হার্টের রোগি

হার্টের রোগি

_আমি হার্টের রোগি।কোন মেয়ে ভাইয়া বলে ডাকলে বুকের বা’পাশে চিন চিন ব্যাথা হয়।ভাইয়া ডাকে আমার এলার্জি।
-ওই হ্যালো।শুনছেন?

মুখ ফিরে তাকালাম দুধে আলতা গায়ের রং।চোখের কোণে কাজল টেনে দেওয়া।হালকা বাতাসে চুল গুলা উড়ছে।
ওয়াও কি সুন্দর দেখতে মেয়েটাকে। এক মুহূর্তেই প্রেমে পরে গেলাম মেয়েটার।চোখের কোণে আমার কান্নার জল গুলো চিকচিক করছে।এটা কষ্টের কান্না না, আনন্দের কান্না।

-জ্বি বলুন।
-এখানে মাধবীলতার বাসাটা কোথায়।
-এই তো ডানে গিয়ে বামে একটা মোর পাবেন সেখানেই তার বাসা।ড্রপ করে দিবো।এতো দূরের রাস্তা আর দিন কালও খারাপ কিডনাপও হতে পারেন।
-না থাক।
-আচ্ছা তাহলে রিক্সার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।হেঁটে গেলে রাতে পা ব্যাথা করবে।ব্যাথা করলেও সমস্যা নেই মলম কিনে দিবো।

-লাগবে না ভাইয়া।ধন্যবাদ হেল্প করার জন্য। বুকের ভেতর কেমন যেন একটা ব্যাথা হচ্ছে।বুকের উপর হাত চেপে ধরে বললাম।
-প্লীজ ভাইয়া বলে কষ্ট দেবেন না।আমি হার্টের রোগি।
-ভাইয়া আপনার কি হয়ে এমন করছেন কেন? আপনার কি শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া? কথা বলুন ভাইয়া।
-আর ভাইয়া বলিস না রে।বুকের ভেতরের ব্যাথাটা বেরে যাচ্ছে।আর মনে হয় বাঁচবো না।খুব বেশি ব্যাথা হচ্ছে।
-ভাইয়া আপনি বসুন আমি পানি আনতাছি।আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকুন।

ভাইয়া শব্দটা গিয়ে একদম বুকের ভেতরে আঘাত করেছে।ক্রাশের মুখ থেকে ভাইয়া ডাক শোনার থেকে ইঁদুর মারা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করা অনেক ভালো।ধাপস করে মাটির উপর অজ্ঞান হয়ে পরে গেলাম।মেয়েটা ভয়ে ঘামতে শুরু করেছে।একটা সাধারণ ঘটনার জন্যও আজ কাল মামলা হয়।রিক্সায় করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো আমাকে।আমি এখন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছি। নার্সরা ধরাধরি করে অপারেশন থ্রিয়েটারে নিয়ে গেলো।শুয়ে দিয়ে মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগিয়ে দিয়েছে।নার্সরা দৌড়াদৌড়ি করছে।একটা নার্সকে মেয়েটা বলে কিন্তু সে প্রায় কান্না করার মতো অবস্থা।

-এখন কেমন আছে।অনার কি জ্ঞান ফিরেছে।
-রোগির অবস্থা একদমি খারাপ যে কোন সময় আবার হার্টএর্টাক করে মারা যেতে পারে।

নার্সটা আবারও তারাহুর করে থ্রিয়েটারে ঢুকে গেলো।বুকের উপর চাপ দিচ্ছে হৃদপিন্ড পাম্প করার জন্য।ডাক্তার মেয়েটা চেম্বারে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।ডাক্তার শান্তনা দিয়ে বলে।

-কাঁদবেন না।সব ঠিক হয়ে যাবে।ছেলেটার নাম সোহান, হার্টের রোগি।এর আগেও এসেছিলো চেকআপ করাতে। কাঁদতে কাঁদতে বলে।

-সব আমার দোষ।আমিই তাকে ভাইয়া বলে ডেকে ছিলাম হুহু।
-ও মাই গড।আপনি এটা কি করেছেন? হার্টের রোগিকে ভাইয়া শিট। ডাক্তার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে অপারেশন থ্রিয়েটারে।মেয়েটা ভয় পেয়ে বলে।

-কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।
-আমার কাছে এখন মাত্র একটাই উপায় আছে ছেলেটাকে বাঁচানোর। মেয়েটার চোখে মুখে যেন হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো।চোখের জল মুছে বলে।

-কি উপায়।
-জান বলে ডাকলে হয়তো সে বেঁচে যেতে পারে।তারাতারি করুন রোগির অবস্থা খারাপের থেকেও খারাপ হচ্ছে।আপনি কি চাচ্ছেন আপনার জন্য একটা নিরীহ ছেলে মারা যাক?
-না আমি পারবো না এটা করতে।আমার বয়ফ্রেন্ড থাকতে অচেনা একটা ছেলেকে কেন জান বলে ডাকবো?
-প্লীজ আপনার এক্স বয়ফ্রেন্ডের কসম প্লীজ।শুধু একবার বললেই তো জীবনটা বেঁচে যাচ্ছে।আল্লাহ আপনার ভালা করবো। মেয়েটা একটু একটু করে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল।

-জান উঠো। না এখনো জ্ঞান ফিরলো না।আরো অবস্থা খারাপ হতে লাগলো রোগির।এরকম হতে থাকলে আর বাঁচানো যাবে না, কিছু একটা করতেই হবে।ডাক্তার চোখ মুখ কুঁচকে বলে।

-এটাই শেষ চেষ্টা।এবার আপনাকে আরো কষ্টদায় একটা কাজ করতে হবে।পারবেন কি?
-প্লীজ বাঁচিয়ে দিন জীবনে আর কাউকে ভাইয়া বলে ডাকবো না।প্লীজ ডাক্তার।

-আই লাভ ইউ সোহান বলে দিন।এর থেকে বড় কম্পানির ঔষধ পৃথিবীতে আর দুইটাও নাই আমি শিওর। কালো মেঘের মতো মুখে হতাশার চিহ্ন।জীবন মরণের প্রশ্ন এবার না বাঁচলে সারা জীবন জেলের শুকনো লোহার মতো রুটি আর ডাল খেতে হবে।কানের কাছে মুখটা নিয়ে চিৎকার করে বলে।

-সোহান আই লাভ ইউউউ! ধরমরিয়ে উঠে বসলাম।মেয়েটা আমাকে দেখে খুশির ঠেলায় কেঁদে দিয়ে বলল।

-সোহান ভাইয়া আপনার হার্টএর্টাক করায় আমি কতটা ভয় পেয়েছি বলে বুঝাতে পারবো না। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেলো।ডাক্তার শেষ বারের মতো বুকের উপর চাপ দিতে লাগলো হার্ট পাম্প করার জন্য চেকআপ করে হতাশা মাখা নিচু কন্ঠে বলে।

-স্যরি আমরা অনাকে বাঁচাতে পারলাম না।সে আর এই পৃথিবীতে নেয়। মেয়েটা ডেট বডি বুকে জোরিয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে “প্লীজ সোহান ভাইয়া উঠুন।আপনাকে আর ভাইয়া বলে ডাকবো না হু..হু।উঠুন না ভাইয়া প্লীজ”।

-চুপ ভাইয়া বলে ডাকবেন না আত্মা কষ্ট পাবে

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত