ভাইয়া প্রেগন্যান্ট

ভাইয়া প্রেগন্যান্ট

আজ আমেরিকা থেকে তিশান ভাইয়া আসছে। তিশান আমার ফুফতুতো ভাই। আমি এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছি আধাঘন্টা যাবত। আরো কিছুক্ষণ পরে তিশান ভাই এলো। আমাকে জড়িয়ে বলল,

“Hey Shimu what করছো there?” আমি ভাবলাম ও ঠাট্টা করছে। আমিও অমন করেই বললাম,
“I am এখানে waiting for you!” তিশান হেসে বলল,
“Shimu your English too good!”
“Thanks!”

ওকে বাসায় নিয়ে এলাম। আমি লক্ষ করলাম ও সবসময় ইংরেজির সাথে বাংলা মিলিয়ে বলে। তো ওকে জিজ্ঞাসা করলাম,

“তুই বাংলা ইংরেজি একসাথে বলিস কেন?”
“You know… Bengali বেশি বোঝে না English.”
“ও… আচ্ছা!”

মুখে ‘ও আচ্ছা’ বললেও বেশ বুঝতে পারছি এর পেছনে নিশ্চয় ভালো রকমের কোনো কারণ আছে। রাতের খাবার শেষ করে আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম,

“আমেরিকায় তুই কি কাজ করতি?”
“যেই কাজই করি i very well salary পাই!” আমার কেন জানি খুব হাসি পেল। হাসিটা চেপে বললাম,
“কাজের কি কোনো নাম নেই?”
“That’s job mine and সেটার any name নেই।”
“এ কেমন কথা?”
“বাদ give! i am now ঘুমাবো। very ঘুম coming!”

আমি তো হেসেই খুন! আমার এমন পাগলের মতো হাসি দেখে ও বলল, “যারা English কম বোঝে they এমন করে smileing!” আমি হাসতে হাসতে বললাম, “Maybe you are right!” আমি হাসতে হাসতে আন্টির কাছে একটা ঘরে শুয়ে পড়লাম। পরেরদিন আন্টি আমাকে বলল, “শিমু তিশানের তো অনেক বয়স হয়ে গেছে। ওর বিয়ে দেওয়া দরকার। একটা মেয়েও দেখেছি। খুবই মিষ্টি। তুই ওকে রাজি করালে আমরা কালকেই ওকে মেয়েটিকে নিয়ে দেখতে যাব। ওর বাবাও আমেরিকা থাকে। গতকালকেই এসেছে।” আমি মনে মনে বললাম,

“তোমার ছেলের যা কথার ধরণ! এ ধরণ দেখলে পেছনে লাথি মেরে বের করে দেবে!” মুখে আন্টিকে আশ্বাস দিয়ে তিশান ভাইয়ের ঘরে এসে দেখি ও জুতা পালিস করছে। আমি হেসে বললাম,
“এতো স্যালারি পাওয়া মানুষ নিজে হাতে জুতা পালিস করছে?”
“You know… Any work ছোট হয় না!” আমি আবারও হেসে বললাম
“হু ঠিক।”

তিশান ভাইকে অনেক পাম দিয়ে আগামীকাল মেয়ে দেখতে যাওয়ায় রাজি করালাম। সকালে উঠে সকলে মিলে গেলাম মেয়ের বাড়ি। আর রাস্তায় গাড়িতে বসে ওকে বড়দের মতো কিছু উপদেশ দিলাম। উপদেশ গুলো ছিল এমন,
“কখনো ওদের সামনে বেশি কথা বলবি না আর বাংলা ইংরেজি মিলে মিশে একাকার করে তো নয়ই! মেয়ের দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকবি না, কিছু দিলে কুত্তার মতো গোগ্রাসে গিলবি না, সালাম দিয়ে কথা বলতে শুরু করবি, মেয়েটির সাথে তোকে অবশ্যই দু’মিনিট একা কথা বলতে দেওয়া হবে। ভালোভাবে কখা বলবি। আলতু ফালতু কিছু বলবি না। যা জিজ্ঞাসা করার ইচ্ছা হবে করবি তবে ওরা যা বলবে তাই শুনবি। মেয়েটি তোর দিকে তাকিয়ে হাসলে বুঝবি সম্মতির লক্ষণ। তখন তুইও হাসবি!” পৌঁছে গেলাম মেয়ের বাড়ি। বাব্বাহ কি বাড়ি! এ তো রাজমহল। আমি উত্তেজিত হয়ে তিশান ভাইকে শেষ একটা উপদেশ দিলাম, “শোন হাবভাবটা এমন রাখবি যেন তুই কোনো বাদশাহ্! আর মেয়েটির দিকে অনেক্ষণ তাকাবি না। অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকা অসভ্যতামো!”

