বাঁধন

বাঁধন

চার মাসের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে মুখ নিচু করে কেবিনের পাশে বসে আছে ইরা। একটু পরপর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছছে। হাসপাতালের এই কেবিনটায় অদ্ভূত একটা নীরবতা। বিছানার ধব ধবে সাদা চাঁদরটা সকালে বিছিয়ে দিয়ে গেছে নার্স। সেটার কোথাও একটুও ভাঁজ না ফেলে খুব সাবধানে শুয়ে আছে রাব্বি। বালিশটা পিঠে হেলান দিয়ে আধ শোয়া হয়েছে সে। খুব বেশী গোছানো স্বভাবের কারণে অনেকেই রাব্বিকে বলে সে নাকি মেয়েলী স্বভাব পেয়েছে।

বিছানার চাদরে সামান্য ভাজ পরলেও ঝাডু মেরে সোজা করে ফেলে। এলোমেলো জিনিস একদম সহ্য করতে পারে না রাব্বি। ইরা কিছু একটা গোছালেও সে নিজে এসে দ্বিতীয়বার হাত লাগাবে, কারও গোছানো পছন্দ না তার। এই কেবিনের সব কিছু ওর পছন্দ মত সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বেড সাইড টেবিলের প্রতিটা জিনিসপত্র নিখুঁত ভাবে গোছানো। টেবিল ঘড়িটার পাশে ফুলদানিটায় একটু আগে রজনীগন্ধার স্টিক রেখে দিয়েছে ইরা। এই ফুলটার গন্ধ খুব প্রিয় রাব্বির। নীরবে ইরার দিকে তাকাল একবার। এখনও ফোঁটায় ফোঁটায় চোখের পানি পড়ছে, কোলে নীল উলের সোয়েটার পরা বাচ্চাটার গায়ে যে চোখের পানি পড়ছে সেদিকে খেয়াল নেই। ফোঁস করে একটা নিঃস্বাস ফেলল রাব্বি! বিরক্ত গলায় বলল..

-পেত্নী, তোমার কাঁন্না থামাবে? ছেলেটা তো গত আধ ঘন্টা ধরে তোমার চোখের পানিতে ভিজছে। নার্সকে ডেকে একটা ছাতা পাঠাতে বলব? এই শীতকালে তুমি যে হারে অশ্রু বর্ষণ শুরু করেছো, তাতে কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই হাসপাতালে হাটু পানি জমে যাবে! ইরা নাক টানল কেবল, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে আরেকবার চোখের পানি মুছলো। কিছু বলল না। রাব্বি এক মুহূর্ত চুপ থেকে আবার বলল..

-ছেলের কোনও নাম ঠিক করতে পেরেছো? এই দুই মাসে তো কম নাম ঠিক করা হল না। কিন্তু একটাও যদি তোমার পছন্দ হয়। তা নাম টাম কিছু রাখবে? নাকি ছেলের নাম না জেনেই অপারেশন থিয়েটারে চলে যাব? ইরা মুখ তুলে রাব্বির দিকে তাকাল। ওর বড় বড় চোখগুলো লাল হয়ে আছে। পাপঁড়ি ভিজে কাঁটার মত হয়ে হয়েছে। রাব্বি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল…

-স্রষ্টা কোন সফটওয়্যার দিয়ে তোমার চোখের ডিজাইন করেছে জানার খুব ইচ্ছা আমার! এত লাল হবার পরেও মনে হচ্ছে ঝকঝকে রোদের একটা সকাল দেখছি। আজব! চতুর্মাত্রিক চোখ। একটা জানালা দিয়ে ছয় ঋতু দেখি আমি! ইরা হাসল দূর্বল ভাবে। চোখ গড়িয়ে আরেক ফোঁটা জল নামল। খুব আস্তে আস্তে বলল..

