বাবা যখন মা

বাবা যখন মা

আম্মু যেদিন ছোট্ট আমি টাকে রেখে চলে যায়।সেদিন হয়তো এই ছোট্ট আমি টা বুঝিনা কিছুই।কিন্তু বোঝ হবার পর থেকেই আব্বুকে শুধু জিজ্ঞেস করতাম,আব্বু!আম্মু কোথায়?ও আব্বু,আমার আম্মু কোথায়? আব্বু আমাকে কোন জবাব দিতেন না। আমি মুখ গোমড়া করে গিয়ে বসে থাকতাম।সেদিন বাবার নিশ্চুপ থাকার রহস্য টা না বুঝলেও আজ বুঝি,বাবা কেন আমাকে কিছু বলতেন না এবং চুপ করে থাকতেন।

আম্মু চলে যাবার দিনই আব্বু কঠিন পণ করেন।তিনি আর ২য় বিয়ে করবেন না। আমাকে নিয়েই তিনি বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিবেন।কারণ তিনি মনে করেছেন,২য় মায়ের কাছে আমি অযত্নে বড় হবো।তার ভালবাসা আমি পাবোনা।ধীরে ধীরে তিনি এমন পরিস্থিতি ক্রিয়েট করবেন,যাতে বাবাও এক সময় আমার উপর তিক্ত হয়ে যান। এটা আমার বাবার অভিমত। তাই তিনি আর ২য় বিয়ে করেন নি। এরপর থেকেই শুরু হয় আমাকে নিয়ে আব্বুর জীবন যুদ্ধ। একজন মায়ের এবং একজন বাবার সন্তানের জন্য যা যা করা লাগে,সব কিছু আমার আব্বু নিজের হাতে আমার জন্য করেছেন। কত রাত নাকি আব্বুকে জাগিয়ে রেখেছি। ঘুমোতে দেইনি।দাদীর মুখে শুনেছি। দাদী বলেন,আমি নাকি খুব ভাগ্যবতী।যে আব্বুর মত একজন বাবা পেয়েছি। আমিও দাদীর সাথে একমত।

-জানিস দাদুভাই,তোর বাবা নিজে হাতে তোর পটি-হিসুর কাঁথা ধুয়েছে।

ছেলে মানুষ হয়ে যে ও এসব পারবে বা করবে তা আমি কোন দিন কল্পনাও করিনি। একদিন তোর বাবা তোকে বুকের উপর দাঁড় করিয়েছে আর তুই তোর বাবার মুখের উপর বমি করে দিয়েছিস। আমি তো ভেবেছি তোর বাবা রেগে যাবে।ঘিন্না লাগবে তোর বাবার। আমি তাড়াতাড়ি করে তোকে ওর কাছ থেকে আনতে যাই। আর তোর বাবা কি করছিলো জানিস?

-কি দাদু?
-ও হাসছিলো আর বলছিলো, এইভাবে বাবার মুখের উপর বমি করতে পারলি তুই?পঁচা মেয়ে।

দেখি বাবা মেয়ে দুজনই হাসছিস তোরা। আমি আর কি করবো,গিয়ে তোর বাবার গাল টা পরিষ্কার করে দিলাম। দোকান দূর বলে তোকে রেখে তোর বাবা দোকানেই যেতে চাইতোনা।তাই ওই দোকান ছেড়ে দিয়ে বাসার সাথেই দোকান বানিয়ে নিলো।যাতে তোকে কোলে নিয়েই দোকান করতে পারে।তোকে চোখের সামনে রাখতে পারে। তুই যখন বড় হলি তখন চুল বাধাও শিখেছে তোর বাবা।শুধু মাত্র তোর চুল বাধার জন্য। আমি দাদীকে জড়িয়ে ধরে বললাম,দাদী!আমি আব্বুকে খুব ভালবাসি।খুব বেশি ভালবাসি।

-দেখেছো,বাবা আমাকে কত্ত ভালবাসে।তাইতো আমাকে ছেড়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারেনা।আর আমিও বাবাকে খুব ভালবাসি,তাই আমিও বাবাকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা। কিন্তু আমার আম্মু এত স্বার্থপর ছিলো কেন দাদী? যে এই টুকু আমিকে রেখে তার চলে যেতে হলো।পালিয়ে যেতে হলো। বাবা এসে উত্তর দিলেন,

-আমি যেমন তোকে খুব বেশি ভালবাসি বলে তুই তোর নানা নানুকে ছেড়ে আমার কাছে একেবারে চলে এসেছিস।
তেমনি সৃষ্টিকর্তাও তোর মাকে খুব বেশি ভালবাসেন, তাই তোর মাও তোর জন্মের সময় আমাদের রেখে তার কাছে চলে গেছেন। আমি বাবার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম।

-কেঁদোনা বাবা।আমি আর মায়ের জন্য মন খারাপ করবোনা। কে বলেছে আমার মা নেই? তুমিই আমার মা আর তুমিই যে আমার বাবা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত