৫ মিনিট যাবত ছাত্রিকে দাড়িয়ে রেখেছি অপরাধ,পড়া করেনি।একদিন নয়,দুদিনও নয়, চারদিন আজকে নিয়ে। প্রথমে হাসি হাসি মুখ করে দাড়ালেও তার সুন্দর মুখ টায় এখন গোলাপি আভা দেখা দিচ্ছে, বুঝা যাচ্ছে রেগে যাচ্ছে। ঝড়ের আভাস দেখা দেবার আগেই বললাম বসো। পুরো পড়া মুখ থমথম করে বসে রইল,তারপর বুঝাতে চেষ্টা করলাম দেখ, আমি তোমাকে সাহায্য করতে আসছি,এতদিন পড়া করনি শাস্তি না দিলে কি স্যার স্যার লাগে বল? তার মুখের রং ফিরে আসল সুন্দর করে বলল,
-স্যার(একটু করে টান দিয়ে) আমি কি নারী না শিশু? আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম এই প্রশ্নে যদিও সে ক্লাস টেনে পড়ে, কিন্তু দেখতে ভালোই বড় লাগে, আমি ঘুড়িয়ে উত্তর দিলাম, ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু।
-কেন,হঠাৎ এই প্রশ্ন? সেঃনা, এই যে বইয়ের পিছনে লেখা তো নারী শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে কল দিন ১০৯ নাম্বারে আমি হেসে বললাম,তোমাকে কে নির্যাতন করবে? আমি যতদূর জানি তোমার বাবা-মা তোমাকে অতি আদরে রাখে।
ছাত্রী -নাহ, দাড়া করিয়ে রাখাও তো নির্যাতন তাই না? আমি রীতিমতো হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। কি শুনলাম এটা!
৩০ দিন আগের কথা। রিটেকে রিটেকে জীবন যখন বিপর্যস্ত,বন্ধুরা সবাই পাশ করে ভার্সিটি থেকে বিদায় নিবে আর আমি! কিছু ভালো লাগতেছিল না, বাসায় ও যেতে চাইলাম না। একটা বাসা ভাড়া নিলাম ৩ মাসের জন্য, উদ্দেশ্য একা থাকব কিছুদিন। পরদিনই বাড়িওয়ালা এসে আবদার করল তার মেয়েটা নাকি একদম পড়ে না,আমি যেন যে’কদিন আছি একটু দেখিয়ে দেই। তারপর এই ঘটনা। এই এক মাসেও কম ঘটায়নি ঘটনা। আমি আগে সেই দুধ,চিনি দিয়ে কফি খেতাম একদিন আন্টি(বাড়িওয়ালি) কফি দিছে, ব্লাক কফি আমি মুখে দিলাম সাথে সাথেই মনে হল, ও আল্লাহ এডা কি আল্লাহ! এমন ফালতু! আমি ছাত্রিকে বললাম,আন্টি মনে হয় চিনি দিতে ভুলে গেছে,
সে-না স্যার। আমিই বলেছি,স্যার ব্লাক কফি পছন্দ করে, তাই দিছে। আমি অবাক হয়ে কেন?
-ব্লাক কফি শরীরের জন্য ভালো স্যার (তার ঠোটে মুচকি হাসি)।
আজকে না জানি কি হয় এইটা ভাবতে ভাবতে আয়াতুল কুরছি পরে বুকে থুথু দিয়ে কলিং বেল চাপ দিলাম, দরজা খুলতেই আমার মনে হল স্বর্গীয় কোন অপ্সরার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, তার পড়নে, নীল শাড়ি,চুল খোলা(এর আগে কখনো তার চুল দেখিনি) আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম(হবার ই কথা, আমি বিলো এভারেজ কোয়ালিটির এক ছেলে, যাদের কাছে সুন্দরী মেয়েরা না কাছে আসে, না পাত্তা দেয়, আমিও মেইন টেইন করে চলি যে এ আমার আয়ত্তের বাহিরে) ভিতরে বসে আছি,সে রুমে নাই, বাসায় সে ছাড়া কেউ নেই। সে কফি নিয়ে আসল,
-নিন, আজকে আমি বানিয়ে এনেছি,খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে আমি তার দিকে হা করে তাকালাম, কি ঘটছে আমি বুঝতেছি না। সময় থেমে গেছে মনে হচ্ছে, ঘড়ির কাটার শব্দ পাচ্ছি।সে আমার সামনে বসা, মাত্র ফুট খানেক দূরে হবে, মনে হচ্ছে তার হার্টবিট ও টের পাচ্ছি আমি,থাকতে পারছি না বসে কিছুতেই, চেয়ারটা টেনে দূরে সড়িয়ে নিলাম একটু। স্যার একটা গল্প বলেন,
-কি বল পড়বা না?