-রাব্বি তুমি এত ভাল একটা মানুষ হলে কি করে? অবাক গলায় বলল রাব্বি…

-দুই বছর সংসার করার পরেও তোমার এই ভুল ধারণা বদলালো না! বাজারে গিয়ে একটা মাছ পর্যন্ত ঠিক করে কিনতে পারি না, শাড়ি কেনার সময় সত্তর বছরের বুড়ির শাড়ি কিনে দেই তোমাকে, এমনকি বাবুর ডায়াপার প্রর্যন্ত বদলাতে পারি না ঠিক করে, তাও তোমার ধারণা আমি ভাল মানুষ? রাব্বি বিয়ের পর প্রথম মাসের বেতনের টাকা দিয়ে ইরাকে না জানিয়ে একটা শাড়ি কিনে ছিল, ভেবে ছিল সারপ্রাইজ দেবে। কিন্তু শাড়ি দেখে ইরা উল্টো ক্ষেপে গিয়ে বলে ছিল…

-এটা কি পান খাওয়া সত্তর বছরের বুড়ির শাড়ি কিনেছো! তোমার মাথায় কি কিছু আছে আসলে? নাকি কালার ব্লাইন্ড তুমি! এরকম ক্যাট ক্যাটা রঙের শাড়ি কেউ পরে? কথাটা মনে পরতেই রাব্বি হাসতে লাগল।

ইরা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। রাব্বি না দেখেও বুঝতে পারছে কাঁন্না চাপার চেষ্টা করছে ইরা, পারছে না। এই মেয়েটা নিঃশব্দে কেমন করে এত কাঁদতে পারে, ভেবে পায় না রাব্বি। আর কাঁদলেও অদ্ভূত সুন্দর লাগে। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে অনন্তকাল ধরে। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কেটে গেল। নিরেট নিস্তব্ধতার মাঝে টেবিল ঘড়িটার শব্দ খুব বিকট হয়ে কানে আসছে। একেকটা টিকটিক শব্দে ঘরের প্রতিটা জিনিসপত্র যেন কেঁপে উঠছে। রাব্বি ছাদের দিকে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকালো।

ওদের ছেলেটা হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন মাসের মাথায় গাড়ি এক্সিডেন্ট করে রাব্বি অফিস থেকে ফেরার পথে। তেমন একটা ব্যাথা না পেলেও এক্স-রে করা হয়ে ছিল মাথার। ব্রেন টিউমারটা তখন-ই প্রথম ধরা পরল। বেশ খারাপ ধরণের টিউমার। ডাক্তাররা শুকনো মুখে কেবল বলল যত তাড়াতাড়ি পারা যায় অপারেশন করা দরকার। টিউমারটার গ্রোথ বেশী। সরাসরি তেমন কিছু না বললেও যা বোঝার বুঝে নিয়েছে রাব্বি। স্বাভাবিক থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে তাই। হা হলে ইরা পুরোপুরি ভেঙ্গে পরবে। কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখা ক্রমশ অসম্ভব হয়ে পরছে। গত সপ্তাহে পাশের কেবিনের এক ব্রেন টিউমারের রোগীর অপারেশন হয়ে ছিল, বাঁচেনি।

ঘটনাটার পর থেকে রাব্বি ভেতরে ভেতরে দমে গেছে আরও। ইরাও পাগলের মত হয়ে গেছে। সারাক্ষণ শুধু কাঁদে। কিছু খেতে চায় না। রাব্বি ইরার দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনও কেঁদে যাচ্ছে মুখ নিচু করে। টপটপ করে চোখের পানি বাচ্চাটার ওপর পড়ছে। পুরো দৃশ্যটায় ভয়ংকর একটা কষ্ট জড়িয়ে আছে। রাব্বি কেমন যেন দিশেহারা বোধ করল।

-পেত্নী? দূর্বল গলায় ডাকল। মুখ তুলে তাকালো ইরা। চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। একটু সরে গিয়ে বিছানা ইঙ্গিত করল রাব্বি। -এখানে আসো। কোন কথা না বলে উঠে এসে রাব্বির পাশে বসল ইরা। রাব্বি বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বলল..

