নোয়াখালীর মেয়ে

নোয়াখালীর মেয়ে

বৌ আমার নোয়াখালীর। সে কী বলে কিচ্ছু বুঝি না। এ কারণে বলেছিলাম বুঝা যায় এমন কিছু বলতে পারলে বলো। না পারলে শুনে শুনে শিখো। এরপর থেকে তাঁর অবস্থা এমন হয়ে গেছে।

“ নাশতা রান্না করছো? ”

“ হুঁউ! ”

“ ঝাল হইছে? ”

“ হুঁউ! ”

“ ঝাল হয় নাই? ”

“ হুঁউ! ” গামছা রেখে বললাম, “ গোসল করে খাবো না এখনই? ”

“ হুঁউ! ”

ভাবলাম মুখে কোনো কিছু আছে। তাঁর আবার পান খাবারও অভ্যেস আছে। খাবারের টেবিলে বসে দেখি রুটি ছাড়া আর কিছু নাই! সে সামনে দাঁড়িয়ে এমন ভাবে তাঁকালো। যেন মনে হচ্ছে জিজ্ঞেস করছে, খাচ্ছি না কেনো? বললাম, “ আলু ভর্তা করার না কথা ছিলো, করো নাই? ”

“ হুঁউ! ” টেবিলের মধ্যে সবকটি বাসন ভালো করে উতালপাতাল করে করে দেখলাম। কোথাও আলু ভর্তার নামও নেই!

“ ভুলে গেছো আলু ভর্তা করতে? ”

“ হুঁউ! ”

“ পান খেতেও ভুলে গেছো? ”

“ হুঁউ! ”

স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তাঁর ঠোঁট ও দাঁত লাল! তারপরেও বলছে পান খেতে ভুলে গেছে! মানুষ মাত্রই ভুল। কোনো ব্যাপার না। শুধু রুটিই খাই। এমনিতে আমি টেবিলে বসার সাথে সাথে সেও সামনে বসে। আজকে বসলো না, “ কী হলো? খাবে না? ”

“ হুঁউ! ”

“ তো বসছো না কেনো? ”

সে বসে আর কথা বলছে না। দুটো রুটি তাঁর বাসনে দিলাম। সে উল্টে আমার বাসনে দিয়ে দিলো। ভাবলাম একই বাসনে খেতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি একটা রুটি খেয়ে ফেলেছি এর ভিতরে সে রুটি স্পর্শও করলো না!

“ খেয়ে নিছো নাকি? ”

“ হুঁউ! ” সে পান খাওয়াকেই নাশতা করে ফেলেছে বললো, না আসলেই করেছে। আমার বোধগম্য হলো না।

“ সারাদিন মুখে পান রাখতে হয়? ”

“ হুঁউ! ”

ঘরের বিছানা থেকে শুরু করে, দেয়ালে টানানো ছবি। সব জায়গায় ধুলো ময়লা জমে গেছে। একদিন ছুটি পেয়েছি বিধায় ভাবলাম দুজনে সারা ঘর পরিস্কার করে ফেলবো। সেও কদিন ধরে বলছিলো।

“ তোমার ছেলে কই? আজকে কী টিফিন খেতে বাড়িতে আসবে? নাকি নিয়ে গেছে? ”

“ হুঁউ! ” বিরক্ত হয়ে বললাম, “ আরে বাবা, কী হুঁউ? সে টিফিন নিছে? নাকি নেয় নাই? ”

“ হুঁউ! ”

“ধ্যাত্তেরি, মুখ থেকে পান ফেলে পরিস্কার করে আসো। ” সে গিয়ে মুখ থেকে পান ফেলে আসলো।

“ ম্যাডাম, এবার একটু বলবেন আপনার ছেলে কী দুপুরে বাড়িতে খেতে আসবে? নাকি টিফিন নিয়ে গেছে? ”

“ হুঁউ! ” মেজাজের অবস্থা ভারি বর্ষার মতো হয়ে যাচ্ছে!

“ বোবা হয়ে গেছো? হুঁউ ছাড়া কিচ্ছু বলতে পারো না? ”

“ হুঁউ! ”

“ তো বলো না কেনো? ”

“ হুঁউ! ”

এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। সঙ্গে আমাকেও পাগল বানাতে চাচ্ছে। আমি তাঁকে এড়িয়ে চলবো! একা একাই চাদর, বিছানা এসব বাহিরে রেখে পরিস্কার করছি। সেও সঙ্গে সঙ্গে করছে। আমি আবার চুপ থাকতে পারি না। কারো সাথে কথা বলতেই হয়। এমন হয়েছে অনেকবার। যার ছবি আঁকতে বসেছি। তাঁর সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ দেখি সে নাই! তারপর সপ্তাহ খানেক পরে তাঁর সাথে গেটে দেখা হয় আর আঁকানো ছবিটা চায়।