-বলেন না, প্লিজ। কাল থেকে সব ঠিকমতো করব প্রমিজ
সে গালে হাত দিয়ে অধীর আগ্রহে আমার দিকে তার ওই দুই চোখ দিয়ে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে, গল্পের অপেক্ষা। আমি রোবটের মত বলতে শুরু করলাম, অর্ফিয়াস নামে একজন গ্রিক সংগীত শিল্পী ছিল,তার বাজনা আর গান এতই মধুর ছিল যে পাথর ও আকর্ষিত হত।দেব-দেবীরাও তার গান শুনে মুগ্ধ হত। তো তার প্রেমে এ পড়ে স্বর্গের এক পরী নাম ইউরাডিস। তারা দুজনে একে অপরের গভীর প্রেমে পরে। কিন্তু সুখ বেশিদিন সইল না অর্ফিয়াসের,একদিন এক সাপ ইউরাডিসকে দংশন করল। আমি তার দিকে তাকালাম সে গভীর আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল তারপর? তারপর ইউরাডিসকে মৃত্যুপুরিতে নিয়ে গেল হেডিস। অর্ফিয়াস এত সহজে মেনে নিতে পারল না ইউরাডিসের আকস্মিক মৃত্যু।
অর্ফিয়াস মৃতু্যপুরীতে চলে গেল।সে গান গেয়ে হেডিসের মন গলিয়ে ফেলল, সে ইউরাডিস কে আরো কিছুদিনের জন্য পৃথিবীতে নিয়ে যেতে চাইল। হেডিস রাজি হল,কিন্তু একটা শর্ত দিল তুমি যাও পৃথিবিতে, তোমার সাথে ইউরিডাস ও যাবে কিন্তু যতক্ষন না তোমাদের গায়ে সূর্যের আলো স্পর্শ করবে তুমি ইউরাডিসের দিকে তাকাতে পারবে না। অর্ফিয়াস খুশি মনে পৃথিবীতে ফিরতে শুরু করল,কিন্তু তার ভয় হচ্ছিল যে হেডিস তাকে ধোকা দিচ্ছে।তার সাথে ইউরাডিস নেই। তো যখনই তার গায়ে সূর্যের রশ্নি স্পর্শ করল সে পিছনে ফিরে তাকালো এইটুকু বলে থামলাম জ্যোতি-তারপর?
-তারপর নাহয় নাই শুনলে,
ঃকি বলেন এরপরে না শুনলে আমি থাকতে পারব না।
-অর্ফিয়াসের পিছনেই ছিল ছায়ার মত করে ইউরাডিস,কিন্তু তখনো ইউরাডিসের গায়ে সূর্যের রশ্নি স্পর্শ করে নি,
সে- তাহলে?
-তাহলে চিরকালের জন্য ইউরাডিস মৃত্যুপুরীতে রয়ে গেল।
৬ মাস পরের কথা রাত ১২ টা বাড়িটার ৫ তলার জানালায় তাকিয়ে আছি। হাতে একটা সিগারেট। সেদিনই বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলাম আমি। আর কখনো দেখা-কথা হয়নি তার সাথে। বাতি নিভে গেল আমি হাটা ধরলাম, ভাবতেছি আচ্ছা সে কি আর কারো সামনে যাবে কখনও, নীল শাড়ি পড়ে,চুল খুলে? ঐ দিনের মত?