-পা তুলে আমার মত করে শোও। বালিশটা অর্ধেক দিল ইরার দিকে। ইরা চুপচাপ বিছানায় পা তুলে বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে শুলো রাব্বির পাশে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছল। রাব্বি বাচ্চাটার দিকে তাকালো। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে..

-এর চোখ তো দেখি তোমার মত হয়েছে! পিটপিট করে তাকাচ্ছেও আবার। প্রথম দশ দিন তো খালি চোখ বন্ধ করেই ঘুমাতো। তখন বুঝিনি। এখন তো দেখছি মায়ের চোখ পেয়েছে! আর নাকটা একে বারে আমারটা ফটোকপি করে আঁঠা দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে! দেখলেই মনে হয় দো তলা বি.আর.টি.সি. বাস যাওয়ার পর স্টিম রোলার গেছে! হাসতে লাগল রাব্বি। ইরা কাঁন্না ভেজা চোখেই হেসে ফেলল।

-পেত্নী, এর একটা নাম দিয়ে দেই,কি বলো? তুমি নাম দিতে দিতে বেচারার বিয়ের বয়সও পেরিয়ে যাবে। নামের কথা মনে পড়তেই বলে উঠল রাব্বি।
-শাড়ির আঁচোল দিয়ে নাকের পানি মুছলো নিশাত, “কি নাম দেবে? মুখে ম্লান হাসি।

-আমাকে এত বড় গিফট দিয়েছো, তাই তোমার সম্মানে নাম দেয়া যাক “বাঁধন”! কেমন লাগে? চোখ নাচালো।

-এটা আবার কেমন নাম? এই নামে তো মেয়েদেরও নাম হয়!

-হলে হবে, অবশ্য নামটা শুনলেই মনে হবে তুমি-আমি এক সুতোয় বাঁধা। সেই সুতোর নাম বাঁধন। বাবুর হাত ধরে আলতো ঝাঁকুনি দিল রানা।

-তোমার কথা বার্তার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ইরা ক্লান্ত গলায় বলল।

-সব কথা বোঝার দরকার কি? E=mc² কি তুমি বুঝো? ভাসা ভাসা ধারণা আছে কেবল। ঠিক তেমনি বাবুর নামটাও একটা ভাসা ভাসা ধারণা নিয়ে হবে। মনে হবে অনেক অনেক কথা, কিন্তু মাত্র একটা শব্দ। রাব্বি উদার ভাবে হাসল।

-উফ! তুমি এত পেঁচিয়ে কথা বল কেন মাঝে মাঝে? আমি কনফিউজড হয়ে যাই একদম। রাব্বি বিচিত্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইরার দিকে। খুব নিচু স্বরে বলল..

-জানালা দিয়ে এখন জ্যোৎস্না ভেঙ্গে নেমেছে লাগছে! সেটা আবার কন কনে শীতের মাঝে! ইরা হাসি থামিয়ে ফেলল। গম্ভীর হয়ে গেল মুখ।

-এই বিদঘূটে কালো জামদানী পরেছো কেন? লালটা পরতে পারলে না? লালটায় তোমাকে পুরো তেঁতুল গাছের পেত্নী লাগে। ছেলের সমর্থনের আশায় তাকাল।

-ঠিক নারে বাঁধ? ফোঁকলা দাঁত বের করে একটা হাসি দিল বাচ্চাটা। ইরা অবাক হয়ে বলল, “বাঁধন থেকে বাঁধ?”

-শর্ট করে বললাম আর কি। ডাক নাম বাঁধ, ভাল নাম বাঁধন। ছেলের বার্থ ডে’তে বিশাল একটা কেক অর্ডার করবে। তাতে বড় বড় করে বাংলায় লেখবে “শুভ জন্মদিন বাঁধন”। সেই কেক কোন ছুরি চাকুতে কাটা হবে না। প্রিয় বাবাজী থাবা মেরে কেক ভর্তা বানাবে, ব্যস হাত তালি! বোঝা গেল? দীর্ঘ একটা মুহূর্ত রাব্বির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ইরা। তারপর হেসে ফেলল..