বাড়িতে ঢুকেই দেখলাম সকলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। লিভিং রুমে বসে সকলে গল্প করতে লাগলাম। মেয়েটিকে এখনো আনা হয়নি তাই মেয়েটির মা মেয়েটিকে আনতে গেল। এতক্ষণ পর্যন্ত তিশান ভাই আমার উপদেশগুলো মেনে চলেছে। এখানে আরো দুই তিনজন মেয়ে আর একজন ছেলে আছে সম্ভবত মেয়েটির ভাই বোন বা বন্ধু। তারা সবাই তিশান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে। বুঝলাম না কারণ কি। মেয়েকে নিয়ে আসা হলো। এখনো তিশান ভাইয়ের দিকে তাকায়নি। কিছুক্ষণ পরে মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি মেয়েটির কানে কিছু বলল। তৎক্ষনাত মেয়েটি তিশান ভাইয়ের দিকে তাকালো। বোঝাই যাচ্ছে অনেক কষ্টে মেয়েটি হাসি আটকাচ্ছে।

তিশান ভাইও আমার কথা মতো রামছাগলের ৪২০ ছানার মতো হাসল। আমি তিশান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। পায়ে জুতা, প্যান্ট, কোর্ট, ঘড়ি, হেয়ারস্টাইল সবই তো ঠিক আছে। তারপর চোখে পড়ল তিশান ভাইয়ের টি-শার্ট! টি-শার্টে বড় বড় করে লেখা “জরিনা, একটা চুম্মা দে না!” আমি বিরক্তে চোখ বন্ধ করে ভাবলাম এই টি-শার্ট সব পন্ড করবে। অনেক্ষণ তিশান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি দেখে তিশান ভাই বলল, “অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকা অসভ্যতামো!” শালা আমার উপদেশ আমাকেই দিচ্ছে! আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। মেয়েটির বাবাও লিভিং রুমে এলো। কিছুক্ষণ তিশান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

“তোমাকে কোথাও দেখেছি!” তিশান ভাইয়া চরম হাসি হেসে বলল,
“কি যে বলেন!”
“এই ছেলে!

তুমি না আমার কটেজের বাইরের মোড়ে জুতা পালিস করো?” আমরা সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম। তিশান ভাই শিশি বাজাতে বাজাতে উঠে বাইরে চলে এলো। মেয়ের বাবার ওমন রাগি চোখ দেখে ওখানে আর বসে থাকার সাহস হয়নি। মেয়েটাকে তো ভাবি বানানো হলোই না সাথে এতো খাবার তবুও একটুকরো মুখে দেওয়ার সুযোগ হলো না। বাইরে এসে ওর টি শার্ট দেখে বললাম, “প্রথমত তুই আমেরিকায় জুতা পালিস করিস। দ্বিতীয়ত তোর এমন টি শার্ট!” তিশান ভাইয়াও হয়তো এখনি লক্ষ করল। দ্রুত টি- শার্ট উপরে তুলল। ওর পেট দেখা যাচ্ছে। আমি চিমটি কেটে বললাম,

“তোর প্রেগন্যান্টের মতো পেট দেখা যাচ্ছে গাধা!” ও আন্টিকে বলল,
“মা look না ছেলেরা কি pregnant হয়? My পেটে বাচ্চা come কি করে?”

বাইরের সব চাকার বড় বড় চোখে ওর দিকে তাকাল। আমি হেসে পরিবেশ শান্ত করার জন্য বললাম, “জোক্স!” সবাই “ও” বলে একটু হাসলো। তিশান ভাই কপালে ভাজ ফেলে বলল, “মা It’s not joks! আমেরিকা যাওয়ার পর থেকে তো my এমন পেট। তারমানে my pregnancy নয় মাস হলো! মা তাহলে তো my baby is coming! সবাইকে sweet খাওয়াও!” আমি অজ্ঞান! মনে মনে বললাম, “ভাই রে আগে বলিস নাই ক্যা? তোরে ঝাল মুরগি খাওয়াইতাম!”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত