও করতে পারবে না। বাঁধা দিও না ওদের। মায়ের শাসন মনিকা চুপ হয়ে যায়। আর এদিকে বাবার শাসন মা চুপ হয়ে গেল। মা বাবা পরিবারের ভালো মন্দ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেছে। হঠাৎ রুবেল চেঁচিয়ে ওঠে। মা বাবাকে ইশারায় বলল,
-কান পেতে শুনো আমি কিসের জন্য চেঁচামিচি করি। পোলাটাকে একটুও শান্তিতে থাকতে দিবে না। বাবা কিছু বলল না। মুখে হাত দিয়ে মুচকি মুচকি হাসলো। মা রাগান্বিত হয়ে আবার বলে,
-তুমি চুপচাপ থাকো বলেই বউমা এত সাহস পায়। বাবা তবুও চুপচাপ। ঝিম মেরে ওদের কথা শোনার চেষ্টা করছে। হাসি দিয়ে বলে,
-তুমি ওদিকে মন দিও না। ওরা স্বামী স্ত্রী গল্প করুক। আর আমরা স্বামী স্ত্রী এদিকে গল্প করি। বাবার মুখে এমন রসের কথা শোনে মা হতভম্ব হয়ে বলল,
-তোমার লজ্জা শরম কিছুই নাই? আমাদের কি এখন সেই বয়স আছে।
-এইটা তো ঠিকই বুঝলে। ওদের এখন এমন দুষ্টুমি করার বয়স আছে বিধায় ওরা করছে।
রাত নয়টা প্রায়। দু’জনে এখনো সেই ঝগড়া নিয়েই ব্যস্ত। মা বারেবারে খাবারের জন্য ডাকছে। রুবেল মায়ের ডাকে সাড়া দিতে খেতে যেতে চাইলেও মনিকা যেতে দিচ্ছে না। শার্ট ধরে টেনে রাখে। মনিকা বলল,
– যদি কাল শপিং-এ যাও তাহলে ছেড়ে দিবো।
– হ্যাঁ যাবো। এখন ছাড়ো।
দু’জনে খেতে যায়। মা ভাত বেড়ে চেয়ারে বসে আছে। বাবা মায়ের পাশে বসা। রুবেল ও মনিকা পাশাপাশি বসলো। রুবেল ভাত খাচ্ছে। মা হাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে।
-তোর হাতে জমাট বাঁধা রক্ত কিসের? রুবেল খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে মনিকার দিকে তাকালো। মনিকা স্তব্ধ হয়ে শুধু খেয়েই যাচ্ছে। মা বাবা একে অপরের দিকে চোখাচুখি করতেছে। মা বলল,
-দেখো বউমার কাজ দেখো! ছেলেটাকে খুন করে ফেলছে। বাবা ভাত মুখে দিয়ে মনিকার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
-সাব্বাস বউমা, আমার পোলাটাকে আমরা শ্বাসন করতে পারলাম না। তুমিই খুব ভালো মতো শ্বাসন করবে।
মা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সবার দিকেই কয়েকবার করে তাকায়। যার যার মতো খাবার খেয়ে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়ে।
প্রতিদিনের মতো আজও মনিকা সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির যাবতীয় কাজ সেরে গোসল করে রেডি হয়ে আছে। এদিকে রুবেল ঘুমে মগ্ন। কাল খুব ভোরে চলে যাবে বলে সকালে নাস্তার জন্য ডাক দেয়নি। আরাম করে ঘুম পারছে। মা বাবা খাবার খেয়ে যার যার কাজে লেগে পড়ে। মনিকা রুমে গিয়ে রুবেলকে জাগিয়ে তুললো। দু’জনে একত্রে খাবার খেয়ে রেডি হয়ে মার্কেটে যায়। বাহারি রঙের শার্ট, গেঞ্জি, ফতুয়া দেখে মনিকা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে রুবেলকে বলল,
-কোন মার্কেটে নিয়ে এলে আমাকে? পাঞ্জাবি তো দেখছি না।
-বলদ সবে মাত্র ভিতরে ঢুকলে। আরো ভিতরে যাও সব কিছুই পাবে।
দু’জনে মাঝ বরাবর এসে পাঞ্জাবি দেখতে পায়। হরেক রকমের পাঞ্জাবী। কিন্তু নীল রঙের পাঞ্জাবি দেখতে পেল না। মনিকা দোকানীকে জিজ্ঞেস করলো,
-ভাইয়া নীল রঙের পাঞ্জাবি নাই?