-কেক থাবা মেরে ভর্তা বানাবে?

-হ্যা। সেই ক্রিম গিয়ে মাখিয়ে দেবে তোমার সাধের লাল জামদানী শাড়িতে। আমার পাঞ্জাবী খামচে ধরে পাঞ্জাবীতেও মাখিয়ে দেবে কেকের ক্রিম। হাসতে লাগল রাব্বি, হাসির চোটে চোখে পানি এসে গেছে ওর।

-তুমি এত সুন্দর করে কল্পনা কর কি ভাবে? আমি তো পারি না।

-একজন পারলেই হল। একটা প্রজেক্টর দিয়েই এক হল ভরা দর্শক ছবি দেখে। সেখানে তো কেবল তুমি আর আমি, ও! এই বাঁধনও। মাত্র তিন জন। সূক্ষ্ম একটা দীর্ঘশ্বাস অতি সাবধানে গোপণ করল রাব্বি। মাথায় চিনচিনে ব্যথা করছে। কয়েক ঘন্টা পরে অপারেশন। ভুলে থাকার চেষ্টা করল।

-পেত্নী, যাও তো, জানালাটা খুলে লাইট নিভিয়ে দাও। জ্যোৎস্না আসুক। পেট ভরে জ্যোৎস্না খেয়ে নেই।

-ঠান্ডা লাগবে। বাহিরে কনকনে ঠান্ডা। কুয়াশার চোটে জোছনাই দেখা যায় না।

-আহ, যাও তো। কুয়াশাও না হয় কয়েক ঢোক খেলাম। চিকেন ফ্রাই খাবো অথচ কোক খাবো না, কোন কথা হল!

উঠে গিয়ে জানালাটা খুলে দিল ইরা। বাহিরে কুয়াশায় ঢেকে আছে রাতের নিস্তন্ধ নগরী। তার মাঝ দিয়ে জ্যোৎস্না নেমেছে ঘুমন্ত শহরে। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চারপাশ। জানালা থেকে সরে এসে লাইট নিভিয়ে দিল ইরা। রাব্বির পাশে এসে শুয়ে পড়ল আগের মত। রাব্বি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে জানালাটার দিকে। বিড়বিড় করে বলল..

-রোদের মাঝে যেমন বৃষ্টি নামে, তেমনি জ্যোৎস্নার মাঝে বৃষ্টি নামে নাকি?

দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। স্রষ্টার আবহাওয়া ডিজাইনে এই জিনিসটা থাকলে অনেক ভাল হত। এক সাথে বৃষ্টি আর বাঁধভাঙ্গা জ্যোৎস্না। ইরা ওর কাধে মাথা রাখল, ওর শার্টের বুকের কাপড় খামচে ধরল এক হাতে। রাব্বি অনুভব করছে ইরার ফোঁটা ফোঁটা চোখের জল ওর বুকের কাছটায় পড়ছে। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলোতে মন্ত্র আবিষ্টের মত ইরার দিকে তাকালো। ফিসফিস করে বলল..

-জানালা দিয়ে এখন জ্যোৎস্নার মাঝে বৃষ্টি নামছে! টিনের চালে সেই বৃষ্টির শব্দ চারপাশের জগতে কাঁপন লাগিয়ে দিয়েছে, গান শুনবে?

