হাড় কিপ্টে

হাড় কিপ্টে

তোর আর সাফিনের রিলেশনশিপ কতোদিন হলোরে ময়না? নাস্তার টেবিলে আব্বার মুখে সকাল সকাল এই কথা শুনে টাস্কি খেয়ে কিছুক্ষণ হা করে আব্বার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম।তারপর বললাম, এইতো তিন বছর পূর্ণ হলো কাল।

–তো গাধাটা নাকি তোকে আইফোন উপহার দিয়েছে? আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম,হ্যা তাতো দিয়েছে।তবে সেটা চাইনিজ ভার্সন।

–একটা চাইনিজ ভার্সন আইফোনের দাম কতোরে? সেটা জানিনা।তবে দশ হাজারের উপরে হবেনা আব্বা।

–তাহলে তোর ফুপির তিন ভরি স্বর্ণের বাকি টাকাগুলো গেলো কয়? বাকি এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা আমরা আমাদের জয়েন্ট একাউন্টে রেখেছি।আমরা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সেই একাউন্ট খুলেছি। ফুপিকে বলো আমাদের বিয়ে দিতে নাহয় সেই টাকা ফুপি কোনমতে পাবেনা।

–তোর ফুপিতো বলল ওর কলিজা যাবে তাও আমাদের মতো কিপটার সাথে ছেলের বিয়ে দিবেনা।যে মেয়ের পরিবার দশলাখ টাকা যৌতুক দিবে, তোর ফুপি তাদের সাথে আত্মীয়তা করবে। ফুপি এই কথা বলেছে আব্বা? আব্বা মনে হয় বিনা খরচে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে শুনে অনেক খুশি হয়েছে।আব্বার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে তা বুঝতে পারতেছি।আব্বা এমনিতে যে কিপটার কিপটা খরচ করার ভয়ে আমার বড় দুই বোনকে আব্বা নিজ হাতে দুই বুড়া হাবড়ার সাথে বিয়ে দিয়েছে।দুইজনেরই আগে বউ ছিলো।

দুজনেরই বউ মারা যাওয়ার পর কোন খরচ ছাড়াই মাত্র দশজন লোককে ভাত খাওয়ায়ে আপুদের বিয়ে করেছে।নানির কাছে শুনেছি আম্মা একবার আব্বাকে না বলে নানিকে পঞ্চাশ টাকা দাম দিয়ে একজোড়া স্যান্ডেল কিনে দিয়েছিলো।আব্বা সেটা জানার পর আম্মা সহ নানিকে আমাদের ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলো আর পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে সুদ হিসেবে নানির কাছ থেকে একশ টাকা নিয়েছিলো।আব্বা আমার জন্যও এখন আপুদের লেভেলের একজনকে খুঁজতেছে।যে কোন ধরনের দেনাপাওনার হিসাব ছাড়াই আমাকে বিয়ে করবে।

আব্বা একটু চুপ থেকে বলল,তুই আর সাফিন বিয়েটা করেই ভালোই করছিস।তোর আপুদের জন্য যে মেলা টাকা খরচ করেছি আমার জীবনের কামানো অর্ধেক টাকা চলে গেল।এখন তোর বিয়েতে আমার আর খরচ করতে হলোনা। আমি জানি আব্বার একাউন্টে তার চাকরির বেতনের পুরোটা আছে।পাচঁতলা বিল্ডিংয়ের ভাড়াটা দিয়ে আমি মা আর বাবার হয়ে যায়।আব্বাকে বললাম, বিয়ে এখনো করিনি।ফুপি কে বলছি,তুমি পাঁচশ মানুষকে খাওয়াবে।আর পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দিবে। আব্বা বুকে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লেন। পাঁচশ জন লোককে খাওয়াতে কত খরচ হবেরে? আমি একটু বাড়িয়ে বললাম,খুব কম আব্বা,মাত্র দশ লাখ যাবে।

–আমার ফোনটা নিয়ে আয়তো।

আম্মা এতোক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিল, এবার গিয়ে ফোন এনে আব্বার হাতে দিল।আব্বা ফুপিকে ইমোতে ভিডিও কল দিয়ে যা অভিনয় শুরু করলেন, আমি আমার বুদ্ধি হওয়ার পর সিনেমা জগতের কাউকেও এমন নিখুঁত অভিনয় করতে দেখেনি।অস্কার কতৃপক্ষের চোখে পড়লে আব্বা নিশ্চয় অস্কার পেয়ে যেতেন।আব্বা ফোনটা আমার হাতে দিয়ে ফ্লোরে লম্বা হয়ে শুইয়ে মুখটা কেমন জানি বাঁকা করে ফেললেন। তারপর মুখ দিয়ে লালা ঝরাতে ঝরাতে আমার ফুপির নাম ঝপতে থাকলেন। ফুপির বাসা আর আমাদের বাসার দূরত্ব বেশি নয়।দশ মিনিটের রাস্তা। ফুপি তার ছেলে সন্তান নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে আমাদের বাসায় হাজির।আব্বা এমন কঠিন অসুখ নিয়ে বুক চেপে ধরে ফ্লোর থেকে হেটে খাটে ওঠে শুইয়ে পড়লেন।এখান থেকে ফুপির বুঝা উচিত ছিলো,কিন্তু বুঝেনি।

ফুপি কাঁদতে কাঁদতে আব্বার হাত ধরে বললেন, আমি জানি ভাই ছোটবেলা থেকে তোর কিছু হলে আশেপাশে এতো লোকজন থাকার পরো তুই আমাকে খুঁজিস।আমি তোর মেয়েকে সাফিনের সাথে বিয়ে দিয়ে তোকে আমার বাড়ি নিয়ে যাবো।ভাই আমার কথা বল।আব্বা দেখলাম গোঙানি শুরু করে দিলো।আর ফুপিও সেটা সত্যি মনে করে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো।আর আমি থঁ হয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার হাড় কিপ্টে বাপের অভিনয় দেখছি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত