একটা কফি ক্যাফে’তে বসে আছি। বেশ অনেক যাবত খেয়াল করছি একটা মেয়ে ইশারায় আমাকে কিছু বলছে। এই নিয়ে তিনবার মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমি সে হাসির কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না। আমি সজীব ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ি। বিকেলে প্রায় এখানে এসে বসি একা আজও তেমন। কিন্তু এরকম আগে হয়নি হলেও আমি অতটা খেয়াল করিনি। আজ মেয়েটাকে দেখে হয়ত নজরে পড়ল। বিশেষ রকম সুন্দরি, মেয়েটার হাসিটা আরো বেশি সুন্দর।
আমার অর্ডার করা কফি আসতে ই সেটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতে ই মনে হল মুখটা পুড়ে গেল বুঝি। মেয়েটার খেয়ালে কফি টা যে খুব গরম তা ভুলে ই গেছি। নাহ, এরকম ঠিক না ভেবে মোবাইল টা পকেট থেকে বের করলাম মোবাইলে মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলাম। এরকম কম বয়সী মেয়েদের থেকে দূরে থাকা ভালো। কখন কি করে বসবে বলা যায় না। বেশি হলে মেয়েটার বয়স পনেরো ষোল হবে। খুব ভালো ভাবে আন্তাজ করলাম কারণ আমি এই বয়সের ২ টা স্টুডেন্ট পড়াই। এসব ভাবতে ভাবতে আমি আমার কফিতে মনযোগ দিলাম।
এক বন্ধুর কল আসল সে দেশের বাইরে থাকে অনেকক্ষণ যাবত তার সাথে কথা বলছি বেশ পুরনো বন্ধু। কথা বলে প্রায় ২০/২৫ মিনিট পর ফোন রাখলাম। হঠাৎ পাশের টেবিলে কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে তাকালাম। দেখলাম সেই টেবিলের একটা গ্লাস পরে গেছে। সেটা দেখে মেয়েটির দিকে তাকাতে ই দেখলাম মেয়েটা আমার দিকে রাগে লাল হয়ে বেগুনি রঙ ধারণ করে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে এরকম তাকানোর কি কারণ…! কারণ খুঁজে পেলাম না। আমি তো ওদের টেবিলে গিয়ে গ্লাস ভাঙ্গিনি তাহলে।
তখন ই প্রেম করা বন্ধুদের কথা মনে পড়ল। ওরা বলে প্রেমিকারা বেশিক্ষণ ফোনে কথা বলা পছন্দ করে না। নানা রকম সন্দেহ করে। এই কথাটা ভেবে কেমন জানি একটা ভালো লাগল। একটা অপরিচিত মেয়ে আমার জন্য এরকম করছে ভাবতে আমি অন্য জগতে ভাসছিলাম। তখন আমিও একটু মুচকি হাসি দিলাম। ব্যাপারটা এখন বেশ স্বাভাবিক লাগছে। যেন এসব হওয়ার ই কথা। আবার ইশারা করছে এখন পুরোপুরি মনে হচ্ছে সে কিছু বলতে চায় আমাকে। এদিকে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আমার টিউশনের সময় হয়ে গেছে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। আমিও ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম আমাকেও এখন উঠতে হবে।
তবে ভেবে খারাপ লাগছিল যে আর মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করব কিভাবে..? নাকি এখানে এলে পাব। তারপর ই শোনলাম, মেয়েটা তার ভাই ভাবীকে বলছে বাচ্চাটার জন্য চিপস কিনে আনবে। হয়ত বাচ্চাটা ভাইয়ের ই হবে। বেশ চালাক তো মেয়েটা। আসলে ই প্রেম করলে মানুষ চালাক হয়ে যায় বা হতে হয়। আমিও ভাবছি,, আহা, হয়ত এমন একটা মেয়ের জন্য ই আমি এত দিন ধরে সিঙ্গেল।তবে আমার তুলনায় মেয়েটার বয়স খুব কম হয়ে যায় আমি মাস্টার্সে। আরে দূরর, এত কি ভাবার আমার মায়ের বেশ পছন্দ হবে তার বউমাকে। ভাবতে ই আরো ভালো লাগল..!
আমি দেরি না করে রেস্টুরেন্ট এর বাইরে গেলাম। মেয়েটাও বেশ হাসি হাসি লজ্জাবরণ মুখ নিয়ে এগিয়ে আসছে। আমার মনে যেন অন্যরকম ঝড় বইছে কোথায় একটা রোমান্টিক একটা গানের লিরিক বাঁজবে তা না। ঝড়ের মত সব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি বলল, আসলে আমি সুযোগ পাচ্ছি না। কাউকে দিয়ে কোনোরকম যোগাযোগও করতে পারছি না। জানেন তো আমার বাবা ভাইয়ারা খুব কড়া একটু এদিক সেদিক যেতে দেন না। তাই এভাবে আপনাকে বলছি কিছু মনে করবেন না। আপনাকে সবসময় আমাদের বাসার ওদিকে যেতে দেখি।
আমি কিছু না বলে শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আহা, আমার জীবনে এভাবে কেউ আসবে ভাবতে পারিনি! আর কিছু না বলে মেয়েটা হুট করে একটা চিঠি আমার হাতে ধরিয়ে দিল। আর বলল, চিঠিটা রিহানকে দিয়ে দিবেন। মানে..? রিহানহ্যা হ্যা, রিহানদের বাসায় আপনাকে দেখেছি আপনি যান ওদের ওখানে। রিহানকে আমার খুব ভালো লাগে কিন্তু কিছু বলতে পারিনা সুযোগ পাই না ঐ যে বাসার অবস্থা। বলে ই মেয়েটা চলে গেল।
একটু পরে ই রিহানেকে পড়াতে যাব। আমার স্টুডেন্ট ইন্টারে পড়ে। আমি থ হয়ে দাড়িয়ে আছি। মনে হচ্ছে আমার হাত পা বরফ হয়ে গেছে। অবশেষে স্টুডেন্টের প্রেমপত্র স্যাররে হাত দিয়ে পাস হবে ! কি ভাগ্য নিয়ে এসেছিলাম আমি সত্যি বলতে হয় আমার কপাল! মনীষী’রা ঠিক বলতেন, অল্প বয়সি মেয়েদের ফাঁদে পরতে নেই। এরা আপনাকে হাতি থেকে পিঁপড়া বানিয়ে দিতে পারে। তাই হল। ” ভালো থাকার একমাত্র কারণ,, প্রেমে পড়া বারণ। “