দুই সপ্তাহ হইছে আমার বিয়ে ঠিক হইছে।জামাই দেখতে-শুনতে, গুণে “মাশাল্লাহ” বলার মতই।সেদিন যখন সাব্বিরের সাথে আমার আলাদাভাবে কথা বলতে দিল,তখনই আমি তার ফেসবুক একাউন্টের কথা জিজ্ঞেস করলাম,কারণ ফোনে কথা বলার মত এত ধৈর্য্য আল্লাহ আমারে দেয় নাই,চ্যাটিং এই একমাত্র সুন্দর উপায়। সাব্বির বলল, যাওয়ার সময় দিয়ে যাবে একাউন্টের নাম।
কথাবার্তা শেষে সাব্বির বলল,আমার একাউন্ট নিবেন না?নাকি আপনার একাউন্ট দিবেন আমি রিকুয়েস্ট দিচ্ছি। শেষমেশ আমি আমার একাউন্ট নেম দেওয়ার পর সাব্বির বলছে আপনাকে রিকুয়েস্ট পাঠাইছি। আমিও ওকে বলে হাসি মুখে বিদায় জানালাম। ছেলেটা শান্তশিষ্ট নিশ্চয়ই ভালোও হবে।তাকে মার্ক দেওয়ার কথা বললে আমি ১০০ তে ১১০দিব। আচ্ছা যাইহোক, আমি ফেসবুকে ঢুকে সাব্বিরের আইডি পেলাম না।মনেমনে বললাম লোকটা রিকুয়েস্ট পাঠাবে বলেও পাঠালো না,হতাশ হলাম। সেদিন রাতেই সাব্বির আমার নাম্বারে কল দিয়ে বলল,আপনাকে না রিকুয়েস্ট পাঠাইছি একসেপ্ট করলেন না যে। আমিতো অবাক,কোনো সাব্বির নামের ছেলেই রিকুয়েস্ট দেয়নি।তাহলে একসেপ্ট করার কথা কোত্থেকে আসছে।
আমিঃ- আপনার একাউন্ট এর নাম কি?
সাব্বিরঃ- Exceptional Stylish Boy.
আমিঃ- নাম শুনে দুই মিনিট থতমত খেয়ে চুপ ছিলাম।
সাব্বিরঃ- হ্যালো….অনি শুনছেন?
আমিঃ- হ্যাঁ, শুনেছি স্টাইলিশ বয়।
সাব্বিরঃ- খুশিতে গদগদ হয়ে হাহা করে হাসতেছে।
আমার কাছে তার হাসি এখন সিনবাদের দৈত্যের হাসির মত শুনাচ্ছে, যেমন বিরক্তিকর তেমন ভয়ানক। সে কথা বলতে চাইলেও ঘুম আসতেছে বলে লাইন কেটে দিয়ে ফেসবুকে ঢুকলাম।ঢুকেই দেখি “Exceptional Stylish Boy” দুইবছর আগে আমাকে এসএমএস দিছে “প্লিজ আপু রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেন।” “আচ্ছা রিকুয়েস্ট একসেপ্ট না করলে অন্তত আপনার হাসিমাখা একখানা ছবি আমার ইনবক্সে দেন,আমি সেটা দিয়ে হাজারবছর কাটিয়ে দিব।আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
এরপর গেলাম তার একাউন্ট চেক করতে গিয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি তার এবাউট চেক করতে করতে। woked at student studies at তোমার মন এরকম অন্তত ১৩২প্রকারের কাজকর্ম, পড়াশোনা দেখে আমার রাতের আরামের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।এই এবাউটের যদি ভিডিও করা হতো অন্তত ৮মিনিটের একটা ভিডিও হয়ে যেত। আর টাইমলাইনে ঢুকে দেখি ইয়া আল্লাহ! কি করে রাখছে। “শেয়ার করলে ইমো নাম্বার দিব” টাইপ ক্যাপশন দেওয়া সব মেয়েদের ছবি শেয়ার করে রাখছে। এক্টিভিটিজ চেক করে দেখি “আমিন না বলে যাবেন না” তে “আমিন” কমেন্ট করে দোয়া কামাই করতেছে। এসব কি দেখি আমি!সেদিন সারারাতই আমি কেঁদেছিলাম প্রচুর,নিজের ঘুম না গিয়ে। যাইহোক রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট না করে মেসেজ রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে স্কিনশর্ট একটা দিয়ে বললাম আপনি দুইবছর আগে আমাকে এই এসএমএস দিলেন “ছিঃ”
সাব্বিরঃ- তো কি হইছে? এখন তো আপনি আমার বউ।
আমিঃ-কি হইছে মানে?আপনি তাহলে সব মেয়েকে এরকম এসএমএস দিতেন,আপনার বউ কে বলল?আপনার সাথে বিয়ে হইছে আমার?
সাব্বিরঃ- বউ না হলে কি হইছে? বউ হবেন।আমাকে বুঝাতেই লাগলো কিন্তু কে বুঝে কার কথা। সোজা বাবা-মা কে গিয়ে বললাম, এই ছেলেকে বিয়ে করবোনা।
আব্বুঃ- কয়দিন আগেও তো বললি ছেলে তোর পছন্দ হইছে।এখন আবার কি হইছে?
আমিঃ- কয়দিন আগে হইছে, এখন আর হয়না।
আব্বুঃ-এই শুনো তোমার মেয়ে কি বলে?তার জন্য কি কয়দিন পরপর নতুন জামাই ঠিক করবো?আজকালকার যুগ খারাপ, কার পাল্লায় পড়ছে যাই দেখ।
আমিঃ-কারো পাল্লায় পড়িনি,এই ছেলে ভালো না।
আব্বুঃ-কেন কি করছে খারাপের?
আমিঃ- সাব্বির দুইবছর আগে আমারে এসএমএস এ “ভালোবাসি” বলছে।
আব্বুঃ-তো কি হইছে তুই তো তার বউই,ভালোবাসে দেখেই তো বিয়ে করতেছে তোরে। আব্বুকে কিছুতেই বুঝাতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিলাম পালিয়ে যাব। আর ঠিক তাই করলাম,ফেসবুকে পোস্ট দিলাম,অমুক জায়গার কেউ আছে?আমি আগামীকাল আসতেছি এই জায়গায়।
অনেকেই সাড়া দেওয়াতে রেলস্টেশনে গেলাম,ওমা দেখি সেখানেও সাব্বির।থতমত খেয়ে তাকাই ছিলাম আর ভাবতেছিলাম, কেমনে জানলো? কিছুক্ষণ মাথায় হ্যাং ধরার পর বুঝতে পারলাম সাব্বির তো আমার ফেসবুক ফলোয়ার। বুঝার সাথে সাথেই অজ্ঞান।জ্ঞান ফেরার পরে দেখলাম বউয়ের সাজে আমি স্টেজে।বিয়ের পর সাব্বিরকে বললাম,আমার বাবা তোমার সাথে আমার বিয়ে দিলেও, আমি কিন্তু তোমার ফেসবুক একাউন্টের সাথে আমার ফেসবুক একাউন্টের বিয়ে দিব না।