“ তুমি কী আজকে কথা বলবে না শপথ করছো? ”

“ হুঁউ! ”

“ আমার অপরাধ কী? লক্ষ্মী ছেলের মতো তোমাকে সাহায্য করছি! তাও কথা বলবে না? ”

“ হুঁউ! ”

“ তোমার কী শরীর খারাপ? ”

“ হুঁউ! ” কথাটা বলার পরে তাঁর কপালে হাত লাগিয়ে দেখলাম। শরীর একদম স্বাভাবিক।

“ জ্বর-ট্বর দেখি নাই! ”

“ হুঁউ! ”

এর মাঝে ছেলেটা এসে হাজির। সে দৌড়ে এসেই মাকে বললো ভাত বেরে দিতে জলদি। হাত মুখ ধুয়ে আসছে। সে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলে এসে বললো, “ ভাত কই? ডিম ভাজী করো নাই? ”

“ হুঁউ! ”

“ কই তাহলে? নিয়ে আসো না৷ ক্ষিধায় মরে যাচ্ছি তো! ”

“ হুঁউ! ”

সে এই কথা বলে দাঁড়িয়েই থাকলো। ছেলে চিৎকার দিয়ে বললো, “ আম্মাআআআআ কানে শুনো না নাকি? ক্ষিধা লাগছে। ভাত নিয়ে আসো। ”

“ হুঁউ! ”

সে আবার এই কথা বলে দাঁড়িয়েই থাকলো। ছেলে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো তাঁর আম্মার হইছে টা কী? এখন আমি নিজেই যে প্রশ্নের উত্তর জানি না। ছেলেকে কীভাবে বলি? বলে দিলাম, “ সে ডায়েট করছে। কথা কম বলার ডায়েট। যেন বেশি দিন বাঁচে! ” ছেলে আমার সেটা বিশ্বাস করে চলে যাচ্ছে! জিজ্ঞেস করলাম খাওয়া লাগবে না? সে উত্তর দিলো না। মনে হয় মায়ের মতো হাজার বছর বাঁচার জন্য সেও ডায়েট শুরু করে দিয়েছে! বিষয়টা এখন কঠিন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে! ছেলে সকালে রুটি খেয়ে স্কুলে গেছে। দুপুরে কিছু না খেয়েই চলে গেলো। এই মুহূর্তে আমার কাছে মনে হলো। কেনো সে ভাত আর ডিম ভাজি রান্না করেনি তা জানা খুবই জরুরী। সে হাতে হুইল পাউডার নিয়ে এসেছে। আমি হাত থেকে তা নিয়ে বললাম।

“ এদিকে তাকাও। ”

“ হুঁউ! ”

“ বাড়ির মালিক যে না খেয়ে চলে গেছে। তা দেখতে পেয়েছেন? ”

“ হুঁউ! ”

“ কারণ টা কী জানতে পারি? ”

“ হুঁউ! ”

“ কী কারণ? ”

সে আমাকে রজনীগন্ধা ফুল দেখাচ্ছে! কারণ জানতে চাওয়ার পরে সে রজনীগন্ধা ফুল দেখানোর কারণটা কী? ভাবতেই মনে হলো। রাতে এই জায়গাটায় দাঁড়িয়েই বলেছিলাম। বুঝা যায় এমন কিছু পারলে বলতে। না পারলে শুনে শুনে শিখতে। মাথায় হাত দিয়ে আমি ভাবছি। এগারো বছরের সংসার আমার সাথে তাঁর। তবুও সে নিজ অঞ্চলের ভাষাটা ছেড়ে৷ আমাদের অঞ্চলের ভাষাটা আয়ত্ত করতে পারেনি! এদিকে বাড়ির পিছনে ধান রোদে শুকানোর জন্য দেয়া ছিলো। সব মুরগীবাহিনী মিলে সাফাই করে দিচ্ছে। তাঁর সেদিকে খেয়ালই নেই!

এভাবে চলতে থাকলে আমার সংসার আকাশে উঠবে! সুন্দর করে তাঁর হাতটা ধরে বললাম, “ বোনরে ‘ আই অ্যাম স্যরি ’ মাফ করে দে আমাকে। তবুও তুই কথা বল। একটু চারপাশে ধ্যান দে! ” সে অস্কার জয়ীর মতো হেসে বললো, “ হুত নষ্ট আঁডে, বো নষ্ট ঘাঁটে পুকুর নষ্ট হেঁনায়, বাঁদি নষ্ট তেঁনায়! ” দীর্ঘশ্বাস ফেললাম! গুগল মামার সম্মুখীন হতে হলো আবার। সে আমাকে নষ্ট ছেলে বললো, না নষ্ট পুকুর বললো কিছুই তো বুঝলাম না!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত