আমার হইছে যত জ্বালা। আমার বউ দেখি সারাদিন খালি সেল্ফি তোলে। আর দিনে কম কইরা হইলেও ৩ বার ছবি আপ্লোড দেয়। আর ক্যাপশন দেয় হায় গাইজ মাত্র তুল্লাম, হায় গাইজ ভাত খাচ্ছি, হায় গাইজ মেকাপ করে আসলাম। আর তাতেই হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট। এক এক ছাগল এক এক কমেন্ট করে।
এক ছাগল কমেন্ট করছে ইসস আপনি যদি নাইকা হইতেন তাইলে আপনের পাংখা হইয়া থাকতাম। তো আবার এক রামপাঠা কমেন্ট করছে আপনে আমার গফ হইলে দেশ দুনিয়া সব ঘুরাইতাম। আবার আরেক ছাগলের ৩ নাম্বার বাচ্চা কমেন্ট করছে ক্যাট্রিনার জায়গায় আগামী ছবিতে আমির খানের সাথে আপনাকে চাই। এ কি রকম কথারে ভাই। শেষমেশ নাইকার জায়গায় নিয়া ফালাইলি। এতে তো আরও ফুইল্লা যাইবোগা।
তো অই দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বউ আমার আয়নার সামনে কি জেনো করছে। তো তাকে বললাম কি করছো? সে ঘুরে তাকাতেই আমি লাফ দিয়ে পরে গেলাম খাট থাকে। আমি বললাম এই তুমি সকাল সকাল ভূতের মতো সাজছো কেনো?
বউ: আমার ফ্যানরা আমার ছবির জন্য আপেক্ষা করছে তাই একটু সাজছি। আর তুমি তো জানো আমি এখন সেলেব্রিটি। ইউ নো দেট।
আমি: তাই বলে সাত সকালে আটা-ময়দা-সূজি মেখে ভূতের মত সাজবে?
: এই কি বল্লে তুমি?
: সরি সরি মেকাপ হবে এটা।
(একদিন আমার বউ সাজছিলো বলে তাকে বলছিলাম মুখে আটা ময়দা সূজি মেখে কি মজা পাও। যে আটা ময়দা সূজি মাখো তাতে আমার সকালের নাস্তা হয়ে যাবে। এই কথা বলাতে সে আমাকে একদিন তার মেকাপের পাউডার দিয়ে রুটি বানিয়ে খাইয়েছিলো। তাই তার পর থেকে আর অই মেকাপ কে আটা ময়দা সূজি বলি নাহ।)
: এইবার লাইনে আসছো। শুনো একটা কথা বলি, তুমি তো জানো যে আমার ফ্যান ফলোয়ার তোমার থেকে বেশি, তাই আমি চাচ্ছি তোমার মত গল্প লিখে আরও ফ্যান বারাবো। কি বলো।
: হা হা হা হা।
: হাসছো কেনো?
: গল্প লিখা এত সহজ না। আমি যে টুকটাক গল্প লিখি তাতে মানুষ লাইকের জায়গায় হা হা রিয়েক্ট দেয় আর বলে আরে বোকাসোদা গল্প লিখা বাদ দিয়ে মাঠে গরু চরা। তাতে কাজ দিবে। তোর থোবরার সাথে গল্প যায় নাহ। সালা পাগলের চৈত পরব।
: তোমার যে ফলোয়া আমার ৪ ভাগের ১ ভাগ বুঝলে। আমি যদি গল্প লিখি তাহলে দেখবে আরও তারাতারি ফেমাস হতে পারবো।
: তোমার যা ইচ্ছা তা করো গা। আমি অফিস যাচ্ছি।
অফিস এসে ফেসবুকে লগ ইন করার সময় পাইনি। তাই লাঞ্চের পর একটু লগ ইন করলাম। সাথে সাথে দেখলাম আমার বউয়ের স্টেটাস ” হাই ভন্ডুরা বিকালে তোমাদের জন্য গল্প লিখবো। কি বলো তোমরা হিট হবে তো। ”
ওই স্টেটাসে এক ছাগল লাফাতে লাফাতে কমেন্ট করছে আপু আপনি গল্প দিন সেটা শেয়ার করে ফেমাস করার দ্বায়িত্ব আমার। তো আরেক রামছাগল কমেন্ট করেছে আপনি গল্প দিন আমি বইমেলায় প্রকাশ করে দিবো। বুঝেন ঠেলা কত ধরনের ছাগল আছে দেশে।
তো তার গল্প দেখতে বিকাল ৫ টায় আবার লগ ইন করলাম। যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না রাসেল ভাই। দেখি হেতি আমার পোস্ট করা ৩৩ নাম্বার গল্পটা কপি মেরে দিয়েছে। আর তা আধা ঘন্টায় এক হাজারের উপরে লাইক আর তিনশর উপরে কমেন্ট। কি যে বলবো রাসেল ভাই আমার ওই গল্পে ৫০ টার বেশি হা হা রিয়েক্ট দিয়েছে মানুষ আর ২০ টা কমেন্ট করেছে তার মধ্যে ১৯ টাই ছিলো গালি। কি করলাম গিবনে? আমার সাথে কেন এমনটা হয়? হুয়াই ম্যান হুয়াই?
আফিস থেকে বের হইতে হইতে অনেক দেরি হইয়া গেছিলো। তখন প্রায় রাত ১০ টা বাজে। বাসার সামনে যেতেই দেখি অনেক বড় লাইন। আমি ভাবছি হয়তো বাড়িওলার সাথে দেখা করতে মনে হয় আসছে। তাতে আমার কি আমি তো বাসায় যাবো। তো আমি বাসার গেটের দিকে যাচ্ছি তখন এক লোক আমাকে আটকালো। দেখে তো একটা কবি কবি টাইপ লাগছে।
আমি: কি হইছে ভাই আটকালেন কেন?
কবি: কি হলো এভাবে ভিতরে ডুকছেন কেনো?
: আমার বাড়ি আমি ডুকবো না তো আপনি ডুকবেন?
পিছন থেকে এক বলে উঠলো: ভাই আমিও আপনার মত আমার বাড়ি বলে ডুকতে গেছিলাম। এখন ২ ঘন্টা ধরে লাইনে দারিয়ে আছি।
কবি: এখানে কইরেন না বারাবারি, সরে দারান তারাতারি; নাহলে ডান্ডায় মেখে তেল, ফাটিয়ে দিবো তোমার কদবেল। আরে সালা আমার বাসায় আমাকেই যেতে দিচ্ছে নাহ। পরে লাইনে থাকা আরেক ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম যে ভাই এইখানে এত সিরিয়াল কেনো? ভাই আমনে পারুল আফারে চিনেন নাহ। ফেইসবক ফাইমাস। উনি তো একখান গল্প লিখছে। তাই হের লগে দেহা করতে আইছি। এত লম্বা লাইন তো হের লাইজ্ঞাই। আমনেও লাইনে দারান। অই যে দেহেন নাহ এক বেডায় টিকেট বেচতাছে, অই হানতে টিকেট কিন্না আফার লগে দেহা কইরেন।
পরে দেখি আমার বাসার দারোয়ান বাদাইম্মা সজীবে টিকেট বিক্রি করতাছে। হায়রে আমার চিকা মরা কপাল। না পারতাছি নিজের ঘরে ঢুকতে না পারতাছি শান্তিতে থাকতে। রাত ১২ টা বাজে মানুষ এখনও লাইন ধইরা দেখতে আসছে। আর আমি ফুটপাতে বসে আছি। আপনেরাও আসেন, আপনেরা বাকি থাকবেন কেন?