নিলয় বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো। শায়নী তার বান্ধবীকে নিয়ে যাচ্ছিলো সেই পথে, নিলয়কে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। বান্ধবীকে দাঁড়াতে বলে ওর ব্যাগ তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিলয়দের দিকে এগিয়ে যায়। হুট করে শায়নীকে দেখে নিলয় চুপ হয়ে যায়, ওর মুখের হাসি কিছুটা ম্লান হয়ে যায়। এভাবে শায়নীকে দেখে ওর বন্ধুরাও অবাক হয়, দুই একজন শায়নীকে চিনতো তারা প্রশ্ন করে, ” কেমন আছেন? ” শায়নী উত্তর না দিয়ে নিলয়ের চোখের দিকে চোখ রেখে বলে,
– চশমাটা একটু খোলো তো?
– কেনো?
– খুলতে বলেছি খোলো!
(নিলয় চশমা খুলে হাতের মধ্যে রাখে, শায়নী সেটা নিজের হাতে নেয়। তারপর সজোরে নিলয়ের গালে কষে থাপ্পড় দেয়। নিলয় গালে হাত দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখে। কষিয়ে মাংস খেতে ভাল লাগলেও, কষিয়ে থাপ্পড় খেতে কারোরই ভাল লাগে না। নিলয়ের বন্ধুরা হতবাক হয়ে যায়। যারা শায়নীকে চেনে না তারা রেগে গিয়ে তেড়ে আসতে চায়, নিলয় হাত দিয়ে আটকায়। আর যারা চেনে তারা একটু পিছনে সরে যায়। শায়নী রাগে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে, নিলয়ের হাতে চশমা ধরিয়ে দিয়ে ওর বন্ধুদের দিকে একবার দেখে ফিরে চলে আসে। শায়নীর বান্ধবী এই রূপ দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে চুপ থাকে। শায়নী কিছু না বলেই বান্ধবীর কাছে রেখে যাওয়া নিজের ব্যাগ নিয়ে হাঁটা শুরু করে, বান্ধবীও পিছু পিছু হাঁটে।
– কি রে নিলয়, মেয়েটা তোকে থাপ্পড় দিয়ে চলে গেলো, কিছু বললি না, আমাদেরও বলতে দিলি না।
– ও যেটা করেছে, ওটা ওর অধিকার ছিলো।
– হুট করে কাউকে থাপ্পড় দেয়া কারো অধিকার কি করে হয়?
– এমন অনেক অধিকার থাকে যেগুলো তিক্ত অভিজ্ঞতা দেয়।
– বুঝলাম না।
– বাদ দে, আমি কিছু মনে করি নি! যেটা করেছে ঠিকই করেছে, কারো অনুভূতি নিয়ে খেলার অধিকার কারো নেই।
– তুই নিলয়কে এভাবে থাপ্পড় মারলি যে!
– একদিন বলেছিলাম না? আমি ওকে সবার সামনে থাপ্পড় মারলেও ওর কিছু বলার সাহস হবে না।
– তাই বলে ভাবিনি সত্যিই এটা করবি!
– আমিও তো ভাবিনি সে আমার অনুভূতি নিয়ে খেলবে!
– আমি আর কি বলবো, যা ভাল বুঝিস!
.
নিলয় আর শায়নীর মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক ছিলো, তাও চার বছর আগে। শায়নী সম্পর্কে যেতে চায় নি, কিন্তু নিলয় তাকে নানাভাবে আস্বস্ত করেছিলো বলে শায়নী সম্পর্কে যেতে রাজি হয়। কিন্তু একবছর পরেই নিলয় বদলে যায়, শায়নীকে জানিয়ে দেয় তার সাথে আর সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবে না। শায়নীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সে নানাভাবে নিলয়কে বোঝায় কিন্তু নিলয় কিছুই শোনে না। অবশেষে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। তারপর নিলয় আর শায়নীর সেভাবে দেখা হতো না, এই চলার পথে টুকটাক আলাপ হতো। এরপর একসময় কথায় কথায় বন্ধুদের আড্ডায় শায়নী বলেছিলো, নিলয়কে যদি সে সবার সামনে রাস্তায় থাপ্পড় মারে তাও নিলয়ের কিছু বলার থাকবে না। নিলয় শায়নীর প্রতি কিছুটা হলেও দুর্বল ছিলো। আর আজ শায়নী রাগ নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে আর তার কথা রাখতেই সবার সামনে থাপ্পড় মারে নিলয়কে।
কেটে গেছে আরো দুই বছর, নিলয় বসে আছে শায়নীর সামনে। নিলয় একটা বড় কোম্পানির ম্যানেজার এখন, আর শায়নী ব্যাংকার। নিলয়ের পরিবার শায়নীকে দেখতে এসেছে, মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে। যদিও ছেলে মেয়ে দুইজন দুজনকে আগে থেকেই চিনে তাও ফর্মালিটি হিসেবে তাদের আলাদা ঘরে দেয়া হয় কথা বলতে। অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকায় শায়নী কথা শুরু করে,
– সেদিন থাপ্পড়টা কি খুব লেগেছিল?
– (নিলয় গালে হাত দিয়ে মুচকি হাসে) একটু বেশিই।
– হুম, সরি।
– সরি বলতে হবে না, তোমার অধিকার আছে।
– তো এত বড় চাকরি পেয়েছো, আমাকেই কেন বিয়ে করতে এলে? আমার থেকে ভাল সুন্দরী মেয়ে পেতে।
– পেতাম তবে তোমার মতো করে ভালবাসা পেতাম না, আবার সেভাবে ভালবাসতেও পারতাম না।
– সব চাপাবাজী!
– তোমার দিব্যি!
– থাক হয়েছে হয়েছে, বিয়ের আগে এভাবে এত কথা বললে মানুষ মন্দ ভাববে।
– সে ভাবলে ভাববে, আমার কি? অতঃপর শুভ দিন দেখে নিলয় আর শায়নীর শুভ পরিণয় সম্পন্ন হলো। এ ভালবাসায় আলাদা মাধুর্য আছে, যদিও মাঝে কিছু তিক্ততা ছিলো।