দোকানী নীল রঙের কয়েকটা পাঞ্জাবি বের করে দিল। মনিকা পাঞ্জাবি মেলিয়ে রুবেলের গায়ে সেট করছে। কিছুক্ষণ পর একজন ছেলে ও মেয়ে আসে। উনারাও এসে পাঞ্জাবি দেখে। রুবেল তাদের দিকে আড়াল চোখে তাকিয়ে দেখছে। মনিকা দাম জিজ্ঞেস করলো। দোকানী বলল,
-এক দাম ১৩৫০ টাকা হলে নিতে পারবেন। রুবেল দাম কমানোর জন্য অনেক খোসামোদ করছে। এদিকে পাশে দাঁড়ানো ছেলে ও মেয়ে দু’জনে গুনগুন করে কথা বলছে। তারাও দাম জিজ্ঞেস করলো। ওদেরও সেই এক দামই বলে দেয়। মেয়েটি হাসি মুখে ৫০০ টাকা দিতে চাইলো। দোকানী সোজা না বলে দেয়। দোকানী বলল,
-আপা, ৬০০ টাকা দিয়ে ভাইয়ার জন্য ফতুয়া নিয়ে জান। বেশ ভালো মানাবে ভাইয়াকে। ছেলেটিও মেয়েকে বলে, ফতুয়া নিলেই তো হয়। এত টাকা খরচ করে কি লাভ! মেয়েটি মন খারাপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। মেয়েটা বারবার দাম কমানোর কথা বলেই যাচ্ছে। ছেলেটি খানিক চোখ গরম করে বলল,
-যদি আমাদের টাকা থাকতো তাহলে ১৩৫০ টাকা দিয়েই কিনতাম। ফতুয়া কিনি এখন। মেয়েটা দ্বিতীয়বার কিছু বললো না। এতক্ষণ ওদের কথা মনিকা ও রুবেল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলো। মনিকা স্বামীর জন্য পাঞ্জাবি নিল। পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে কিছু সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বলে,
-মনে হয় তোমাকে পাঞ্জাবিতে তেমন ভালো দেখাবে না।
-তুমি যা গিফট করবে সেটাতেই আমাকে ভালো দেখাবে। দু’জনে মার্কেট থেকে বেরিয়ে গাড়ির জন্য রাস্তায় দাঁড়ালো। গাড়ি পাচ্ছে না। মনিকা বলল,
-তুমি গাড়ি দাঁড় করাও আমি আর কিছু জিনিস কিনে নিয়ে আসি। রুবেল গাড়ি দেখছে। মনিকা আবার ভিতরে যায়। প্রায় দশ মিনিট পর মনিকা আসে। গাড়ি করে দু’জনে বাড়িতে এসে পড়ে। সারাদিন ঘুড়াঘুড়ি করে দুজনে বেশ ক্লান্ত। রাতের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। রুবেল পাঞ্জাবিটা বের করতে বললো। মনিকা হকচকিয়ে ওঠে। রুবেল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-হঠাৎ মুখ শুকনো দেখাচ্ছে কেনো? শরীর খারাপ লাগছে? মনিকা উত্তর না দিয়ে পাঞ্জাবির ব্যাগটা নিয়ে এলো। ব্যাগ খুলতেই রুবেল ইতস্তত হয়ে যায়। দেখে ফতুয়া।
-কিনলে পাঞ্জাবি, ফতুয়া এলো কিভাবে? মনিকা মাথা নিচু করে বলল,
-মার্কেটের সেই মেয়েকে পাঞ্জাবি দিয়ে ফতুয়া নিয়ে আসছি।
-নিজের সখ আহ্লাদ মাটি করে অন্যকে খুশি করতে তোমার ভালো লাগে তাইনা?
-ভালো না শুধু, তৃপ্তি পাই আমি। অন্যের মুখে হাসি ফুটাতে আনন্দ লাগে। রুবেল ফতুয়া হাতে নিয়ে বারবার দেখছে। মনিকা আবার বলল,
-তুমি এটা পরো, খুব ভালো মানাবে। রুবেল পরলো, যদিও রুবেলকে ফতুয়াতে বিশ্রি লাগে। তবুও রুবেল হাসি দিয়ে বলল,
-খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আমাকে তাইনা? মনিকা আনমনা হয়ে বসে রইলো। সে বুঝতে পারে ভালো দেখাচ্ছে না। রুবেল বলে,
-নিজের সখ আহ্লাদ মাটি দিয়ে অন্যকে খুশি করেছো এতেই আমি খুশি। এটা পরেই সকালে বেরিয়ে যাবো।