-হু।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাব্বি মিফতাহ জামানের একটা গান ধরল। গানটা ওর খুব প্রিয়- অবাক চাঁদের আলোয় দেখ, ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী! আড়াল হতে দেখছি তোমার নিষ্পাপ মুখ খানি। ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়! মাঝপথে বলে উঠল ইরা আড়াল কোথায় পেলে, তোমার কাছেই তো আছি! দূর্বল ভাবে হাসল রাব্বি। শক্ত করে দুহাতে বাঁধন আর ইরাকপ ধরে রাখল। অবাক হয়ে আবিষ্কার করল ওর দুচোখেও পানি জমে উঠেছে। বাঁধন ঘুমিয়ে পরেছে বাবার কোলে। ছেলের নিষ্পাপ ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে একটা হাহাকারে বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করতে লাগল।

আজ বাঁধন এর প্রথম জন্মদিন। রাত বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমন্ত ছেলেকে নিয়ে বাসার উঠানে নেমে এসেছে ইরা। বাগানে একটা পাটির ওপর বিশাল একটা কেকের প্যাকেট। একটা মোম জ্বলছে বক্সটার সামনে। বাঁধন জেগে উঠে শরীর বাঁকিয়ে কাঁন্না শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। ইরা ওকে কোন মনে ধরে রেখে কেকের প্যাকেটটে খুলে দিল। মোমের আলোতে পড়া যাচ্ছে কেকের লেখাটা “শুভ জন্মদিন বাঁধন”। উঠানে জ্যোৎস্নার আলো এসে চারপাশের পৃথিবীটাকে অদ্ভূত অলংকারে সাজিয়ে দিয়েছে। রূপালী আলোয় জন্ম নিয়েছে আরেক পৃথিবী।

ইরা বাঁধনকে কেকের সামনে নামিয়ে দিতেই হাটু পেড়ে গিয়ে কেকের কাছে হাজির হল। মহা আনন্দে থাবা মেরে কেক ভর্তা বানাতে লাগল। ইরা ছেলের কাছে বসে গভীর মমতা ভারে দেখছে ছেলের কান্ড। মোমবাতিটা সরিয়ে নিল ইরা, ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে নিচু স্বরে বলল, “হ্যাপি বার্থ ডে বাঁধ! ইরার পরনের লাল জামদানীটা বাঁধনের ক্রিম মাখা হাত লেগে মাখামাখি হয়ে গেল। ওর চোখের কোন চিকচিক করেছে। জ্যোৎস্নার আলোয় বাঁধন কেক ভেঙ্গে মাখিয়ে দিচ্ছে ওর শাড়িতে। মাড়ি বের করে হাসছে। একটা নিঃশ্বাস ফেলে চারপাশে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকালো ইরা। রাব্বির কন্ঠ কানে বাজছে। অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আগ মুহূর্তের কথা গুলো এখনো শুনতে পাচ্ছে ও!

“এই ধরো মোটামুটি একটা চাঁদ হবে, আর জ্যোৎস্না হবে বৃষ্টির মত। আর কোনটাই যদি নাও থাকে, তোমার চতুর্মাত্রিক চোখ তো আছে। সেখানের জানালাতেই জ্যোৎস্নার মাঝে টিপটিপ বৃষ্টি নামা দেখবো আমি। খুব একটা ভাল গান গাইতে পারি না যদিও, তবু গাওয়ার চেষ্টা করব। কারণ ভরা জ্যোৎস্নায় কোন অপূর্ণতা থাকে না। আর ঘুমন্ত এই শহর ভাসিয়ে নেয়া জ্যোৎস্নার মাঝে যদি আমি নাও থাকি, আমাকে খোঁজার দরকারটা কি? আমার শূণ্যতাই তোমার সঙ্গে “আমি” হয়ে অতিপ্রাকৃত সেই পৃথিবী দেখবে। একজন মানুষ আর তার শূণ্যতার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। যে কোন একটা দিয়েই এক জীবন চালিয়ে নেয়া যায়। ইরা হঠাৎ খুব আস্তে আস্তে, প্রায় শোনা যায় না এমন সুরে গাইতে লাগল অবাক চাঁদের আলোর দেখো ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী! নিঃশব্দে দু’ফোঁটা রূপালী অশ্রু বিন্দু ঘাসের ওপর হারিয়ে গেল।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত